ঢাকা, বৃহস্পতিবার ৩১, অক্টোবর ২০২৪ ৩:১৫:৫১ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
টানা দ্বিতীয় সাফ জয়ের উল্লাসে মাতলেন বাঘিনীরা খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাশকতার ১০ মামলা বাতিল চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে একদিনে ২ জনের মৃত্যু সায়েন্সল্যাবে অবরোধ শিক্ষার্থীদের, ভোগান্তিতে সাধারণ মানুষ খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হাইকোর্টে বাতিল স্বর্ণের দামে বিশ্ব রেকর্ড, বাড়তে পারে দেশেও যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন: কে এগিয়ে, ট্রাম্প নাকি কমলা

আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:৪৩ এএম, ১৫ জুন ২০২৪ শনিবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

আজ পহেলা আষাঢ়। আষাঢ় শব্দটি এসেছে পূর্বাষাঢ়া ও উত্তরাষাঢ়া নক্ষত্রে সূর্যের অবস্থান থেকে। আষাঢ় বাংলা সনের তৃতীয় মাস। গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসারে জুন-জুলাই মাসের মাঝামাঝি সময়ে আষাঢ় আসে।

রুক্ষ-রুষ্ট ধুলায় মলিন প্রকৃতি আষাঢ়ের অপেক্ষায় থাকে। ভরাবাদলে যেন যৌবন ফিরে পায় প্রকৃতি। গাছ লতাপাতায় আসে নতুন প্রাণের সঞ্চার, গাছে গাছে শোভিত হয় হাজারো ফুল। প্রকৃতি ধুয়ে-মুছে হয়ে ওঠে সবুজ। চারপাশ সেজে ওঠে এক অপরূপ সাজে।

বাংলা সাহিত্যজুড়ে বর্ষার প্রতিফলন এসেছে নানানভাবে। কালিদাস, বিদ্যাপতি, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, নজরুল, ফররুখ আহমেদ, সুফিয়া কামাল, আল-মাহমুদ প্রত্যেকেই কবিতায় বর্ষা বন্দনা করেছেন।

রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, ‘এই পুরাতন হৃদয় আমার আজি,/পুলকে দুলিয়া উঠিছে আবার বাজি/নূতন মেঘের ঘনিমার পানে চেয়ে/আবার এসেছে আষাঢ় আকাশ ছেয়ে।’ বর্ষা নিয়ে উচ্ছ্বসিত নজরুল লিখেছেন, ‘হৃদয়-যমুনা আজ কূল জানে না গো,/ মনের রাধা আজ বাধা মানে না গো।/ডাকিছে ঘর-ছাড়া ঝড়ের বাঁশি/অশনি আঘাত হানে দুয়ারে আসি’, গরজাক গুরুজন ভবনবাসী— আমরা বাহিরে যাব ঘনশ্যাম দরশে।’

রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ বলেছেন, ‘এই জল ভালো লাগে; বৃষ্টির রূপালি জল কত দিন এসে/ধুয়েছে আমার দেহ-বুলায়ে দিয়েছে চুল-চোখের ওপরে/তার শান্ত স্নিগ্ধ হাত রেখে কত খেলিয়াছে, আবেগের ভরে।’

বর্ষা মানবমনে সঞ্চার করে অনন্ত বিরহ-বেদনা-সুখ। মনকে উদ্ভাসিত করে অপার সৌন্দর্যলোকে। বর্ষার এক চোখে অশ্রু, অন্য চোখে হাসি। বর্ষা আমাদের মনকে প্রয়োজনের জগৎ থেকে নিয়ে যায় অনন্ত অভিসারে অন্য কোথাও। বর্ষায় কবি মন যাত্রা করে চির সৌন্দর্যের অমরাবতীতে। পরিচিত জগৎ-সংসারের বন্ধন তখন তুচ্ছ হয়ে যায়। মনে পড়ে প্রিয় বেদনার কথা। বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সে জন্যই হয়তো বলেছেন- ‘এমন দিনে তারে বলা যায়,/এমন ঘনঘোর বরষায়’ কিংবা, ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল করেছ দান/আমি দিতে এসেছি শ্রাবণের গান।’

বর্ষায় যতদূর দৃষ্টি যায়, আকাশে বিস্তার করে থাকে পাংশুটে মেঘের জাল, প্রকৃতি নিথর নিস্তব্ধ। ঘরে বসে স্মৃতি রোমন্থন করা ছাড়া যেন আর কিছুই করার থাকে না। কবি শামসুর রাহমান বলেছেন-
‘শ্রাবণের মেঘ আকাশে আকাশে জটলা পাকায়
মেঘ ময়তায় ঘনঘন আজ একি বিদু্যৎ জ্বলে
মিত্র কোথাও আশপাশে নেই, শান্তি উধাও
নির্দয় স্মৃতি মিতালি পাতায় শত করোটির সাথে।’

রোমান্টিক কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় বৃষ্টির ভেতর রমনীয় আল্পনা এঁকেছেন। বৃষ্টিতে মানবীয় মুখ কেমন দেখায়, কেমন রোমাঞ্চকর হয়ে ওঠে, তা বর্ণনা করেছেন নিঁখুতভাবে। বৃষ্টি হয়ে ওঠে চাঞ্চল্যকর রোমান্টিক উপমা। কবি বৃষ্টি বিধৃত গোধূলী ও সন্ধ্যার বর্ণনা দিয়েছেন চমৎকারভাবে।

‘বাইরে বৃষ্টি, বিষম বৃষ্টি, আজ তুমি ওই রুপালি শরীরে
বৃষ্টি দেখবে প্রান্তরময়, আকাশ মুচড়ে বৃষ্টির ধারা।’
আমি দূরে এক বৃষ্টির নিচে দাঁড়িয়ে রয়েছি, একলা রয়েছি
ভিজেছে আমার সর্ব শরীর, লোহার শরীর, ভিজুক আজকে
বাজ বিদ্যুৎ একলা দাঁড়িয়ে কিছুই মানি না।’

এক পশলা বৃষ্টি যে নতুন মাত্রা নিয়ে আসে জীবনে, তা অন্য কিছুতেই পাওয়া যায় না। বর্ষায় বাংলার নদনদী পূর্ণযৌবনা হয়ে ওঠে। নদীর ফেঁপে ওঠা জোয়ারের পানি প্রচুর পলি জমায় মাটিতে, যা নিয়ে আসে শস্যেও প্রাচুর্যের কবর। এ সময় বিলে-ঝিলে ফোটে শাপলা-শালুক। হিজল আর কেয়াফুলের অরূপ দৃশ্য মোহিত করে মনকে। বর্ষাকাল গ্রামের মানুষকে অনেক বেশি ঘরমুখো করে তোলে। রমণীরা ঘরে বসে নকশি কাঁথায় ফুল তোলে। অনেকটা আলস্যে কেটে যায় দিন।

‘পল্লী-বর্ষা’ কবিতায় জসীম উদদীন বর্ষার অবিশ্রান্ত বর্ষণমুখর গ্রাম-বাংলার ঘরে ঘরে যে আড্ডার আসর বসে, ফাঁকে ফাঁকে পল্লী বাংলার শ্রমজীবী মানুষের অসমাপ্ত কাজগুলোও যে আড্ডার ছলে সারা হয়ে যায় সেই কিচ্ছা-কাহিনি শোনার যে লোকায়ত চিত্র তা তুলে ধরা হয়েছে কবিতায়-

‘গাঁয়ের চাষিরা মিলিয়াছে আসি মোড়লের দলিজায়
গল্প গানে কি জাগাইতে চাহে আজিকার দিনটায়!
কেউ বসে বসে কাখারী চাঁচিছে, কেউ পাকাইছে রশি;
কেফবা নতুন দোয়াড়ীর গায়ে চাকা বাঁধে কষি কষি।


জ্যৈষ্ঠের খরতাপে যখন চৌচির প্রকৃতি, ঠিক সেই সময় স্বস্তির বার্তা নিয়ে আসে আষাঢ়। কিন্তু নগরজীবনে আষাঢ়ের বৃষ্টি আশীর্বাদের বদলে বয়ে আনে দুর্ভোগ। বিশেষত রাজধানী ঢাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। আর ভারী বৃষ্টি হলে তো কথাই নেই। কয়েক ঘণ্টার ভারী বৃষ্টি হলে সড়কে জমে হাঁটু পানি, কোথাও কোথাও কোমর পানি। নর্দমার নোংরা পানির সঙ্গে বৃষ্টির পানি একাকার হয়ে যায়। চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়ে।

বর্ষা হঠাৎ যেমন যেমন আনন্দের, তেমনি বেদনার। বর্ষার নির্মম অব্যাহত অঝোর ধারা কখনো জনজীবনে ছন্দপতন নিয়ে আসে। বিশেষ করে কর্মজীবী মানুষদের পীড়ার কারণও হয়ে দাঁড়ায়। তাদের দিন এনে দিনাতিপাতে যথেষ্ট বিড়ম্বনা এনে দেয় বর্ষা।