জহির রায়হানের অসমাপ্ত শর্টফিল্ম ও কিছু কথা
গুঞ্জন রহমান | উইমেননিউজ২৪প্রকাশিত : ০৭:১৬ পিএম, ২০ ডিসেম্বর ২০২৩ বুধবার
জহির রায়হান। ফাইল ছবি।
জহির রায়হানের অসমাপ্ত শর্টফিল্মগুলোর কাজ শেষ করার জন্য মৃণাল সেনের কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন জহিরের প্রধান সহকারী পরিচালক আমজাদ হোসেন।
মৃণাল সেন রাশ ফুটেজ দেখার পর চিত্রনাট্য দেখতে চান। আমজাদ তাকে জানান, চিত্রনাট্য নেই।
মৃণাল বলেন, তাহলে এই যে ব্যাকগ্রাউন্ড ভয়েসওভার, এটা কোন স্ক্রিপ্ট দেখে পড়া হয়েছে?
আমজাদ তাকে বলেন, কোনো স্ক্রিপ্ট দেখে নয়, জহির ভাই ক্যামেরা চালাতে চালাতেই পেছন থেকে বলে গেছেন, সেটাই রেকর্ড হয়েছে এখানে।
মৃণাল সেন হতভম্ব হয়ে যান। প্রায় ৪০ মিনিটের ফুটেজ, যেখানে একটাও ফাম্বল নেই, একটাও ভুল শব্দ নেই, ব্যাকরণে ভুল নেই, উচ্চারণে ভুল নেই, অস্পষ্টতা নেই...! এটা কীভাবে সম্ভব?
আমজাদ বললেন, আমি জানি না। শুটিংয়ে আমি ছিলাম না। আসলে কেউই ছিলেন না। জহির ভাই একা একাই শুট করেছেন, শুট করতে করতেই ভয়েসওভার দিয়ে গেছেন। তিনি জানতেন, এই যুদ্ধের ডামাডোলে এডিটিংয়ের সুবিধা হয়তো পাওয়া যাবে না। তাই তিনি এমনভাবে শট নিয়েছেন যে, আগে-পরে করতে না হয়, এমনভাবে বলে গেছেন যে, কোনো কিছু কেটে বাদ দিতে না হয়।
বিটিভিতে আমজাদ হোসেন বলেছিলেন, মৃণাল সেন তার কথা শুনে দাঁড়ানো থেকে ধপ করে বসে গিয়েছিলেন চেয়ারে। এত বড় শক তার জীবনে কখনো লাগেনি।
মৃণাল সেন এরপর এই ফুটেজসহ আমজাদ হোসেনকে নিয়ে যান সত্যজিৎ রায়ের কাছে। মানিক বাবু সব দেখেশুনে আমজাদ হোসেনকেই বকা দেন, জহিরের ক্রিয়েশন মডিফাই করতে বলো। এটা তো তোমার ভীষণ স্পর্ধা! জহিরের মাথায় যে কী চলছিলো, সেটা বোঝার মতো মেধা-প্রতিভা-বিদ্যা কোনোটাই আমাদের কারুর নেই। জহিরের কাজে অসমাপ্ত বলে কিছু নেই ... কোনো রি-শুট, এডিটিং, ভয়েস ডাবিং ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোরের দরকার নেই। যেভাবে আছে, সেভাবেই এগুলো রিলিজ করে দাও।
সেই ছবি দুটোর একটির নাম ‘স্টপ জেনোসাইড’, অপরটি ‘লেট দেয়ার বি লাইট’।
প্রিয় পাঠক, একাত্তরের আগে আমাদের বুদ্ধিজীবীদের মেধা কোন লেভেলের ছিলো, অনুমান করতে পারেন?
মুনীর চৌধুরী একজন সাহিত্যিক হয়েও প্রকৌশলী/বিজ্ঞানীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন পৃথিবীর প্রথম বাংলা টাইপরাইটার আবিষ্কার/নির্মাণ করে! কেননা, পশ্চিম পাকিস্তানীরা রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনের বিরোধিতা করে বলেছিলো, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করবা, তাহলে দপ্তরের কাজ কি কলম পিষেই করবা তোমরা? বাংলা অক্ষর টাইপ করবা কোন মেশিনে?
ডা. ফজলে রাব্বী ছিলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানে উপমহাদেশের সর্বকণিষ্ঠ অধ্যাপক। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে অ্যানাটমি ও ফার্মাকোলজিতে সম্মানসহ এমবিবিএস ফাইনালে শীর্ষস্থান অধিকার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বর্ণপদক লাভ করেন, এরপর ব্রিটেনের এডিনবরা থেকে এমআরসিপি ডিগ্রি নিয়ে আবার ফিরে আসেন দেশে; যদিও ব্রিটেনের নাগরিকত্বসহ সম্মানজনক ও সুরক্ষিত-নিশ্চিত ভবিষ্যতের অফার ছিলো তার সামনে।
সিরাজুদ্দীন হোসেন ছিলেন জহির রায়হানের পর কণিষ্ঠতম বাঙালি সাংবাদিক, যিনি ছাত্রাবস্থাতেই বার্তা সম্পাদক পদে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫২ সালের ২১ ফ্রেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দৈনিক আজাদ পত্রিকায় ভাষা আন্দোলনের সকল সংবাদের দায়িত্বে ছিলেন। এই এক সপ্তাহ প্রতিদিন তার কলাম প্রকাশিত হতো, যেখানে গ্রন্থিত আছে আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস। ১৯৫৪ সালে তিনি চাকরি খোয়ান প্রতিষ্ঠানের কোড অব কণ্ডাক্টের চেয়ে সাংবাদিকতার এথিক'কে প্রাধান্য দেয়ার কারণে। প্রধান সম্পাদক মাওলানা আকরাম খাঁ লিড নিউজ করার জন্য যে সংবাদটি রেখে যান, সেটি ছিলো, যুক্তফ্রন্ট ভেঙ্গে গেছে। কিন্তু সিরাজুদ্দীন খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, এটি ছিলো একটি গুজব, যা বাঙালিদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার জন্য পশ্চিমাদের হীন তৎপরতা। মাওলানা সঠিক তদন্ত না করেই সেই ফাঁদে পা দিয়েছেন। সিরাজুদ্দীন নিজ দায়িত্বে সেই নিউজ সরিয়ে দেন, বরং সম্পাদকীয়তে লিখে দেন, যুক্তফ্রন্ট ভেঙ্গে যাওয়ার খবরটি একটি গুজব। পরদিন মাওলানা সিরাজকে বরখাস্ত করেন তার নির্দেশ অমান্য করা, এখতিয়ার বহির্ভূতভাবে সম্পাদকীয় লেখা, প্রতিষ্ঠানের স্বার্থবিরোধী কাজ করার অপরাধে। এই সিরাজুদ্দীনই বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণ রেডিওতে প্রচারের জন্য মূখ্য ব্যবস্থা নেন। রেডিও পাকিস্তানের নীতি ছিলো, রাজনৈতিক বক্তব্য প্রচার করতে হলে সেটি সেই রাজনৈতিক দলের কোনো পদাধিকারীর দ্বারা প্রেরিত হতে হবে। ৭ মার্চের ভাষণের পরপর আওয়ামী লীগের নেতাদের কাউকেই পাওয়া যাচ্ছিলো না, কারণ তারা বঙ্গবন্ধুর সাথে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে ছিলেন সরকারের উপর ভাষণের সম্ভাব্য প্রতিক্রিয়া কী হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনায়। সিরাজুদ্দীন নিজ দায়িত্বে সেই ভাষণ তোফায়েল আহমেদের নামে প্রচার করেন, নয়তো আজ আমাদের সামনে ৭ মার্চের ভাষণের যে রেকর্ডেড কপি রয়েছে, সেটি হয়তো থাকতোই না। ভিডিও ফুটেজও ধ্বংস করে দেয়ার চক্রান্ত হয়েছিলো, কিন্তু রেডিও ট্রান্সমিশনের এনক্রিপশন থেকে যাওয়ায় সেই ফুটেজ ধ্বংস করা থেকে পাকিস্তানী জান্তা শেষ পর্যন্ত খ্যান্ত দেন।
জিসি দেব বা গোবিন্দ চন্দ্র দেব হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই অধ্যাপকদের একজন, যাদের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হয়। কারণ, এই অধ্যাপকেরা খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে অধ্যাপনা করতেন অক্সফোর্ডে! যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা অক্সফোর্ডের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন, সেই বিশ্ববিদ্যালয়কে তো দ্বিতীয় অক্সফোর্ড নামেই ডাকা হবে!
এমন কতজনের কথা বলবো আর কতজনকে ভুলবো? বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় কষ্টের দিন তাই ১৪ ডিসেম্বর।
পুনশ্চ: ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বরের আত্মসমর্পনের কারণে পশ্চিম পাকিস্তানের সকল পরাজিত সেনা কর্মকর্তা দেশে ফিরে শাস্তির সম্মুখীন হয়েছিলেন। চাকরিচ্যুত হয়েছিলেন অধিকাংশ। কেবল একজন মেজর জেনারেল কোনো শাস্তি তো পানইনি, উল্টো পুরস্কৃত হয়েছিলেন। জেনারেল রাও ফরমান আলী। বাহিনী থেকে অবসরের পর পাক আর্মির সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ফৌজি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে টানা দশ বছর দায়িত্ব পালন করেন তিনি, আরও নানারকম সুবিধাদি তাকে দেয়া হয় পাক আর্মির পক্ষ থেকে, পাকিস্তানের সরকারের পক্ষ থেকে। কেন?
কারণ, ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করেছিলো।
- ঢাকার বাতাস আজও অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর
- রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ শিক্ষার্থী বহিষ্কার
- সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা কমবে আরও
- বাংলাদেশকে হারিয়ে এশিয়া কাপ নিয়ে গেল ভারত
- অবশেষে প্রেম বিষয়ে মুখ খুললেন শাবনূর!
- ১০০ পোশাক কারখানা বন্ধ, বেকার ৫০ হাজার শ্রমিক: বিজিএমইএ
- গাজীপুরে গ্যাস সিলিন্ডারের আগুনে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
- সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে বৃষ্টির পর বেড়েছে শীতের দাপট
- আবারও মেট্রোরেলের এককযাত্রার টিকিট বিক্রি শুরু
- নাটোরে চলন্ত ট্রেনে আগুন, লাফিয়ে পড়ে নারীযাত্রী আহত
- ব্র্যাক ব্যাংকে ৪ জেলায় নিয়োগ
- পঞ্চগড়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, তাপমাত্রা ৯.৮ ডিগ্রি
- ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ১০ যানবাহনের সংঘর্ষ, বহু হতাহতের শঙ্কা
- রাশিয়ায় বহুতল ভবনে ৯/১১ স্টাইলে ড্রোন হামলা
- দুবলার চরের নিউমার্কেট, শুঁটকি, রাসমেলা ও প্রকৃতি
- বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বার্তা ঢাকা-দিল্লির
- দীপাবলির আগেই সুখবর দিচ্ছেন রণবীর-আলিয়া
- আগামী ৩ দিন যেমন থাকবে আবহাওয়া
- পঞ্চগড় থেকে দেখে আসুন কাঞ্চনজঙ্ঘা
- নিরাপত্তা চেয়ে মোহাম্মদপুরবাসীর আল্টিমেটাম
- মিরপুর টেস্টে বড় পরাজয় বাংলাদেশের
- নব আলো সাহিত্য সংহতির ঢাকা বিভাগীয় কমিটির অভিষেক হলো
- রাষ্ট্রপতি ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনে বৈঠক কিছুক্ষণের মধ্যে
- জেন জেডদের ওপর নির্ভর করছেন কমলা হ্যারিস
- রেদওয়ান রনির সঙ্গে সাদিয়া আয়মানের প্রেমের গুঞ্জন!
- রান্নার জন্য কোন তেল ভালো? জানুন বিশেষজ্ঞের মত
- জরিপে ট্রাম্পের চেয়ে এগোলেও শঙ্কা কাটছে না কমলার
- জরিপে এগিয়ে আছেন কমলা হ্যারিস
- খালেদা জিয়ার বিদেশযাত্রা নিয়ে যা জানা গেল
- আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চেয়ে হাসনাত-সারজিসের রিট