ঢাকা, শুক্রবার ২৭, ডিসেম্বর ২০২৪ ৫:৪৮:২৪ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ৫ সাংবাদিক নিহত লামায় অগ্নিসংযোগের ঘটনায় প্রধান উপদেষ্টার নিন্দা কুষ্টিয়ায় নারী পুলিশ সদস্যের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার খুলল প্রবেশ পথ, সচিবালয়ে ঢুকছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যেসব মন্ত্রণালয়ের অফিস আছে আগুন লাগা ভবনে পাঁচ ঘণ্টা পর সচিবালয়ের আগুন নিয়ন্ত্রণে ধর্ষিতাদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিতে হবে: দিল্লি হাইকোর্ট

জেনে নিন মা দিবস এলো কেমন করে

অনু সরকার | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:২৯ এএম, ১২ মে ২০২৪ রবিবার

মা দিবসের প্রবর্তক অ্যানা জার্ভিস

মা দিবসের প্রবর্তক অ্যানা জার্ভিস

সভ্যতার প্রথম পর্যায় থেকেই ’মা’কে কেন্দ্র করে বিভিন্ন আঙ্গিকে নানা উৎসবমুখর অনুষ্ঠান উদযাপন করা হচ্ছে। মা দিবসের আদি উৎপত্তি প্রাচীন গ্রিসে। আদি পর্বে গ্রিক সভ্যতায় ধর্মীয় উৎসব হিসেবে প্রতি বসন্তে ’মাদার অব গড’ রিয়ার উদ্দেশে বিশেষ একটি দিন উদযাপন করা হতো। 

তবে ধর্মীয় উৎসব থেকে বেরিয়ে এসে মা দিবস সামাজিক উৎসবে পরিণত হয় ১৬শ’ শতাব্দীতে। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রে মায়েদের প্রতি সম্মান জানিয়ে ’মাদারিং সানডে’ নামে একটি বিশেষ দিন উদযাপন করা হতো। প্রথম দিকে দিবসটি শুধু শহুরে বিত্তবানদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু পরে সাধারণ মানুষ;বিশেষত কাজের সন্ধানে শহরে ছুটে আসা মানুষের কাছেও পরিচিত হয়ে ওঠে মা দিবস। ফলে এ বিশেষ দিবসের আবেদন ছড়িয়ে পড়ে শহর ছেড়ে গ্রামে, সব জায়গায়।

এক সময় দেশের সীমানা ছাড়িয়ে মা দিবসকে আরও সার্বজনীন করে তোলেন আমেরিকারই নাগরিক জুলিয়া ওয়ার্ড। দিবসটিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়ার জন্যে ১৮৭২ সাল থেকে তিনি ব্যাপক লেখালেখি শুরু করেন। তবে দিবসটিকে জাতীয় উৎসবে পরিণত করতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখেন ফিলাডেলফিয়ার অপর নারী অ্যানা জার্ভিস। ১৯০৭ সালে মা দিবসকে স্বীকৃতি দিতে ব্যাপক প্রচার চালান তিনি। সে বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার ছিল অ্যানার মায়ের মৃত্যুবার্ষিকী। অ্যানা সেই দিবসটিতেই 'মা দিবস' পালন করেন। পরের বছর পুরো ফিলাডেলফিয়া অঙ্গরাজ্যেই বিশাল আয়োজনে ঐ একই দিনে পালিত হয় 'মা দিবস'। এক পর্যায়ে অ্যানা ও তার সমর্থকরা 'জাতীয় মা দিবস' ঘোষণা করার জন্য দেশের মন্ত্রী, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদদের চিঠি লিখতে শুরু করেন। অবশেষে ১৯১১ সালে অ্যানা জার্ভিস সফলতা লাভ করেন। সে বছর মে মাসের দ্বিতীয় রোববার আমেরিকাজুড়ে একই সঙ্গে পালিত হয় 'মা দিবস'। পরে ১৯১৪ সালে প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন দিবসটির রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেন। এরপর থেকেই বিশ্বের দেশে দেশে মা দিবস পালনের রেওয়াজ ছড়িয়ে পড়ে। 

অ্যানার মা অ্যান মারিয়া রিভস জার্ভিস সমাজকর্মী ছিলেন। তিনি নারীদের জন্য কাজ করতেন। ছোট ছোট ওয়ার্ক ক্লাব বানিয়ে সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য কাজ করতেন তিনি। তার সমস্ত কাজের প্রভাব পড়েছিল নবম শিশুকন্যাটির উপর। একদিন ছোট মেয়েটির সামনেই ধর্মপ্রাণা অ্যান হাত জোড় করে বলেছিলেন, 'আই হোপ অ্যান্ড প্রে, দ্যাট সামওয়ান, সামটাইম, উইল ফাউন্ড আ মেমোরিয়াল মাদার্স ডে কমেমোরেটিং হার ফর দ্য ম্যাচলেস সার্ভিস সি রেন্ডার্স টু হিউম্যানিটি ইন এভরি ফিল্ড অফ লাইফ.. সি ইজ এনটাইটেলড টু ইট।' বাংলায় অনুবাদ করলে যার অর্থ হয়, 'আমি আশা করি, প্রার্থনা করি, একদিন কেউ না কেউ, কোনও মায়েদের জন্য একটা দিন উৎসর্গ করুক। কারণ তারা প্রতিদিন মনুষ্যত্বের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে চলেছেন। এটা তাঁদের অধিকার।' 

মায়ের প্রতিটি শব্দ মনে রেখেছিলেন অ্যানা। আর সেই কারণেই অ্যানের মৃত্যুর দিনটিকে (১২ মে, ১৯০৭) সারাবিশ্বের প্রতিটি মায়ের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করেন তিনি।
  
সেই বছর-ই আমেরিকাতে প্রথমবার ‘মা দিবস’ পালিত হল। এরপর ১২ মে দিনটিকে মার্কিন জাতীয় মাতৃদিবস করার জন্য আন্দোলন শুরু করেন তিনি। পরের বছর ফিলাডেলফিয়া জুড়ে পালিত হয় 'ন্যাশনাল মাদার্স ডে'। পাঁচ বছরের মধ্যে আমেরিকায় অ্যানার দাবি মেনে নেওয়া হয়। আশেপাশের দেশগুলিতেও ছড়িয়ে পড়ে ওই রীতি।

জার্ভিস এক বিশেষ রীতি চালু করেছিলেন। তিনি নিজের সাজে সাদা কারনেশন ফুল ব্যবহার করে, শুধু নিজের নয় অপরের মায়েদেরও শ্রদ্ধা জানাতেন। পরে ওই রীতিকে এগিয়ে নিয়ে যান আমেরিকার নারীরা। যারা মারা গিয়েছেন, তাদের পাশাপাশি যারা জীবিত রয়েছেন তাদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য লাল কিংবা গোলাপি রঙের কারনেশন ফুলের ব্যবহার শুরু হয়। ধীরে ধীরে নানি-দাদি কিংবা খালা-ফুপুদেরও সম্মান জানানো শুরু হয় ওই দিনে। তবে যুগের সঙ্গে সঙ্গে দিনটির বাণিজ্যিকরণ হয়। মেয়েরা একে অপরকে উপহার দিতে শুরু কর পুঁজিপতিদের রমরমা ব্যবসা বেড়ে যায়। বিষয়টি কোনওদিনই মেনে নিতে পারেননি অ্যানা। সেই কারণে শেষজীবন অবধি আর কখনও মা দিবস পালন করেননি তিনি। ১৯৪৮ সালের ২৪ নভেম্বর মারা যান মা দিবসের প্রবর্তক  অ্যানা। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৪।

অ্যানা চলে গেলেও আজও সারা বিশ্বের নানা দেশে প্রতিবছর ১২ মে রোববার মা দিবস পালন করা হয় মায়ের প্রতি পরম মমতায়।