ঢাকা, শনিবার ২৩, নভেম্বর ২০২৪ ১৮:৪০:০১ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
ডেঙ্গুতে এ বছরেই ৫১ শিশুর প্রাণহানি মাকে হত্যা করে থানায় হাজির ছেলে আমদানির সাড়ে তিনগুণ দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে আলু ঢাকায় আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল সাতক্ষীরায় সাফজয়ী তিন নারী ফুটবলারের গণসংবর্ধনা

অভিধান থেকে ‘রক্ষিতা’ শব্দটির বিলোপ চাই

কাবেরী গায়েন | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৫:০৪ পিএম, ৩০ এপ্রিল ২০২১ শুক্রবার

কাবেরী গায়েন: চেয়ারপার্সন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

কাবেরী গায়েন: চেয়ারপার্সন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

যাকে ভরণ-পোষণ-নিরাপত্তা দিয়ে রক্ষা করা হয় সেই-ই রক্ষিত বা রক্ষিতা হবার কথা।যেমন আমাদের সবার রাষ্ট্র দ্বারা রক্ষিত হবার কথা কিংবা যে যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন সেই সেই প্রতিষ্ঠানের দ্বারা। কিন্তু বাংলা ভাষায় রক্ষিত শব্দটি পুরুষদের জন্য ব্যবহৃত হয় না এবং রক্ষিত শব্দের নারীবাচক প্রতিশব্দ রক্ষিতা নারীর জন্য এক নিহিতার্থে ব্যবহৃত হয়। নির্মিত অর্থ হল, বিয়ে বহির্ভূত যৌনসম্পর্কে নিয়োজিত হবার বিনিময়ে কোন ব্যক্তির দ্বারা অর্থনৈতিক ও নানাভাবে ‘রক্ষিত’ হন যে নারী, তিনি ‘রক্ষিতা’। এই অর্থ পুরুষতন্ত্র নির্মাণ করেছে। যেমন বীর শব্দের স্ত্রীলিঙ্গ বীরাঙ্গনা বাংলাদেশের জন্য যে অর্থ নির্মাণ করেছে তা হলো মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতিত,ধর্ষিত, পতিত নারী।
ব্যাকরণ যে শব্দের অর্থ প্রদাণ করে, মানুষের ব্যবহারে সেই অর্থের পরিবর্তন হয়, অনেক শব্দ বাদ পড়ে। এতকাল চলে আসা ‘রক্ষিতা’ শব্দটি যে অর্থে ব্যবহার করা হয়, সেই শব্দটিই ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি। মুনিয়া যদি ‘রক্ষিতা’ হয়, তবে এই গ্রুপের নানা মিডিয়ায় চাকরি করে যে বড় বড় সাংবাদিকরা জনাব আনভীর শরীরে শুধু হৃদয় বা কলিজাদেখেছেন, নিশ্চিতভাবে জেনেও তার সব কর্মকান্ড, তারাও তো মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে রক্ষিত বা প্রতিপালিত। একইভাবে, এই যে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এমডি সাহেবের নামটি উচ্চারণ করা হল না, সেও তো মোটা বিজ্ঞাপন যার উপরে হাউসের কর্মীদের বেতন এবং জৌলুস নির্ভর করে, সেই বিজ্ঞাপনে রক্ষিত হবার কারণেই। এভাবে এই গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানগুলো রক্ষিত হয়ে আছে বিজ্ঞাপনদাতাদের বদান্যতায়। সরকারী বিজ্ঞাপনের টাকা পেয়ে কিংবা না পেয়ে সরকারের সমালোচনা করলেও করতে পারে গণমাধ্যমগুলো, কিন্তু ব্যবসাকংগ্লোমারেটগুলোকে নয়। তাহলে কী দাঁড়ালো? যে যেখানে চাকরি করি, যে রাষ্ট্রে বসবাস করি, যেসব সম্পর্কে থাকি, সবক্ষেত্রেই আমরা রক্ষিত থাকতে চাই। তবে কেনো ‘রক্ষিতা’শব্দের এই বিশেষ ব্যবহার?
এমডি আনভী, এমপি অভি, সোনা ব্যবসায়ীর পুত্র সাফাতের মত ব্যক্তিরা টাকা আর ক্ষমতায় নিজেরা রক্ষিত হয়ে নারীকে ধর্ষণ করে, খুন করে, আত্মহত্যার প্ররোচণা দিয়ে তাদেরকেই ‘রক্ষিতা’ বলে নিজেরা থাকতে পারেন সাফসুতরো দেশি বা প্রবাসী মহারাজ হয়ে, আমার ভাষার পুরুষতান্ত্রিক হেজিমনিও তাদের এই সুযোগ দিয়েছে। কারো নামে রক্ষিতা, পতিতা, মাগী, বেশ্যা শব্দগুলো জুড়ে দিতে পারলেই তাদের খুন করা পর্যন্ত সমাজসিদ্ধ হয়ে যায়। আইনী সুরক্ষা সহজ হয়ে যায়।

আমার অভিধান থেকে ‘রক্ষিতা’ শব্দটি মুছে দিলাম আজ, ব্যবহার করিনি যদিও কোনদিন। মেয়েটি 'মাগীগিরি' করেছে বলে খুন হয়নি, কেউ তাকে খুন করেছে বা আত্মহত্যা করার পর্যায়ে নিয়ে গেছে বলেই সে মারা গেছে। এই ধরণের আত্মহত্যার প্রত্যেকটিই আসলে খুন। এক তরুণ প্রাণের এই অপচয় এবং খুনের সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের দৃশ্যমান বিচার চাই।গণমাধ্যমের নজরদারি চাই সেই বিচার নিশ্চিত করার জন্য। গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে নারীর প্রতি অবমাননামূলক শব্দ, বাক্য ব্যবহার বন্ধের জন্য দেশজুড়ে এসব মাধ্যম ব্যবহারের জেন্ডারবান্ধব লিটরেসি প্রোগ্রাম দাবি করছি সরকার, এনজিও, সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং অবশ্যই সচেতন সকলের কাছে।

বিলোপ হোক রক্ষিতা, মাগী, বেশ্যা, খানকি, গোল্ডডিগার, মাগীগিরি, জাউরা এমন সকল নারীর প্রতি তীব্র বিদ্বেষপূর্ণ পুরুষতান্ত্রিক শব্দভান্ডার, যার কোন পুরুষবাচক শব্দ অভিধানে নেই। এইসব শব্দ ব্যবহৃত হয় কেবলই নারীর প্রতি করা ক্ষমতাবান পুরুষের সকল নির্যাতনের সুরক্ষা হিসেবে।

আসুন, যে যেভাবে পারি, লড়ে যাই আমাদের অংশটুকু।

কাবেরী গায়েন: চেয়ারপার্সন, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।