ঢাকা, শুক্রবার ১৮, অক্টোবর ২০২৪ ১২:২১:৪৪ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
কমনওয়েলথ সম্মেলনে যাচ্ছেন না ড. ইউনূস ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘ডানা’, আঘাত হানতে পারে যেখানে ডিমের পর এবার মুরগির বাজারে অস্বস্তি একুশে পদকপ্রাপ্ত শিল্পী সুজেয় শ্যাম আর নেই আলাদা জায়গা পেলেন না মতিয়া চৌধুরী, স্বামীর কবরেই দাফন

আজ পহেলা অগ্রহায়ণ, হেমন্তকাল শুরু

আইরীন নিয়াজী মান্না | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:৫৩ এএম, ১৬ অক্টোবর ২০২৪ বুধবার

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

‘সবুজ পাতার খামের ভেতর/হলুদ গাঁদা চিঠি লিখে/কোন পাথারের ওপার থেকে/আনল ডেকে হেমন্তকে’। কবি সুফিয়া কামালের ‘হেমন্ত’ কবিতায় হলুদ গাঁদায় চিঠি লিখে এভাবেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে হেমন্তকে। 

হেমন্ত হলো ষড়ঋতুর চতুর্থ ঋতু, কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাস নিয়ে গঠিত। শরৎকালের পর এই ঋতু আসে। এরপরে আসে শীত, তাই হেমন্তকে বলা হয় শীতের পূর্বাভাস। কৃত্তিকা ও আর্দ্রা এ দুটি তারার নাম অনুসারে নাম রাখা হয়েছে কার্তিক ও অগ্রহায়ণ মাসের। কার্তিকের পর আসে সর্বজনীন লৌকিক উৎসব নবান্ন। ‘অগ্র’ ও ‘হায়ণ’ এ দু’অংশের অর্থ যথাক্রমে ‘ধান’ ও ‘কাটার মৌসুম’। সম্রাট আকবর অগ্রহায়ণ মাসকেই বছরের প্রথম মাস বা খাজনা তোলার মাস ঘোষণা করেছিলেন।এসময় ধান কাটা হয়।

বাংলার প্রকৃতিতে এখন হিম হিম আবহ। গাঁয়ের মেঠো পথে শীতের আগমনী বার্তা। সকালে হিমেল হাওয়া আর সন্ধ্যার প্রকৃতি ঢেকে যাচ্ছে কুয়াশার হালকা চাদরে। ভোরে শিশিরের সাদা চাদরে ঢেকে যাচ্ছে পথঘাট। 

শরৎ-এর শেষ দিন ছিল কাল। আজ হেমন্তের প্রথম দিন। কার্তিক হচ্ছে ঋতু হেমন্তের প্রথম মাস। বাংলা বর্ষপঞ্জির হিসাবে আজ বুধবার পয়লা কার্তিক। বাংলাদেশের ষড়ঋতুর হিসেবে কার্তিক-অগ্রহায়ণ হেমন্তের মাস। হেমন্তের প্রকৃতি মিষ্টি সোনা রোদ মাখা। অখ- নীল আকাশ। হেমন্ত শরৎ থেকে পৃথক নয়, শীত থেকেও বিচ্ছিন্ন নয়, শীত-শরতের মাখামাখি একটি সুন্দর ঋতু। হেমন্তের শিশির ভেজা ঘাসের ডগা যেন মুক্তার মেলা।

কার্তিকের আরেকটি বর্ণনা এরকম-এই সময়ে বাংলাদেশের প্রকৃতিতে প্রগাঢ় সবুজ যেমন পাওয়া যায়, তেমনি পাওয়া যায় শীতের মিষ্টি আমেজও। গ্রীষ্মের মাটি ফাঁটানো দাবদাহ নেই, বর্ষার অঝোর ধারায় ভিজে যাওয়া বা কাঁদা নেই, হাড় কাঁপানো শীত যে মাসে নেই তারই নাম কার্তিক।

পঞ্জিকার পাতায় যতই আজ দিন-তারিখ দিয়ে হেমন্ত শুরু হোক না কেন, প্রকৃতিতে ঋতুটি এসে গেছে এক সপ্তাহ কিংবা এর একটু আগেই।

ফসল ও ফল-ফুল:
এক সময় বাংলায় বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। কারণ, ধান উৎপাদনের ঋতু হলো এই হেমন্ত। বর্ষার শেষ দিকে বোনা আমন-আউশ শরতে বেড়ে ওঠে। আর হেমন্তের প্রথম মাস কার্তিকে ধান পরিপক্ব হয়। এ ঋতুতে ফোটে গন্ধরাজ, মল্লিকা, শিউলি, কামিনী, হিমঝুরি, দেব কাঞ্চন, রাজ অশোক, ছাতিম, বকফুল।এই ঋতুতে পাওয়া যায় শীতের ঘ্রাণ।

নবান্ন উৎসব:
হেমন্তের ফসল কাটাকে কেন্দ্র করেই নবান্ন উৎসবের সূচনা হয়। নবান্ন (অর্থঃ নতুন অন্ন) পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব। নবান্ন হল নতুন আমন ধান কাটার পর সেই ধান থেকে প্রস্তুত চালের প্রথম রান্না উপলক্ষে আয়োজিত উৎসব, যা সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে আমন ধান পাকার পর এই উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

বাংলাদেশের কোন কোন অঞ্চলে ফসল তোলার পরদিনই নতুন ধানের নতুন চালে ফিরনি-পায়েশ অথবা ক্ষীর তৈরি করে আত্মীয়স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর ঘরে ঘরে বিতরণ করা হয়। নবান্নে জামাইকে নিমন্ত্রণ করা হয়, মেয়েকেও বাপের বাড়িতে ‘নাইওর’ আনা হয়।

নবান্নে নানা ধরনের দেশীয় নৃত্য, গান, বাজনাসহ আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পালিত হয়। লাঠিখেলা, বাউলগান, নাগরদোলা, বাঁশি, শখের চুড়ি, খৈ, মোয়ার পসরা বসে গ্রাম্য মেলায়।

অন্যান্য দেশে হেমন্ত:
ইউরোপে ১ সেপ্টেম্বর থেকে হেমন্তের শুরু। সেখানে একে বলা হয় বৈচিত্র্যময় রঙ ও পাতা ঝরার ঋতু। ঝাউ গাছগুলো ছাড়া সব গাছেরই পাতা এ সময় ঝরে যেতে শুরু করে এবং শীতের আগমনের আগেই সব বৃক্ষই ন্যাড়া হয়ে যায়।

সাহিত্যে হেমন্ত:
নবান্ন, হেমন্ত ঋতুর শান্ত প্রকৃতি অনেক কবি সাহিত্যিক নানাভাবে তাদের রচনায় তুলে ধরেছেন, তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য; রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম সুফিয়া কামাল, জসীম উদ্ দীন, জীবনানন্দ দাশ প্রমুখ।

কাজী নজরুল ইসলামের ‘অঘ্রাণের সওগাত’ কবিতায় নবান্নের চিত্রটি বেশ উপভোগ্য। হেমন্ত ঋতুতে নিয়ে কবি সুফিয়া কামালের ছড়া-কবিতা হেমন্ত।

সবুজ পাতার খামের ভেতর

হলুদ গাঁদা চিঠি লেখে

কোন্ পাথারের ওপার থেকে

আনল ডেকে হেমন্তকে?

এছাড়াও এই ঋতুকে নিয়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হিমের রাতে ওই গানটিতে লিখেছেনঃ

হিমের রাতে ওই গগনের দীপগুলিরে,

হেমন্তিকা করল গোপন আঁচল ঘিরে।

ঘরে ঘরে ডাক পাঠালো ‘দীপালিকায় জ্বালাও আলো,

জ্বালাও আলো, আপন আলো, সাজাও আলোয় ধরিত্রীরে।’

বিশ্বকবি তার নৈবদ্যে স্তব্ধতা কবিতায় লিখেছেনঃ

‘আজি হেমন্তের শান্তি ব্যাপ্ত চরাচরে

জনশূন্য ক্ষেত্র মাঝে দীপ্ত দ্বিপ্রহরে

শব্দহীন গতিহীন স্তব্ধতা উদার

রয়েছে পড়িয়া শ্রান্ত দিগন্ত প্রসার

স্বর্ণশ্যাম ডানা মেলি।’

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব:
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক কয়েক বছর ধরে ষড়ঋতুর মধ্যে চারটি ঋতুর উপস্থিতি টের পাওয়া যাচ্ছে। আর বাকি দুটি ঋতু হেমন্ত ও বসন্ত প্রকৃতি থেকে প্রায় হারিয়ে গেছে।