ঢাকা, মঙ্গলবার ২৬, নভেম্বর ২০২৪ ১৭:২৯:৫৩ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
কুমিল্লায় ট্রেনের ধাক্কায় নারীসহ ৫ অটোরিকশা যাত্রী নিহত ভারত থেকে আলু ও পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ, বেড়েছে দাম গ্রীসে অভিবাসীদের নৌকাডুবি: ৬ শিশুর মরদেহ উদ্ধার ১৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় কাঁপছে নীলফামারী বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ, বন্দরগুলোতে সতর্ক সংকেত খালেদা জিয়াকে উমরাহ পালনের আমন্ত্রণ জানাল সৌদি আরব পঞ্চগড়ে জেঁকে বসেছে শীত, তাপমাত্রা নামল ১৩ ডিগ্রিতে

আধুনিকতার কবি কামিনী রায়

আল আমিন

প্রকাশিত : ০৫:২৮ এএম, ১২ নভেম্বর ২০১৩ মঙ্গলবার

করিতে পারিনা কাজ, সদা ভয়, সদা লাজ/সংশয়ে সংকল্প সদা টলে/পাছে লোকে কিছু বলে৷ আড়ালে আড়ালে থাকি, নীরবে আপনা ঢাকি/সম্মুখে চরণ নাহি চলে/পাছে লোকে কিছু বলে৷ এই একটি মাত্র কবিতার মাধ্যমে বাংলা ভাষাভাষি মানুষের কাছে তিনি ব্যাপকভাবে পরিচিত৷ বাংলা সাহিত্যে তার অবদান অপরিসীম৷ সাহিত্য সাধনার পাশাপাশি তিনি করেছেন সমাজসেবা৷ বাংলার নারী সমাজের উন্নয়নের তার অবদান অবিস্মরণীয়৷ তিনি কবি কামিনী রায়৷ এই কৃতি নারী জন্মেছিলেন তত্‍কালীন চন্দ্রদ্বীপে৷ চন্দ্রদ্বীপ বরিশালের পূর্বনাম৷ এই এলাকাটি ছিল তত্‍কালীন বঙ্গ প্রদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল৷ বরিশাল কীর্তনখোলা নদীর তীরে অবস্থিত৷ উত্তরে শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জ, পশ্চিমে গোপালগঞ্জ, পিরোজপুর ও ঝালকাঠি, দক্ষিণে বরগুনা ও পটুয়াখালী এবং পূর্বে ভোলা ও লক্ষীপুর৷ অগি্নযুগের ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলন-সংগ্রামে বরিশালের অবদান নানাদিক দিয়ে শ্রেষ্ট৷ এখানে জন্ম হয়েছে অসংখ্য জগত্‍ বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিক, শিল্পী, শিক্ষাবিদ, বিজ্ঞানী, দার্শনিক ও রাজনীতিবিদের৷ এই অঞ্চলের কবিদের মধ্যে রূপসী বাংলার কবি জীবনান্দ দাশের পরে যার নাম চলে আসে তিনি হলেন কবি কামিনী রায়৷ কবি কামিনী রায় জন্মেছিলেন সিপাহী বিপ্লবের সাত বছর পর৷ ১৮৬৪ সালের ১২ অক্টোবর৷ পূর্ববঙ্গের বাকেরগঞ্জের বাসান্ডা গ্রামে (বর্তমানের বরিশাল)৷ তার বাবা চন্ডীচরণ সেন ছিলেন একজন খ্যতিমান গ্রন্থকার৷ মা বামাসুন্দরী দেবী৷ কামিনী রায়ের পড়াশুনার হাতেখড়ি পরিবারে৷ বিশেষ করে মা-বাবার কাছে৷ মায়ের কাছে তিনি বর্ণপরিচয় প্রথম ভাগ ও দ্বিতীয় ভাগ শিশুশিক্ষা শেষ করেন৷ স্কুলে ভর্তি হওয়ার কিছুদিন পরে `আপার প্রাইমারী` পরীক্ষা দিয়ে তিনি প্রথম স্থান অর্জন করেছিলেন৷ ১৪ বছর বয়সে মাইনর পরীক্ষা দিয়ে তিনি প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হন৷ মাত্র ৮ বছর বয়স থেকে তিনি কবিতা লিখতে শুরু করেন৷ তিনি ১৮৮০ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা বেথুন স্কুল হতে এন্ট্রান্স (মাধ্যমিক) পরীক্ষা ও ১৮৮৩ খ্রিস্টাব্দে ফার্স্ট আর্টস (উচ্চ মাধ্যমিক সমমানের) পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন৷ বেথুন কলেজ হতে তিনি ১৮৮৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতের প্রথম নারী হিসেবে সংস্কৃত ভাষায় স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন৷ এরপর তিনি বেথুন কলেজেই শিক্ষকতা শুরু করেন৷ ১৮৯৪ সালে কেদারনাথ রায়ের সাথে কামিনী রায়ের বিয়ে হয়৷ তাদের ছিলো ৩ সন্তান৷ ১৯০০ সালে তাদের প্রথম সন্তানটি মারা যায়৷ তার নাম জানা যায়নি৷ ১৯০৩ সালে কামিনী রায়ের বোন প্রমা কুসুম মারা যান৷ ১৯০৬ সালে তার ভাই ও বাবা মারা যান৷ ১৯০৮ সালে তার স্বামী কেদারনাথ রায় ঘোড়ায় গাড়ী উল্টে গিয়ে আঘাত পেয়ে মারা যান৷ এরপর তার সন্তান লীলা ও অশোকের মৃতু্য হয়৷ একের পর এক আপনজনদের হারিয়ে তিনি নি:স্ব-নিসঙ্গ হয়ে পড়েন৷ ভেঙে পড়েন তিনি৷ সব হারানোর ব্যাথা তার রচনায় ফুটে ওঠে স্পষ্ট হয়ে৷ যে সময়ে মেয়েদের শিক্ষাও বিরল ঘটনা ছিল, সেই সময়ে কামিনী রায় নারীবাদে বিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলেন৷ লিখেছিলেন সকল অসঙ্গতির বিরুদ্ধে ও নারী জাগরণের পক্ষে৷ তিনি ব্যক্তিগত বেদনা, দেশপ্রেম, জীবন চিন্তার নানাভাব বিভিন্ন রূপকল্পনা ও প্রতিমার মধ্য দিয়ে তাঁর কাব্যে নতুন রূপে প্রকাশ করেছেন৷ মানবতাবোধ এবং নৈতিকতা নিয়েও তিনি লিখেছেন৷ তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সংস্কৃত সাহিত্য দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন৷ কামিনী রায়ের প্রথম কাব্য গ্রন্থ `আলো ও ছায়া` ১৮৯৯ সালে প্রকাশিত হয়৷ এই কবিতার বই প্রকাশের সাথে সাথেই তা পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে৷ এ ছাড়া `মহাশ্বেতা`, `দ্বীপ ও ধূপ` `মাল্য ও নির্মাল্য`-১৯১৩, `অশোক সংগীত`-১৯১৪, `জীবন পথে`-১৯৩০, শিশুদের জন্য লিখিত কবিতা `পৌরাণিকী`-১৮৯৭ সালে প্রকাশিত হয়৷ তাঁর `চন্দ্রাতীরের জাগরণ` নাট্যকাব্যটি বিশেষ জনপ্রিয় হয়েছিল৷ কামিনী রায় সব সময় শিক্ষাধ্যানীদের ভালবাসতেন৷ উত্‍সাহ দিতেন, সহযোগীতা করতেন অন্য সাহিত্যিকদেরও৷ ১৯২৩ সালে কবি সুফিয়া কামালকে লেখালেখিতে উত্‍সাহ দেন এবং মনোনিবেশ করতে বলেন৷ তিনি নারী শ্রম তদন্ত কমিশনের সদস্য (১৯২২-২৩) ছিলেন৷ তিনি ১৯৩০ সালে বঙ্গীয় লিটারারি কনফারেন্সের সভাপতি ও ১৯৩২-৩৩ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের সহ-সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন৷ কবি কামিনী রায়ের স্মরণে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় `জগত্তারিনী পুরস্কার` প্রবর্তন করেছে৷ প্রখ্যাত বাঙালি কবি কামিনী রায় ১৯৩৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের হাজারীবাগে মৃতু্যবরণ করেন৷ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বিশেষ করে নারী কল্যাণে তার অগ্রণী ভূমিকা ছিল৷ কামিনী রায় ভারতের প্রথম মহিলা অনার্স গ্র্যাজুয়েট৷ তার বিখ্যাত `পাছে লোকে কিছু বলে` কবিতাটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো ঃ `পাছে লোকে কিছু বলে` কামিনী রায়ের করিতে পারিনা কাজ, সদা ভয়, সদা লাজ, সংশয়ে সংকল্প সদা টলে, পাছে লোকে কিছু বলে৷ আড়ালে আড়ালে থাকি, নীরবে আপনা ঢাকি সম্মুখে চরণ নাহি চলে , পাছে লোকে কিছু বলে৷ কাঁদে প্রাণ যবে, আঁখি সযতনে শুষ্ক রাখি নির্মল নয়নের জলে, পাছে লোকে কিছু বলে৷ একটি স্নেহের কথা প্রশমিত পারে ব্যথা চলে যায় উপেক্ষার ছলে, পাছে লোকে কিছু বলে৷ মহত্‍ উদ্দেশ্য যবে একসাথে মিলে সবে, পারিনা মিলিতে সেই দলে, পাছে লোকে কিছু বলে৷ বিধাতা দিয়েছে প্রাণ, থাকি সদা ম্রিয়মান, শক্তি মরে ভীতির কবলে, পাছে লোকে কিছু বলে৷