ঢাকা, শনিবার ২৩, নভেম্বর ২০২৪ ২৩:৪৩:২৮ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
সাময়িক বন্ধের পর খুললো যমুনা ফিউচার পার্ক ডেঙ্গুতে আরও ১০ জনের প্রাণ গেল ডেঙ্গুতে এ বছরেই ৫১ শিশুর প্রাণহানি মাকে হত্যা করে থানায় হাজির ছেলে আমদানির সাড়ে তিনগুণ দামে বাজারে বিক্রি হচ্ছে আলু ঢাকায় আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল সাতক্ষীরায় সাফজয়ী তিন নারী ফুটবলারের গণসংবর্ধনা

উহানের সেই নিখোঁজ সাংবাদিক যেভাবে ফিরলেন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৪:৫৩ পিএম, ২৫ এপ্রিল ২০২০ শনিবার

উহানের সেই নিখোঁজ সাংবাদিক যেভাবে ফিরলেন

উহানের সেই নিখোঁজ সাংবাদিক যেভাবে ফিরলেন

চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে মাস দুয়েক আগে চীনের একজন সাংবাদিককে ধাওয়া দিয়ে আটক করা হয়েছিল। প্রায় দু'মাস নিখোঁজ থাকার পর আবার তাকে দেখা গেছে।

ওই সাংবাদিক লি যেহুয়াকে ধরার জন্য পুলিশ যখন ২৬শে ফেব্রুয়ারি তার পেছু নেয় এবং তাকে আটক করে, তখন ওই তাড়া খাওয়ার ও আটকের পুরো ঘটনা তিনি সরাসরি সম্প্রচার করেন। এরপর প্রায় দু'মাস তিনি উধাও হয়ে যান। তাকে প্রকাশ্যে কোথাও দেখা যায়নি। তার কোন খোঁজ ছিল না কোথাও।

এরপর বুধবার তিনি একটি ভিডিও প্রকাশ করেন, যাতে তাকে বলতে শোনা যায় তিনি উহানে দু সপ্তাহ ছিলেন "কোয়ারেন্টিনে", এরপর তার দেশের বাড়িতে তিনি আরও দীর্ঘ সময় ''কোয়ারেন্টিনে'' কাটান।

তাকে বলা হয় যেহেতু তিনি "স্পর্শকাতর মহামারি এলাকা" ঘুরেছেন, তাই তার কোয়ারেন্টিনে থাকা দরকার।

বিবিসি বাংলার খবরে বলা হয়েছে, ওই সাংবাদিকে ধরার জন্য পুলিশ যখন ২৬ ফেব্রুয়ারি তার পেছু নেয় এবং তাকে আটক করে, তখন ওই তাড়া খাওয়ার ও আটকের পুরো ঘটনা তিনি সরাসরি সম্প্রচার করেন। এরপর প্রায় দু’মাস তিনি উধাও হয়ে যান। তাকে প্রকাশ্যে কোথাও দেখা যায়নি। তার কোনো খোঁজ ছিল না কোথাও।

গত বুধবার লি যেহুয়া একটি ভিডিও প্রকাশ করেন, যাতে তাকে বলতে শোনা যায় তিনি উহানে দু সপ্তাহ ছিলেন কোয়ারেন্টিনে। পরে তার দেশের বাড়িতে তিনি আরও দীর্ঘ সময় কোয়ারেন্টিনে কাটান। তাকে বলা হয়, যেহেতু তিনি ‘স্পর্শকাতর মহামারি এলাকা’ ঘুরেছেন, তাই তার কোয়ারেন্টিনে থাকা দরকার।

কে এই লি যেহুয়া?

লি যেহুয়া নাগরিকদের বিষয়ে সাংবাদিকতা করতেন। চেন চ্যউশি নামে আরেকজন সাংবাদিক উহান থেকে নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার পর লি যেহুয়া উহানে হাজির হন। উহান থেকে তার প্রথম ভিডিওতে তিনি বলেছিলেন, কেন তিনি সেখানে গেছেন?

তিনি বলেন, ‘আমি উহানে ঢোকার আগে, চীনের মূল ধারার সংবাদমাধ্যমে কাজ করে আমার একজন বন্ধু, আমাকে বলেছিল এই মহামারি নিয়ে সব খারাপ খবর কেন্দ্রীয় সরকার সংগ্রহ করছে।’

লি যেহুয়া আরও বলেন, ‘স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে বলা হয়েছিল শুধু রোগীদের সেরে ওঠা নিয়ে ভালো খবর দিতে পারবে। কিন্তু রোগীদের আরোগ্যের বিষয়টা কতটা সত্যি তা নিয়ে সন্দেহ ছিল, কারণ আমার বন্ধুদের কাছে আমি সেরকম খবরই পেয়েছিলাম।’

সে সময় তার রিপোর্ট করা খবরে সংক্রমণের কথা ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ ছিল, ছিল শেষকৃত্যের জায়গায় উপচেপড়া ভিড়ের অভিযোগ। চীনের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে, ইউটিউবে এবং টুইটারে লক্ষ লক্ষ বার তার এই ভিডিও মানুষ দেখেছে, শেয়ার করেছে।

কি ঘটেছিল ২৬ ফেব্রুয়ারি?

নতুন ভিডিওতে লি যেহুয়া, যার বয়স ধারণা করা হয় ২৫, বলেছেন, তিনি উহানে যখন গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলেন তখন আরেকটি গাড়ি থেকে তাকে থামতে বলা হয়। তবে না থেমে তিনি জোরে গাড়ি চালিয়ে চলে যান।

লি যেহুয়া বলছেন, তিনি ‘বিভ্রান্ত’ ছিলেন এবং ‘ভয়ে ছিলেন’। ৩০ কিলোমিটার (১৯ মাইল) পথ তাকে অন্য গাড়ি থেকে ধাওয়া করা হয়। তার এই যাত্রাপথের বেশ কিছুটা অংশ তিনি ইউটিউবে তুলে দেন- ‘এসওএস’ এই নাম দিয়ে।

তিনি তার বাসায় পৌঁছে গোটা ঘটনা লাইভ স্ট্রিম করতে শুরু করেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই পুলিশ বা নিরাপত্তা বাহিনীর ইউনিফর্ম পরা ‘বেশ কয়েকজন’ লোক কাছের এক বাসার দরজায় কড়া নাড়ে। তিনি ঘরের আলো নিভিয়ে দেন এবং নি:শব্দে ঘরে বসে থাকেন। শুনতে পান পুলিশ অফিসাররা অন্য বাড়ির দরজায় কড়া নাড়ছে। শেষ পর্যন্ত তার দরজায় এসে তারা কড়া নাড়ে। তিনি সাড়া না দিয়ে চুপচাপ বসে থাকেন তিন ঘণ্টা।

তিন ঘণ্টা পর আবার তারা কড়া নাড়ে। লি যেহুয়া তখন দরজা খুলে দিলে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তার আঙুলের ছাপ আর রক্তের নমুনা নেওয়া হয়। তারপর তাকে নিয়ে যাওয়া হয় একটা ঘরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য।

তাকে বলা হয়, সে নাগরিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। তাকে বলা হয়, তার কোনো শাস্তি হবে না। কিন্তু যেহেতু সে ‘মহামারি আক্রান্ত স্পর্শকাতর এলাকায়’ গিয়েছিল, তাই তাকে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।

এরপরের ঘটনা?

লি যেহুয়াকে পুলিশ প্রধান নিয়ে যান উহানের সরকারি কোয়ারেন্টিন আবাসনে। সেখানে তার ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম সব নিয়ে নেওয়া হয়। সেখানে তাকে দুই সপ্তাহ থাকতে হয়। তিনি বলছেন, তিনি সেখানে ‘নিরাপদে’ ছিলেন এবং তাকে চীনা টেলিভিশনের খবর দেখতে দেওয়া হচ্ছিল।

এরপর তাকে গাড়ি করে নিয়ে যাওয়া হয় সে যে শহরের ছেলে, সেই শহরের একটি কোয়ারেন্টিন কেন্দ্রে। সেখানে আরও দু সপ্তাহ থাকার পর তাকে পরিবারের সদস্যদের কাছে ফিরে যেতে দেওয়া হয়।

‘এই গোটা সময়টাতে পুলিশ কোনোরকম নির্যাতন না করে আইন মেনে আমার সঙ্গে আচরণ করে। আমার বিশ্রাম ও খাওয়াদাওয়ার ওপর নজর রাখে। আমার দেখাশোনা করে বেশ ভালোভাবে’ বলেন ওই সাংবাদিক।

লি যেহুয়া বলেন, ‘কোয়ারেন্টিন শেষ করে আমি পরিবারের লোকেদের কাছে ফিরে যাই। যারা আমার দেখাশোনা করেছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। আশা করি, যারা মহামারিতে আক্রান্ত তারা সেরে উঠবেন। চীনের মঙ্গল হোক।’ এর বাইরে আর কিছুই বলছেন না তিনি।

সাংবাদিক চেন চ্যউশি ৭৫ দিন পরে এখনো নিখোঁজ। তার বন্ধুরা যে টুইটার অ্যাকাউন্ট চালান সেখানে বলা হয়েছে, নিখোঁজ হওয়ার পর তার কোনো হদিশ পাওয়া যায়নি।

ফ্যাং বিন নামে আরেকজন সাংবাদিক যিনি উহানের ঘটনা নিয়ে রিপোর্ট করছিলেন, ফেব্রুয়ারির পর থেকে তারও কোন খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।