ঢাকা, রবিবার ২৪, নভেম্বর ২০২৪ ১২:২৪:৫৪ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
মিরপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, নারী-শিশুসহ দগ্ধ ৭ ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৩৮, লেবাননে ৩৩ প্রাণহানী প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিয়েই প্রিয়াঙ্কার বাজিমাত বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ব্রিটিশ রাজা চার্লস আজ ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায় বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ব্রিটিশ রাজা চার্লস কুড়িগ্রামে বাড়ছে শীতের প্রকোপ, তাপমাত্রা নামল ১৫.৬ ডিগ্রিতে

এক যুগে ৩০০ মৃত্যুদণ্ডের সাক্ষী মিচেল

অনলাইন ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ০২:৩২ পিএম, ১১ মে ২০১৮ শুক্রবার

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে অন্য যে কোনো অঙ্গরাজ্যের চেয়ে বেশি সংখ্যায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। আর টেক্সাস ডিপার্টমেন্ট অফ ক্রিমিনাল জাস্টিস (টিডিসিজে) এর একজন কর্মী হিসেবে সেই সব মৃত্যুদণ্ডের অন্তত শ`তিনেক ঘটনা নিজের চোখে প্রত্যক্ষ করেছেন মিচেল লায়ন্স নামে এক নারী।


২০০০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ১২ বছর ধরে মৃত্যুকে চাক্ষুষ করাই ছিল তার কাজ। ডেথ চেম্বার বা মরণ-কুঠুরিতে নিয়ে মৃত্যুশয্যায় শেষ শয়ানে হাত-পা বেল্ট দিয়ে আটকে মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্ত আসামীর শরীরে দেয়া হয় ইনজেকশন। ইনজেকশনের সেই প্রাণঘাতী তরল কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই চিরতরে নিস্তেজ করে দিয়েছে কত নারী ও পুরুষের দেহ।


ফুসফুস থেকে শেষ বাতাসটুকু বেরিয়ে যাবার সময় তাদের কেউ হয়তো সামান্য কেশেছে কেবল। আবার কেউ হয়তো দম আটকে আসায় হাঁস-ফাঁস করেছে খুব। আর কেউ হয়তো হাঁপড়ের মতন ফুঁস করে একটা শব্দ তুলেছেন শুধু। এভাবেই বহু মানুষের বুক থেকে প্রাণ বায়ু বেরিয়ে যেতে দেখেছেন মিচেল লায়ন্স।


২০০০ সালে প্রথমে এইসব মৃত্যুকে তিনি দেখেছেন পত্রিকার সাংবাদিক হিসেবে। আর এরপর টিডিসিজে-এর মুখপাত্র হিসেবে মৃত্যুকে সামনে থেকে পরখ করাই ছিল তার কাজ। এইসব মৃত্যুকে খুব নিকট থেকে দেখতে গিয়ে তার নিজের উপরেও গভীর প্রভাব পড়েছিল। ১২ বছর ধরে প্রত্যক্ষ করা মৃত্যুর ঘটনাগুলো নিয়ে সম্প্রতি প্রকাশ পেয়েছে তার স্মৃতিচারণমূলক গ্রন্থ `ডেথ রো: দি ফাইনাল মিনিটস`।

 

সেই বিষয়েই এক সাক্ষাৎকারে সম্প্রতি তিনি জানিয়েছেন নিজের অনুভূতি ও অভিজ্ঞতার কথা। ১৮ বছর আগে প্রথম যে মৃত্যুর ঘটনাটি প্রত্যক্ষ করেছিলেন লায়ন্স, সেটি এখনো ভুলতে পারেননি। তার চোখের সামনেই নিস্তেজ হয়ে গিয়েছিল রিকি ম্যাকগিনের দেহ। ম্যাকগিনের মতন আরো অনেকের চেহারা তার স্পষ্ট মনে আছে। যদিও কী ছিল তাদের অপরাধ, কী ছিল তাদের নাম সেইসব কিছু আজ আর তার মনে নেই।


১৭ বছর বয়সী নেপোলিয়ন বিজলে`র মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হবার পর অফিস থেকে বাড়ি যাবার সময় সারা পথ ধরে অঝোরে কেঁদেছিলেন মিজ লায়ন্স। তার শুধু বারবার মনে হচ্ছিলো, বেঁচে থাকলে ছেলেটি হয়তো সমাজের কাজে আসতে পারতো।

 

এমন ভাবনা মনে আসায় তিনি আবার মানসিক টানাপড়েনেও থেকেছেন। কারণ নেপোলিয়ন বিজলে`র অপরাধও ছিল গুরুতর। তিনি এটিও ভেবেছেন, বিজলের হাতে যিনি খুন হয়েছিলেন লায়ন্স নিজে যদি সেই পরিবারের কেউ হতো তাহলে তার মৃত্যুদণ্ডই হয়তো চাইতেন তিনিও।

 

এখন ইনজেকশন দিয়ে মৃত্যু কার্যকর করা হলেও একসময় তা করা হতো ইলেকট্রিক চেয়ারে বসিয়ে। ১৯২৪ থেকে ১৯৬৪ পর্যন্ত এভাবেই ৩৬১ জনের শাস্তি কার্যকর হয়েছে। ১৯৭২ সালে সুপ্রিম কোর্টের এক আদেশে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ডকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সেই আদেশে মৃত্যুদণ্ডকে `নৃশংস` হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছিল।


কিন্তু এই আদেশের কিছু দিনের মধ্যেই অামেরিকার বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মৃত্যুদণ্ডের বিধান ফিরিয়ে আনার দাবী ওঠে। এক পর্যায়ে নিষিদ্ধ হওয়ার দুই বছরের মধ্যেই টেক্সাসে আবারো বহাল হয় মৃত্যুদণ্ড দেয়ার বিধান।


টেক্সাসে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার সংখ্যা অনেক বেশি। কেবল ২০০০ সালেই সেখানে এই শাস্তি পেয়েছিল ৪০ জন।
সাম্প্রতিক জরিপে অবশ্য দেখা যাচ্ছে, টেক্সাসে মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা আগের তুলনায় কমেছে। যদিও তা এখনো অন্যান্য অঙ্গরাজ্যের তুলনায় বেশি।

 

এদিকে আমেরিকায় মৃত্যুদণ্ডের এই বিধান নিয়ে সমালোচনায় সরব ইউরোপ। মৃত্যুদণ্ডকে তারা `খুন` বলেই বর্ণনা করে। অনেকের ভাষায়, মৃত্যুদণ্ড হচ্ছে রাষ্ট্রের তত্ত্বাবধানে হত্যাকাণ্ড।

কিন্তু খুব সহসাই টেক্সাস থেকে মৃত্যুদণ্ডের বিধান উঠে যাবার কোনো সম্ভাবনাও দেখছেন না মিচেল লায়ন্স। কারণ ২০১৩ সালের এক জরিপেই উঠে এসেছিল যে, টেক্সাসের অন্তত ৭৪ শতাংশ মানুষ মৃত্যুদণ্ডকে সমর্থন করছে।


লায়ন্স যখন টিডিসিজে-এর মুখপাত্র ছিলেন তখন বহু মানুষের কাছ থেকে ঘৃণা, ক্ষোভ ও প্রতিবাদ মিশ্রিত চিঠি ও ইমেইল পেয়েছেন। কখনো-কখনো এইসব চিঠি ও ইমেইলের জবাবে তিনি-ও কড়া ভাষায় বলে দিয়েছেন, টেক্সাসের সরকারী কাজে নাক না গলাতে।

লায়ন্স যখন গর্ভবতী হলেন, যখন মা হলেন, যখন ঘটনাগুলো প্রত্যক্ষ করতে থাকলেন প্রতিদিন তখন তার মনের উপর বড্ড চাপ তৈরি হয়েছিল। চোখের সামনে একজন প্রাণবন্ত মানুষকে চিরঘুমে তলিয়ে যেতে দেখতে-দেখতে তিনি হাঁপিয়ে উঠেছিলেন।

সূত্র : বিবিসি