কিশোরী তারামনের যুদ্ধ জয়ের গল্প
অনু সরকার | উইমেননিউজ২৪প্রকাশিত : ০৩:৫২ পিএম, ১ এপ্রিল ২০২১ বৃহস্পতিবার

বীর মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি। ফাইল ছবি।
দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা এক বীর মুক্তিযোদ্ধা তারামন বিবি। একাত্তরের সেই উত্তাল সময়ে কিশোরী তারামন অত্যন্ত সাহসীকতার সঙ্গে সমরযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তখন তার বয়স ছিলো মাত্র তের বা চৌদ্দ।
দুর্ধর্ষ সেই কিশোরীর অপরিমেয় সাহসিকতার জন্য তাকে বীর প্রতীক খেতাব দেওয়া হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে তার হাতে সেই সম্মাননা তুলে দিতে লেগে যায় দীর্ঘ ২২ বছর। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তার বীরত্বভূষণ নম্বর ৩৯৪। গেজেটে নাম মোছাম্মৎ তারামন বেগম।
তারামন বিবি ১৯৫৭ সালে কুড়িগ্রাম জেলার চর রাজিবপুর উপজেলার শংকর মাধবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আবদুস সোহবান এবং মায়ের নাম কুলসুম বিবি। বাবা ছিলেন এক গরীব কৃষক। অভাবের সংসারে অনেকগুলো ভাইবোনের মধ্যে অনাদরে-অবহেলায় বেড়ে ওঠেন তারামন। অভাব এতটাই তীব্র ছিলো যে কোনো কোনো দিন দুবেলা খাবারও জুটতো না তাদের। ঠিক এ অবস্থায় হঠাৎ বাবার মৃত্যু হলে আরও কঠিন অবস্থায় পড়ে যায় তারামনদের পরিবার। মা কুলসুম বিবি ভিক্ষা করে সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দিতেন। এ অবস্থায় তারামন বিবির লেখাপড়া করার সুযোগ হয়নি। তবুও তিনি প্রকৃতির কাছ থেকে শিক্ষা নিয়েছেন, শিক্ষা নিয়েছেন জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে।
১৯৭১ সালে যুদ্ধচলাকালে তারামন বিবি ১১ নম্বর সেক্টরে নিজ গ্রাম কুড়িগ্রামের শংকর মাধবপুরে ছিলেন। তখন ১১ নম্বর সেক্টরের নেতৃত্বে ছিলেন সেক্টর কমান্ডার আবু তাহের।
মুক্তিযুদ্ধে তারামন বিবি প্রত্যক্ষ ও সশস্ত্রভাবে অংশগ্রহণ করেন। যুদ্ধ চলাকালে আশেপাশে মানুষরা জীবন বাঁচাতে ভারতের দিকে পা বাড়ায়। কিন্তু তারামনের পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় ভারতে যাবে না। তারা একই গ্রামের আজিজ মাস্টারের বাড়িতে আশ্রয় নেয়। এই আজিজ মাস্টার ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক। তার বাড়ির পাশে নদীর পাড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ক্যাম্প ছিলো। ওই ক্যাম্পের কমান্ডার ছিলেন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের হাবিলদার মুজিব হালদার। কিশোরী তারামন বিবিকে তিনি ধর্মকন্যা ডেকেছিলেন।
মুজিব হালদার তারামনের সাহস ও শক্তির পরিচয় পেয়ে তাকে নিজ ক্যাম্পে নিয়ে আসেন। ক্যাম্পে প্রথম দিকে তারামনকে দিয়ে রান্না-বান্না করানো হতো। রান্না শেষে যোদ্ধাদের খাওয়া-দাওয়া করানোর দায়িত্বও ছিলো তার।
প্রথম দিকে সহযোদ্ধাদের জন্য রান্নাবান্নার পাশাপাশি তিনি ছদ্মবেশে খবর সংগ্রহ করতেন। কখনো ভিখেরি, কখনো পঙ্গু সেজে তিনি পাকসেনাদের নানা গোপন তথ্য এনে দিতেন মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। গোপনে অস্ত্র পৌঁছে দিতেন তাদের।
এসব কাজের ফাঁকে কমান্ডার মুজিব তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে শত্রুকে আক্রমণের কলাকৌশল ও স্পাইংয়ের কাজ করার কৌশল শেখান। কিশোরী তারামন খুব দ্রুত এসব করায়োত্ত করে ফেলেন। তারপর কোদালকাঠী, রাজীবপুর, তারাবর সাজাই এবং গাইবান্ধা অঞ্চলে তারামন সশস্ত্র সংগ্রামে অংশগ্রহণ করেন। প্রতিটি যুদ্ধের বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এই সাহসী কিশোরী।
১১ নম্বর সেক্টরের অধীনে তিনি প্রথম সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। প্রথম যুদ্ধে অংশগ্রহণের অভিজ্ঞতা কিশোরী তারামনের কাছে ছিলো বিস্ময়কর। এ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন হাবিলদার মুজিব হালদার নিজে। সে দিন দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত একনাগাড়ে যুদ্ধ চলে। তারামন এ সময় অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেন। পাকসেনারা এ সময় বিমান হামলা করে বোম্বিং করে। দুপুর থেকে বিকেল অব্দি পাকাসেনার আক্রমণ করতেই থাকে। মুক্তিযোদ্ধারা বাংকার ও ট্রেঞ্চ থেকে যুদ্ধ চালিয়ে যায়। এ যুদ্ধে তাদের বারবার ট্রেঞ্চ ও অবস্থার পরিবর্তন করতে হয়। যুদ্ধে নতুন নতুন কৌশল ও পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তারামনসহ অন্যান্য যোদ্ধারা যুদ্ধ করতে থাকেন।
এদিনের পর আরও আট থেকে দশটি সশস্ত্র যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন বীর যোদ্ধা তারামন। প্রতিটি যুদ্ধেই বিজয়ী হয়ে ফেরেন তিনি।
বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর ১৯৭৩ সালে তৎকালীন সরকার মুক্তিযুদ্ধে তারামন বিবিকে তার সাহসীকতা ও বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য ‘বীর প্রতীক’ উপাধিতে ভূষিত করেন। কিন্তু ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত ২২ বছর তাকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি।
১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষক বিমল কান্তি দে প্রথম তার সন্ধান পান। এ কাজে বিমল কান্তিকে সহায়তা করেন কুড়িগ্রামের রাজীবপুর কলেজের অধ্যাপক আবদুস সবুর ফারুকী।
এরপর নারীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা কয়েকটি সংগঠন তাকে ঢাকায় নিয়ে আসে। সেই সময় তাকে নিয়ে পত্রিকায় প্রচুর লেখালেখি হয়। অবশেষে ১৯৯৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকারের উদ্যোগে আনুষ্ঠানিকভাবে তারামন বিবিকে বীরত্বের জন্যে বীর প্রতীক মেডেল দেওয়া হয়।
তারামন বিবির স্বামীর নাম আবদুল মজিদ। এই দম্পতির এক ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। তারামন বিবি দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থতায় ভুগছিলেন। ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর ৬১ বছর বয়সে তিনি কুড়িগ্রামের রাজিবপুরে নিজ বাসায় মৃত্যুবরণ করেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে রাজিবপুর উপজেলার কাচারীপাড়া তালতলা কবরস্থানে সমাধিস্থ করা হয়।
- ইউটিউব দেখে স্ট্রবেরি চাষ, এক মৌসুমে আয় ৩০ লাখ টাকা
- হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহী বটগাছ
- টিশ ২ এমপিকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি ইসরায়েলে
- এক্সিম ব্যাংকে চাকরি, লাগবে না অভিজ্ঞতা
- প্রস্তুতি ম্যাচে প্রত্যাশিত ফল
- শাকিবের সঙ্গে অভিনয় করার জন্য মুখিয়ে ছিলেন ইধিকা
- গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে এবার চুরি হলো আফ্রিকান লেমুর
- ঢাকাসহ যেসব বিভাগে বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস
- এসএসসি পরীক্ষা ১০ এপ্রিল থেকে শুরু
- দ্য ওয়ার্ল্ড স্টপস ফর গাজা: সায়েন্সল্যাবে বিক্ষোভ মিছিল
- সারাদেশে চলছে ‘নো ওয়ার্ক নো ক্লাস’ কর্মসূচি
- অনিশ্চয়তায় ৩৬৮ হজযাত্রী
- মানিকগঞ্জে কার্টনে মোড়ানো লা*শের পরিচয় মিলেছে
- রাজশাহীতে বাস-ট্রাক সংঘর্ষে নিহত ৩, আহত ৫০
- রাজধানীতে বহুতল ভবনে আগুন, নিহত ১
- ‘উইমেন ফর উইমেন,এ রিসার্চ এন্ড স্টাডি গ্রুপ’এর বার্ষিক সভা
- বইমেলায় আইরীন নিয়াজী মান্নার ছড়ার বই ‘টুটুলের কাছে চিঠি’
- মিষ্টি আলুর হালুয়া রেসিপি
- খালেদা জিয়ার ৮ মামলা বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ
- তোফায়েল আহমেদের বাড়িতে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ
- অভিনেত্রী শাওন ও সাবাকে ছেড়ে দিয়েছে ডিবি
- বনানীতে শেখ সেলিমের বাসায় আগুন
- লন্ডনে খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে যা জানা গেল
- নিরুপায় বাফুফে, ঘোর সংকটে নারী ফুটবল
- ঢাকা আন্তর্জাতিক ম্যারাথন ২০২৫ উদ্বোধন
- রোজার ঈদের পর দেশে ফিরবেন খালেদা জিয়া
- যুক্তরাষ্ট্রে নারী নেত্রীদের সঙ্গে জায়মা রহমানের বৈঠক
- শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে ট্রাইব্যুনালে বিএনপির অভিযোগ
- শবে বরাতে করণীয় ও বর্জনীয়
- জাতীয় নাগরিক পার্টির ২১৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন