ঢাকা, শনিবার ২৩, নভেম্বর ২০২৪ ৫:৩৪:৩০ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
ঢাকায় আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল সাতক্ষীরায় সাফজয়ী তিন নারী ফুটবলারের গণসংবর্ধনা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পঞ্চগড়ে, বাড়ছে শীতের তীব্রতা পেঁয়াজ-সবজি-মুরগির দাম কমলেও আলুর দাম বাড়তি রাজধানীতে মা-মেয়েকে এসিড নিক্ষেপ করে ছিনতাই

কুমিল্লার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণ যাচ্ছে না নৌকার অভাবে

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:২৯ পিএম, ৩০ আগস্ট ২০২৪ শুক্রবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

ভারত থেকে হু হু করে নেমে আসা পানি ও কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ভয়াবহ বন্যায় কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকায় এখনো পানির নিচে। এদিকে নাঙ্গলকোট উপজেলার রায়কোট উত্তর ইউনিয়নের পিপড্ডা গ্রামের বাসিন্দা আরিফুর রহমান মজুমদার একজন শতবর্ষী মানুষ। নিজেই হাঁটাচলা করে মসজিদে যেতে পারেন; বাড়িতে সাংসারিক বিভিন্ন কাজও সামলান।

আরিফুর রহমান মজুমদার শতবর্ষী এই বৃদ্ধের বাড়িও তলিয়ে গেছে। দীর্ঘ এই জীবনে নিজের চোখে কখনও এত পানি দেখেননি বলে জানান তিনি। এছাড়া বানভাসিদের ত্রাণ নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করে এই বৃদ্ধ বলেন, আমার বয়স এখন প্রায় ১১০ বছর। আমার এই জীবনে এত বড় বন্যা, এত পানি দেখিনি। কোথা থেকে এল এই পানি সেটাই ভেবে কূল পাচ্ছি না। আমার বাবার কাছেও কখনও শুনিনি এমন বন্যার কথা। মানুষের বাড়িঘর পানির নিচে। ডুবে গেছে সব সড়কপথ। বানভাসি মানুষের কষ্ট দেখে নিজের কাছে খারাপ লাগে। আরও কষ্ট লাগে যখন দেখি যারা বন্যাদুর্গত, যারা কষ্টে আছেন- তারাই ত্রাণ সহায়তা পায় না। বিশেষ করে যাদের বাড়ি বিভিন্ন সড়কের মুখপাতে এবং ডাঙার মধ্যে- তারাই ত্রাণ বেশি পাচ্ছে। কিন্তু নদী ও খালের পাড়ে যেসব মানুষের বাড়ি, তাদের খোঁজও কেউ নিচ্ছে না। আমি অনুরোধ করবো যারা ত্রাণ সহায়তা দিচ্ছেন তারা যেন সমবণ্টন করেন।


এ ধরনের অভিযোগ যে শুধু আরিফুর একাই করেছেন তা না; বরং প্রত্যন্ত অঞ্চলের অনেক বন্যার্ত মানুষের এই অভিযোগ আছে।

তারা বলছেন, কুমিল্লার বাইরে থেকে যারা ত্রাণ নিয়ে আসছেন তাদের অনেকেই ট্রাকে করে আসছেন। কিন্তু বন্যার্তদের কাছে পৌঁছার সব রাস্তাঘাটে পানি। কোথাও কোথাও আবার রাস্তাঘাট ভেঙেও গেছে।

অপরদিকে ত্রাণ এলেই সড়কের আশপাশের মানুষ ভিড় করে গাড়ি আটকে দিচ্ছে। তারা বারবার ত্রাণ পাচ্ছে। ত্রাণ না পেলে গাড়িতে হামলার ঘটনাও ঘটছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

বৃহস্পতিবার গোমতী নদী পাড়ের বিভিন্ন এলাকার পানিবন্দি মানুষ এসব অভিযোগ করেন।

গোমতী নদীর প্রতিরক্ষা বাঁধ ভেঙে যাওয়া এবং সালদা ও ঘুংঘুর নদীর ভাঙনের কারণে কার্যত পানির ওপর ভাসছে বুড়িচং ও ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ত্রাণ সহায়তা আসছে বুড়িচং উপজেলার জন্য।

ত্রাণের গাড়ি এলেই সেটিকে জটলা বেঁধে ঘিরে ধরা হচ্ছে। যার কারণে ত্রাণবাহী গাড়িগুলো ঠিকভাবে সামনের দিকে অগ্রসর হতে পারে না। কিছু গাড়ি ভিড় ঠেলে একটু সামনে অগ্রসর হলেও অনেক সময় নৌকার অভাবে গন্তব্যে খাবার পৌঁছে দিতে পারছে না।

এ ধরনের প্রবণতার কথা স্বীকার করেছেন বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাহিদা আক্তার। তিনি বলেন, আমাদের পুরো উপজেলা এখনো পানির উপর ভাসছে। প্রতিনিয়ত পানির মাত্রা বাড়ছে। ইউনিয়ন পরিষদের সচিবদের দিয়ে দুর্গম এলাকায় খাবার পৌঁছানো হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি সমভাবে ত্রাণ বিতরণ করতে। এরই মধ্যে একাধিক স্থানে ত্রাণের গাড়িতে হামলা হয়েছে। সেনাবাহিনী মাঠে কাজ করছে। তবে যে পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা দরকার, তা পাওয়া যাচ্ছে না। এসব বিষয়ে আমরা কাজ করছি।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার নাগাইশ এলাকার বাসিন্দা আনোয়ার হোসাইন বলেন, এ উপজেলার শতভাগ গ্রাম বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এখানে পর্যাপ্ত ত্রাণ পাচ্ছেন না বানভাসিরা। যা ত্রাণ আসছে তা রাস্তার মুখপাতে শেষ হয়ে যাচ্ছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ অনেক কষ্টে আছেন। রয়েছে বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট।

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) স ম আজহারুল ইসলাম বলেন, এরই মধ্যে এই উপজেলার জন্য আসা সরকারি বরাদ্দের টাকা প্রায় শেষ। বুড়িচং হয়ে এখানে ত্রাণ পৌঁছানো বর্তমানে সম্ভব না। কারণ পানি অনেক বেশি, সব সড়কপথ পানিতে ভাসছে। এ উপজেলার জন্য যারা ত্রাণ কাজে সহায়তা করতে চান, তারা মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জ হয়ে ব্রাহ্মণপাড়ায় ঢুকতে পারবেন। সেভাবে ত্রাণ সহায়তা নিয়ে আসার জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।

জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, কয়েকটি স্থানে পানি কমলেও কুমিল্লার বন্যা পরিস্থিতির এখনো উন্নতি হয়নি। ১৭ উপজেলার মধ্যে ১৪টিতেই ভয়াবহ রূপ দেখাচ্ছে আকস্মিক এই বন্যা। ১৪ উপজেলায় পানিবন্দি মানুষের সংখ্যা প্রায় ১১ লাখ।