ঢাকা, রবিবার ২২, ডিসেম্বর ২০২৪ ৭:৩৯:১০ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
বাতিল হওয়া বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি তাপমাত্রা ও কুয়াশা নিয়ে যা জানাল আবহাওয়া অফিস বনানীর ২২নং বস্তিতে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাউন্সিলরদের স্বপদে বহাল চায় না জাতীয় নাগরিক কমিটি সাভারে চলন্ত বাসে ডাকাতি, ছুরিকাঘাতে আহত ৪ উত্তরায় রেস্টুরেন্টে আগুন, ৭ জনকে জীবিত উদ্ধার

ছোটদের জীবন রাঙিয়ে তোলার গল্প

আহমাদ স্বাধীন | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৪৬ এএম, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১ শুক্রবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

তিনজন বাচ্চাকে তিনটা গল্প লিখতে দেয়া হলো, সম্পুর্ন নিজের বানানো গল্প। 

ওরা লিখলো। 

একটা গল্প লেখা হলো রাজবাড়ির ভূত নিয়ে। আর দুটো গল্প লেখা হলো অদ্ভুত সুন্দর জীবনঘনিষ্ঠ কাহিনি নিয়ে। অবাক হয়ে দেখলাম বাচ্চারা জীবন বোঝে। 
 
তারপর তিনজনকে লিখে দেয়া হলো আলাদা আলাদা দুটি করে ধাঁধা, গ্রাম বাংলার সহজ প্রচলিত কালিদাস পন্ডিতের ধাঁধা। 

কারো জন্য সহজ কারো জন্য‌ কঠিন হলেও ধাঁধাগুলো নিজে নিজেই সমাধান করলো ওরা। যদিও কিছুটা ক্লু দিয়ে সহযোগিতা করতে হয়েছে। 

তারপর বিকেলের রোদ পরে গেলে উঠোনে নেমে ওদের নিয়ে কয়েকটি গেম খেললাম। 

অবশ্যই ভার্চুয়ালে না। মোবাইলেও না। একদম ধুলোমাখা খেলা যাকে বলে। এক পা তুলে দৌঁড় দেয়ার খেলাটাও হলো। ঘরে ফিরে বারান্দায় হামাগুড়ি দিয়ে ইয়োগা টাইপ একটা খেলার মধ্য দিয়ে শেষ করলাম ফিজিক্যাল গেম শো। 

সন্ধ্যায় ওদের দেয়া কথা অনুযায়ী পুরস্কার ঘোষণা করলাম। সেরা গল্পকার, দ্রুত ধাঁধা সমাধানকারী এবং এক পা তুলে দৌঁড়ে বিজয়ী ঘোষণা করে তিনজনকেই পুরস্কার দিলাম একটা করে গল্পের বই।

এই ছিলো আমার বাচ্চাদের সাথে কাটানো একটা বিকেলের গল্প। আমার হাজার ব্যস্ততার মধ্যে থেকেও বাচ্চাদের সাথে সময় কাটানোর এরকম ছোটখাটো গল্প রোজ তৈরি হয়। সপ্তাহে একবার হয় এমন বড় গল্প। এক এক দিন এক একভাবে রাঙিয়ে তুলি সেই গল্পগুলো। যা শিশুদের শুধু মেধা বিকাশ করে না, ওদের স্বপ্ন দেখতেও শেখায়। ওদের সাহসী করে তোলে। ওদের আনন্দ নিয়ে বাঁচতে শেখায়, ভালোবাসতে শেখায়। আর শেখায় জীবনবোধ। 

শিশুরা কখনো কারো হুকুম শুনে তা করতে প্রস্তুত থাকে না। ওরা দুরন্ত হবে, ছুটোছুটি করবে, কথা শুনবে না। এটাই স্বভাবজাত প্রবৃত্তি। 

ভেবে দেখুন, আপনার শিশুবেলাও এর ব্যতিক্রম ছিলো না। শিশুরা কথা শুনতে না চাইলেও অনুকরণ করতে পছন্দ করে। তাদের বলে যেটা করাতে পারবেন না। তা নিজে করলে ওরা তা আগ্রহ নিয়ে করবে। 

নিজেরা সারাক্ষণ স্মার্টফোনে আসক্ত হয়ে বাচ্চাদের ধমকাবেন, ‘খবরদার, ফোন ধরবে না, বই পড়ো, বাইরে খেলাধুলা করো’।
 
নিজেরা ঝগড়ায় লিপ্ত থাকবেন, মিথ্যে বলবেন। ওদের সামনে অন্যের সমালোচনা করবেন, নিন্দা করবেন। আর ওদের শেখাবেন, ঝগড়া করা ভালো না। মিথ্যা বলা পাপ। কাউকে গালি দেবে না...ইত্যাদি ইত্যাদি। 

সরি বস্, এভাবে হবে না। ওরা হুকুম শুনবে না। আপনি বাচ্চাকে যেভাবে দেখতে চান তা নিজেরা চর্চা করুন। আপনার বলতে হবে না। বাচ্চারাও স্বাভাবিকভাবে তাতে অভ্যস্ত হয়ে যাবে। ওদের সময় দিতে হবে। এটা ভীষণ দরকার। শিশুদের মানসিক বিকাশে অভিভাবকদের সময় দেয়ার বিকল্প নাই। 

নামি দামি স্কুলে ভর্তি করা, মোটা অংকের শিক্ষক রেখে টিউশনি করানো। আর তাদের খুব ভালোভাবে থাকা খাইয়ার ব্যবস্থা করেই আপনি ভাবতে পারেন না যে, আপনার ছেলেমেয়েরা আদর্শবান হয়ে উঠবে। 

মাটির সাথে ওদের সম্পর্ক তৈরি করুন। মেঘ, ফুল, চাঁদ, পাখি, রূপকথার রাজকুমার, রাজকন্যার সাথে তাদের পরিচয় করান। জেনারেল শিক্ষা ব্যবস্থার পাশাপাশি ধর্মীয় শিক্ষাটাও দিন আনন্দের সাথে। দেখবেন আপনার চাইতে হবে না, আল্লাহর ইচ্ছায় ওরা মানুষ হয়ে উঠবে। ওরা নৈতিকতা শিখবে। 

ডাক্তার, ইন্জিনিয়ার, তৈরি করার প্রচলিত দৌঁড়ে ওদের যুক্ত না করে শৈশবটাকে বুঝতে দিন। 

জীবনকে চিনতে দিন। সব সময় ভালো খাবার খাওয়াতে হবে, ভালো পোশাকটা পরাতেই হবে। খেলনা চাইলেই সেটা এনে দিতেই হবে, এই মানসিকতা শিশুদেরও বাস্তবতা বুঝতে দেয় না। 

সামর্থ্য থাকলেও মাঝে মাঝে সহনীয় পর্যায়ের কৃত্রিম অভাব তৈরি করে বাচ্চাদের জীবন, অভাব, বাস্তবতা বুঝতে দিন। দেখবেন বাচ্চাদের নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না। ওরাই নিজেকে নিয়ে ভাবতে শিখবে। 

কোন সিদ্ধান্ত চাপিয়ে না দিয়ে চেষ্টা করুন সেই ব্যাপারে প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে। দেখবেন স্বেচ্ছায় সে তা নিয়ে নিচ্ছে। এরপরেও দেখা যাবে অল্প বিস্তর ভুল করবে ওরা। সব সময় ক্ষমা করে উদারতা দেখালে তা ভবিষ্যতের জন্য ক্ষতির কারণ হবে। তাই শাসন করার মানসিকতাও রাখতে হবে। 

একটা ব্যাপারে আমরা অনেকেই ভুল করি, মা শাসন করতে গেলে বাধা দিয়ে থামিয়ে দেন বাবা, আবার বাবা শসান করতে গেলে বাধা দিয়ে থামিয়ে দেন মা। অথবা তাদের শাসনের সময় বাধা দিয়ে শিশুটিকে আগলে নেয় পরিবারের অন্য কোন সদস্য। 

এই অভ্যাসটাও বাচ্চাদের জন্য ক্ষতিকর। এতে করে ওরা ভেবে নেয় যে ছোটখাটো অপরাধ করলেও তার জন্য সাজা হবে না। কেউ না কেউ বাঁচিয়ে দেবে। 

অথচ উচিত কারো এরকম শাসনের সময় তাতে কোন কথা না বলা। শিশুদের বুঝতে দিন, অপরাধ অল্প হলেও তার জন্য শাস্তি আছে। আর তা থেকে বাঁচাতে কেউ আসবে না, বরং পরবর্তীতে আর এই অপরাধ না করাই হচ্ছে বাঁচার উপায়। 

শিশুরা হলো কাদামাটির মত। ওদের গড়তে হয় খুব যত্ন আর ভালোবাসা নিয়ে। আপনার আমার আচরণ নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়েই ওরা বেড়ে ওঠে। তাই অভিভাবকত্ব করার জন্য আপনাকে অবশ্যই এই বিষয়গুলো মেনে চলতে হবে। অবশ্যই যদি আপনি আপনার সন্তানকে একজন ভালো মানুষ হিসেবে দেখতে চান। 

লেখক পরিচিতি: আহমাদ স্বাধীন: শিশুসাহিত্যিক ও গল্পকার।