ঢাকা, রবিবার ১৭, নভেম্বর ২০২৪ ৪:৩৬:৪৭ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
মহাকাশচারীদের নিয়ে উপন্যাস ‘অরবিটাল’ লিখে বুকার জিতলেন হার্ভে জাতীয় সংসদে কোনো সংরক্ষিত নারী আসন থাকবে না রাষ্ট্র সংস্কারই এই সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ: প্রধান উপদেষ্টা দিনাজপুরে তাপমাত্রা ১৬ দশমিক ৮, বাড়ছে শীতের প্রকোপ আজ ঢাকায় আসছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভারতে হাসপাতালে ভয়াবহ আগুন, ১০ শিশুর মৃত্যু ডাকাতির সময় নিয়ে যাওয়া শিশু মোহাম্মদপুর থেকে উদ্ধার

জেনে নিন ব্রেস্ট ক্যানসার নির্ণয় ও প্রতিকার

অনলাইন ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:২২ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০২১ শনিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীর বেঁচে থাকা নির্ভর করে রোগটি কোন স্টেজে আছে তার ওপর। প্রাইমারি স্টেজে শনাক্ত হলে রোগীর পাঁচ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ৮০ শতাংশ। কিন্তু রোগটি ছড়িয়ে গেলে সম্ভাবনা থাকে মাত্র পনেরো শতাংশ। প্রাইমারি স্টেজে ব্রেস্ট ক্যানসারের চিকিৎসা খুব কার্যকর। এতে চিকিৎসার ফলাফল অনেক ভালো হয় এবং এটি কম ব্যয়বহুল। 


লক্ষণ ও কারণ

ক্যানসার আক্রান্ত মহিলাদের মধ্যে ব্রেস্ট ক্যানসার বিশ্বব্যাপী এবং বাংলাদেশ উভয় ক্ষেত্রেই প্রধানতম ক্যানসার। নতুনভাবে ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্তের হার সাম্প্রতিক সময়ে মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। একটি পরিসংখ্যানে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রতি বছর নতুনভাবে ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত হয় ১২৭৬৪ জন মহিলা যাদের মধ্যে মারা যায় ৬৮৪৬ জন। প্রাইমারি স্টেজে ব্রেস্ট ক্যানসার শনাক্ত হলে তা মৃত্যুর হার কমিয়ে নারীদের জীবনমান উন্নত করতে সহায়তা করে।

ব্রেস্ট ক্যানসার আক্রান্ত নারীর লক্ষণ

ব্রেস্ট ক্যানসারের একটি লক্ষণ হলো স্তনে চাকা অনুভব করা। তবে অনুভব করা বেশিরভাগই চাকা ক্যানসারের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় এটা fibroadenoma এবং benign অবস্থা হয়ে থাকে। নারীরা স্তন প্রশিক্ষিত নার্স বা চিকিৎসককে দিয়ে পরীক্ষা করাতে পারেন। ক্যানসার হলে স্তনের গঠনে পরিবর্তন হতে পারে, স্তনের বোঁটা হতে তরল পদার্থ বের হতে পারে এবং চামড়ায় লাল আঁশযুক্ত প্যাঁচ হতে পারে।

বেস্ট ক্যানসারের কারণ

ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো বেশি বয়স, অল্প বয়সে মাসিক শুরু এবং দেরিতে বন্ধ হওয়া, সন্তান না হওয়া, বেশি বয়সে প্রথম সন্তান জন্মদান, সন্তানকে স্তনপান না করানো এবং ব্রেস্ট ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস। জন্ম নিয়ন্ত্রণের বড়ি এবং হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি গ্রহণের ইতিহাস থাকলে, চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ, স্থূলতা, শারীরিক কার্যক্রম (physical activity) ও শরীরচর্চা না করা এবং অ্যালকোহল সেবন ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। বাংলাদেশে নারীদের গড় আয়ু বৃদ্ধি, সাম্প্রতিক সময়ে জীবনযাত্রার (life style) পরিবর্তন এবং উন্নত সুযোগ সুবিধা, ব্রেস্ট ক্যানসারের হার বৃদ্ধির সঙ্গে সম্পর্কিত। কিছু বস্তু যেমন সিগারেটকে ক্যানসার সৃষ্টিকারী পদার্থ হিসাবে শনাক্ত করা হয়েছে, অর্থাৎ এগুলো জেনেটিক রূপান্তর বা মিউটেশন করে ক্যানসারের সূচনা করতে সক্ষম। তবে বেশিরভাগ ক্যানসারের কারণই অজানা। ব্রেস্ট ক্যানসারের প্রকৃত কারণ জানা নেই, কিন্তু কিছু কারণ আছে যা ক্যানসারের সম্ভাব্যতা বাড়ায় বা কমায়, সেগুলো নিচে আলোচনা করা হলো-

বয়স : বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্তের হার বৃদ্ধি পায়, মেনোপজ পর্যন্ত প্রতি ১০ বছর অন্তর এ হার দ্বিগুণ হয়, তবে এরপর ক্যানসার বৃদ্ধির হার হঠাৎ করেই কমে যায়।

প্রথম মাসিক শুরু হওয়ার সময়ে বয়স এবং মেনোপজ : যেসব নারীর তাড়াতাড়ি মাসিক শুরু হয় এবং দেরিতে মেনোপজ হয় তাদের ক্ষেত্রে ব্রেস্ট ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি বেশি। যেসব নারীর ৪৫ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই মেনোপজ হয়েছে তাদের চেয়ে যাদের ৫৫ বছরের পর স্বাভাবিক মেনোপজ হয়েছে তাদের ব্রেস্ট ক্যানসার হওয়ার আশঙ্কা দ্বিগুণ। যেসব নারীর ৩৫ বছরের আগে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে দুটি ডিম্বাশয় অপসারণ করা হয়, তাদের ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি যেসব নারীর স্বভাবিক মেনোপজ হয় তাদের চেয়ে অনেক কম।

প্রথম গর্ভাবস্থার বয়স : সন্তান না হওয়া এবং দেরিতে প্রথম সন্তানের জন্মদান এই দুই অবস্থাই আজীবন ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বাড়িয়ে দেয়। যেসব নারীর ২০ বছর বয়সের আগে সন্তান হয়েছে তাদের চেয়ে যেসব মহিলার ৩৫ বছর বয়সের পর প্রথম সন্তান হয়েছে তাদের ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি দ্বিগুণ।

স্তন্য পান করানো : কোনো নারী তার জীবনে যদি পূর্ণ এক বছর সন্তানকে স্তন্য পান করায় তাহলে তা তাকে স্তন ক্যানসারের হাত থেকে রক্ষা করে। যেসব নারী তার জীবনকালীন দীর্ঘদিন সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ান, তার ক্ষেত্রে ব্রেস্ট ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে যায়।

জেনেটিক মিউটেশন

একটা কোষের জিন পরিবর্তন বা রূপান্তর (Mutation) হওয়া মানে একটা কোষ যে প্রক্রিয়ায় কাজ করে তার ধারার পরিবর্তন হওয়া। এ রূপান্তর গর্ভকালীন অবস্থা থেকে বিদ্যমান যা মা-বাবার জীনের বৈশিষ্ট্য (genetic trait) থেকে অথবা জন্মের পরও এই রূপান্তর স্বতঃস্ফূর্তভাবে হতে পারে। উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া BRCA1 এবং BRCA2 জিনকে ব্রেস্ট ক্যানসার সৃষ্টির জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কারণ হিসাবে শাক্ত করা হয়েছে। গবেষকরা দুই ধরনের জিন শনাক্ত করেছেন, যেগুলো কোষ বৃদ্ধির প্রক্রিয়া এবং বিভাজন নিয়ন্ত্রণ করে এবং আংশিকভাবে ক্যানসারে রূপান্তরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যেসব নারীর বংশানুক্রমে BRCA1 অথবা BRCA2 তে ক্ষতিকারক মিউটেশন হয়েছে, তাদের স্তন, ডিম্বাশয় এবং বৃহৎ অন্ত্রের ক্যানসারের আজীবন উচ্চ ঝুঁকির আশঙ্কা দেখা গেছে। যেসব নারীর BRCA1 এবং BRCA2 আছে তাদের ব্রেস্ট ক্যানসারের আজীবন ঝুঁকির আশঙ্কা ৫৬ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ হতে পারে।

পারিবারিক ইতিহাস

পশ্চিমা দেশগুলোতে শতকরা দশ ভাগ পর্যন্ত ব্রেস্ট ক্যানসার হয় জেনেটিক প্রিডিসপোজিশনের (Genetic predisposition) কারণে। ব্রেস্ট ক্যানসারের সম্ভাব্যতা বংশগতভাবে অটোজোমাল ডমিনেন্ট জেনেটিক রোগ হিসাবে প্রকাশিত হতে পারে। যেসব নারীর ব্রেস্ট ক্যানসারের কোনো পারিবারিক ইতিহাস নেই, তাদের চেয়ে যেসব নারীর আত্মীয়দের (first-degree relative) মাঝে ব্রেস্ট ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস আছে, তাদের ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি নয় গুণ বেশি।

আগের বিনাইন ব্রেস্ট রোগের ইতিহাস : যেসব নারীর ব্রেস্টে সিস্ট, ফাইব্রোএডিনোমা, ডাক্ট প্যাপিলোমা ও স্ক্লেরোসিস এডিনোসিস আছে তাদের ক্ষেত্রে ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি কিছুটা বেশি।

খাদ্য : স্বল্প চর্বিযুক্ত খাবার হরমোনজনিত কার্যকারিতার মাধ্যমে ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারে। এটা প্রমাণিত যে, খাদ্যের চর্বি এবং মেনোপজ পরবর্তী ইস্ট্রজেন হরমোনের মাত্রা ব্রেস্ট ক্যানসারের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। গবেষণায় বলা হয়েছে, অধিক ফল এবং শাকসবজি গ্রহণ ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি কমিয়ে আনে।

মাইক্রোনিউট্রিয়েন্ট (Micronutrient) গ্রহণও একটা ভূমিকা পালন করতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, খাদ্যে বেশি বিটা কেরোটিন গ্রহণ ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি কমিয়ে আনে। দৈনন্দিন খাবারের তালিকায় প্রচুর পরিমাণে, ফলেট (folate) বিটা-ক্যারোটিন (beta-carotene) এবং ভিটামিন এ ও সি এর আধিক্য এলকোহল সেবনে সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলোকে বিপরীতমুখী করে।

ওজন : মেনোপজ পরবর্তী নারীদের মধ্যে স্থূলতা ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি দ্বিগুণ হারে বাড়িয়ে দেয়। পক্ষান্তরে মেনোপজ পূর্ববর্তী নারীদের ক্ষেত্রে স্থূলতার সঙ্গে ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্তের হার কম।

এলকোহল বা অন্যান্য মাদকদ্রব্য গ্রহণ : এলকোহল গ্রহণ ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্তের হার কিছুটা বাড়িয়ে দেয় কিন্তু এলকোহল গ্রহণের মাত্রা, গ্রহণের স্থায়িত্ব, বয়স, মেনোপজের অবস্থা এবং অন্যান্য কারণের সঙ্গে এর সম্পর্ক সামঞ্জস্যহীন।

ব্যায়াম : অল্প বয়সী নারীদের ক্ষেত্রে সক্রিয় ব্যায়াম ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। বিভিন্ন ধরনের গবেষণায় শারীরিক পরিশ্রমের সঙ্গে ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকির মধ্যকার সামঞ্জস্যতা বিদ্যমান রয়েছে। শারীরিক পরিশ্রম ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকি ৩০-৪০ শতাংশ কমিয়ে দিতে পারে।

জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি : ব্রেস্ট ক্যানসার সৃষ্টিকারী পদার্থগুলোর মধ্যে ইস্ট্রোজেন বিশেষভাবে আলোচিত যার উৎস শরীরের ভেতর অথবা বাইরের যে কোনোটি হতে পারে। যদিও কিছু গবেষণা মন্তব্য করে, যারা সাম্প্রতিককালে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ব্যবহার করেছেন এ ঝুঁকি তাদের মাঝেই সীমিত। একটি কেস কন্ট্রোল গবেষণায়, জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ব্যবহার না করা এবং ১২ বছর ও এর অধিক সময় জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ব্যবহারের মধ্যে কিছুটা সম্পর্ক থাকলেও পরিসংখ্যানগত ভাবে ব্রেস্ট ক্যানসার বৃদ্ধির উল্লেখযোগ্য কোনো সম্পর্ক ছিল না। জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি ব্যবহার বন্ধ করার ১০ বছর পর ব্রেস্ট ক্যানসারের ঝুঁকির সম্ভাবনা থাকে না।

হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (HRT) : অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (HRT)-এর সঙ্গে ব্রেস্ট ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি পায়, বিশেষ করে যারা সম্প্রতি এ চিকিৎসা ব্যবহার করেছেন। যেসব নারী হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি গ্রহণ করছেন তাদের ব্রেস্ট ক্যানসার হলে তারা প্রাথমিক পর্যায়েই সেবা গ্রহণে আসেন কারণ, এসব মহিলারা নিয়মিত ব্রেস্ট পরীক্ষার মাধ্যমে স্বাভাবিক এবং অস্বাভাবিক স্তনের পার্থক্য সহজেই অনুমান করতে পারেন।

আয়োনাইজিং রেডিয়েশন এক্সপোজার

আয়োনাইজিং রেডিয়েশন এক্সপোজারের সঙ্গে ব্রেস্ট ক্যানসারের অতিরিক্ত ঝুঁকির আশঙ্কা পরিলক্ষিত হয়।