ঢাকা, শুক্রবার ২২, নভেম্বর ২০২৪ ৭:৪৬:৫৪ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
ঠাকুরগাঁওয়ের তিন নারী ফুটবলারকে সংবর্ধনা ডেঙ্গুতে একদিনে নয়জনের প্রাণহানী সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়া, স্বাগত ও ধন্যবাদ জানালেন ড. ইউনূস রাজধানীতে আজও অটোরিকশা চালকদের সড়ক অবরোধ আজ ১২ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায় পঞ্চগড়ে তাপমাত্রা নামল ১৪ ডিগ্রিতে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের সুযোগ কাজে লাগাতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ সরকার

তারাশঙ্করের হাঁসুলী বাঁক ৭৭ বছরে দাঁড়িয়ে

অনলাইন ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৮:৪৪ পিএম, ২০ অক্টোবর ২০২৩ শুক্রবার

বইয়ের প্রচ্ছদ

বইয়ের প্রচ্ছদ

‘উপকথায় ছোট নদীটি ইতিহাসের বড় নদীতে মিশে গেল’- উপকথা ইতিহাসের ধার ধারে না। তার চলা নিজস্ব চলা। মানুষের মুখে মুখে, বদলে যেতে যেতে, নীতিজ্ঞান দিতে দিতে উপকথা চলে। প্রাণীর মুখে মানুষের মত কথা বসিয়ে কিংবা জড়বস্তুকে পারসোনিফাই করে উপকথার কাহিনী গড়িয়ে চলে। উপকথা ইতিহাসে মেশে কখন? তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’ উপন্যাসে সেটিই যেন দেখিয়ে দিয়েছেন। উপকথার মধ্য দিয়ে তিনি উপস্থিত করেছেন রাঢ়ের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক রূপকে। সেই ইতিহাসেরই ৭৭ বছর পূর্ণ হতে চলেছে।

কংগ্রেসি রাজনীতি করা তারাশঙ্কর খেটেছেন জেল। অংশ নিয়েছেন দেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে। তিনি কাজ করতে চেয়েছেন মানুষের জন্য। ঘুরেছে তাঁর জীবনের বাঁক। রাজনীতি থেকে সাহিত্যে পদার্পণ করেও তিনি থেকেছেন সেই মানুষের মধ্যেই। 

তারাশঙ্করের ভাষায় যারা ‘ফরাসী ধরনে হাসেন, বিলিতি ধরনে কাশেন আর রুশীয় ধরনে টেবিলে কিল মেরে কথা বলেন’- তাদের দলে তিনি পড়েন না। তাঁর মধ্যে মানুষকে জানার আত্মপ্রত্যয় ছিল। 

তিনি বলেছেন, ‘তাই আমি এদের কথা লিখি। এদের কথা লিখবার অধিকার আমার আছে।’ 

তিনি লিখলেন ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’। লেখা প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৪৬ সালে। ‘হাঁসুলী বাঁকের উপকথা’ ৭৭ বছরে এসে দাঁড়িয়েছে।

‘হাঁসুলী’ হল আদিবাসী সম্প্রদায়ের মেয়েদের গলায় পরার গয়না। কোপাই নদী তার মাঝামাঝি অংশে যেখানে কুয়ে নদীর সঙ্গে মিলিত হয়েছে, সেখানে গঠন হয়েছে একটি বাঁক। যাকে দেখতে লাগে ঠিক ওই রূপোলী রঙের হাঁসুলীর মতই। সেই নদীর পাড়েই বাঁশবাদি গ্রামে কাহার সম্প্রদায়কে নিয়ে আবর্তিত হয় উপন্যাসের ঘটনা। নতুন ও পুরনোর সংঘাত। আদিমতা ও ঐতিহ্যকে পিছনে ফেলে বাঁশবাদি গ্রামের কাহারেরা বৃহত্তর বিশ্বের সঙ্গে মিশে যায়। আধুনিকতার সঙ্গে, পুঁজির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ওঠে। কিন্তু আগে যারা অন্ধবিশ্বাসে, সাপের কামড়ে মারা যেত, আজ তারা শহরের রাস্তায় না খেতে পেয়ে মারা যায়। যান্ত্রিক শব্দে ঢেকে যায় বাঁশবাদি গ্রামের সেই অলৌকিক শিষ।

হাঁসুলী বাঁকের ইতিহাসকে যখন শেষ হয়ে গেল বলে মনে করেন পাঠক, তখনই হাঁসুলী বাঁকের বয়োজ্যেষ্ঠ সুচাঁদ বলে ওঠে, ‘…শেষ কি হয়? কিছুর শেষ কি কখনও হয়েছে? চন্দ্র সূয্যি যত কাল, তার পরেও তো শেষ নাই’। সে কথাই সত্যি। শেষ হয়নি। ৭৭ বছর পরেও হাঁসুলী বাঁক আছে সেই হাঁসুলী বাঁকেই। বোলপুর ছাড়িয়ে প্রান্তিক, লাভপুর হয়ে কোপাইয়ের সেই বাঁক আজও অক্ষুণ্ণ। যদিও আজ নদীর ধারে ইটভাঁটার দৌরাত্ম্য। হয় অবৈধ বালি তোলার কাজ। রাঢ়ের লাল মাটি, গাছ, জঙ্গল, মানুষ সবই বদলে গেছে অল্প অল্প । 

আর তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই গভীর, নির্জন বর্ণনাগুলি উপলব্ধি করতে হলে প্রয়োজন হবে কল্পনাপ্রবণ মনের।