ঢাকা, রবিবার ২৪, নভেম্বর ২০২৪ ১৪:৫১:৫৮ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
মিরপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, নারী-শিশুসহ দগ্ধ ৭ ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৩৮, লেবাননে ৩৩ প্রাণহানী প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিয়েই প্রিয়াঙ্কার বাজিমাত বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ব্রিটিশ রাজা চার্লস আজ ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায় বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ব্রিটিশ রাজা চার্লস কুড়িগ্রামে বাড়ছে শীতের প্রকোপ, তাপমাত্রা নামল ১৫.৬ ডিগ্রিতে

দেশে বেড়েছে ধর্ষণ, সচেতনতা জরুরী

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ০৩:২৯ পিএম, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭ বৃহস্পতিবার

দেশে চলতি বছর নারী ধর্ষণ এবং কন্যাশিশু নির্যাতনের ঘটনা গত বছরের তুলনায় বেড়েছে বলে দাবি করছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। দেশে ধর্ষণের ঘটনা বেড়ে চলছে। স্কুলছাত্রী থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী, গৃহবধূ, মডেল-অভিনেত্রী, প্রতিবন্ধী নারী, এমনকি শিশু, কেউই রেহাই পাচ্ছে না ধর্ষণের কবল থেকে।

এ অপরাধ প্রতিরোধে কঠিন শাস্তির বিধানসহ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন রয়েছে। কিন্তু তারপরও ঠেকানো যাচ্ছে না ধর্ষণের ঘটনা।


গত ২৬ নভেম্বর মহিলা পরিষদ প্রকাশিত এক  রিপোর্ট  বলেছে, ২০১৭ সালে প্রথম ১০ মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৭৩৭টি। গত বছর অর্থাৎ ২০১৬ সালে এ সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৪৫৩টি।

 

পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর প্রথম ছয় মাসে ধর্ষণের মামলা হয়েছে ১৯১৪টি। প্রতি মাসে গড়ে ৩১৯টি মামলা। যে সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ভয়াবহ। গত বছরের প্রথম ছয় মাসে গড়ে মামলা হয়েছে ৩১০টি।

 

অন্যদিকে গত পাঁচ বছরে ধর্ষণের মামলা হয়েছে ১৮ হাজার ৯৮৭টি। তার মধ্যে ২০১৬ সালে ৩৭২৮টি, ২০১৫ সালে ৩৯৩০টি, ২০১৪ সালে ৩৬৯৫টি, ২০১৩ সালে ৩৯৫০ এবং ২০১২ সালে ৩৬৮৪টি। এসব মামলায় প্রতিবছর মাত্র ৪ শতাংশ আসামির সাজা হয়েছে, বাকিদের অধিকাংশই অব্যাহতি পেয়েছে।


মহিলা পরিষদের সভাপতি আয়েশা খানম জানান, প্রতি বছরই চার মাস পরপর তারা নারীর ওপর যৌন অপরাধ পরিস্থিতি সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট তৈরি করেন।


ধর্ষণ, ধর্ষণের পর হত্যা, গণধর্ষণ, হুমকি বা যৌন হয়রানির মতো অপরাধগুলোর তথ্য সংগ্রহের জন্য তারা ১৪টি সংবাদপত্র এবং তাদের শাখাগুলো থেকে পাওয়া তথ্য ব্যবহার করেন। বাংলাদেশে এ বছর প্রথম ১০ মাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ১ হাজার ৭৩৭টি।


আয়েশা খানম বলেন, এ ধরণের সব অপরাধের সংখ্যাই বাড়ছে। পিতৃতান্ত্রিক বা পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার কারণেই এ ধরনের অপরাধ সমাজে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমাদের সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণেই এমনটি হচ্ছে। আমাদের নীতি-নৈতিকতা ঝরে পড়ছে, আর নারীরা যেহেতু দুর্বল ফলে তারা এর সহজ টার্গেটে পরিণত হচ্ছে’


তিনি বলেন, বাংলাদেশে ২০১৬ সালে ধর্ষণের সংখ্যা ছিল ৭০৫ তাদের হিসেব মতে। ২০১৭ সালে এ সংখ্যা ৮৩৪-এ উঠেছে। গণধর্ষণের সংখ্যা ২০১৬তে ছিল ১৩৯ আর এ বছর সেটা ১৯৩তে উঠেছে।

 

তিনি বলেন, এ ধরণের যৌন অপরাধ দমনের জন্য দেশে কঠোর আইন থাকা সত্বেও এটা বাড়ছে। তই শুধু আইন থাকলেই হবে না এ জন্য মানসিকতার পরিবর্তন ও সচেতণতা জরুরী।

 

আদালত সূত্র জানায়, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের ঘটনায় দেশের বিভিন্ন থানায় দায়ের করা দেড় লক্ষাধিক মামলার বিচার কাজ নিষ্পন্ন হয়নি৷ মাত্র ৩ দশমিক ৬৬ শতাংশ মামলা প্রতি বছর নিষ্পত্তি হয়৷

 

এ বিষয়ে বাংলাদেশ হিউম্যান রাইট ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতনে আমাদের দেশের আইন যথেষ্ট শক্তিশালী। কিন্তু প্রয়োগে যথেষ্ট সমস্যা রয়েছে। এছাড়া বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা তো আছেই। দ্রুত বিচার আইনে ১২০ দিনের মধ্যে বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ করার কথা বলা হয়েছে, অথচ বছরের পর বছর চলে যাচ্ছে কিন্তু বিচার শেষ হচ্ছে না।

 

তিনি বলেন, ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে আলামত সংগ্রহ করা, ভুক্তভোগীকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে শারীরিক পরীক্ষা সম্পন্ন করা, সাক্ষীর দুষ্প্রাপ্যতা এসব কারণে ধর্ষণের ঘটনায় সুষ্ঠু বিচার পেতে সমস্যা হচ্ছে।

 

তিনি বলেন, রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অপরাধীরা শুধু ধর্ষণের মামলায়ই নয়, আরও অনেক ক্ষেত্রেই পার পেয়ে যাচ্ছে। বিশ্বজিতের মামলায় ছবি-ভিডিও থাকা সত্বেও সঠিক তদন্ত হয়নি। তা ছাড়া এখন হলো প্রযুক্তির যুগ, ছেলে-বুড়ো সবার হাতে মোবাইল। যার কারণে পর্নোগ্রাফি সহজলভ্য হয়ে উঠেছে। যারা এসব দেখছেন তাদের চিন্তা-ভাবনা, ধ্যান-ধারণা বিকৃত হয়ে যাচ্ছে। পরবর্তীতে তারা ধর্ষণের মতো ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছে।

 

তিনি আরো বলেন, ধর্ষণ রুখতে হলে পর্নোগ্রাফি বন্ধ, বিচারের দীর্ঘসূত্রিতা রোধ, প্রভাব-প্রতিপত্তির বিরুদ্ধে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এছাড়া মানুষের মধ্যে যে অসামাজিক চিন্তা-ভাবনা রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে গেছে, তা প্রতিরোধে সমাজে মূল্যবোধ ও অনুশাসন বাড়াতে হবে। তা না হলে ধর্ষণের মতো অপরাধ দেশে মহামারী আকার ধারণ করবে।

 

এদিকে দেশের খ্যাতিমান মনোচিকিতসক মোহিত কামাল উইমেননিউজকে বলেন, ধর্ষণ কোনো যৌনবিষয়ক সমস্যা নয়, এটি নারীর প্রতি সহিংসতা ও অপরাধ। আজও নারীকে  ‘কামসঙ্গী’, ‘বিনোদনসঙ্গী’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। শিক্ষিত পুরুষেরা নারীর প্রতি তাদের কাম ভাবনাকে লুকানোর চেষ্টা করে, আর দানব প্রকৃতির পুরুষের হামলে পড়ে। ধর্ষণ প্রতিরোধে নারীকে যৌনতার বাইরে একজন মানুষ হিসেবে দেখার সাংস্কৃতিক ও চেতনা গড়ে তুলতে হবে।