ঢাকা, রবিবার ২৪, নভেম্বর ২০২৪ ১১:২৬:৫৬ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৩৮, লেবাননে ৩৩ প্রাণহানী প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিয়েই প্রিয়াঙ্কার বাজিমাত বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ব্রিটিশ রাজা চার্লস আজ ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায় বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ব্রিটিশ রাজা চার্লস কুড়িগ্রামে বাড়ছে শীতের প্রকোপ, তাপমাত্রা নামল ১৫.৬ ডিগ্রিতে সাময়িক বন্ধের পর খুললো যমুনা ফিউচার পার্ক

নাইটিংগেল : ‘দ্য লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প’

সালেহীন বাবু | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ১১:৩৮ এএম, ১৩ মে ২০১৮ রবিবার

তিনি ‘দ্য লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প’ নামেই যেন বেশি পরিচিত। যিনি সারাজীবন আর্তের সেবায় ব্যয় করেছেন। চোখের ঘুম ও মুখের খাবার অসহায় রুগ্ন মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছেন। তিনি আর্ত-মানবতার সেবার অন্যতম উদাহরণ। নার্সিং পেশায় কিংবদন্তি ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল।

 

ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল ছিলেন অপূর্ব সুন্দরী, অন্যদিকে বিশাল দয়ালু ও স্নেহভারা হৃদয়ের অধিকারী। তাকে ’ইউরোপের অন্ধকারে আলোকবর্তিকা’ বলে আখ্যায়িত করা হয়।

 

বিশ্বের মনবদরদী সেবিকা তিনি। পৃথিবীর ইতিহাসে যত মহীয়সী নারী রয়েছে তাদের মধ্যে ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল অন্যতম। ১৮২০ সালের ১২ মে ইটালীর ফ্লোরেন্স শহরে ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের জন্ম। শহরের নামের সঙ্গে মিল রেখে ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের নাম রাখেন তার পিতা।

 

ফ্লোরেন্স শহরে তার জন্ম হলেও শৈশব কেটেছে ইংল্যান্ডের ডার্বিশায়। তার বাবা ছিলেন ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। দুইটি স্টেটের মালিক। বাবার ইচ্ছার ছিল ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে পৃথিবী খ্যাত সঙ্গীত শিল্পী হবে। কিন্তু না, সোনার চামচ মুখে নিয়ে ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের জন্ম হলেও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি কাটিয়েছেন কঠিন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত অসহায় মানুষের সেবা ও পরিচর্চার মধ্য দিয়ে। 

 

নাইটিংগেল মানবসেবার প্রতি প্রথম টান অনুভব করেন ১৭ বছর বয়সে লন্ডনে থাকা অবস্থায়। পরবর্তীতে এই টানকে তিনি ‘ঈশ্বরের ডাক’ বলে অভিহিত করেছিলেন। নাইটিংগেল যখন কেবল যৌবনে পা দিয়েছেন, তখন তার বাবা পুরো পরিবারকে নিয়ে ইউরোপ ভ্রমণে বের হন। এই ভ্রমণই তরুণী নাইটিংগেলের চিন্তাধারায় ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসে।

 

কিন্তু সেবাকে জীবনের ব্রত হিসাবে নেওয়ার কথায় প্রবল আপত্তি আসে তার পরিবার থেকে। তখন সমাজে নার্সিং ছিল নিম্নবিত্ত, অসহায়, বিধবা মহিলাদের পেশা। পরিবারের প্রবল আপত্তিকে পাশ কাটিয়ে তিনি নিজেকে নার্সিংয়ের কৌশল ও জ্ঞানে দক্ষ করে তোলেন। বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের সুবাদে তিনি সেসব দেশের সেবা ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা ও অপেক্ষাকৃত উন্নত ব্যবস্থাতে প্রশিক্ষণ লাভ করেন। ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী। অল্প সময়ের মধ্যে তিনি ল্যাটিন, গ্রিক, ইটালিয়ান, ফরাসি, জার্মানসহ নানা ভাষা আয়ত্ত করে ফেলেন। 

 

 

১৮৪৯ সালে যখন ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের বয়স ২৯ তখন প্যারিসে সেন্ট ভিনসেন্ট সোসাইটির দু`জন সন্ন্যাসিনীর সঙ্গে পরিচয় হয়। আলেকজান্দ্রিয়ায় এই সোসাইটির একটি হাসপাতাল ছিল সেখানেই ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের সেবিকা হওয়ার ইচ্ছা জাগে। ১৮৫৩ সালে লন্ডনের হার্লে স্ট্রিটে মেয়েদের একটি হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট পদে নাইটিংগেল যোগদান করেন।

 

সেই থেকে শুরু। মানব কল্যাণে মহান পেশায় জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত অবিচল ছিলেন তিনি। ১৯৫৪ সালে তুরস্কের বিরুদ্ধে রাশিয়ার যুদ্ধ শুরু হলে বিপন্ন তুরস্ককে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে ইংল্যান্ডের সেনাবাহিনী। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইংল্যান্ডের এই যুদ্ধে সৈন্যদের অবস্থা বিপন্ন। তুমুল এ যুদ্ধে বিপর্যস্ত পরিবেশে যখন প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছিল তখন ঐ সময়ের প্রতিরক্ষার দফতরের সেক্রেটারী ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলকে আর্ত-মানবতার সেবায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। 

 

নাইটিংগেলের সবচেয়ে বড় অবদান ছিল ক্রিমিয়ার যুদ্ধে অসুস্থ সৈন্যদের পাশে দাঁড়ানো। সে সময় প্রতিরক্ষা দপ্তরের সেক্রেটারি সিডনি হার্বাট নাইটিংগেলকে লিখলেন- ‘যুদ্ধের এই বিশৃঙ্খল অবস্থায় আহত সৈন্যদের তত্ত্বাবধান করার মত একজনও উপযুক্ত ব্যক্তি নেই। যদি আপনি এ কাজের ভার গ্রহণ করেন, দেশ আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকবে।’ দেশের এই ডাক নাইটিংগেল উপেক্ষা করতে পারেননি। নিজ উদ্যোগে নার্সিংয়ের জন্য ৩৮ জন নারীর একটি স্বেচ্ছাসেবী দল নিয়ে তিনি ছুটে যান। যা আজো নার্সিং সেবার এক অনন্য উদাহরণ হয়ে আছে।

 

অন্যান্য ডাক্তার-নার্সরা যখন ঘুমে ঢুলে পড়তো রাতে, তিনি একাই প্রদীপ হাতে প্রত্যেক রোগীর কাছে ছুটে গেছেন। সেবা দিয়েছেন। ক্রিমিয়ার যুদ্ধের বিপর্যস্ত সৈন্যরা তাকে আখ্যায়িত করেছিল ‘ক্রিমিয়ার ফেরেশতা’ নামে।

 

১৮৫৬ সালে যুদ্ধ শেষে ফিরে আসেন স্বদেশ ভূমিতে। ১৮৫৯ সালে সেন্ট টমাস হাসপাতালে ’ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল হোম’ নামে আধুনিক নার্সিং শিক্ষার জন্য প্রথম নার্সিং স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন।

 

১৮৫৮ সালে তিনি আটশো পৃষ্ঠার ’নোটস অন মেটার এফেক্টিং দ্যা হেলথ এন্ড হসপিটাল এডমিনিষ্ট্রেশন অফ দ্যা ব্রিটিশ আর্মি’ নামক একটি গ্রন্থ প্রকাশ করেন। এছাড়া তিনি নার্সিং-এর উপর অনেক বই লিখেছেন। ইংল্যান্ডের মানুষ তাকে সম্মান জানাতে তৎকালিন সময়ে ৫০ হাজার পাউন্ড অর্থ উপহার দেন। যা তিনি নার্সিং শিক্ষা বিকাশে ব্যয় করেন। তার কল্যাণে আজ সারাবিশ্বে নার্সিং শিক্ষার বিপ্লব ঘটেছে।

 

ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল বিশ্বাস করতেন রোগ নিরাময়ে ওষুধের পাশাপাশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ। তাই ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল যখন যেখানে সেবার দরজা খুলেছে সেখানে সুন্দর পরিবেশ সবার আগে নিশ্চিত করেছেন। মানুষের দুঃখ কষ্টে শরিক হওয়ার পাশাপাশি তাদের সম্পর্কে জানার অফিপ্রায় ছিল ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের সবচেয়ে বেশি। তাই ফ্লোরেন্স নাইটিংগেলের অগাধ সাহস, প্রখর চিন্তাচেতনা-ভাবনা ও অসাধারণ প্রতিজ্ঞাবদ্ধ কর্মপ্রচেষ্টার কারণে পৃথিবীর ইতিহাসে বিশ্বের সেরা ১০০ ব্যক্তিত্বের আসনে আসীন হতে পেরেছেন।

 

ক্ষণজন্মা এই মহীয়সী নারীর কল্যাণে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস এ নার্সিং পেশার মর্যাদাকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। জীবন সংগ্রামে যারা পেশাগত জীবনে নীতি ও আদর্শের প্রতি অবিচল থাকেন তাদের মধ্যে নার্সিং পেশা অন্যতম। যার প্রকৃষ্ট, আজীবন প্রমাণ ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল।

 

১৯১০ সালে ১৩ আগস্ট নার্সিং পেশার কিংবদন্তী ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুঞ্জয়ী এই মহান মহীয়সী বেঁচে থাকবেন পৃথিবীতে শতাব্দীর পর শতাব্দী, স্মরণে থাকবেন তার গুণ ও কর্মের কারণে।