নারীর প্রতি সহিংসতা : প্রতিরোধ ও প্রতিকার
গোলাম আনোয়ার সম্রাট | উইমেননিউজ২৪প্রকাশিত : ০৫:১০ পিএম, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ মঙ্গলবার
গোলাম আনোয়ার সম্রাট
পুরুষ শাসিত এ সমাজের একটি বিশাল ব্যাধি ‘নারী নির্যাতন’। সমাজ ও সভ্যতা যত এগিয়ে যাচ্ছে, ততই যেন এ প্রবণতা বেড়ে চলেছে। মানুষ যতই সচেতন হচ্ছে, ততই নারী নির্যাতনের ক্ষেত্রে তাদের অজ্ঞতা বৃদ্ধি পাচ্ছে; বৃদ্ধি পাচ্ছে উদাসীনতা।
দারিদ্র্য, বেকারত্ব ও অশিক্ষাসহ নানা কারণে নির্যাতিত হচ্ছে নারীরা। যৌতুকের দাবি মেটাতে না পেরে অসংখ্য নারীর জীবন হয়ে উঠেছে দুর্বিষহ। যৌতুক, বাল্যবিবাহ, বহুবিবাহ, তালাকসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিদ্যমান আইনগুলোর যথাযথ প্রয়োগ নেই। তাছাড়া এসব আইন সম্বন্ধে সাধারণ মানুষ সচেতনও নয়।
দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, পৃথিবীব্যাপী এসব সহিংসতার শিকার হয়ে প্রতি বছর অসংখ্য নারীর মৃত্যু হচ্ছে। কারণ তারা মুখ ফুটে কথা বলতে পারে না, তাদের কথা বলতে দেওয়া হয় না। নির্যাতিত হওয়ার পর তাদের থাকতে হয় চাপের মুখে।
দেখা যায় সমাজের শিক্ষিত, সচেতন ও প্রভাবশালী মানুষ দ্বারাই নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা বেশি ঘটছে। তার চিত্র সম্প্রতি আমরা দেখতে পেয়েছি। সারা বিশ্বে যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীরা একটি প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। এ নিয়ে পৃথিবীব্যাপী সৃষ্টি হয়েছিলো আলোড়ন। এ আন্দোলনের নাম দেয়া হয়েছিলো #মি টু। কিন্তু কতখানি ফলপ্রসূ এ আন্দোলন? প্রশ্ন থেকেই যায়। সফলতা পাওয়া গেলেও তা সম্পূর্ণ কি? সঠিক উত্তর পাওয়া কষ্টসাধ্য। বরং দেখা যাচ্ছে, নির্যাতনকারীরা প্রভাব ও প্রতিপত্তির কারণে অপরাধ করেও পার পেয়ে যাচ্ছে। নারীর ওপর পুরুষের অবিরাম ক্ষমতার অপব্যবহারের ফলে সাম্প্রতিককালে এ ধরনের নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে চলেছে।
নারীর ওপর সহিংসতার আরেকটি কারণ, তাদের প্রতি সমাজের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি। নারী নিজ পরিবারেও নির্যাতিত হচ্ছে। পরিবার পেড়িয়ে বাইরেও নির্যাতনের শিকার হতে হয় তাদের। অনেক নারী চাইলেও নিজ পরিবারের কাছেও সহিংসতার কথা বলতে পারেন না। দেখা যায়, অনেক সময় পরিবারই নির্যাতিত নারিকে দোষী সাব্যস্ত করে। বিদ্যমান সমাজ ব্যবস্থায় সহিংসতার শিকার অনেক নারী চাইলেও আইনের আশ্রয় নিতে পারেন না। পরিবার ও সন্তানের কথা ভেবে অনেক নারীই এসব অত্যাচার সহ্য করেন বাধ্য হয়ে।
প্রতি বছর ২৫ নভেম্বর পৃথিবীব্যাপী পালন করা হয় ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ দিবস’। এই দিবসটির ইতিহাসে মিশে আছে নারীর প্রতি সহিংসতার চিত্রপট; যা নারী সহিংসতারোধে চেতনা জাগাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। ১৯৬০ সালের ২৫ নভেম্বর ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রে তিনজন নারী নির্যাতিত হন। এ ঘটনার স্মরণে ১৯৮১ সালের জুলাই মাসে প্রথম লাতিন আমেরিকায় নারী অধিকার সম্মেলনে ২৫ নভেম্বরকে নারী নির্যাতন বিরোধী দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রতিবছর ২৫ নভেম্বর থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত পক্ষকালব্যাপী সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রচার চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৯৩ সালের ২৫ নভেম্বর জাতিসংঘ ‘নারী নির্যাতন দূরীকরণ ঘোষণা’ প্রকাশ করে। ১৯৯৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর জাতিসংঘ ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের খসড়া অনুমোদন করে ২৫ নভেম্বরকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন দূরীকরণ দিবস’ হিসেবে গ্রহণ করে।
কিন্ত এখন প্রশ্ন, বছরের পর বছর নারীর প্রতি নির্যাতন প্রতিরোধ নিয়ে আন্দোলন বা দিবস পালন করেও কি নির্যাতন কমছে? হয়তো সঠিক কোন উত্তর মিলবে না।
এক্ষেত্রে বাংলাদেশের একটি চিত্র তুলে ধরলে অনেকখানি পরিষ্কার হওয়া যাবে। ইউনাইটেড নেশন পপুলেশন ফান্ডের জরিপে বলা হয়, নারীর ওপর তার পুরুষ সঙ্গীর শারীরিক নির্যাতনে বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। দেশে শতকরা ১৪ ভাগ মাতৃমৃত্যু ঘটছে গর্ভকালীন নির্যাতনের কারণে। শতকরা ৬১ জনের বেশি পুরুষ এখনও মনে করে স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতন করা বৈধ। এছাড়া, নারীর প্রতি শতকরা ৮০ ভাগ সহিংসতা ঘটে পরিবারের ভেতরে। অন্যদিকে দেশে সংঘটিত মোট খুনের ঘটনার ৫০ ভাগই হচ্ছে স্বামীর হাতে স্ত্রী হত্যার ঘটনা। নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটে গ্রামাঞ্চলে। শহরাঞ্চলেও শতকরা ৬০ ভাগ নারী স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার হন। মৌখিক নিপীড়নের শিকার হন ৬৭ শতাংশ নারী। তাছাড়া যৌতুকের কারণে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে বছরে গড়ে ছয়শটি।
অস্বীকার করার উপায় নেই, নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে অতীতেও। অবশ্য তখন মানুষের মধ্যে এত সচেতনতা ছিল না। তখন নারী নির্যাতন যে একটা অপরাধ সেটা হয়তো অনেকে জানত না। এখন সময় পাল্টাচ্ছে। শিক্ষা-দীক্ষায় এগিয়েছে মানুষ। সচেতনতা সৃষ্টি হচ্ছে সকল ক্ষেত্রেই। কিন্তু নারী নির্যাতনের মতো একটি মারাত্মক স্পর্শকাতর বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি হয়নি আজও। নারী সহিংসতা রোধে আছে আইন, বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক সনদ ও চুক্তি। কিন্তু এগুলোর কোন বাস্তবায়ন নেই। এসব আইন সম্পর্কে সাধারণ মানুষও সচেতন নয়। আবার অনেক নারীই এসব আইন সম্পর্কে জানেও না। সর্বোপরি আইন প্রয়োগকারী ও আইন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোতে নারী ও দরিদ্র মানুষের প্রবেশাধিকার নেই বললেই চলে।
নারী নির্যাতন প্রতিরোধে বছরের পর বছর ধরে শুধু আন্দোলন নয়, নারীর প্রতি এ সহিংসতা রোধে প্রচলিত আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। বিশ্বে নারীর অধিকার আদায় নিয়ে কাজ করছে এমন অনেক সংগঠন রয়েছে। শুধু সহিংসতার তথ্য সংগ্রহ করাই কাজ নয়, সহিংসতার শিকার প্রতিটি নারীকে যথেষ্ট সহায়তা প্রদান করতে হবে। প্রতিটি মানুষকে নির্যাতন প্রতিরোধে করণীয় তথ্য জানাতে হবে। যারা মুখ খুলে কথা বলতে ভয় পায় তাদের সাহস দিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
নারীর প্রতি সহিংসতা রোধের জন্য আইন ছাড়াও আমাদের প্রয়োজন ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনই নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ করতে পারবে। যার মাধ্যমে নারী পাবে সহিংসতার প্রতিকার। গড়ে উঠবে সহিংসতামুক্ত একটি সুন্দর সমাজ। তাই নারীদের প্রতি আমাদের এই দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনে পরিবার ও সমাজ তথা আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে।
সহিংসতা প্রতিরোধে নারীদেরও সোচ্চার হতে হবে। নারীদের কথা বলতে হবে নিজের অধিকার আদায়ে। নির্যাতনকারী সমাজের যেই হোক না কেন, জোরালো কণ্ঠে কথা বলতে হবে তাদের বিরুদ্ধে। সচেতন হতে হবে নিজেদের প্রকৃত অধিকার প্রসঙ্গে। সচেতন হতে হবে শিক্ষা ও চিন্তায়। সর্বোপরি নারীকে নারী নয়, যখনই তাদের মানুষ হিসেবে দেখা হবে তখনই অনেকাংশে কমে আসবে নির্যাতন।
লেখক : ছাত্র, জার্নালিজম কমিউনিকেশন অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ, স্টেট ইউনির্ভাসিটি অব বাংলাদেশ
- মিরপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, নারী-শিশুসহ দগ্ধ ৭
- ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৩৮, লেবাননে ৩৩ প্রাণহানী
- প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিয়েই প্রিয়াঙ্কার বাজিমাত
- বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ব্রিটিশ রাজা চার্লস
- আজ ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
- সাংবাদিক নূরুল কবিরকে হয়রানি, তদন্তের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার
- কুড়িগ্রামে বাড়ছে শীতের প্রকোপ, তাপমাত্রা নামল ১৫.৬ ডিগ্রিতে
- সাময়িক বন্ধের পর খুললো যমুনা ফিউচার পার্ক
- ডেঙ্গুতে আরও ১০ জনের প্রাণ গেল
- ৫৭ বয়সেও মাধুরী দীক্ষিত যেন পঁচিশের তরুণী!
- জেনে নিন ভাপা পিঠার সহজ রেসিপি
- প্রথমবার দুঃসাহসিক অভিযানে ইহুদি মেয়েরা
- রোববার গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায়
- ডেঙ্গুতে এ বছরেই ৫১ শিশুর প্রাণহানি
- রাজাপুরের বধ্যভূমি আজো অরক্ষিত
- জেনে নিন বিমানবন্দর নেই যে সব দেশে
- ঘুরে আসুন পানামসহ না.গঞ্জের পাঁচটি পর্যটন স্পট
- আজ পহেলা অগ্রহায়ণ, হেমন্তকাল শুরু
- বিশ্ব হার্ট দিবস আজ
- হেমন্তে ছাতিম ফুল সুগন্ধ ছড়িয়ে যায়
- শান্তিতে নোবেল পেল জাপানের মানবাধিকার সংস্থা নিহন হিদানকিও
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিন আজ
- পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপে ঘুরে দাঁড়াল ভারতের মেয়েরা
- ‘রিমান্ড’-এ মম
- রাজু ভাস্কর্যের নারী প্রতিকৃতিতে হিজাব, যা জানা গেলে
- সৈয়দ শামসুল হকের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
- নেপালে ভয়াবহ বন্যা-ভূমিধসে নিহত বেড়ে ১১২
- পঞ্চগড় থেকে দেখে আসুন কাঞ্চনজঙ্ঘা
- গৃহশ্রমিক মেয়েদের দিন কষ্টে কাটে
- জীবনে প্রেম এসেছে ৬ বার: স্বস্তিকা