ঢাকা, শুক্রবার ২৮, ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ১৯:৩৮:২৮ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
রোজা শুরুর আগেই বেড়েছে বেশ কিছু পণ্যের দাম গাজায় ধ্বংসস্তূপে মিলল আরও ১৭ লাশ তরুণ প্রজন্ম দেশ গঠনে ভূমিকা রাখতে পারে: সেনাপ্রধান মধ্যরাতে ভূমিকম্পে ফের কেঁপে উঠলো উত্তরাঞ্চল দরিদ্র নারীদের দক্ষতা উন্নয়নে উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান

নারীর প্রতি সহিংসতা রোধে মহিলা পরিষদের মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত 

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৮:০৪ পিএম, ৩০ নভেম্বর ২০২১ মঙ্গলবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

আন্তর্জাতিক  নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ (২৫ নভেম্বর-১০ ডিসেম্বর) ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস, ২০২১ পালন উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের উদ্যোগে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যক্রম সমন্বিতভাবে করার লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

মঙ্গলবার বিকাল সাড়ে ৩টায় নারীবাদি সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগে রাজধাীর সেগুনবাগিচায় আনোয়ারা বেগম, মুনিরা খান মিলনায়তনে ‘নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধ কর সম অধিকার নিশ্চিত কর’’ এই শ্লোগানকে সামনে রেখে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু। মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির মাননীয় সভাপতি জনাব মো: শহীদুজ্জামান সরকার,এমপি। সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মানিত যুগ্ম সচিব মো: সাবিরুল  ইসলাম ও সম্মানিত যুগ্ম সচিব আনার কলি মাহবুব। সভায়  কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের আইনজীবি রামলাল রাহা। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা  মেট্রোপলিটন পুলিশের  অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার, (উইমেন সাপোর্ট এন্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন) লায়লা ফেরদৌসী;  বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টের ঢাকা ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল সামিরা তারান্নুম রাবেয়া। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তাসলিমা ইয়াসমীন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা.মোহাম্মদ মাকসুদ; সুপ্রিম কোর্টের লিগ্যাল এইড অফিসার, (অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ), ফারাহ্ মামুন, ওজিএসবি  এর সভাপতি অধ্যাপক ডা. ফেরদৌসি বেগম।

স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, ‘জাতিসংঘ কর্তৃক ঘোষিত আন্তর্জাতিক  নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ (২৫ নভেম্বর-১০ ডিসেম্বর) কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজকের মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়েছে। বৈশ্বিক নারী আন্দোলনের অংশীদার হিসেবে পাঁচ দশক ধরে নারীর প্রতি সহিংসতা মোকাবিলায় কাজ করছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। নারী পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সমগ্র বিশ্বজুড়ে নারীর প্রতি সহিংসতা বৃদ্ধি অত্যন্ত উদ্বেগের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘সরকার ও বেসরকারী সংস্থার উদ্যোগে নারীর প্রতি সহিংসতা মোকাবিলায় নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা সত্ত্বেও এই সহিংসতা কমছে না, ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে এখনো বাধা আছে।’ এমতাবস্থায়  নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যক্রম সমন্বিতভাবে করার লক্ষ্যে করণীয় সম্পর্কে আলোচনার জন্য উপস্থিত সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বক্তব্য শেষ করেন।

সভায় লিখিতবক্তব্য উপস্থাপনকালে মহিলা পরিষদে সংরক্ষিত ১৩ টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত নারী ও কন্যার প্রতি নির্যাতনের পরিসংখ্যান তুলে ধরে বলা হয় জানুযারি - অক্টোবর, ২০২১ সময়কালে ধর্ষণের ঘটনাবৃদ্ধিসহ মোট ৩১২৮জন নারী ও কন্যা নির্যাতনের শিকার হয়েছে। নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার  ক্রমাগত হার বৃদ্ধি একুশ শতকের বাংলাদেশের  সকল ক্ষেত্রে  নারীর দৃশ্যমান অগ্রসর ভূমিকার কারণে প্রাপ্ত ইতিবাচক অর্জনকে ম্লান করে দিয়েছে। সহিংসতা  মোকাবেলায়  সরকারি-বেসরকারি যৌথ কার্যক্রম থাকা সত্বেও সহিংসতার শিকার নারী ও কন্যার বিচার প্রাপ্তির ক্ষেত্রে বহুমুখী চ্যালেঞ্জ এর উল্লেখ করে তা প্রতিকারে প্রচলিত আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কারের দাবি জানানো হয়।  এসময় নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা প্রতিরোধে পরিবার, সমাজ এবং  রাষ্ট্রের  পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসন, ডাক্তার, আইনজীবী, সমাজকর্মী, গবেষক, গণমাধ্যম, বিচারকবৃন্দকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে নারী ও কন্যার পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে মোট ২০ টি  সুপারিশ তুলে  ধরা হয় (সংযুক্তি-১)

সভায় উপস্থিত আলোচকবৃন্দ বলেন, জেন্ডার ভিত্তিক সহিংসতার বড় শিকার যে নারী এটা এখনো অনেক গুরুত্ব পায়না। এটা দৈহিক, মানসিক যেকোনো ধরণের হতে পারে। মেডিকো লিগ্যাল এক্টিভিটি সম্পাদনে দেখা গেছে অনেক ভিকটিম ঘটনার অনেক পরে আসে। এতে অনেক আলামত নষ্ট হয়ে যায়।  নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে নানা আইন আছে। তবে প্রতিকার পেতে গেলে কেমন আইন হওয়া উচিত এবং আইনটি প্রতিকার দিতে পারবে কিনা তার বিশ্লেষনে এখনো অনেক গ্যাপ আছে। কয়েকটি গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে যারা ভিকটিম হয়ে আসে তারা আইন সম্পর্কে এখনো জানে না। আইন তাদের কাছে পৌছায়নি। ধর্ষণের শিকার নারী ও কন্যার প্রতি এখনো ঘটনার দায় চাপানো হয়। আইনে ধর্ষণের যে সংজ্ঞা দেয়া হয়েছে তার  উল্লেখ করে বলেন বর্ণিত সংজ্ঞার বাইরেও অনেক সূক্ষ্ম বিষয় আছে যা আনা সম্ভব হচ্ছে না এক্ষেত্রে আইনজীবিদের সহায়তা প্রয়োজন, প্রসিকিউশন টিমকে আরো একটিভ হতে হবে, থানাগুলোকে আরো নারীবান্ধব হতে হবে;আইন বাস্তবায়নে বটোম আপ এ্যাপ্রোচ ফলো করতে হবে, সামাজিক ও পারিপার্শ্বিক দিক  বিবেচনায় নিতে হবে, এজেন্সিকে আইনগুলো সম্পর্কে জানানোর দায়িত্ব দিলে তাদের পর্যাপ্ত ওরিয়েন্টেশন দিতে হবে। ধর্ষণ ও যৌন অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে ভিকটিমকে প্রাইভেটভাবে আইনজীবি নিয়োগের সুযোগ দিতে হবে। সরকারের বিনামূল্যে আইনী সেবা প্রদান সম্পর্কে সকলকে জানানোর জন্য সরকারী ও বেসরকারী সংস্থাকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে, ধর্ষণের শিকার নারী ও কন্যাকে নিজ উদ্যোগে সহায়তা দিতে এগিয়ে আসতে হবে। আইনী সহায়তা যারা চায় তাদের অনেকের যাতায়াত ব্যয় বহনের ক্ষমতা নেই। আইনী সীমাবদ্ধতার কারণে তাদের এই সহায়তা দেয়া সম্ভব হয়না। থানা থেকে নারীদের সহায়তা দেয়া হয় এতে তারা থানায় সহায়তা নিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। নারীর প্রতি নানা ধরণের সহিংসতা হয় চিকিৎসা থেকে যখন বঞ্চিত হয় সেটাও একধরণের সহিংসতা। এটা অনেক সময় চোখে পড়ে না ইউনিসেফের গবেষণায় দেখা গেছে সহিংসতার শিকার নারীর প্রতি বেশি সংবেদনশীল থাকে কিশোররা, তাদের এই মনোভাব ধরে রাখার লক্ষ্যে কাজ করতে হবে।


সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জনাব মো: শহীদুজ্জামান সরকার,এমপি বলেন, ‘আজকের আলোচনার মাধ্যমে  সহিংসতা প্রতিরোধে ভয়েজ রেইজিং করার মত মতবিনিময় সভা যখন শুরু হয়েছে তখন সহিংসতা একসময় সরকার প্রতিরোধ করতে পারবেন এবং করবেন। বিচার নিয়ে অসন্তুষ্টি আছে। বিচার শুধুমাত্র একটি প্রক্রিয়ায় হয়না। কাজের অভিজ্ঞতায় বলেন, বিচারের রায় দেয়ার আগে অনেকের উপর নির্ভর করতে হয়।বিচার প্রক্রিয়ার মধ্যে কোন একটি চেইন ইচ্ছা ও অনিচ্ছাকৃতভাবে দূর্বল হয়ে যায় ফলে মামলা দ্রুত শেষ হয়না। আজকের আলোচনা থেকে আসা অনেক বিষয় নিয়ে ইতোমধ্যে সংসদ ৩টি ভাগে কাজ করছে। উন্নত দেশ মানে কেবল অর্থনৈতিক উন্নয়ন নয়। যে সমাজে নারীনির্যাতন, বাল্যবিবাহ, যৌতুক থাকবে সেই সমাজ কখনোই উন্নত হতে পারেনা।’ এসব প্রতিকারে আমরা একটা মুভমেন্টের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।তিনি সংগঠনকে সরকারের সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করার জন্য আহ্বান জানান। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কেবলমাত্র আইনগত পরিবর্তন ই নয়, মাইন্ডসেটের পরিবর্তন ও প্রয়োজন।

সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মানিত যুগ্ম সচিব মো. সাবিরুল  ইসলাম বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সমন্বিতভাবে কাজ করছে। নারী-কন্যার প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে সরকার কর্তৃক মাঠপর্যায়ে গৃহীত কর্মসূচীর উল্লেখ করে বলেন প্রতিরোধের জন্য সরকারের গৃহীত কর্মসূচি কতটা চালু করা গেছে তা এখন দেখতে হবে। মাদক ও ইন্টারনেটের অপব্যবহার অপরাধ প্রবণতাকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। সমাজের সকল মানুষের জন্য গৃহায়ণ নীতিমালা সমান কিনা তা বিবেচনায় নিয়ে সরকারের পলিসির কোথায় পরিবর্তন প্রয়োজন তা মনিটর করতে হবে, পুনচিন্তা করতে হবে। তিনি বলেন, ‘নারী নির্যাতন প্রতিরোধে উপর জোর দিতে হবে।’


সভায় সভাপতির বক্তব্যে সংগঠনের সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘সংগঠনের একটাই চাওয়া সহিংসতা কিভাবে নির্মূল করা যায়।নারীর প্রতি অসম্মান করে কোন সমাজ এগোতে পারে না। নারীর প্রতি নির্যাতন হবে না তার নিশ্চয়তা সমাজ দিচ্ছে না। কারণ সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন হচ্ছে না। সমাজের মূল ভিত্তি হচ্ছে আইন। আইন বাস্তবায়নে নানা ত্রুটি আছে। নারী নির্যাতনের বিচার চাওয়ার জন্য এখন আন্দোলন করতে হচ্ছে। সম্পত্তির অধিকার নারীকে না দিলে পরিবারে সে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে পরিগণিত হবে। সম্পত্তির অধিকার, শ্রমের মূল্যায়ন একটি সমাজের গুরুত¦পূর্ণ উপাদান জাতীয় বাজেটে নারীর গৃহশ্রমের মূল্যায়নের পরিকল্পনা নিতে হবে।’ এই দুটি নিশ্চিত হলে সমতা আসবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি এসময় নারী নির্যাতন প্রতিরোধে পৃথক সেল তৈরি করা এবং মনিটরিং করার  আহ্বান জানান।  

সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম, লিগ্যাল এইড সম্পাদক সাহানা কবীর, অর্থ সম্পাদক দিল আফরোজ বেগম, প্রশিক্ষণ, গবেষণা ও পাঠাগার সম্পাদক এবং গণমাধ্যম সম্পাদক(ভারপ্রাপ্ত) রীনা আহমেদ, আন্তর্জাতিক সম্পাদক রেখা সাহা,রোকেয়া সদন সম্পাদক নাসরিন মনসুর, ঢাকা মহানগর শাখার নেত্রীবৃন্দ,সাধারণ সম্পাদক রেহানা ইউনূস, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হুমায়রা খাতুন, লিগ্যাল এইড সম্পাদক শামীমা আফরোজ আইরিন এবং সংগঠনের আইনজীবী, অ্যাড. দীপ্তি শিকদার, অ্যাড. ফাতেমা খাতুন,  সহ বিভিন্ন পর্যায়ের সংগঠক, সাংবাদিক ও কর্মীবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনায় ছিলেন সংগঠনের পরিচালক (লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি এন্ড লবি) অ্যাড. মাকছুদা আখতার।