ঢাকা, রবিবার ২৪, নভেম্বর ২০২৪ ১৮:৫০:২৬ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
মিরপুরে গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, নারী-শিশুসহ দগ্ধ ৭ ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৩৮, লেবাননে ৩৩ প্রাণহানী প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিয়েই প্রিয়াঙ্কার বাজিমাত বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ব্রিটিশ রাজা চার্লস আজ ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায় বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ব্রিটিশ রাজা চার্লস কুড়িগ্রামে বাড়ছে শীতের প্রকোপ, তাপমাত্রা নামল ১৫.৬ ডিগ্রিতে

নারী দিবসে ৯ নারী উদ্যোক্তার স্বপ্নের সাতকাহণ

তামান্না ইসলাম ত্বোয়া | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৩:১৪ পিএম, ৮ মার্চ ২০২২ মঙ্গলবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

আজ আন্তর্জাতিক নারী দিবস। নারীরা নিজেদের সংকট, সম্ভাবনা ও স্বপ্নের কথা জানিয়েছেন। উদ্যোক্তা হয়ে তারা কতটা এগিয়েছেন আর বাধার মুখোমুখি হচ্ছে এইসব বিষয়ে প্রশ্নের জবাব দিয়েছে। প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে ই কমার্স এক্সপ্রেস বাংলাদেশ ইবি গ্রুপের মডারেটর ও উদ্যোক্তা তামান্না ইসলাম ত্বোয়া। 

১.  নারী না কি মানুষ।  নিজেকে কী হিসেবে দেখেন বা দেখতে চান? 
২. পরিবার কেন্দ্রিক ভাবনায় আপনি কতটা সাপোর্ট পান?
৩. নারীর মূল্যায়নে নারী নিজেই নিজেকে পিছিয়ে রাখছে কি? 
৪. নারী উদ্যোক্তা - নাকি উদ্যোক্তা কিভাবে পরিচিত হতে চান?
৫. উদ্যোক্তা হিসেবে কাজ করতে গিয়ে কি ধরনের প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হতে হচ্ছে?
৬. আমাদের বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য কী ধরনের সহযোগিতা আশা করেন?
৭. নারী উদ্যোক্তার ভবিষ্যৎ কেমন হবে বলে মনে করেন?
৮. নিজের স্বপ্ন নিয়ে বলেন?
৯. নারী দিবসে নিজের সংকট ও সম্ভাবনা নিয়ে কিছু বলেন।

আত্মপরিচয় গড়ে তুলতে উদ্যোক্তা হয়েছি
রুনা আহমেদ
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি: ই কমার্স এক্সপ্রেস বাংলাদেশ। 

-আজ নারী দিবস। নারীদের মর্যাদা ছিলো, আছে, থাকবে। একটা সময় যদিও ঘরের চার দেয়ালের ছিলো নারীদের ঠিকানা। এখন সময় বদলেছে। বদল হয়েছে নারীদের অবস্থান। বৈষম্য ছিলো, এখনো আছে, তবে পাল্টে গেছে অনেক কিছু। 
-দ্য গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ ২০২০-এর তথ্য অনুযায়ী বৈশ্বিক লিঙ্গ সমতার দিক থেকে, দক্ষিণ এশিয়ায় এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। এটা আশার খবর। আরো আশার খবর হচ্ছে বর্তমানের তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের নারীদের যথেষ্ট সুযোগ করে দিয়েছে নিজেকে এগিয়ে নেয়ার। 
-ঘরে বসে এখন অসংখ্য নারী উদ্যোক্তা হয়ে নিজের পরিচিতি তৈরি করতে পারছে। হতে পারছে আত্মনির্ভরশীল। শুধু পারিবারিকভাবে সাপোর্ট না পেয়ে পিছিয়ে আছেন অনেকেই। আর পিছিয়ে আছেন আত্মবিশ্বাসের অভাবে।  এই দুটো দিক সামলে নিতে পারলে বাকি বাধা খুব সামান্য। তাই আমার মতে নারীর এগিয়ে যাওয়াতে এখন সময় ও পরিস্থিতি অনেক সাপোর্টার।  প্রয়োজন শুধু ইচ্ছের। 
-আমি একজন সংসারী নারী। আমি একজন মা, একজনের স্ত্রী। আমাকে আমার ঘর সংসার সামলে চলতে হয়। তারপরেও নিজের একটা আত্মপরিচয় গড়ে তোলার ইচ্ছে নিয়ে উদ্যোক্তা হয়েছি। 
-শুরুতে নানা ধরনের বাধা বিপত্তি থাকলেও তা আমি কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। এখন আমার নিজের উদ্যোগের পাশাপাশি। একটি ই কমার্স গ্রুপের প্রধানতম দায়িত্ব নিয়ে তিন হাজারের বেশি উদ্যোক্তাদের সাথে নিয়ে কাজ করছি। একটা স্বপ্ন ছিলো। এখন স্বপ্ন বাড়ছে। কারণ স্বপ্নরা এমনি। একটা পুরণ হলে আরো নতুন স্বপ্ন তৈরি হয়। 
-আমরা আমাদের দেশের উদ্যোক্তাদের নিয়ে বিশেষ করে নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে এমন একটা জায়গায় দাঁড়াবো, যা দেখে সবাই তাদের সম্মান করবে। 
নারী দিবসে বিশ্বের সকল নারীদের প্রতি আমার আন্তরিক ভালবাসা। আমরা সবাই সবার সহযোগি হয়ে সমস্ত বাধা ডিঙিয়ে এগিয়ে যেতে চাই লক্ষ্যের দিকে। জয় হবে ইনশাআল্লাহ। #
…………
মানুষ হয়ে বাঁচতে চাই
কেকা নুসরাতুল জান্নাত, উদ্যোক্তা।

-আমরা নারী আমরাই পারি কথাটি সব সময় বলতে শুনি।  কিন্তু নারী কেন? আমি মানুষ হয়ে বাঁচতে চাই। নারী বা পুরুষ আলাদা ভাবে না দেখে মানুষ হিসেবে নারী পুরুষ সমান। নিজেকে মানুষ হিসেবে দেখতে চাই। 
-আলহামদুলিল্লাহ।  আমি আমার মায়ের বাসায় ও এখন শশুর বাড়িতে সব সময় সাপোর্ট পেয়ে আসছি। 
-নারীরাই নারীদের পিছিয়ে রাখছে শুধু মাত্র নিজেকে নারী ভাবনা থেকে বেড়িয়ে আসতে না পারার কারনে। 
-আমি একজন উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত হতে চাই। 
-কোনো পণ্যের সোর্সসিং এ যখন আমি বের হই তখন আমার সাথে করে কাউকে নিয়ে যেতে হয়।  কারণ নারী হিসেবে আমি একলা বাসা থেকে বের হতে পারিনা। মেয়ে হয়ে আবার ব্যবসা করতে হবে কেন? এই প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয় সব সময়। 
-নারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন সকল ক্ষেত্রে নারীদের মূল্যায়ন করা। মেয়ে মানুষ পারবে না সে ধারনা বদলাতে হবে। -নারীরা যদি লেগে থাকে ইনশাআল্লাহ এর ভবিষ্যৎ অনেক ভালো হবে। 
-আমি বড় কোনো  স্বপ্ন কখনোই দেখিনি। আমার স্বপ্ন ছোট। আর আলহামদুলিল্লাহ আমি আমার সকল স্বপ্ন পুরোন করতে পেরেছি। এখন যে স্বপ্নটি আছে তা হলো আমার শৈল্পিকছোঁয়া ছোট এই নামটি আমি দেশের প্রতিটি জেলা সহো দেশের বাহিরেও ছরিয়ে দিতে চাই। আমার সিজনেচার পণ্য সোনালী আঁশ পাট।  এই পাট কে বিলুপ্ত হতে না দেয়া। 
-নারীরা পারে এ বিষয়টি সবাইকে মানতে হবে। নারী দেখে পিছিয়ে পরলে হবে না। নিজেকে মানুষ ভাবে হবে ও মানুষ হিসেবেই বাঁচতে হবে।  নারী বা পুরুষ কাউকেই ছোট করে না দেখে এক সাথে কাজ করতে হবে।  এক সাথে কাজ করতে পারলে,  সহযোগী হয়ে একে অন্যের পাশে থাকলে সম্ভাবনাময় দেশ ও দেশের ভবিষ্যৎ গড়া সম্ভব।  জেগে উঠো নারী আপন আলোয়। ছরিয়ে দাও তোমার আলো যা অন্ধকার দূর করে আলোকিত করবে তোমার চারপাশ। #
.............. .......
স্বপ্ন ছাড়া লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব না
রুবাইয়া সুলতানা, উদ্যোক্তা। 

-নিজেকে একজন মানুষ হিসেবে দেখতে চাই। কারণ, একবিংশ শতাব্দীতে এসেও আমাদের সমাজে এখনো নারীকে অবলা নারী হিসেবেই দেখা হয়, মানুষ হিসেবে নয়। 
-নারীর ক্ষমতায়নকে সমাজিক এবং পারিবারিকভাবে এখনো সেরকম সাপোর্ট করা হয়না। এখনোও নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে নারীদেরকে অনেক প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। আমার শুরুটাও তার ব্যতিক্রম ছিলোনা। তবে নিজের কাজের প্রতি আমার শ্রদ্ধা এবং একাগ্রতা দেখে এখন আমার পরিবারের ভাবনা কিছুটা হলেও বদলেছে, সেই সাথে তাদের কাছ থেকে যথেষ্ট সাপোর্টও আমি পাচ্ছি।
-কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এমন হলেও সবক্ষেত্রে নয়। অনেক নারী আছেন, যাদের প্রতিভা থাকা স্বত্তেও পারিবারিক বা সামাজিক সমর্থনের অভাব, লোকলজ্জার ভয় কিংবা নিজের আত্মবিশ্বাসের অভাব–যে আমি পারবো কিনা, বা আমার দ্বারা হবে কিনা; এসব কিছু কিছু কারণে অনেক নারীই সঠিকভাবে মূল্যায়িত হওয়া থেকে নিজেকে পিছিয়ে রাখছে। অন্যদিকে এমন কিছু নারীও রয়েছেন, যারা সকল বাধাকে উপেক্ষা করে শুধুমাত্র ইচ্ছাশক্তির বলে এগিয়ে চলেছেন নিজেকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করার জন্য। 
-একজন উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত হতে চাই। কারণ একজন পুরুষ যখন উদ্যোক্তা হন, তখন কিন্তু তাকে শুধুই উদ্যোক্তা বলা হয়; বলা হয়না যে সে পুরুষ উদ্যোক্তা। তাহলে নারীদের বেলায় উদ্যোক্তার আগে কেনো 'নারী' শব্দটি যুক্ত করতে হবে। উদ্যোক্তা হওয়া অনেক চ্যালেঞ্জিং। আর এই কঠিন চ্যালেঞ্জটা যে নারীও নিতে পারে, সেটা প্রমাণের জন্যই আমি নারী উদ্যোক্তা নয়, বরং একজন উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিতি পেতে চাই।
-প্রথম দিকে নানা প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হতে হয়েছে। তার মধ্যে প্রধান আমার স্বামীর সাপোর্ট না পাওয়া। তবে আলহামদুলিল্লাহ এখন তিনি আমাকে শতভাগ সাপোর্ট করছেন। তবে শুরু থেকে যে  প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হচ্ছি তাহল সামাজিক দৃষ্টি ভঙ্গি। বারা কিংবা স্বামীর দিক দিয়ে যথেষ্ট স্বচ্ছলতা থাকা স্বত্তেও কেন আমি এই কাজ করছি এই প্রশ্ন গুলো আমাকে এখনো শুনতে হয় আর যেকারণে আমি অনেককে জানাতে পারি না আমার উদ্যোগ সম্পর্কে। যেখানে উদ্যোগের সাথে যেই কথা টা সবচেয়ে আগে যায় প্রচারেই প্রসার। এর সাথে অন্যান্য বিষয় গুলো যেমন পণ্যের সোর্সের অভাব, দ্রব্যমুল্য বৃদ্ধি এগুলো তো আছেই। 
-উদ্যোক্তা হিসেবে এগিয়ে যেতে হলে একজন নারীর সর্বপ্রথম যেটা দরকার, তা হচ্ছে পারিবারিক এবং সামাজিক সহযোগিতা। অনেক নারী আছেন, যারা নিজেদের উদ্যোগকে চালিয়ে নেওয়ার জন্য আর্থিকভাবে স্বচ্ছল নন। সেক্ষেত্রে নারীদের জন্য রাষ্ট্রীয়ভাবে আর্থিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সাথে বিনামূল্যে বিভিন্ন ধরনের ট্রেনিং এর ব্যাবস্থা করতে হবে। নারীরা যাতে নিরাপদে এবং স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারে, তাদেরকে সেই পরিবেশ তৈরি করে দিতে হবে। 
-আমি মনে করি, একজন নারী উদ্যোক্তা যদি তার উদ্যোগ নিয়ে সঠিক এবং সফলভাবে এগিয়ে যেতে পারেন, তাহলে তার ভবিষ্যৎ অবশ্যই সুদূরপ্রসারী এবং সম্ভাবনাময়। 
-আসলে স্বপ্ন ছাড়া কখনোই নিজের লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব নয়। তাই একজন উদ্যোক্তা হিসেবে আমারও নিজের উদ্যোগ নিয়ে কিছু স্বপ্ন আছে। আমি স্বপ্ন দেখি, যে আমার এই ছোটো উদ্যোগটা একদিন অনেক বড়ো হবে। শুধুমাত্র আমার কতিপয় জেলা না, সমস্ত দেশব্যাপী আমার পণ্যগুলো পরিচিতি পাবে।
-বাংলাদেশে নারীদের প্রধান সংকট হল আমাদের সংস্কৃতি। যেখানে আমরা নারীকে একটি নির্দিষ্ট ভুমিকায় দেখতে অভ্যস্ত।  আমাদেরএই মানসিকতার পরিবর্তন দরকার। বহু বছর আগে কবি নজরুল লিখে গেছেন, ‘বিশ্বে যা কিছু সুন্দর সৃষ্টি চির কল্যাণকর/অর্ধেক তার গড়িয়েছে নারী, অর্ধেক তার নর’।
কবি কিন্তু বহু বছর আগে নারীর সম্ভাবনার কথা বলে গেছেন। নারী সুযোগ পেলে উড়োজাহাজ চালাতে পারে, চাঁদের পথে পাড়ি জমাতে পারে, সমাজ তথা দেশের আমুল পরিবর্তন করতে পারে শুধু প্রয়োজন সুযোগের। #
...............
আমি আমি আশাবাদী
চন্দ্রশিলা ছন্দা 
লেখক, উদ্যোক্তা।

-প্রাণী জগতের সব পর্যায়ে নারী-পুরুষ আছে। সৃষ্টির সার্থকতা এখানেই। মানুষ প্রজাতিতে নারীরা মানুষ এবং নিজেকে অবশ্যই মানুষ হিসেবেই দেখতে চাই। 
-কোন মতামত কিংবা সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সন্তানদের কাছ থেকে কিছুটা সমর্থন পেলেও  স্বামীর কাছ থেকে পাই না। 
- হ্যা, অনেকটাই। এই নিজেই নিজেকে পিছিয়ে রাখার পেছনে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হলো লেখাপড়া শেষ না করা। নিজের পায়ে দাঁড়াতে না শেখা। বিবাহিত জীবনে সন্তানদের পিছুটান এবং পারিপার্শ্বিকতা।  
-উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত হতে চাই। 
-আসলে এর উত্তরটা ব্যাপক! বহু প্রতিবন্ধকতার মধ্যে আমি শুধু এটুকুই বলতে চাই যে, আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে প্রকৃত শিক্ষার এখনো প্রচন্ড অভাব। নারীকে সম্মান করার চর্চা এখনো তৈরি হয়নি। এবং নারী-পুরুষ একসাথে কাজ করতে গেলেই সেখানে একটা অদৃশ্য স্বার্থের বিষয় এসে দাঁড়ায়।
-প্রথমেই আশা করব পরিবার থেকে। পরিবারের বাবা মা হোক কিংবা স্বামীই হোক, মানসিক সাপোর্ট, সহমর্মিতা খুবই প্রয়োজন। পৃথিবী যেমন একা পুরুষ দিয়ে বিকশিত হতে পারে না, তেমনি একা নারী দিয়েও কোনকিছুর বিকাশ সম্ভব নয়। তাই স্বামী, ভাই,বন্ধুর সহযোগিতা খুব জরুরি। এক-একটি পরিবার উদার আকাশ হলে পুরো সমাজটাই তখন বদলে যাবে। 
-আমি আশাবাদী।  নারীরা বাধার বলয় ভেঙে বের হয়ে আসবেই আসবে। 
-নিজের পায়ে দাঁড়ানো। বৃদ্ধ বয়সে স্বামী, বা সন্তানের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে চাই না। তবে উদ্যোক্তার পাশাপাশি লেখক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার স্বপ্ন দেখি। স্বপ্ন দেখি, লেখাও পেশা হোক। যেমন সাংবাদিকতা পেশা। তেমন কবি, প্রাবন্ধিক, গল্পকার অর্থাৎ সাহিত্যাঙ্গনের প্রতিটি শাখায় কবি লেখকরা লিখে সম্মানি পাক। লেখাটা ফালতু কাজ না, এই বোধটা তৈরি হোক। বিশেষ করে নারী লেখকরা লিখে উপার্জন করতে পারলে পরিবারে সম্মান এবং মর্যাদা পাবে। চাই তারা মূল্যায়িত হোক এটাই আমার স্বপ্ন। 
- প্রতিটি দিনই মানবজীবনে গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদার। নারী দিবস বলে বিশেষ একটি দিন পালিত হওয়াকে আমি বাঁকা চোখে দেখি না।  কিন্তু খুব উল্লসিত হওয়ার মতও কিছু না। আমার ধারণা আমাদের সমাজে ৬০ ভাগ নারীর আর দশটা গতানুগতিক দিনের মত এই দিনটি কাটে। 
-নিজেদের সংকট নিয়ে বলতে গেলে বলতে চাই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির কথা৷ নারী এবং পুরুষ উভয়েরই প্রথমেই দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো প্রয়োজন।  দৃষ্টিভঙ্গি বদলালে সমাজে সংকট কমে যাবে আর সংকট কমলেই সেখানে নানান সম্ভবনার আলো প্রস্ফুটিত হবে বলে আমি মনে করি। #
.............
নারীদের সংকট প্রতি পদে পদে
ফারজানা ইয়াসমিন মার্শিয়া
উদ্যোক্তা। 

-মানুষ হিসেবে নিজেকে দেখি। সর্বপরি মানুষ হিসেবে বাঁচতে চাই।
-পরিবারে নিজের মেয়ে ছাড়া কেউ আমাকে আমার উদ্যোগের ব্যাপারে সাপোর্ট করে না। তবুও এগিয়ে যেতে চাই।
-আমি মনে করি একজন নারীই নারীর প্রধান শত্রু। কারণ প্রতিবন্ধকতার শিক্ষাটা আমরা নিজের পরিবারের নারীদের থেকেই আগে পাই। এ প্রবণতা বন্ধ হওয়া জরুরী।
-আমি আমার নিজের পারিবারিক পরিচয়ের বাইরে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে পরিচিত করতে চাই। 
-প্রতিবন্ধকতা অনেক আছে। বাইরের থেকে ঘরে বেশি।  কাজ করতে গিয়ে প্রথমেই পারিবারিক প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হয়েছি।
-সহযোগিতা তো লাগবেই।  তবে অন্যান্য সহযোগিতার আগে প্রথমেই আমি মনে করি পারিবারিক সহযোগিতা প্রয়োজন।
 -আমি নারী উদ্যোক্তাদের নিয়ে বেশ আশাবাদী ইনশাআল্লাহ। আমরা একসময় মাথা তুলে দাঁড়াবো বলেই বিশ্বাস করি। 
-নিজেকে নিয়ে স্বপ্ন অনেক বড়। নিজের পরিচিতি তৈরি করা ছাড়াও আমার পরবর্তী প্রজন্মের নারীরা যেন সহজেই পেয়ে যায় কাঙ্খিত অবস্থান।  আর সেই স্বপ্নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি ইনশাআল্লাহ। 
-নারীদের সংকট প্রতি পদে পদে ছিলো, আছে।  যদিও এখন সচেতন হয়েছেন অনেকে। তাই সম্ভাবনার পথে অনেকটা এগিয়েছে। আরও এগিয়ে যেতে হবে। এ জন্য দরকার সম্মিলিত প্রচেষ্টা। #
...... ........
উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত হতে চাই
সায়েরা সরকার শান্তা 
শিক্ষিকা, উদ্যোক্তা।

-প্রাচীনকালে নারীদের যেমন তুচ্ছ ভাবা হতো বর্তমানেও তার রেশ রয়েছে কিছুটা। পৃথিবীতে নারীর ভূমিকাও কিছু কম নয়।  সমাজে পুরুষ নারী ভেদাভেদ করার চেয়েও বড় বিষয় সে একজন মানুষ। আমি নিজেকে একজন মানুষ হিসেবেই দেখতে চাই। 
-মানুষের সবচেয়ে বড় আশ্রয় তার পরিবার।  পরিবারই একজন মানুষের  ভিত।  আমার পরিবারে আমার একটি পরামর্শ বা অন্য কোনো আলোচনায় আমার উপস্থিতির গুরুত্ব থাকে। আমি আমার পরিবার থেকে একজন নারী বা পুরুষ নয়  পরিবারের একজন অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে স্থান পাই।  
-আমরা অনেকেই আছি নিজেদের কে মূল্যায়ন করি না বা করতে পারি না।  নিজের সম্মান, মর্যাদা নিয়ে মাথা ব্যাথাও থাকে না।  পরিবারের মানুষ গুলো অনেক বেশি ভালোবেসে তাদের মতই নিজেকে মানিয়ে নেই। এতে করে নারী নিজেই নিজেকে পিছিয়ে রাখছে। সবার আগে নিজের সম্মান, মর্যাদা, ইচ্ছেকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত। 
-আমি নিজেকে একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত হতে  চাই। কারণ একজন সমাজে নিজের আত্ন পরিচয় নিয়ে সামনে এগিয়ে আসবে তাকে দেখে অন্য নারী রাও এগিয়ে আসার সাহস পাবে। 
-আমি একজন নারী উদ্যোক্তা। যেহেতু এখনও অনেক মানুষ নারীদের তুচ্ছ মনে করে সেহেতু কাজ করতে গিয়ে অনেক বাধা  আসে। পণ্যের সোর্সিং থেকে মার্কেটিং পর্যন্ত বাধা আসে।  আমার ক্ষেত্রে যদিও পারিবারিক বাধা নেই। তবু বাইরের পারিপার্শ্বিক বাধা কম না, সর্বস্তরেই এসব বাধা ডিঙিয়ে আগাতে হয়। 
-আমাদের বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য পরিবার ও সমাজের পক্ষ থেকে সহযোগিতা তো লাগবেই। তবে সবার আগে নারীদের আত্মবিশ্বাসী হওয়া দরকার।  কে কি বলল, কে কি ভাবল এই সব উপেক্ষা করতে হবে।  
-নারী উদ্যোক্তাদের সঠিক ও সুন্দর ভাবে  কাজের সুযোগ করে দিলে বাংলাদেশে  নারী উদ্যোক্তাদের ভবিষ্যত অনেক উজ্জ্বল হবে।
-আমার স্বপ্ন আমি একজন উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত হতে চাই। একজন প্রকৃত মানুষ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে চাই।  সমাজের পিছিয়ে পড়া নারীদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য সাপোর্ট করতে চাই।  #
................
বৈষম্যমূলক আচরণ বাদ দিতে হবে
সুমিতা সেন গুপ্ত
উদ্যোক্তা।

-আমি নিজেকে একজন সফল মানুষ হিসাবে দেখতে চাই। আর সে লক্ষ্যেই কাজ করে যাচ্ছি।
-আমার কাজে পরিবারের পূর্ণ সাপোর্ট আছে। সারাদিন সাংসারিক কাজকর্ম সামলে নিজের উদ্যোগের কাজ করতে যদিও আমার দিনরাত পরিশ্রম করতে হয় কিন্তু পিরিবারের সাপোর্ট না পেলে তা করা আমার দ্বারা সম্ভব মোটেও সম্ভব ছিল না।
-নারীর মূল্যায়নে আমরা নিজেই নিজেকে অনেক ক্ষেত্রে পিছিয়ে রাখছি। আমরা নিজেদের তেমন গুরুত্ব দিই না। নিজেদের শারীরিক ও মানসিক  স্বাস্থ্যের দিকে মোটেও নজর দিই না। নানা মানসিক চাপে মনে আমাদের দ্বারা কিছু হবে না।  তাছাড়া আমাদের মধ্যে থাকে ধৈর্যের  অভাব আছে।আরো আছে সিদ্ধান্তে ঝুঁকি না নেওয়া। 
-যেহেতু নিজেকে নতুনরূপে নতুন পরিচয়ে গড়ে তুলতে চাই সেহেতু নারী উদ্যোক্তা হিসাবেই পরিচিত  হতে চাই আমি।
-উদ্যোক্তা হিসাবে কাজ করতে গিয়ে আমাদের বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হতে হয়। যেমন মূলধনের অভাব, পারিবারিক সাপোর্টের অভাব, সামাজিক প্রতিবন্ধকতা সর্বোপরি আত্মবিশ্বাসের অভাব।
-আমাদের সমাজ সম্পুর্ণ পুরুষাশাসিত না হলেও অনেকটা পুরুষনির্ভর। কাজেই নারীদের এগিয়ে যেতে বৈষম্যমূলক আচরণ বাদ দিয়ে পুরুষদের আন্তরিক সহযোগীতার প্রয়োজন খুব বেশি। 
-আমাদের দেশের নারীরা জীবন সংগ্রামে লড়াই করে  নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে তৈরি করে যাচ্ছে নিজেদের ভবিষ্যতেের গল্প। যে গল্প আমি নিজেকেও দেখতে পাই। 
-আমি একজন নারী উদ্যোক্তা, এটা আমার গর্ব।আমি সকল বাধা অতিক্রম করে নিজেকে সফল নারী উদ্যোক্তা হিসাবে দেখতে চাই।
-নানাবিধ সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়েও ই-কমার্সের বদৌলতে নারীরা আজ ব্যবসাসফল। তারা গৃহস্থালি কাজকর্মের পাশাপাশি  ঘরে বসেই নিজেদের কর্মসংস্থান করতে পারছে। এটা দিন দিন বাড়বে। নারীদের আমাদের গর্ব করার মতো আত্মপরিচয় তৈরি হবে। এটাই স্বপ্ন। #
.................
নারী হিসেবেই নিজের সম্মান চাই
জান্নাতুল ফেরদৌস দীপা 
উদ্যোক্তা, ফ্যাশন ডিজাইনার। 

-আমি মানুষ তো বটেই। তবে নারী হিসেবেই নিজের সম্মান চাই।  আমরা যেমন বলি 'পুরুষ মানুষ ', নারীও ঠিক তাই।  নারীও মানুষ। 
তাই আমার মতে নারী ও মানুষ দুটোকে আলাদা করে দেখার কিছু নেই। তবে নারী হিসেবে সমাজ, পরিবার সব জায়গায় সাপোর্ট পাওয়া এখনো সহজ হয়নি। আমি আমার পরিবার থেকে ৭০% সাপোর্ট পাই। বাকি ৩০% সাপোর্ট না পাওয়ায় কিন্তু নারীও বিশেষ ভুমিকা পালন কর। মোদ্দাকথা পুরুষের পাশাপাশি নারীও নারীর অগ্রগতিতে বাঁধা সৃষ্টি করছে, নারীকে পিছিয়ে রাখছে।  এ কারণে উদ্যোক্তা হতে নারীকে নানা প্রতিবন্ধকতার স্বীকার হতে হচ্ছে। সব  উল্লেখ  করা যদিও সম্ভব নয়।
-বাংলাদেশের নারী উদ্যোক্তাদের এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রথমত নারীর নিজের দৃঢ় মনোবল প্রয়োজন। এছাড়া সরকারী বেসরকারি বিভিন্ন সহায়তা, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করার পাশাপাশি বিভিন্ন বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়ার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। 
-যদি এর বাস্তবায়ন শতভাগ নিশ্চিত করা যায় তবে ইনশায়াল্লাহ নারীরাও উদ্যোক্তা হয়ে ভবিষ্যতে পরিবার ও দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ ভুমিকা পালন করবে। এখনো করছেন অনেকেই।  সকলের সহযোগী মনোভাব সেই সংখ্যাটা বাড়িয়ে দেবে বলেই আমার বিশ্বাস। #
..............
আত্মকেন্দ্রিকতা নারীর পিছিয়ে পড়ার মূল কারণ
নুজাহাতুল জান্নাত,  উদ্যোক্তা 

-নিজেকে সাবলম্বি করে গড়ে তোলা।  নিজের পরিচয়ে পরিচিত হওয়া।
-একজন মা,  একজন স্ত্রী,  একজন বৌ,  হিসেবেই বেশি মূল্যায়িত হয়ে থাকি। 
-আমি মনে করি আত্মকেন্দ্রিকতাই নারীদের পিছিয়ে পড়ার মূল কারণ। কে কি ভাববে,  পাছে লোকে  কি বলবে এগুলো চিন্তা করে আমরা সামনে আগাতে পারি না। 
-একজন নারী উদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত হতে চাই। নারীরাও মানুষ। 
-নারীরা কি কোনো উদ্যোক্তা হতে পারে এধরনের কথা হরহামেশাই শুনতে হয়। ঘরে, বাইরে অনেক ধরনের বাধা থাকে আমাদের। পেছনে টেনে ধরার মানুষের অভাব নেই। 
-বর্তমানে উদ্যোক্তা হিসেবে নারীদের অবস্থান অনেক উপরে। ভবিষ্যতে নারীরা উদ্যোক্তা হিসেবে আরো অনেক  সুনাম অর্জন করবে এটাই আমার বিশ্বাস এবং প্রত্যাশা। #
………………………