ঢাকা, রবিবার ২২, ডিসেম্বর ২০২৪ ১৩:৩৩:২০ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
গাজীপুরে গ্যাস সিলিন্ডারের আগুনে দগ্ধ নারীর মৃত্যু আবারও মেট্রোরেলের এককযাত্রার টিকিট বিক্রি শুরু পঞ্চগড়ে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ, তাপমাত্রা ৯.৮ ডিগ্রি ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ১০ যানবাহনের, বহু হতাহতের শঙ্কা রাশিয়ায় বহুতল ভবনে ৯/১১ স্টাইলে ড্রোন হামলা

প্রিয় লেখা : পল্লীজননী 

জসীমউদদীন | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৮:২১ এএম, ২২ মে ২০১৯ বুধবার

রাত থম থম স্তব্ধ নিঝুম, ঘন ঘোর আধিয়ার,
নি:শাস ফেলি তাও শোনা যায় নাই কোথা সাড়া কার।
রুগ্ন ছেলের শিয়রে বসিয়া একেলা জাগিছে মাতা,
করুণ চাহনি ঘুম ঘুম যেন ঢুলিছে চোখের পাতা।
শিয়রের কাছে নিবু নিবু দীপ ঘুরিয়া ঘুরিয়া জলে,
তারি সাথে সাথে বিরহী মায়ের একেলা পরাণ দোলে।
ভন ভন ভন জমাট বেঁধেছে বুনো মশকের গান,
এদো ডোবা হতে বহিছে কঠোর পচান পাতার ঘ্রাণ।
ছোট কুঁড়েঘর, বেড়ার ফাঁকেতে আসিছে শীতের বায়ু,
শিয়রে বসিয়া মনে মনে মাতা গণিছে ছেলের আয়ু।
ছেলে কয়, ‘মারে, কত রাত আছে, কখন সকাল হবে,
ভালো যে লাগে না, এমনি করিয়া কেবা শুয়ে থাকে কবে।’
মা কয়, ‘বাছারে! চুপটি করিয়া ঘুমোত একটি বার’ ,
ছেলে রেগে কয়, ‘ঘুম যে আসে না কি করিব আমি তার।’
পান্ডুর গালে চুমো খায় মাতা। সারা গায়ে দেয় হাত,
পারে যদি বুকে যত স্নেহ আছে ঢেলে দেয় তারি সাত।
নামাযের ঘরে মোমবাতি মানে, দরগায় মানে দান,
ছেলেরে তাহার ভালো করে দাও কাঁদে জননীর প্রাণ।
ভালো করে দাও আল্লাহ রসুল ভালো করে দাও পীর,
কহিতে কহিতে মুখখানি ভাসে বহিয়া নয়ন নীর।
বাঁশ বনে বসি ডাকে কানা কুয়ো, রাতের আঁধার ঠেলি,
বাদুড় পাখার বাতাসেতে পড়ে সুপারির বন হেলি।
চলে বনো পথে জোনাকি মেয়েরা কুয়াশা কাফন ধরি,
ধুৎ ছাই! কিবা শঙ্কায় মার পরাণ উঠিছে ভরি।
যে কথা ভাবিতে পরাণ শিহরে তাই ভাসে হিয়া কোণে,
বালাই বালাই, ভালো হবে যাদু মনে মনে জাল বোনে।
ছেলে কয়, ‘মাগো, পায়ে পড়ি বল ভালো যদি হই কাল,
করিমের সাথে খেলিবার গেলে দিবে নাতো তুমি গাল।
আচ্ছা মা বলো, এমন হয় না রহিম চাচার ঝাড়া,
এখনি আমারে এত রোগ হতে করিতে পারেত খাড়া ?’
মা কেবল বসি রুগ্ন ছেলের মুখ পানে আঁখি মেলে,
ভাসাভাসা তার যত কথা যেন সারা প্রাণ দিয়ে গেলে।
‘শোন মা, আমার লাটাই কিন্তু রাখিও যতন করে,
রাখিও ট্যাপের মোয়া বেঁধে তুমি সাত-নরিসিকা ভরে।
খেজুর গুড়ের নয়া পাটালিতে হুড়ুমের কোলা ভরে।
ফুলঝুরি সিকা সাজাইয়া রেখো আমার সমুখ পরে।’
ছেলে চুপ করে, মাও ধীরে ধীরে মাথায় বুলায় হাত,
বাহিরেতে নাচে জোনাকি আলোয় থমথমে কাল রাত।
রুগ্ন ছেলের শিয়রে বসিয়া কত কথা পড়ে মনে,
কোন্ দিন সে যে মায়েরে না বলে গিয়াছিল দূর বনে।
সাঁঝ হয়ে গেল তবু আসে নাকো, আই চাই মার প্রাণ,
হঠাত শুনিল আসিতেছে ছেলে হষে করিয়া গান।
এক কোঁচ ভরা বেথুল তাহার ঝামুর ঝুমুর বাজে,
ওরে মুখপোড়া কোথা গিয়াছিলি এমনি এ কালি সাঁঝে।
কত কথা আজ মনে পড়ে তার, গরীবের ঘর তার,
ছোটখাট কত বায়না ছেলের পারে নাই মিটাবার।
আড়ঙ্গের দিনে পুতুল কিনিতে পয়সা জোটেনি তাই,
বলেছে আমরা, মুসলমানের আড়ঙ্গ দেখিতে নাই।
করিম যে গেল? আজিজ চলিল? এমনি প্রশ্ন মালা,
উত্তর দিতে দুখিনী মায়ের দিগুণ বাড়িত জ্বালা।
আজও রোগে তার পথ্য জোটেনি, ওষুধ হয়নি আনা,
ঝড়ে কাপে যেন নীরে পাখিটি জড়ায়ে মায়ের ডানা।
ঘরের চালেতে হুতুম ডাকিছে, অকল্যাণ এ সুর,
মরণের দূত এলো বুঝি হায় হাঁকে মায়, দূর-দূর।
পচা ডোবা হতে বিরহিনী ডাক ডাকিতেছে ঝুরি ঝুরি,
কৃষাণ ছেলেরা কালকে তাহার বাচ্চা করেছে চুরি।
ফেরে ভন ভন মশা দলে দলে, বুড়ো পাতা ঝরে বনে,
ফোঁটায় ফোঁটায় পাতা-চোঁয়া জল ঝরিছে তাহার সনে।
রুগ্ন ছেলের শিয়রে বসিয়া একেলা জাগিছে মাতা,
সম্মুখে তার ঘোর কুজ্জটি মহাকাল রাত পাতা।
পারশে জলিয়া মাটির প্রদীপ বাতাশে জমায় খেল;
আধারের সাথে যুঝিয়া তাহার ফুরায়ে এসেছে তেল।