ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১২, ডিসেম্বর ২০২৪ ৩:১৫:২০ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
কেমন আছেন পাপিয়া সারোয়ার, মৃত্যু নাকি গুঞ্জন? পঞ্চগড়ে বৃষ্টির মতো শিশির, শীতে জনজীবন বিপর্যস্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তিন গাড়ির সংঘর্ষ, বৃদ্ধা ও শিশুর মৃত্যু অনিয়ম পার্বত্য এলাকায় একটু বেশি: প্রধান উপদেষ্টা শীত নিয়ে আবহাওয়া অফিসের দুঃসংবাদ দিনাজপুরে দিনের বেশির ভাগ সময় মিলছে না সূর্যের দেখা

বিষমুক্ত নিরাপদ লাউ চাষে সফল কল্পনা

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:০৫ এএম, ৯ মার্চ ২০২৩ বৃহস্পতিবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

গোপালগঞ্জে মানব দেহের জন্য নিরাপদ বিষমুক্ত  লাউচাষে সফল হয়েছেন কল্পনা পান্ডে (৪৫)। তিনি গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রঘুনাথপুর পূর্ব দক্ষিণপাড়া গ্রামের গৃহবধূ। গৃহকর্মের পাশাপাশি তিনি কৃষি কাজ করেন। তাকে এই কাজে সহযোগিতা করেন ছেলে অংকন সিকদার (১৭)।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরিবেশ বান্ধব কৌশলের মাধ্যমে নিরাপদ ফসল উৎপাদন প্রকল্পের আওতায় ২০ শতাংশ জমিতে কল্পনা পান্ডে জৈব কৃষি ও জৈব বালাই দমন ব্যবস্থাপনা প্রদর্শনী প্লাট করেছেন। এখানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের  গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে মাটির সাথে কচুরিপানা পচা অংশ মিশিয়ে গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর লাউ গাছ রোপণ করেন। লাউ গাছ রোপণের সময় জৈব ও রাসায়নিক সার সুষমভাবে প্রয়োগ করেন। মাছি পোকা দমনে সেক্স ফেরমেন ফাঁদ টাঙিয়েছেন। লাউ আবাদের ৬২ দিনের মাথায় তিনি লাউয়ের বাম্পার ফলন পেয়েছেন। এখন লাউ বিক্রির টাকা ঘরে তুলছেন।
কল্পনা পান্ডের লাউ ক্ষেতে গিয়ে দেখে গেছে, লাউ আর লাউ। প্রতিটি গাছে ঝুলছে শত শত সবুজ লাউ। গাছের লাউ দেখলেই চোখ জুড়িয়ে যায়। গাছ, পাতা ও ডগার তুলনায় এখানে লাউ বেশি চেখে পড়ছে। বিষমুক্ত নিরাপদ লাউ চাষ করে তিনি এলাকায় তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এ নারী কৃষক। প্রতিদিনই কৃষক ও সাধারণ মানুষ তার লাউক্ষেত দেখতে আসছেন।
লাউ চাষি কল্পনা পান্ডে বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের  গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি অফিসের বীজ, জৈব সার ও সেক্স ফেরমন প্রণোদনা হিসেবে পাই। তারপর আমাদের রঘুনাথপুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ হালদারের পরামর্শে ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে লাউ চাষ করি। ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ সপ্তাহে এ ক্ষেত থেকে লাউ সংগ্রহ শুরু করি। প্রতি সপ্তাহের ২ দিন এ ক্ষেত থেকে লাউ কেটে বিক্রি করছি। সপ্তাহে অন্তত ৮ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করছি। এ লাউ চাষাবাদে আমার ১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এখানে  ১ হাজার ৬০০ টি থেকে  ২ হাজার টি লাউ উৎপাদিত হবে। গড়ে প্রতিটি লাউ ৩০ টাকা দরে বিক্রি হবে। সেই হিসোব আমি ৪৮ হাজার থেকে ৬০ হাজার টাকার লাউ বিক্রি করতে পারব। নতুন এ পদ্ধতির চাষাবাদে গাছ রোপণে সময় কচুরিপানা পচা, জৈব ও সামান্য রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়েছে। এখানো কোন ধরণের কীটনাশক ব্যবহার করা হয়নি। লাউয়ে মাছি পোকার আক্রমণ সবচেয়ে বেশি হয়। লাউ গাছ জালি ছাড়ার সাথে সাথে জালিতে মাছি পোকা হুল ফুঁটিয়ে দেয়। এতে লাউয়ের জালি মারা যায়। লাউয়ের উৎপাদন আশংকা জনকহারে কমে যায়। এখানে সেক্স ফেরমন ফাঁদ দিয়ে মাছি পোকা দমন করা হয়েছে। এ পদ্ধতিতে চাষবাদ করে আমি লাউয়ের বাম্পার ফলন পেয়েছি। আমার লাউ চাষ দেখে আশপাশের কৃষকরা এ পদ্ধতিতে লাউ চাষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। প্রতিদিনই অনেকই আমার ক্ষেত দেখতে এসে লাউ চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
রঘুনাথপুর ইউনিয়নের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা প্রদীপ হালদার বলেন, প্রচলিত পদ্ধতিতে শতাংশে ৮০ থেকে ১০০টি লাউ উৎপাদিত হয়। নতুন জৈব কৃষি ও জৈব বালাই দমন ব্যবস্থাপনা পদ্ধতিতেও শতাংশে একই পরিমান লাউ উৎপাদিত হয়েছে। এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত লাউ বিষমুক্ত ও মানবদেহের জন্য নিরাপদ। এখানে রাসায়নিক সারের ব্যবহার নেই বললেই চলে। কীটনাশক ব্যবহার করা হয় না। সেক্স ফেরমন ফাঁদের মধ্যেমে পোকা মাকড় দমন করা হয়। তাই লাউ উৎপাদন খরচ কম। কম খরচে কৃষক অধিক ফলন পেয়ে লাভবান হন। এছাড়া এ লাউ সুস্বাদু । তাই বজারে একটু বেশি দামে বিক্রি হয়। কল্পনা পান্ডে বিষমুক্ত নিরাপদ লাউ চাষ করে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাই  আমরা এ পদ্ধতিতে লাউসহ নিরাপদ সবজি চাষে কৃষকদের উদ্ধুদ্ধ করছি। 
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের  গোপালগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মাফরোজা আক্তার বলেন, মানুষ অসংক্রামিত রোগে বিশেষ করে ক্যান্সার, কিডনী, লিবার সিরোসিস, ডায়বেটিস, উচ্চরক্তচাপে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। এসব রোগের চিকিৎসায় প্রচুর অর্থ ব্যয় হচ্ছে। সেই সাথে অকালে প্রাণ ঝড়ে পড়ছে। মানুষকে এইসব জটিল রোগ থেকে রক্ষা করতে নিরাপদ সবজির আবাদ বৃদ্ধির ওপর সরকার গুরুত্বারোপ করেছে। তাই সরকার নতুন নতুন প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন করে আমরা, মাটি, পানি, বাতাস ও পরিবেশের দূষন কমিয়ে আনব। বিষমুক্ত নিরাপদ সবজির উৎপাদন বৃদ্ধি করব। তাই  মানবদেহের জন্য নিরাপদ সবজি উৎপাদনে আমরা কৃষককে উদ্বুদ্ধ করছি। প্রদর্শনী প্লট করে কৃষককে আমরা নিরাপদ সবজি আবাদ দেখিয়ে দিচ্ছি। এতে কৃষকদের পক্ষ থেকে ব্যাপক সাড়া মিলছে।