মহাশ্বেতা দেবীর জন্মদিনে শুভেচ্ছা
অনু সরকার | উইমেননিউজ২৪প্রকাশিত : ১১:৫৬ পিএম, ১৪ জানুয়ারি ২০২১ বৃহস্পতিবার
মহাশ্বেতা দেবীর জন্মদিনে শুভেচ্ছা
তিনি জীবনভর দলিত ও প্রান্তিক মানুষদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। পাশে থেকেছেন অসহায়ের। লোধা, শবরদের জন্য কলম ধরেছেন। সিঙ্গুর-নন্দীগ্রামের আন্দোলনেও ছিল তার অসামান্য অবদান। তিনি ছিলেন বাংলা তথা গোটা ভারতবর্ষের একজন বলিষ্ঠ সাহিত্যিক। আজ ১৪ জানুয়ারি সেই বর্ষীয়ান সাহিত্যিক মহাশ্বেতা দেবীর জন্মদিন।
মহাশ্বেতা দেবী বলতেন, `আঙুল লেখে না, লেখে আমার মন।` ছোটবেলায় শান্তিনিকেতন আশ্রমে দেখা হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে। তখনকার আশ্রম-জীবন তাকে দিয়েছিল অদম্য মুক্তির আনন্দ, পর-কে আপন করার নিঃস্বার্থ টান!
১৯২৬ সালের ১৪ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের ঢাকা শহরে মহাশ্বেতা দেবী জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তার বাবা মণীষ ঘটক ছিলেন কল্লোল সাহিত্য আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত খ্যাতনামা কবি ও ঔপন্যাসিক। আর কাকা বিশিষ্ট চলচ্চিত্র পরিচালক ঋত্বিক ঘটক। মহাশ্বেতা দেবীর মা ধরিত্রী দেবীও ছিলেন লেখক ও সমাজকর্মী।
মহাশ্বেতা দেবীর বিদ্যালয়-শিক্ষা শুরু হয়েছিল ঢাকা শহরেই। ইডেন স্কুলের মন্টেসরিতে পড়াশোনা শুরু করেন। ভারত ভাগের পর তিনি পশ্চিমবঙ্গে চলে যান। সেখানে মেদিনীপুরে চতুর্থ শ্রেণিতে ভর্তি হন।
১৯৩৬ সালে তিনি পড়াশোনা করতে শান্তিনিকেতন যান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠভবনে ভর্তি হন। এ সময় মাত্র দুবছর শান্তিনিকেতনে কাটালেও তা ছিল তার জীবনের উল্লেখযোগ্য সময়। এ সময়ই তার লেখালেখির শুরু। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় খগেন্দ্রনাথ সেন সম্পাদিত ‘রংমশাল’ পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয় তার রবীন্দ্রনাথ-সম্পর্কিত রচনা ‘ছেলেবেলা’।
১৯৩৯ সালে তিনি কলকাতায় চলে যান। সেখান থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ১৯৪২ সালে আশুতোষ কলেজে ভর্তি হন। ১৯৪৩-এ পঞ্চাশের মন্বন্তরের সময় মহাশ্বেতা দেবী প্রথম বর্ষে পড়েন এবং কম্যুনিস্ট পার্টির ছাত্রী সংগঠন এবং দুর্ভিক্ষ ত্রাণের কাজে জড়িয়ে পরেন।
১৯৪৪ সালে বিএ পড়তে মহাশ্বেতা ফিরে যান শান্তিনিকেতনে। ১৯৪৬ সালে আবার কলকাতায় ফিরে ইংরেজিতে অনার্সসহ বিএ পাস করেন। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে এমএ ভর্তি হন। কিন্তু তখন রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পড়াশোনা ব্যাহত হয়। পরে দীর্ঘ বিরোতির পর ১৯৬৩ সালে তিনি প্রাইভেটে ইংরেজিতে এমএ পাস করেন।
১৯৪৭ সালে মহাশ্বেতা দেবী বিশিষ্ট নাট্যকার বিজন ভট্টাচার্যকে বিয়ে করেন। বিজন ভট্টাচার্য ছিলেন ভারতীয় গণনাট্য সংঘ আন্দোলনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা পথপ্রদর্শক। ১৯৪৮ সালে তাদের একমাত্র পুত্র নবারুণ ভট্টাচার্যের জন্ম হয়। নবারুণ ভট্টাচার্য পরবর্তীকালে ঔপন্যাসিক ও রাজনৈতিক সমালোচক হয়েছিলেন।
মহাশ্বেতা দেবী ১০০টিরও বেশি উপন্যাস এবং ২০টিরও বেশি ছোটোগল্প সংকলন রচনা করেছেন। তবে তার রচনার মধ্যে অনেকগুলো অন্যান্য ভাষায় অনূদিত হয়েছে। তার প্রথম উপন্যাস ঝাঁসির রানি ঝাঁসির রানির (লক্ষ্মীবাই) জীবনী অবলম্বনে রচিত। এটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৫৬ সালে। তার উল্লেখযোগ্য রচনাগুলি হল হাজার চুরাশির মা (১৯৭৪), রুদালি (১৯৯৩), অরণ্যের অধিকার (১৯৭৯) প্রভৃতি। ‘অরণ্যের অধিকার’ উপন্যাসের জন্য ১৯৭৯-এ সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার পান মহাশ্বেতা দেবী। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে জ্ঞানপীঠ পুরস্কার ও র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার, সার্ক সাহিত্য পুরস্কারসহ একাধিক সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন। ভারতের চতুর্থ ও দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান যথাক্রমে পদ্মশ্রী ও পদ্মবিভূষণে ভূষিত হন তিনি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাকে রাজ্যের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান বঙ্গবিভূষণে ভূষিত করে।
১৯৬৪ সালে মহাশ্বেতা দেবী বিজয়গড় কলেজে (কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক অনুমোদিত কলেজ) শিক্ষকতা শুরু করেন। সেই সময় বিজয়গড় কলেজ ছিল শ্রমিক শ্রেণির ছাত্রীদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এই সময় মহাশ্বেতা দেবী একজন সাংবাদিক ও একজন সৃজনশীল লেখক হিসেবেও কাজ চালিয়ে যান। একপর্যায়ে তিনি শিক্ষকতার চাকুরি ছেড়ে লেখালেখিকেই পেশা হিসেবে বেছে নেন। আমৃত্যু লেখালেখিই ছিল পেশা।
তিনি পশ্চিমবঙ্গের লোধা ও শবর উপজাতি, নারী ও দলিতদের নিয়ে পড়াশোনা করেন। তার প্রসারিত কথাসাহিত্যে তিনি প্রায়শই ক্ষমতাশালী জমিদার, মহাজন ও দুর্নীতিগ্রস্থ সরকারি আধিকারিকদের হাতে উপজাতি ও অস্পৃশ্য সমাজের অকথ্য নির্যাতনের চিত্র অঙ্কন করেছেন।
নিজের অনুপ্রেরণার উৎস সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, ‘আমি সর্বদাই বিশ্বাস করি যে, সত্যকারের ইতিহাস সাধারণ মানুষের দ্বারা রচিত হয়। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সাধারণ মানুষ যে লোককথা, লোকগীতি, উপকথা ও কিংবদন্তিগুলি বিভিন্ন আকারে বহন করে চলেছে, তার পুনরাবির্ভাবের সঙ্গে আমি ক্রমাগত পরিচিত হয়ে এসেছি। ... আমার লেখার কারণ ও অনুপ্রেরণা হল সেই মানুষগুলি যাদের পদদলিত করা হয় ও ব্যবহার করা হয়, অথচ যারা হার মানে না। আমার কাছে লেখার উপাদানের অফুরন্ত উৎসটি হল এই আশ্চর্য মহৎ ব্যক্তিরা, এই অত্যাচারিত মানুষগুলি। অন্য কোথাও আমি কাঁচামালের সন্ধান করতে যাব কেন, যখন আমি তাদের জানতে শুরু করেছি। মাঝে মাঝে মনে হয়, আমার লেখাগুলি আসলে তাদেরই হাতে লেখা।’
মহাশ্বেতা দেবী বারবার ভারতের উপজাতি মানুষদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। ২০১৬ সালের জুন মাসে মহাশ্বেতা দেবীর আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ঝাড়খণ্ড সরকার বিশিষ্ট আদিবাসী নেতা বিরসা মুন্ডার একটি মূর্তিকে শৃঙ্খলামুক্ত করে। তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের শাসনকালে গৃহীত শৃঙ্খলিত বিরসা মুন্ডার একটি আলোকচিত্রের ভিত্তিতে মূর্তিটি নির্মিত হয়েছিল। এই বিরসা মুন্ডার জীবনকাহিনি অবলম্বনে ১৯৭৭ সালে মহাশ্বেতা দেবী অরণ্যের অধিকার উপন্যাসটি রচনা করেছিলেন। মহাশ্বেতা দেবী পশ্চিমবঙ্গের পূর্বতন ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্ক্সবাদী) (সিপিআই (এম))-নেতৃত্বাধীন সরকারের শিল্পনীতির বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। বিশেষত, তিনি কৃষকদের কাছ থেকে প্রচুর পরিমাণে উর্বর কৃষিজমি অধিগ্রহণ করে তা অত্যন্ত স্বল্পমূল্যে শিল্পপতিদের দিয়ে দেওয়ার তীব্র সমালোচনা করেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতনে তিনি প্রথম জীবনে কয়েক বছর কাটিয়েছিলেন। সেই শান্তিনিকেতনের বাণিজ্যিককরণের বিরোধিতা করেছিলেন মহাশ্বেতা দেবী। নন্দীগ্রাম আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে তিনি সিঙ্গুর ও নন্দীগ্রামের বিতর্কিত জমি অধিগ্রহণ নীতির বিরুদ্ধে বহুসংখ্যক বুদ্ধিজীবী, শিল্পী, লেখক ও নাট্যকর্মীকে একত্রিত করেন।
২০১৬ সালের ২৩ জুলাই হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মহাশ্বেতা দেবী কলকাতার বেল ভিউ ক্লিনিকে ভর্তি হন। ২৮ জুলাই তিনি মারা যান। আজ জন্মদিনে তার প্রতি রইলো উইমেননিউজ২৪.কম-এর পক্ষ থেকে ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা।
- লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত, যেমন থাকবে আবহাওয়া
- ২০ লাখ অ্যাকাউন্ট বন্ধ করলো মেটা
- সর্দি-জ্বরে বেহাল দশা? স্বস্তি মিলবে ঘরোয়া উপায়ে
- পঞ্চগড়ে জেঁকে বসেছে শীত, তাপমাত্রা নামল ১৩ ডিগ্রিতে
- শীতে ত্বক ভালো রাখবেন যেভাবে
- ‘সাগরের তীর থেকে’ খ্যাত গানের শিল্পী জীনাত রেহানা হাসপাতালে
- ব্রাজিলে বাস খাদে পড়ে ২৩ জনের প্রাণহানী
- বগুড়ায় আগাম জাতের আলু চাষ
- ঢাকার বাতাস আজ ‘ঝুঁকিপূর্ণ’
- আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন সংশোধন করে গেজেট প্রকাশ
- হাসপাতালে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিরা আর ঢুকতে পারবে না
- ‘মেগা মানডে’ ঘোষণা, ঢাকা কলেজের সব ক্লাস বন্ধ
- স্কলাসটিকায় ঠাকুর’মার ঝুলির নাটক মঞ্চস্থ
- পাবনায় শিমের ভালো ফলনে কৃষকের ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা
- পুতুলের সূচনা ফাউন্ডেশনের ব্যাংক হিসাব জব্দ
- জেনে নিন বিমানবন্দর নেই যে সব দেশে
- ঘুরে আসুন পানামসহ না.গঞ্জের পাঁচটি পর্যটন স্পট
- আজ পহেলা অগ্রহায়ণ, হেমন্তকাল শুরু
- বিশ্ব হার্ট দিবস আজ
- হেমন্তে ছাতিম ফুল সুগন্ধ ছড়িয়ে যায়
- শান্তিতে নোবেল পেল জাপানের মানবাধিকার সংস্থা নিহন হিদানকিও
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিন আজ
- ‘রিমান্ড’-এ মম
- রাজু ভাস্কর্যের নারী প্রতিকৃতিতে হিজাব, যা জানা গেলে
- পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপে ঘুরে দাঁড়াল ভারতের মেয়েরা
- সৈয়দ শামসুল হকের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
- নেপালে ভয়াবহ বন্যা-ভূমিধসে নিহত বেড়ে ১১২
- জীবনে প্রেম এসেছে ৬ বার: স্বস্তিকা
- পঞ্চগড় থেকে দেখে আসুন কাঞ্চনজঙ্ঘা
- গৃহশ্রমিক মেয়েদের দিন কষ্টে কাটে