ঢাকা, রবিবার ২৪, নভেম্বর ২০২৪ ১১:৪৭:০৩ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
ইসরায়েলি হামলায় গাজায় ৩৮, লেবাননে ৩৩ প্রাণহানী প্রথমবার নির্বাচনে অংশ নিয়েই প্রিয়াঙ্কার বাজিমাত বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ব্রিটিশ রাজা চার্লস আজ ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না যেসব এলাকায় বাংলাদেশ সফরে আসতে পারেন ব্রিটিশ রাজা চার্লস কুড়িগ্রামে বাড়ছে শীতের প্রকোপ, তাপমাত্রা নামল ১৫.৬ ডিগ্রিতে

মাকে নিয়ে আলোচিত সিনেমা যত

অনলাইন ডেস্ক | উইমেননিউজ২৪.কম

আপডেট: ১০:০২ পিএম, ১৫ মে ২০১৮ মঙ্গলবার

মা। এই একটিমাত্র শব্দ একজন নারীকে করে তোলে সবচেয়ে ক্ষমতাধর। পৃথিবীর সকল আবেগ, অনুভূতি, মমতা যেন নিহিত আছে এই একটি শব্দে। সেই সব আবেগ ফুটিয়ে তুলতে চলচ্চিত্র সবচেয়ে বড় মাধ্যম হিসেবে কাজ করেছে। বিভিন্ন সময়ে মাকে নিয়ে বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন ঘরানার চলচ্চিত্র তৈরি হয়েছে । তার মধ্য থেকে মাকে নিয়ে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রগুলো নিয়ে আজকের এ প্রতিবেদনে তুলে ধরা হল।

  

টু উইমেন : দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতায় কুঁকড়ে যাওয়া মানবতার করুণ গাঁথা সবচেয়ে ভালভাবে তুলে এনেছিলেন ইতালিয় নির্মাতা ভিত্তোরিও ডি সিকা। আলবার্তো মোরাভিয়ার লেখা `টু উইমেন` উপন্যাসকে তিনি বেছে নিয়েছিলেন যুদ্ধের করাল গ্রাসে হারিয়ে যাওয়া এক মা-মেয়ের করুণ গল্প বলবার জন্য। নাৎসিবাহিনীর আক্রমণে দিশাহারা হয়ে অন্যান্য রোমবাসীর সঙ্গে লাতসিওতে পালিয়ে আসে সেসিরা তার ১২ বছর বয়সী মেয়ে রোসেত্তাকে নিয়ে। একদিকে প্রাণ হারাবার ভয়, আর অন্যদিকে শত্রুশিবিরের লালসা থেকে নিজের মেয়েকে বাঁচাতে মায়ের সংগ্রাম-এর সবকিছুই ‘টু উইমেন’-এ উঠে আসে ডি সিকার নান্দনিকতায়। কিংবদন্তী অভিনেত্রী সোফিয়া লোরেন অভিনয় করেছিলেন এই সিনেমায় মা সেসিরার ভূমিকায়। এই চরিত্রে তার দুর্দান্ত অভিনয় তাকে এনে দিয়েছিল অস্কারসহ মোট ২২টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার। আজও সেলুলয়েডে সন্তানকে বাঁচাতে মায়ের সংগ্রামের অনন্য দৃষ্টান্ত হিসেবে অমর হয়ে আছে ১৯৬০ সালের এই সিনেমাটি।

 

উত্তর ফালগুনী : শ্রেণি বৈষম্য এবং উত্তর ফালগুনী সংগ্রামের এক করুণ চলচ্চিত্র হিসেবেই নির্মাতা অসিত রায় বানিয়েছিলেন তার সিনেমাটি। নিজের ক্যারিয়ারের সবচাইতে চ্যালেঞ্জিং চরিত্রে এই সিনেমাতেই অভিনয় করেছিলেন মহিানায়িকা সুচিত্রা সেন। দ্বৈত চরিত্রে ওই সিনেমায় তিনি ছিলেন একজন মা, আবার একই সঙ্গে সেই মায়ের সন্তানও। দারিদ্র নিপীড়িনের হাত থেকে শুধু মেয়ের ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে পালিয়ে এসেছিলেন মদ্যপ স্বামীর আশ্রয় থেকে। হয়ে যান পরপুরুষের বিনোদনের খোরাক এক বাঈজী। শুধু মেয়ে সুপর্নার ভরণপোষণ করার চিন্তা করেই দেবযানি লক্ষেèৗতে কাজ করেন পান্নাবাই নামে এক বাঈজী হিসেবে। ষাটের দশকের কলকাতার প্রেক্ষাপটে এমন এক গল্প সাড়া ফেলে দিয়েছিল সর্বত্র। ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে সেরা বাংলা সিনেমার সাফল্য অর্জন করেছিল ১৯৬৩ সালে নির্মিত এই সিনেমা। পরবর্তীতে তিন বছর পর অসিত রায় হিন্দিতে সিনেমাটি পুননির্মাণ করেন `মামতা` নামে, যেখানে আরও একবার দ্বৈত চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন সুচিত্রা। মাতৃত্বের সংগ্রামের এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে এই সিনেমাটি এখনও অনবদ্য।

 

হাজার চৌরাসি কা মা : চারু মজুমদারের ইশতেহারের ডাকে নকশালবাড়ি আন্দোলনে যোগ দিয়েছিল অসংখ্য শিক্ষিত তরুণ। কলকাতায় তখন সময়টা সত্তরের দশক। অন্যান্য অনেক তরুণের মত কলেজপড়ুয়া ব্রতিও গিয়েছিল সে আন্দোলনে। কিন্তু বাড়িতে খবর এলো, সে ফিরেছে লাশ হয়ে। লেখাপড়ায় ভাল, আদরের সন্তান ব্রতী নয় বরং হাজার চুরাশি নাম্বার লাশের দায়িত্ব বুঝে নিতে বলা হয় তার মা, সুজাতাকে। নকশালবাড়ি আন্দোলনে ছেলে হারানো এক মায়ের মর্মস্পর্শী এই গল্প লিখেছিলেন মহাশ্বেতা দেবী, তার ‘হাজার চুরাশির মা’ উপন্যাসে। সেই গল্প থেকেই ভারতে ১৯৯৮ সালে নির্মিত হয় `হাজার চৌরাসি কা মা`। প্রায় ১৮ বছর পর সেলুলয়েডের জগতে ফিরে শোকাহত সেই মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন জয়া বচ্চন। কলকাতায় ষাট থেকে আশির দশকের মধ্যে বামপন্থী নকশালদের আন্দোলনে পুলিশি অত্যাচার এবং গুলিবর্ষণে নিহত হয়েছিল এরকম অসংখ্য তরুণ। গুমোট এই পরিস্থিতির বেদনাবহুল প্রেক্ষাপট পরিষ্কারভাবেই ধরা পড়েছিল জয়া বচ্চনের সুজাতা চ্যাটার্জি চরিত্রটিতে। গোভিন্দ নিহালানি নির্মিত `হাজার চৌরাশি কা মা` সেবার পেয়েছিল সেরা ভারতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার।

 

টার্মস অফ এনডিয়ারমেন্ট : বাবাহীন এমাকে আগলে রেখে অরোরা খুঁজে ফেরে সত্যিকারের ভালোবাসা। এদিকে এমাও বড় হয়ে জড়িয়ে পড়ে জটিল এক সম্পর্কে, নিজেও অর্জন করে মাতৃত্বের স্বাদ। তাদের চারপাশের পরিস্থিতি পরিবর্তন হতে শুরু করলেও একান্ত গুরুত্বপূর্ণ মূহুর্তে এই মা-মেয়ে দুজনেই এগিয়ে আসে একে অপরের সাহায্যে। মা-মেয়ের ত্রিশ বছরের এই গল্প নিয়েই ১৯৮৩ সালে মুক্তি পায় `টার্মস অফ এনডিয়ারমেন্ট`। জেমস এল. ব্রুকস এর পরিচালনায় সিনেমাটি সেবার অস্কার আসর করে নিয়েছিল নিজেদের। এগারটি মনোনয়নের মাঝে জিতেছিল সেরা সিনেমার পুরস্কারসহ পাঁচটিতে। মা অরোরার চরিত্রে অভিনয় করা শার্লি ম্যাকলেইন জিতেছিলেন সেরা অভিনেত্রীর অস্কার।

 

দ্য ব্লাইন্ড সাইড : ছোটবেলা থেকেই মাইকেল ওহারের স্বপ্ন ছিল, বড় হয়ে নামকরা ফুটবলার হবে সে। কিন্তু তার গায়ের কাল রঙই যে তার স্বপ্নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা। তার ওপর মাত্র ৭ বছর বয়সেই মাদকাসক্ত মায়ের কাছ থেকে পরিত্যাক্ত হয় সে। এভাবেই শিশু ওহারের স্বপ্ন সাদা মানুষদের পায়ের তলায় পিষ্ট হয়ে হারিয়েই যেত, যদি না কৈশরে আরেক শেতাঙ্গ নারী মাতৃস্নেহে বুকে টেনে না নিতেন তাকে। মার্কিন ফুটবল তারকা মাইকেল ওহার আর তার ‘মা’ লেই অ্যান টুওহির গল্প নিয়েই তৈরি হয়েছে ‘দ্য ব্লাইনইড সাইড’। রক্ত সম্পর্ক না থাকা সত্বেও দিশেহারা কৃষ্ণাঙ্গ এক কিশোরকে নিজের ছেলের মত আগলে রাখা এক শ্বেতাঙ্গ নারীর এই গল্প সেলুলয়েডের পর্দায় অনন্য। তাইতো, ২০০৯ সালে জন লি হ্যানক নির্মিত এই সিনেমাটিতে লেই অ্যান এর ভূমিকায় অভিনয় স্যান্ড্রা বুলককে এনে দিয়েছিল সেরা অভিনেত্রীর অস্কার।

 

মাদার : এটিকে ‘হারানো চলচ্চিত্র’ হিসেবে ধরা হয়। আমেরিকান নির্বাক স্বল্পদৈর্ঘ্য নাট্য চলচ্চিত্র। প্রযোজনা করেছে থানহাউসার কোম্পানি। এটি একটি আবেগপ্রধান চলচ্চিত্র, যেখানে উইল এ্যালেন নামের একটি ছেলে তার সৎ বাবার ভয়ানক অত্যাচারের কারণে ঘর ছাড়তে বাধ্য হয়। আর তার মা একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে রাখে ছেলের ফিরে আসার প্রতীক্ষায়। কুড়ি বছর পর উইল বাড়ি ফিরে আসে একজন প্রখ্যাত উকিল হয়ে। কিন্তু সে তার বাবা-মাকে আর খুঁজে পায় না। পরবর্তীতে উইল একজন মহিলার হয়ে মামলা লড়ে, যার বিপক্ষে ছিল একটি খরিদ্দার প্রতিষ্ঠান। সেই মহিলাকে উইল মা হিসেবে চিনতে পারে এবং এভাবে তাদের পুনর্মিলন হয়। চলচ্চিত্রটির মূল অভিনয়ে ছিলেন আনা রোসমন্ড, ফ্রাঙ্ক এইচ ক্রেন ও ক্যারি এল. হ্যাসিং। এটি ১৯১০ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মুক্তি পায়।

 

জুনো : জ্যাসন রেইটম্যানের পরিচালনায় এ চলচ্চিত্রের প্রধান চরিত্র জুনো নামের এক কিশোরী। দুর্ঘটনাবশত গর্ভবতী হয়ে যাওয়ার পর মা হওয়ার প্রবল আকাক্সক্ষা, সামাজিক ও পারিবারিক জটিলতা এবং অনাগত সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তার দোলাচলে এগিয়ে চলা জুনোর গল্প নিয়ে নির্মিত হয় এ চলচ্চিত্র। ২০০৭ সালে মুক্তি পাওয়ার পর ছবিটি বক্স অফিসে ঝড় তোলে। মূলত যুক্তরাষ্ট্রে অপ্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় গর্ভবতী হওয়ার সমস্যাগুলোই উঠে এসেছে ছবিতে। কেন্দ্রীয় চরিত্র করেন এলেন পেজ।

 

আকিলাহ অ্যান্ড দ্য বি : আকিলাহর জাতীয় পর্যায়ে বানান প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ এবং সেখানে মেয়েকে বিজয়ী দেখতে মায়ের চেষ্টা নিয়ে ২০০৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র ‘আকিলাহ অ্যান্ড দ্য বি’। ডুগ অ্যাটকিসন পরিচালিত এ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন কেকে পালমার, অ্যাঞ্জেলা ব্যাসেট প্রমুখ। সন্তানের স্বপ্ন পূরণ করতে মায়েদের পরিশ্রমের কথাই উঠে এসেছে এ চলচ্চিত্রে। এর প্রধান চরিত্র এগারো বছর বয়সী বানানের জাদুকর আকিলাহ।

 

মাস্ক : ১৯৮৫ সালে হলিউডে মুক্তি পায় জীবনীভিত্তিক এই ছবি। ছেলের অসুখের সঙ্গে মায়ের লড়াই চোখে পড়বে সত্য ঘটনার এই ছবিতে। ছেলেকে মা সব বাধা অতিক্রম করে শেষ পর্যন্ত সুস্থ করে তোলে। কানের সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কারটা গিয়েছে মায়ের চরিত্রে অভিনয় করা শেরের ঝুলিতে।

 

মামা রোমা : ১৯৬২ সালে মুক্তি পায় ইতালির এই ছবিটি। সাবেক যৌনকর্মী ও তার ১৬ বছর বয়সী ছেলের কষ্টের জীবন নিয়ে গড়ে উঠেছে ছবির গল্প। সংসার চালাতে গিয়ে মাকে যৌনকমী হতে হয়। তারপরেও ছেলেকে সে মানুষের মত মানূষ করে। যৌনকর্মী ও মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন অ্যানা মাগনানি।

 

গ্রে গার্ডেনস : এটি একটি মার্কিন প্রামাণ্যচিত্র। মুক্তি পায় ১৯৭৫ সালে। দরিদ্র মা-মেয়ের নিত্যদিনের জীবনযাপন দেখানো হয়েছে এতে। মা-মেয়ের কষ্টার্জিত পরিশ্রমের সংগ্রাম গাথা এ ছবিটি। যেখানে মেয়েকে সম্পূর্ণভাবে সবকিছু থেকে তার মা রক্ষা করে।

 

মিল্ড্রিড পিয়ার্স : হলিউডি ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৪৫ সালে। পরিশ্রম করে সফল ব্যবসায়ী বনে যাওয়া মায়ের কাহিনী নিয়ে এই ছবি। মেয়েকে ভাল জায়গায় পড়ানোর জন্য, মেয়ের সব চাহিদা মেটানোর জন্য জীবনসংগ্রামে জয়ী হওয়া এক মায়ের সংগ্রামী কাহিনী নিয়ে আবর্তিত ছবিটি। চমৎকার অভিনয়ের জন্য মায়ের চরিত্র করা জোয়ান ক্রোফোর্ড পেয়েছিলেন সেরা অভিনেত্রীর অস্কার।

 

অল অ্যাবাউট মাই মাদার : স্প্যানিশ এই ছবিটি মুক্তি পায় ১৯৯৯ সালে। এক কিশোর ও তার সেবিকা মায়ের গল্প এটি। সেরা বিদেশি ভাষার ছবির অস্কার কিন্তু এই ছবির ঝুলিতে। একজন মা সেবিকার মত কঠিন পেশা নিয়েও তার মন্তানকে একাই লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষের মত মানুষ করেন, নিজের সুখ, শান্তি সব বিসর্জস দিয়ে।