ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১৪, নভেম্বর ২০২৪ ১৩:১৮:০৪ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
জাতীয় নির্বাচন কবে জানালেন ড. ইউনূস মার্কিন দপ্তরে সাংবাদিকের অ্যাক্রিডিটেশন কার্ড বাতিল প্রসঙ্গ যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক হচ্ছেন তুলসী জনসচেতনতার মাধ্যমে ডায়াবেটিসের প্রকোপ কমিয়ে আনা সম্ভব ডেঙ্গু কেড়ে নিলো ৫ প্রাণ, হাসপাতালে সহস্রাধিক আহতদের দেখতে গিয়ে তোপের মুখে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা

মানসিক শক্তি কী শারীরিক রোগ সারাতে পারে

লাইফস্টাইল ডেস্ক  | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১২:৫১ পিএম, ১০ নভেম্বর ২০২৪ রবিবার

সংগৃহীত ছবি

সংগৃহীত ছবি

মানসিক শক্তি কেবল মনই ভালো রাখে না, শরীরও ভালো রাখে। এমন অনেক নজির আছে যে, মানসিক শক্তির প্রভাবে কঠিন রোগ থেকেও মানুষ সুস্থ হয়ে উঠেছে। ইন্দোনেশিয়ার এক বাসিন্দা হারিয়াতি লওইজায়া বলেছেন, ‘ক্যান্সার হওয়ার পর আমার জীবনের লক্ষ্য বদলে গেছে। আগে ক্যারিয়ারই ছিল আমার জীবন কিন্তু এখন আমার জীবনই আমার ক্যারিয়ার। যোগব্যায়াম করার পর সব পাল্টে গেছে এবং এখনো পাল্টাচ্ছে।’

২০১৬ সালের অক্টোবরে আমার ফোর-বি স্টেজের ক্যান্সার ধরা পড়ে হারিয়াতির। সার্ভিকাল ক্যান্সার মূত্রাশয়, যকৃত ও অন্ত্রে ছড়িয়ে পড়েছিল। তাই অতীতের পরিসংখ্যান দেখে চিকিৎসকেরা জানিয়ে দিয়েছিলেন, তার বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ১৫ থেকে ১৮ শতাংশ। প্রথমে মুষড়ে পড়েছিলেন হারিয়াতি। 

তিনি বলেন,  ‘আমি এমনভাবে জীবন যাপন করছিলাম যার কারণে স্বাস্থ্য ভালো থাকার কথা। প্রথমে কেমো থেরাপির পর মন আরো ভেঙে গিয়েছিল। আর সেটা অবশ্য ছিল কেমোথেরাপির প্রভাব। তখন শরীর নাড়াতেও খুব কষ্ট হতো। এমনিতেই হাঁটাচলা করলে আমি চাঙ্গা থাকি, তাই আমি ঠিক করলাম বাইরে হাঁটাহাঁটি করব। ডাক্তার তো অনুমতি দিচ্ছিল না তাই লুকিয়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে পড়লাম। নিজেকে বললাম মাত্র এক কিলোমিটার হেঁটে ফিরে আসব। সেটা ছিল যেন আমার জীবনের সবচেয়ে দীর্ঘ কষ্টকর হাঁটা। তবে বাইরে থেকে হেঁটে হাসপাতালে ফেরার পর খুব ভালো লাগছিল। আমি জানতাম যতক্ষণ শ্বাস আছে ততক্ষণ বেঁচে থাকার প্রবল চেষ্টা করতে হবে। এমনকি শরীর অল্প সাই দিলেও চেষ্টা করতেই হবে আমাকে। চিকিৎসার সময় আমি হাঁটা জগিং ইত্যাদি চালিয়ে গেলাম। অলৌকিকভাবে ২০১৭ সালে ডাক্তার বললেন যে আমার শরীরের ক্যান্সার নেই। তারপর আমি ম্যারাথনের জন্য ট্রেনিং করতে লাগলাম। আর শাকসবজি থেকে পুষ্টিকর বিষয়েও শিখতে লাগলাম।’

হারিয়াতি ইন্দোনেশিয়ার টি মোবাইল ওয়ালেট কোম্পানির সিইও। তবে তিনি অবসরে শাকসবজি জাতীয় খাবারের রান্না শেখান।

হারিয়াতি আরও বলেন, ‘চিকিৎসার সময় আমার জীবনযাপনে বেশ পরিবর্তন আনলাম। আমি ভেগান হয়ে গেলাম। আর ২০১৮ সালের ভুটান থেকে হিমালয়ে ম্যারাথনে যোগ দিলাম এবং আমি এটি শেষ করলাম। সবাই বলতে লাগলো যে, মাংস না খেলে তুমি এ ম্যারাথন শেষ করতে পারবে না। কিন্তু আমি তাদেরকে ভুল প্রমাণ করলাম। তবে  এবার আমি শুধু নিজের জন্য দৌড়াইনি আমার ভেতরে যে শক্তি ও আশা রয়েছে তা ক্যান্সার আক্রান্ত সকল রোগীদের দেখাতে চাইলাম।’

‘এশিয়ার নারীদের সুস্থ তৎপর জীবনের বার্তা দিতে চাইলে তার প্রথমটি হবে নিজেকে ভালোবাসা। অর্থাৎ নিজেকে সতেজ রাখার জন্য চারপাশের সবকিছু মোকাবিলা করার জন্য এবং  নিজের সেরাটি বের করার জন্য সব সময় নিজের জন্য কিছু সময় বরাদ্দ রাখা প্রয়োজন। শুধু আমি নই আপনিও তা করতে পারেন। তাই এটি শুধু আমাদের শরীরের বিষয় নয় এটি আমাদের ভেতরের সুপ্ত থাকা আমি'র বিষয়। সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য ভেতরের শক্তি ও আসা জাগিয়ে রাখতে আমি তাদের সাহায্য করতে চাই।’- যোগ করেন হারিয়াতি।

মানসিক শক্তির উৎস খুঁজে পেতে ধ্যানের ওপর জোর দিয়েছেন  ভারতের কণিকা শর্মা। তিনি একজন ইঞ্জিনিয়ার এবং যোগী। ইঞ্জিনিয়ারিং পেশার পাশাপাশি তিনি মানুষকে ইয়োগা শেখান। কণিকা মনে করেন, মানুষের জীবন নতুন করে সাজানো শেখা উচিত।

তিনি বলেন, ‘প্রাচীনকালে যোগীরা পাহাড়ে যেতেন। সেখানে ধ্যান করে তারা আধ্যাত্মিক শক্তি অর্জন করতেন। অষ্টম বা নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় আমি যোগব্যায়াম শুরু করি। তখন আমার মধ্যে তেমন আধ্যাত্মিকতা ছিল না। তবে যোগব্যায়াম শুরু করার পর থেকে সবকিছু পাল্টাতে শুরু করে, এখনো সব পাল্টাচ্ছে। সবাই মনে করে যোগব্যায়াম মানে আসন করা। আসলে যোগব্যায়াম বা যোগাসন এত সামান্য বিষয় নয়। চার ধরনের যোগ ব্যায়ামের কথা জানা যায়। সেগুলো হলো- জ্ঞান ইয়োগা, কর্ম ইয়োগা, ভক্তি ইয়োগা এবং ধ্যান ইয়োগা। তার মানে হচ্ছে, যোগব্যায়াম অনেক রকমের। এটা হচ্চে শরীর, মন ও আত্মার মিলন।  এই তিনটির মিলন হলে বুঝতে হবে আপনি যোগী হয়ে গেছেন।’

কণিকা আরও বলেন, ‘মা কিংবা পরিবারের অন্য নারীদের দেখি যে তারা একসঙ্গে ঘর সামলাচ্ছেন, অফিস করছেন এবং পরিবারের দেখাশোনা করছেন। নিজের শরীর স্বাস্থ্যের যত্নও করা উচিত এটি তারা ভুলে যান। নিজেকে ছাড়া অন্য সব কিছুকেই তারা গুরুত্ব দেযন। আমার মনে হয়, আমাদের নিজেদের গুরুত্ব দেয়া উচিত। যেসব মানুষ নিজের জীবনকে নতুন করে শুরু করতে চায় তাদের জন্য আমি একটি ইয়োগা আশ্রম খোলার কথা ভাবছি। আশ্রমটি হবে তাদের জন্য যারা নিজেদের দিনগুলোকে ভালোভাবে কাটাতে চায়। মানুষকে নিজের জীবন নতুন করে সাজানো শিখাতে চায়। আমার জীবনের উদ্দেশ্য পূর্ণ হবে যদি আমি এক হাজার মানুষকে  নিজের যত্ন নেওয়ার বিষয়টি শিখাতে পারি। আমি নিজের মতো করে জীবন যাপন করতে চাই। যেভাবে আমার তৃপ্তি আসে আমি সেভাবে কাজ করতে পারি। অন্য নারীদের বেলায়ও আমি তাই চাই।’

মনের অস্থিরতা দূর করতে পারলে অনেক সমস্যা একে একে দূর হতে পারে। এজন্য মনকে স্থির করা প্রয়োজন। এবং নিজের দিনগুলো ভালোভাবে কাটানোর প্রস্তুতি প্রয়োজন।

সূত্র: ডয়চে ভেলে