ঢাকা, রবিবার ২২, ডিসেম্বর ২০২৪ ৭:৩৫:৩৩ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
বাতিল হওয়া বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর নাম এখনো চূড়ান্ত হয়নি তাপমাত্রা ও কুয়াশা নিয়ে যা জানাল আবহাওয়া অফিস বনানীর ২২নং বস্তিতে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে কাউন্সিলরদের স্বপদে বহাল চায় না জাতীয় নাগরিক কমিটি সাভারে চলন্ত বাসে ডাকাতি, ছুরিকাঘাতে আহত ৪ উত্তরায় রেস্টুরেন্টে আগুন, ৭ জনকে জীবিত উদ্ধার

মায়ের কাছে চিঠি

আইরীন নিয়াজী মান্না | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:২৪ এএম, ৯ মে ২০২১ রবিবার

মায়ের কাছে চিঠি #আইরীন নিয়াজী মান্না

মায়ের কাছে চিঠি #আইরীন নিয়াজী মান্না

মায়ের আঁচল
আমার মায়ের আঁচলখানি সবুজ রঙে মাখা,
তার মাঝে যে লালের ছোঁয়া তুলির টানে আঁকা।

আমার মায়ের শাড়ির আঁচল  হাওয়ার আন্দোলন,
সর্ষেক্ষেতে রংয়ের ছটা উদাস করে মন।

আমার মায়ের আঁচল যেন দীঘল কালো চুল,
চুল নয়তো, চুল নয়তো মেয়ের কানের দুল।

আমার মায়ের আঁচলখানি বাংলাদেশের মাটি,
স্নিগ্ধ-শ্যামল, সবুজপ্রাণ শীতল পারিপাটি।

আমার মায়ের আঁচলখানি আশির্বাদে ভরা
আমার মায়ের স্নেহের ছোঁয়ায় সফল জীবন গড়া।

 

মায়ের কাছে    
বল্ না মাগো কেমন করে তোকে ভুলে থাকি,
মন পবনের নাও উড়িয়ে শুধুই তোকে ডাকি।

আমরা আহা সবাই মিলেসুখি ছিলাম কত!
মনের মাঝে সেই স্মৃতি আজ বইছে অবিরত।

সোনালী সেই দিনগুলো মা ফেলে এসেছি দূরে,
অতীত স্মৃতি আজ যে কাঁদে শুধুই ব্যথার সুরে।

ছবির দিকে তাকিয়ে শুধু তোর কথাই ভাবি,
সঙ্গে করে নিয়ে গেছিস সকল সুখের চাবি।

তোকে ছাড়া শূন্য লাগে, নিরব চারিদিক,
তোকে ছেড়ে একা মাগো কেমনে থাকি ঠিক।

জারুল ফুলের রঙে মা মুখটি তোর আঁকা,
কৃষ্ণচূড়ার পরাগে সব সুখ লুকিয়ে রাখা।

রাত্রি এলেই স্মৃতিগুলো বড্ড বেশি জ্বালায়,
ঘুমের ঝাপি চুপটি করে কোথায় যেন পালায়।

হৃদয় বনে স্মৃতির মালা জোনাক হয়ে জ্বলে
আলোর পিদিম জ্বালিয়ে তারা তোরই কথা বলে।

আকাশ-বাতাস-নদী-তারা তোর কথা যে কয়,
তোকে ছাড়া পাখ-পাখালি উদাস চেয়ে রয়।

নদীর কাছে যাই ছুটে মা, যাই তো পুকুর ঘাটে,
শান্তি নেই মনে আমার, সময় কি আর কাটে!

মনের মাঝে শান্তি ছিলো, সুখ ছিলো প্রাণজুড়ে,
হঠাৎ মা তুই হারিয়ে গেলি অজানা কোন্ দূরে!

 

দেখি মায়ের মুখ
টাপুর টুপুর বৃষ্টি পড়ে ঘুম আসে না মোটে,
মনের নৌকা পাল তুলে যে কোন্ দিকেতে ছোটে।

পালের গায়ে হাওয়া মেখে বৃন্দাচরে নৌকা ভিড়ে
মনের মতো হয় না কিছুই আমি যে যাই ফিরে।

চলতে থাকে হাওয়ার বেগে মন পবনের নাও
তাকিয়ে দেখি সামনে আমার ইচ্ছেপূরণ গাঁও।

ইচ্ছেপূরণ গাঁও পেড়িয়ে যেই ফিরেছি বায়,
আমায় দেখে সবাই কেমন অবাক চোখে চায়।

মন পবনের নাওটা কেমন ছলৎ ছলৎ চলে,
মনটা আমার ঢেঊয়ের তালে কত্তো কি যে বলে।

ভাল্ লাগে না কোনো খেলাই ফিরিয়ে দেই বল,
মন পবনের নাওটা বলে ঘরের পথে চল্।

সব কিছুকে পেছন ফেলে ঘরের দিকে ফিরি,
সুখের পিছে ঘুড়তে গিয়ে হয়ে গেছে দেরি।

স্বপ্ন ভাঙে, নৌকো থামে ভাঙে মনের ভুল,
বুঝতে পাড়ি মা-মনিটাই আমার সুখের মূল।

স্বপ্ন ভাঙে, নৌকো থামে দেখি মায়ের মুখ,
বুঝতে পাড়ি মা-মনিটাই আমার সকল সুখ।


মাকে ভীষণ পড়ছে মনে
মেঘলা আকাশ উদাস করে ভাল্লাগে না ছাই
মাকে ভীষণ পড়ছে মনে লিখছি চিঠি তাই।
সজনে গাছে ফুল ফুটেছে, মাচায় ধরা পুঁই
হাস্না-হেনায় বাগান ভরা, টবের কোলে জুঁই।
ঘুলঘুলিতে সেই যে দুটো হতচ্ছাড়া চড়াই
সারাক্ষণই করছে কেবল খুনসুটি আর লড়াই।
সন্ধ্যাবেলা তারার মেলা আকাশ বুকে জ্বলে
মিটিমিটি তাকিয়ে জোনাক মায়ের কথা বলে।
কাটুস কুটুস ময়না পাখি মিষ্টি সুরে ডাকে
হঠাত আবার দূর আকাশে উদাস চেয়ে থাকে।
তখন আমার কষ্ট হয়, পাখির মনের কথা বুঝি
হারিয়ে যাওয়া মাকে আমার তারার ভিড়ে খুঁজি।


মা নামে মধুর ঐক্যতান
বাবাকে আমার মনে পড়ে না তুমিই ছিলে বাবার মত
নিজের দূ:খ আড়াল করে সুখ দিয়েছো আমায় যত।

তুমিই ছিলে আমার বাবা 'মা' নামে মধুর ঐক্যতান
তোমার সাহসে এগিয়ে গেছি গেয়েছি যে বিজয়ের গান।

বাবাকে আমার মনে পড়ে না বাবার কোনো স্মৃতি নেই
তোমার দেখানো পথে হেঁটেছি হারায়নি তো পথের খেই।

পথ চলেছি ও হাত ধরেই জয় করেছি কত্ত বাঁধা
কেউ ডাকে না তোমার মত! কেউ ডাকে না 'অনুরাধা'।

বাবাকে আমার মনে পড়ে না মনে পড়ে মা তোমার স্মৃতি
বাবার পথেই হাঁটলে তুমি এটাই বুঝি জীবনের রীতি!


মায়ের জন্য ভালোবাসা
জায়নামাজটা পরে আছে চেয়ারটাও খালি,
রান্না ঘরে আওয়াজ নেই কোথায় বনোমালি!

শূন্য-খাঁ খাঁ সারাবাড়ি শূন্য আঙ্গিনা,
সব কিছু একলা ফেলে কোথায় গেলো মা!

কোথায় আজ কণ্ঠ সেই সোহাগ মায়া ভরা,
হারিয়ে গেছে ভালোবাসা হৃদয় পাগল করা!

কোথায় গেলো স্নেহের শাসন সেই যে মায়ার ছোঁয়া,
কোথায় গেলো আশীর্বাদ- হাজার রকম দোয়া!

সব কিছু যে হারিয়ে গেছে মা হলো আজ স্মৃতি,
মা-ও তবে হারিয়ে যায়? এটা কেমন রীতি!

 

তোর কাছে মা আসি
জানবি মাগো নদীর বুকে আসবে ভেসে ঢেউ
তুই শুধু চিনবি আমায় চিনবে না আর কেউ।

জোছনা রাতে নীল আকাশে জ্বলবে ধ্রুব তারা
কে দেবে মা অমন আলো এই আমিটা ছাড়া!

শীতল বাতাস হঠাৎ এসে জড়িয়ে নেবে তোকে
তুই ঠিক চিনবি আমায়, চিনবে না তো লোকে!

সুদূর থেকে আসবে ভেসে পাহাড়ী এক গান
আমার কণ্ঠ জুড়িয়ে দেবে তোর উষ্ণ প্রাণ।

পায়ের নিচে তাকিয়ে দেখ একটুখানি জল
জল নয় মা, জল নয় তা; দু’চোখ ছলছল।

উঠোন কোণে ডালিম গাছে ডাকছে যে পাখি
ওই পাখিটা আমি মাগো, লুকিয়ে দূরে থাকি।

ফড়িং হয়ে আঁচলে তোর বসতে ভালোবসি
আমি যে মা ফিরে ফিরে তোর কাছে আসি।


মায়ের কাছে চিঠি
তিনটে মাস পেড়িয়ে গেলো হারিয়ে গেছো তুমি
তোমার জন্য কাঁদছে দেখো প্রিয় জন্মভূমি।
কাঁদছে দূরে গাছ-তরু-লতা, কাঁদছে ওই নদী
আবার মাগো একটি বার আসতে ফিরে যদি।

কাঁদছে দূরের পাহাড় আর কাঁদছে সূর্য-তাঁরা
কেমন করে থাকবে ওরা বলো তোমায় ছাড়া!
শূণ্য ঘরে কাঁদছে মেয়ে, কাঁদছে কোলের ছেলে
কেমন করে আছো তুমি ওদের একা ফেলে!

শুকনো পাতা ঝরে পড়ে, সময় কি আর কাটে!
স্মৃতিগুলো অতীতপানে শুধুই যেন হাটে।
দিন কাটে যে কষ্টে বড়, রাত তো কাটে না,
শূন্য ঘর, শূন্য বাড়ি, তোমার আঙ্গিনা।

অতীত স্মৃতি দাপিয়ে বেড়ায়, পাগলকরা মন,
একটিবার আয় মা ফিরে, আমার কথা শোন।
জানি মা শুনবি না তুই আমার কোনো কথা
তোর যে এখন রাজ্যজুড়ে শুধুই নিরবতা।

ওই জীবনে তোমায় মাগো চিনবো আমি ঠিক,
স্রষ্টা আমায় অমনতর সুখের মৃত্যু দিক।
সুখের পালা শেষ হয়েছে, জীবনজুড়ে কাঁন্না,
আমিও ঠিক হারিয়ে যাবো-ইতি তোমার মান্না।

              --------০--------