রোজা লুক্সেমবার্গের নির্বাচিত রচনা: অনুবাদ: অদিতি ফাল্গুনী
(ভূমিকা: পিটার হুদিস এবং কেভিন বি. এন্ডারসন) | উইমেননিউজ২৪প্রকাশিত : ১০:৫৪ পিএম, ৫ মার্চ ২০২২ শনিবার
প্রতীকী ছবি
রোজা লুক্সেমবার্গ পোলিশ মার্কসবাদী তাত্তিক, সমাজ দার্শনিক, বিপ্লবী এবং নারী অধিকার কর্মী। ১৮৭১ সালের ৫ মার্চ মাসে রাশিয়া নিয়ন্ত্রিত পোল্যান্ডের সামোসকে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। মাত্র ১৫-১৬ বছর বয়সেই তিনি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। দর্শনগত দিক থেকে রোজা বৈপ্লবিক মার্ক্সবাদী চিন্তাধারায় বিশ্বাসী ছিলেন। পুঁজির বিশ্বায়ণের বিপ্রতীপে কোন মুক্তিদানকারী বিকল্প খোঁজার কথা বলে ব্যক্তি রোজার জীবন এবং তাঁর কাজ, রচনাবলী। এই মহান নেত্রীর রচনাবলী জার্মান থেকে ইংরেজীতে সংকলিত ও সম্পাদিত করেছেন পিটার হুদিস এবং কেভিন বি. এন্ডারসন। এ লেখকদ্বয়ের লেখা বাংলায় অনুবাদ করেছেন দেশের এ সময়ের জনপ্রিয় লেখক অদিতি ফাল্গুনি। আজ রোজা লুক্সেমবার্গের জন্মদিন থেকে উইমেননিউজ২৪.কম-এর পাঠকদের জন্য তার রচনাবলী সিরিয়াল অনুযায়ি উপস্থাপন করা হলো।
২০০৩ সালের ১২ জানুয়ারি প্রায় এক লাখেরও বেশি মানুষ বার্লিনের উপকণ্ঠে ফ্রিডরিখশ্চফিল্ডে রোজা লুক্সেমবার্গ ও কার্ল লিবেনিখটের জীবন এবং উত্তরাধিকারকে স্মরণ করতে উপস্থিত হয়। এটা বেশ বিষ্ময়কর ঘটনা যে, আজ থেকে ৮৪ বছর আগে জার্মানীর তদানীন্তন যে প্রোটো-ফ্যাসিস্ট শক্তি রোজা এবং কার্ল লিবেনিখটকে হত্যা করেন, সেই জার্মানীতেই এই দু’জনের স্মরণে এত বছর পর এত মানুষের সমাবেশ হলো। তবে, এই সমাবেশ একদম অপ্রত্যাশিতও ছিল না। গোটা বিশ্ব জুড়ে তখন ইরাকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য, আশু আক্রমণের মুখে মানুষের ভেতর প্রতিবাদ ধূমায়িত হচ্ছিলো। ইউরোপীয় ইতিহাসে লুক্সেমবার্গ এবং লিবেনিখট ছিলেন সবচেয়ে বেশি সামরিকায়ণ বিরোধী দুই ব্যক্তিত্ব এবং সামরিকায়ণ বিরোধী তাঁদের কাজের উত্তরাধিকার আজো যে কত প্রাসঙ্গিক, সেটা বোঝা যায় যখন সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধ এবং সন্ত্রাসের চ্যালেঞ্জের বিরুদ্ধে এই দুই ব্যক্তির জন্য শ্রদ্ধা নিবেদন হয়ে ওঠে একটি বড় প্রতিরোধ সমাবেশের উপলক্ষ্য।
রোজার (১৮৭১-১৯১৯) কাজের উত্তরাধিকার অবশ্য একজন সামরিকায়ণ বিরোধী ব্যক্তির পরিসরেই সীমিত নয়। বরং তাঁর কাজের পরিসর ছিল আরো অনেক বেশি ব্যপক। পুঁজির বিশ্বায়ণের বিপ্রতীপে কোন মুক্তিদানকারী বিকল্প খোঁজার কথাই বলে ব্যক্তি রোজার জীবন এবং তাঁর কাজ, রচনাবলী। তাঁর প্রজন্মের অন্য যে কোন মার্ক্সিস্টের চেয়ে রোজা আত্ম-প্রসারের জন্য পুঁজির নিরন্তর তাড়নার বিষয়টি তত্ত্বায়িত করেছেন। প্রযুক্তিগত ভাবে পশ্চাৎপদ বা অনুন্নত বিশ্বে পুঁজির এই আত্ম-প্রসারণকামী চারিত্র্যের ক্ষতিকর প্রভাব বিষয়ে মনোযোগকে কেন্দ্রীভূত করেছেন রোজা। অ-পুঁজিবাদী পরিবেশ ধ্বংসের জন্য পুঁজির তাড়নাকে করা রোজার সমালোচনা এবং সাম্রাজ্যবাদী প্রসারণের প্রতি তাঁর তীব্র বিরোধিতা বিশ্বায়িত পুঁজির বিরোধী এ্যাক্টিভিস্ট এবং চিন্তকদের নতুন প্রজন্মেও মাঝে নতুন বিভায় নব গুরুত্ব পাচ্ছে। একই সময়ে, সংস্কারমূলক বোঝা-পড়া, আমলাতান্ত্রিক ষড়যন্ত্র এবং অভিজাত সংগঠনমূলক পদ্ধতির প্রতি রোজার তীব্র বিরোধিতা পুঁজিবাদ বিরোধী বিকল্প খোঁজার কথা বলে। বিকল্প খোঁজার এই আহ্বান এড়িয়ে চলে সেইসব শোষণমূলক এবং আধিপত্যবাদী বিন্যাস যার প্রতিবাদেই গত একশ বছরে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য বিপ্লবী আন্দোলন এবং সমাজতান্ত্রিক সমাজ গঠনের চেষ্টা। ক্ষমতা দখলের পর বিপ্লবী গণতন্ত্রের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে রোজার জোর দেয়াটা আমাদের সময়ের কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের প্রতি আলোকপাত করে যেসব প্রশ্নের উত্তর আমরা আজো পাইনি; যেমন: পুঁজিবাদের কি কোন বিকল্প আছে? আমলতান্ত্রিকতা এবং কর্তৃত্ববাদী সমাজের আতঙ্ক পুনরুৎপাদন ব্যতীত বৈশ্বিক পুঁজির এই আত্ম-প্রসারণের তাড়না বন্ধ করার কোন রাস্তা কি আছে? বিশ্বায়িত পুঁজি এবং সন্ত্রাসবাদ দ্বারা সংজ্ঞায়িত এই সময়ে মানবতা কি মুক্ত হতে পারে? সর্বোপরি, এই মূলত: পুরুষ কর্তৃত্ব ও প্রাধান্যবাদী সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনে একজন নারী নেত্রী এবং তাত্ত্বিক হিসেবে রোজার অবস্থান লৈঙ্গিক সম্পর্ক এবং বিপ্লবের বিষয়ে নতুন নানা আলোকসম্পাত করে।
রোজার এই রচনা সঙ্কলণ সম্ভবত: প্রথমবারের মত একটি খন্ডে তাঁর যাবতীয় অবদান গ্রথিত করার চেষ্টা করেছ। যেহেতু এই সঙ্কলণে তাঁর রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক রচনাবলী থেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশগুলো চয়িত হয়েছে। রোজার কিছু গুরুত্বপূর্ণ রচনা এই প্রথমবারের মত এখানে ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছে। এই রচনাগুলো ১) সামাজিক সংগঠনের প্রাক-পুঁজিবাদী কৌম আকারসমূহের উপর পুঁজিবাদী বিশ্বায়ণের প্রভাব বিষয়ে আলোচনা করে, ২) সামাজিক রূপান্তরের এক সংহত মাত্রা হিসেবে নারীর ক্ষমতায়ণকে বিবেচনা করে, ৩) মার্ক্সবাদের ইতিহাসকে যেসব আধিপত্যবাদী সাংগঠনিক পদ্ধতি খুব বেশি সংজ্ঞায়িত করেছে, সেসব পদ্ধতিরও সমালোচনা করে। শেষত: তাঁর চিঠি-পত্র থেকে আমরা সেসব অংশই নির্বাচিত করেছি যা তাঁর দৃষ্টিভঙ্গীর মানবতাবাদ এবং গভীরতাকে সবার কাছে পৌঁছে দেবার চেষ্টা করেছে। সব মিলিয়ে, এই সঙ্কলণের লক্ষ্য হলো আজ যারা যারাই বৈপ্লবিক সামাজিক রূপান্তর ঘটাতে চাচ্ছেন, তাদের সবার জন্য চিন্তার কিছু খোরাক যোগানো।
১.
সামাজিক আন্দোলনে অংশ নেওয়া নানা চরিত্রের ভেতর রোজা ল্যুক্সেমবার্গ ছিলেন অন্যতম মৌলিক চরিত্রদের একজন। ১৮৭১ সালের ৫ই মার্চ রুশ-অধিকৃত পোল্যান্ডের জামোশ্চে এক ইহুদি পরিবারে তাঁর জন্ম হয়। কৈশোরেই পোলিশ মার্ক্সিস্টদের প্রথম দিককার এই আন্দোলনে তিনি যোগ দেন; সমাজের প্রলেতারিয়েত শ্রেণীর সাথে সক্রিয় সত্ত্বা হিসেবে। ১৮৮৯ সালে সরকারী বাহিনীগুলো যখন পোল্যান্ডে বিপ্লী গ্রুপগুলোর উপর দমন-পীড়ন চালানো শুরু করে, তখন তাঁকে পোল্যান্ড থেকে সরিয়ে, বের করে আনা হয়। জুরিখ বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৮৮৯ থেকে ১৮৯৭ পর্যন্ত তিনি পড়া-শোনা করেন। সেখানেই তিনি ‘পোল্যান্ডের শিল্পগত উন্নয়ন’ শিরোনামে তাঁর পিএইচডির থিসিস রচনা করেন। সুইটজারল্যান্ড এবং ফ্রান্সে ১৮৯০-এর শুরু এবং শেষের দিনগুলোয় অভিবাসী পোলিশ বিপ্লবীদের নানা সার্কেলে তিনি তাঁর চরিত্রের রাজনৈতিক স্বাধীণতা এবং তাত্ত্বিক দৃঢ়তা প্রমাণে সক্ষম হন যার জন্য পরবর্তী সময়ে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন। ১৮৯৩ সালে তিনি জুরিখে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় ইন্টারন্যাশনালের তৃতীয় কংগ্রেসে রোজা যোগ দেন। আর সেখানেই তিনি মুখোমুখি হন ফ্রেডারিখ এঙ্গেলস এবং রুশ মার্ক্সবাদের প্রতিষ্ঠাতা গিওর্গি প্লেখানভের মত জ্যোতিষ্কদের সাথে। পোল্যান্ডের জাতিগত আত্ম-নিয়ন্ত্রণাধিকারের বিরুদ্ধে তিনি যুক্তি প্রদর্শন করেছিলেন, বরং ‘দৃঢ়’ প্রলেতারিয় আন্তর্জাতিকতাবাদের উপর তিনি জোর দিয়েছেন- তাঁর এই অবস্থান তাঁর সময়ের সব গুরুত্বপূর্ণ সমাজতন্ত্রী ব্যক্তিত্বের গৃহীত অবস্থান থেকে একদম বিপরীতে তাঁকে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। পোল্যান্ড বিষয়ে খোদ কার্ল মার্ক্সের অবস্থান ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত।
১৮৯০ সালে জুরিখে রোজার সাথে পোলিশ বিপ্লবী লিও জগিচেসের (১৮৬৭-১৯১৯) পরিচয় হয়। রোজার জীবনের পরবর্তী ১৭ বছরের সহযোদ্ধা ও প্রেমিক হিসেবে তিনি ছিলেন। এবং রোজার মৃত্যু অবধি তাঁর এক ঘনিষ্ঠ সহকর্মী ছিলেন তিনি। জগিচেস, যিনি ১৮৮৫ সালে ভিলনায় সমাজতন্ত্রী আন্দোলনে যোগ দেন, ছিলেন পোলিশ, রুশ এবং সবশেষে জার্মান বিপ্লবী আন্দোলনগুলোর এক অবিশ্বাস্য মাপের কৌশল প্রণেতা ও সংগঠক। লড়াইয়ের নানা ফ্রন্ট বা স্তরেই রোজার সাথে তিনি ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছেন। সেটা ল্যুক্সেমবার্গের প্রবন্ধ-নিবন্ধের খসড়া বিষয়ে গঠনমূলক মন্তব্য প্রণয়নের মাধ্যমেই হোক বা আন্ডারগ্রাউন্ড বিপ্লবী জীবনের নেপথ্য সাংগঠনিক কাজের মাধ্যমে তাঁদের চিন্তা-ভাবনার নিরন্তর প্রচারের মাধ্যমেই হোক না কেন। ল্যুক্সেমবার্গ বিশেষজ্ঞ ফেলিক্স টিখ যেমন লক্ষ্য করেছেন এবং একথা লিখেছেনও যে জগিচেসের কাজ খানিকটা অবমূল্যায়িত হবার প্রবণতা দেখা দিয়েছে, যেহেতু তিনি তাঁর নিজের নামে লেখা প্রকাশ করেছেন খুবই কম। তবুও জগিচেস নিজেই ছিলেন যথেষ্ট পরিমাণ মৌলিক এক চরিত্র। ল্যুক্সেমবার্গের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, সমাজতন্ত্রী নারীবাদী ক্লারা জেটকিন, একবার লক্ষ্য করলেন যে জগিচেস সেই ‘পুরুষ ব্যক্তিদের একজন- এই প্রকৃতির পুরুষ খুবই বিরল- যারা এক প্রখর নারী ব্যক্তিত্বকে সহ্য করতে পারে।’ ল্যুক্সেমবার্গ এবং জগিচেসের তীব্র আবেগী এবং ঝোড়ো সম্পর্ক- তাঁদের অন্তরঙ্গতার আগে এবং পরে মিলিয়ে- গোটা বিষয়টাই ল্যুক্সেমবার্গের চরিত্রের নানা দিক প্রকাশ করে- একজন নারী হিসেবে, বিপ্লবী এবং চিন্তক হিসেবেও। যেমনটা একবার রোজা লিখেছিলেন, ‘আমি এই ধারণায় বিশ্বাস করি যে একজন নারীর চারিত্র্য নিজেকে সমূহ প্রকাশ করে প্রেম যখন শুরু হয় সেসময় নয়- বরং প্রেম যখন শেষ হয় সেই সময়টাতেই।’
রোজার স্বাধীনচেতা চরিত্র শেষপর্যন্ত— সবার সামনে পূর্ণ প্রকাশিত হয় যখন ১৮৯৮ সালে তিনি জার্মানী চলে যান। সেখানে গিয়ে তিনি জার্মান সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এসপিডি)-তে সক্রিয় হন। একজন পোলিশ-ইহুদি নারী হিসেবে তিনি বহু দলীয় নেতার কাছে থেকে যথেষ্ট পরিমাণ বিরক্তি এবং বিরোধিতা পেয়েছেন যারা তাঁর সম্পর্কে এই ভাষায় বলতেন, ‘একজন অতিথি যে আমাদের কাছে আসে আর তারপর আমাদের বৈঠকখানায় থুতু ফ্যালে।’ এসব প্রতিবন্ধকতা অবশ্য রোজার দৃঢ়চেতা মনোভাবে এতটুকু চিড় ধরায়নি। উল্টো সেসময়কার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিতর্কগুলোর একটিতে প্রত্যক্ষভাবে ডুব দিলেন তিনি। হ্যাঁ, এডুয়ার্ড বার্ণস্টেইনের ‘মার্ক্সবাদ’কে সংশোধন করা সংক্রান্ত বিতর্কেই জড়িয়ে পড়লেন তিনি।
সেসময় বার্ণস্টেইন ছিলেন মার্ক্সবাদের বড় তাত্ত্বিক বা পন্ডিতদের একজন; এঙ্গেলস বার্ণস্টেইনকেই তাঁর ‘সাহিত্যিক নির্বাহক’ হিসেবে মনোনীত করেছিলেন। একারণেই বার্ণস্টেইন যখন ১৮৯৬-৯৮ সাল নাগাদ লিখিত তাঁর ধারাবাহিক প্রবন্ধগুচ্ছে ক্রমাগত যুক্তি প্রদর্শন করে গেলেন যে মার্ক্সের কাজের কেন্দ্রীয় থিসিস সেকেলে হয়ে পড়েছে, তখন সেটা একটা প্রবল ঝাঁকুনি হয়েই দেখা দিল সংশ্লিষ্ট সবার কাছেই। বার্ণস্টেইন লিখলেন যে পুঁজির অপ্রতিরোধ্য বিপর্যয় এবং পুঁজিবাদের ধস বিষয়ে মার্ক্সের ভবিষ্যদ্বানী কোনভাবেই আর অভিজ্ঞতা দিয়ে যাচাইকৃত বলে মানা যাচ্ছে না, যেহেতু অর্থনৈতিক সঙ্কটের পুনরাবৃত্তি কমে আসছে। তিনি যুক্তি প্রদর্শন করেন যে ঋণ ব্যবস্থা, ট্রাস্ট এবং একচেটিয়া ব্যবসার গঠন প্রক্রিয়া এটাই দেখায় যে পুঁজিবাদী বাজারের ‘অরাজকতা’ ধীরে ধীরে দূর হচ্ছিল এবং পুঁজিবাদ নিজেই তার মত করে ‘সামাজিক উৎপাদনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলো। বার্ণস্টেইন এই তর্কও তোলেন যে অধিকতর বেতন আদায়ের সমতা ট্রেড ইউনিয়নগুলোর একটা সময় মুনাফার হার এতটাই দমন করতে পারবে যে পুঁজিবাদী শোষণ একটা সময় এমন এক সমাপ্তি বিন্দুতে পৌঁছবে যখন কোন সামাজিক বিপ্লবের আর প্রয়োজন হবে না। তিনি তাঁর দৃষ্টিভঙ্গী রাজনৈতিক এবং যতটা সম্ভব অর্থনৈতিক বিবেচনাসমূহের উপরও ভিত্তি করে নির্মাণ করেছেন। বার্ণস্টেইন এই অভিমত ব্যক্ত করেন যে ‘সোশ্যাল ডেমোক্রেসি’ বা ‘সামাজিক গণতন্ত্রে’র ক্রমবর্দ্ধমান ক্ষমতা, বিশেষত: যখন এসপিডি (জার্মাণ সোশ্যাল ডেমোক্রেটিক পার্টি- এসপিডি) তার লাখ লাখ সদস্য এবং সমর্থক নিয়ে বিপুল জনসম্পৃক্ততা সম্পন্ন একটি দল হয়ে উঠছে, তখন দিন দিন এটিই প্রতীয়মান হচ্ছে যে আইনী এবং সংসদীয় সংষ্কারের মাধ্যমে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সংষ্কার সম্ভব। বার্ণস্টেইন এই কথা বলে তার যুক্তির পক্ষে বক্তব্য শেষ করেন যে, ‘আমার জন্য আন্দোলনই সব, আন্দোলনের লক্ষ্য প্রকৃতপক্ষে কোন অর্থই বহন করেনা।’
বার্ণস্টেইনের লেখার উত্তরে রোজার রচনা ‘সামাজিক সংষ্কার অথবা বিপ্লব (সোশ্যাল রিফর্ম অর রেভল্যুশন-১৮৯৯)’ পুঁজিবাদের আপাত: স্থিতির ফলে সৃষ্ট মোহমায়াজালের প্রতি সেরা সৃজনশীল উত্তরগুলোর একটি। লুক্সেমবার্গ পাল্টা যুক্তি প্রদর্শন করেন যে পুঁজিবাদের আওতায় আইনী এবং রাজনৈতিক সমতা কখনোই একটি ব্যবস্থার অন্তর্নিহিত বিরোধের সমাধান করে না বা করতে পারে না যে ব্যবস্থা কিনা মূল্য উৎপাদন, শ্রেণী শোষণ এবং মজুরি শ্রমের উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে। বিপ্লবকে সংষ্কার দিয়ে প্রতিস্থাপণ করতে একদমই চান নি রোজা। আইনী পন্থার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অধিকারের প্রসারকে অবশ্য তিনি সমর্থন করেছেন। যাহোক, রোজা কিন্তু একথাও বলেছেন যে পুঁজিবাদী উৎপাদন সম্পর্কের কাঠামোর ভেতর সত্যিকারের গণতন্ত্র অর্জন করাটা কঠিন। যেমনটা পরবর্তী সময়ে তিনি লিখেছেন, ‘সোশ্যাল ডেমোক্রেসি এই যুক্তিই সবসময় দিতে চেয়েছে যে আনুষ্ঠানিক গণতন্ত্র নয়, পরিপূর্ণ গণতন্ত্র, প্রকৃত এবং কার্যকরী গণতন্ত্র শুধুমাত্র তখনি সম্ভব যখন অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সমতা, অর্থাৎ একটি সমাজতান্ত্রিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, বাস্তবতা হতে পেরেছে...অন্যদিকে, একটি বুর্জোয়া জাতি-রাষ্ট্রের ‘গণতন্ত্র’, শেষ বিচারে, কম বা বেশি আড়ম্বর বা লোকদেখানোপনা ছাড়া কিছুই নয়।’
রোজা এই যুক্তিও প্রদর্শন করেছেন যে বার্ণস্টেইনের অর্থনৈতিক যুক্তিগুলো ভিত্তিহীন। যেহেতু তিনি (বার্ণস্টেইন) সমাজকে ব্যক্তিগত পুঁজিবাদী অথবা পুঁজির ব্যক্তিগত একক থেকে দেখেছেন। কিন্ত গোটা পুঁজিবাদকে সামগ্রিক ভাবে আয়ত্ত্ব করেননি। উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে যে, ঋণ ব্যবস্থা একটি ব্যক্তিগত খামারকে বাজার প্রতিযোগিতার ‘অরাজক’ নানা দিক থেকে আত্মরক্ষার সহায়ক হতে পারে, কিন্ত উৎপাদনের যন্ত্রপাতিকে প্রসারিত হতে দিয়ে ঋণ ব্যবস্থা পুঁজির মালিক এবং এই মালিকদের দ্বারা কাজে নিযুক্ত কর্মীবাহিনীর ভেতর ক্ষমতা এবং সুবিধার বৈষম্যকে বাড়িয়ে তোলে। লুক্সেমবার্গ আরো যুক্তি দেন একথা বলে যে, পুঁজিবাদের অভ্যন্তরে ‘সমাজতন্ত্রী উৎপাদন’ পুঁজিকে আদৌ তার অন্তর্নিহিত বিরোধ থেকে মুক্তি দেয় না, বরং তাদের উচ্চতর একটি পর্যায়ে ঠেলে দেয়।
(চলবে)
- বেগম রোকেয়াকে কি প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড় করানো হচ্ছে?
- ঢাকায় আয়ারল্যান্ড নারী ক্রিকেট দল
- হাসপাতাল ছাড়াই যশোর মেডিকেল কলেজ ১৪ বছর পেরিয়েছে
- সাতক্ষীরায় সাফজয়ী তিন নারী ফুটবলারের গণসংবর্ধনা
- পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা-বেনাপোল ট্রেন চলবে যেদিন থেকে
- অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে পাম বন্ডিকে বেছে নিলেন ট্রাম্প
- লালমনিরহাটে আগাম আলু চাষে ব্যস্ত কৃষকরা
- দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পঞ্চগড়ে, বাড়ছে শীতের তীব্রতা
- ইমরান খানকে ক্ষমতাচ্যুত করার পেছনে সৌদি, বুশরার দাবি
- অল্পের জন্য বড় দুর্ঘটনা থেকে বাঁচলেন পূজা চেরি
- খেজুর আমদানিতে আগাম কর প্রত্যাহার, কমলো শুল্কও
- চীনে বিশাল স্বর্ণখনির সন্ধান
- যে কারণে দেশের বাজারে বাড়ল স্বর্ণের দাম
- ৯৯ শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি দিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
- পেঁয়াজ-সবজি-মুরগির দাম কমলেও আলুর দাম বাড়তি
- জেনে নিন বিমানবন্দর নেই যে সব দেশে
- ঘুরে আসুন পানামসহ না.গঞ্জের পাঁচটি পর্যটন স্পট
- ড.ইউনুসকে তসলিমা নাসরিনের খোলা চিঠি
- বিশ্ব হার্ট দিবস আজ
- আজ পহেলা অগ্রহায়ণ, হেমন্তকাল শুরু
- হেমন্তে ছাতিম ফুল সুগন্ধ ছড়িয়ে যায়
- ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের জন্মদিন আজ
- শান্তিতে নোবেল পেল জাপানের মানবাধিকার সংস্থা নিহন হিদানকিও
- স্নাতক পাসে চাকরি দেবে আড়ং
- ‘রিমান্ড’-এ মম
- পাকিস্তানকে হারিয়ে বিশ্বকাপে ঘুরে দাঁড়াল ভারতের মেয়েরা
- সৈয়দ শামসুল হকের ৮ম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
- রাজু ভাস্কর্যের নারী প্রতিকৃতিতে হিজাব, যা জানা গেলে
- নেপালে ভয়াবহ বন্যা-ভূমিধসে নিহত বেড়ে ১১২
- যানজটে দৈনিক ৮২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে