ঢাকা, শনিবার ১৬, নভেম্বর ২০২৪ ২০:৫০:২৫ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

Equality for all
Amin Jewellers Ltd. Gold & Diamond
শিরোনাম
মহাকাশচারীদের নিয়ে উপন্যাস ‘অরবিটাল’ লিখে বুকার জিতলেন হার্ভে জাতীয় সংসদে কোনো সংরক্ষিত নারী আসন থাকবে না রাষ্ট্র সংস্কারই এই সরকারের প্রধান চ্যালেঞ্জ: প্রধান উপদেষ্টা দিনাজপুরে তাপমাত্রা ১৬ দশমিক ৮, বাড়ছে শীতের প্রকোপ আজ ঢাকায় আসছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ভারতে হাসপাতালে ভয়াবহ আগুন, ১০ শিশুর মৃত্যু ডাকাতির সময় নিয়ে যাওয়া শিশু মোহাম্মদপুর থেকে উদ্ধার

হুমকির মুখে কর্ণফুলীর বিপন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ

নিজস্ব প্রতিবেদক | উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১১:২৭ এএম, ৯ অক্টোবর ২০২২ রবিবার

ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দুই তীরের বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে অনেকগুলোর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বঙ্গোপসাগরের মোহনা থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত কর্ণফুলীর দুই তীরে ৫২৮ প্রজাতির উদ্ভিদ শনাক্ত হয়েছে, যার মধ্যে ৮১ প্রজাতির উদ্ভিদ বিলুপ্তির পথে আছে। দূষণ ঠেকাতে উদ্যোগ না নিলে আরও ৬১ প্রজাতির উদ্ভিদ বিপন্ন হয়ে যাবে।

পরিবেশবাদী সংগঠন ইফেক্টিভ ক্রিয়েশন অন হিউম্যান ওপেনিয়ন (ইকো) পরিচালিত গবেষণায় উদ্ভিদের অস্তিত্ব বিপন্ন হওয়ার জন্য ৫৩টি শিল্প-কারখানাসহ ৮৯টি উৎসের মাধ্যমে কর্ণফুলী নদী দূষণকে কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে টানা আট মাস জরিপ চালিয়ে উদ্ভিদ ও কর্ণফুলী দূষণের উৎস শনাক্তের পাশাপাশি কর্ণফুলীর প্রাণ-প্রকৃতি নিয়ে গবেষণা করা হয়েছে।

কর্ণফুলীর প্রাণ-প্রকৃতি নিয়ে এ গবেষণায় নেতৃত্ব দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল। একই বিভাগের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন ছাত্র গবেষণা কর্মে অংশ নিয়েছেন।

প্রাণ-প্রকৃতি গবেষক ড. ওমর ফারুক রাসেল বলেন, গবেষণায় বঙ্গোপসাগর মোহনা থেকে কালুরঘাটের পর পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি দূষণ, নদী দখল, বর্জ্য পদার্থ ও শহরের ড্রেনের দূষিত পানির মিশ্রণ দেখা গেছে। যার কারণে এই এলাকায় উদ্ভিদ প্রজাতির সংখ্যা অনেক কম। যেগুলো টিকে আছে যদি দূষণসহ দখল বন্ধ না হয় তাহলে ভবিষ্যতে এই প্রজাতিগুলো হারিয়ে যাবে। তাছাড়া কর্ণফুলীতে দূষণ হলে হালদা নদী দূষিত হবে।

তিনি বলেন, নদী দখল ও দূষণ বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে ‘ইকো’র গবেষণায় শনাক্ত করা ৮১টি প্রজাতির বিপন্ন উদ্ভিদ, ৬৩ প্রজাতির ভবিষ্যতে বিপন্ন হতে পারে এমন উদ্ভিদ এবং ৩৫৫ প্রজাতির ঔষধি উদ্ভিদসহ মোট ৫২৮টি উদ্ভিদের মধ্যে অনেক উদ্ভিদ হারিয়ে যাবে। যা নদীর তথা চট্টগ্রাম শহরের পরিবেশ বিনষ্ট করবে। এছাড়াও দূষণ বন্ধ না হলে ডলফিনসহ বিভিন্ন প্রাণী বিলুপ্তির পথে ধাবিত হবে। নদীতে বিভিন্ন ক্ষতিকারক রাসায়নিক দ্রব্যের মিশ্রণের ফলে নদী নির্ভরশীল মানুষগুলোর মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে। যা থেকে চর্মরোগ, শ্বাসকষ্টসহ ক্যানসার হতে পারে।

গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, শনাক্ত ৫২৮ প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে ৩৭৩টি গণভুক্ত এবং ১১৩টি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে বড় বৃক্ষ ১৪৪ প্রজাতির, গুল্ম ৬৯ প্রজাতির, লতা ৫৮ প্রজাতির, বীরুৎ ২৪৪ প্রজাতির এবং পরজীবী-পরগাছা ১৩ প্রজাতির। শনাক্ত প্রজাতির মাঝে ১টি নগ্নবীজি, ৯টি মসগোত্রীয় এবং ২৭টি ফার্ণ প্রজাতির।

একবীজপত্রী উদ্ভিদ শনাক্ত হয়েছে ১১২ প্রজাতির আর দ্বিবীজপত্রী ৩৭৯ প্রজাতির। দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের মধ্যে ফ্যাবেসি (Fabaceae) গোত্রভুক্ত গাছ সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে। দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের মধ্যে বট এবং কড়ই গাছ বেশি।

একবীজপত্রী উদ্ভিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি শনাক্ত হয়েছে পোএসি (Poaceae) গোত্র থেকে। এতে ঘাস জাতীয় নিম, দূর্বাঘাস, হাড়গোজা, হিজল, কেরেঞ্জা, লজ্জাবতী উদ্ভিদের প্রাধান্য লক্ষ করেছেন গবেষকরা।

গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, শনাক্ত ৩৫৫ প্রজাতির মধ্যে কালমেঘ, হিজল, বেগুনি হুরহুরিয়া, হাড়গোজা, ছাতিম, আকন্দ, তুফানি লতা, হাতিশুঁড়, সোনালু, স্বর্ণলতা জাতীয় ঔষধি উদ্ভিদ পাওয়া গেছে কর্ণফুলী তীরের বিভিন্ন এলাকায়।

বিলুপ্তির পথে থাকা ৮১ প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- কালমেঘ (Andrographis paniculata), গংগাতারা (Asystasia gangetica), কাঁটা বিশাল্লা (Barleria lupulina), উপকালিস (Hymenocallis littoralis), বেগুনি আমড়া (Spondias purpurea), ছোট ছাতিম (Alstonia neriifolia), ফুলিবেত (Calamus floribundus), ইছারমুল (Aristolochia indica), ধারমারা (Hemidesmus indicus), বন শিমুল (Bombax insigne) হলুদ কৃষ্ণচূড়া (Peltophorum pterocarpum), ভাং (Cannabis sativa )।

বিপন্নের আশঙ্কায় থাকা ৬৩ প্রজাতির উদ্ভিদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- কুরুজ (Holarrhena antidysenterica), শ্যামলতা (Ichnocarpus frutescens), চীনালতা (Pothos chinensis), খনা (Oroxylum indicum), অশোক (Saraca asoca), বরুন (Crateva magna), ফুল ঝুমুরি (Anogeissus lanceolate), কালিলতা (Derris trifoliata), গোল তকমা (Hyptis brevipes), ডুলি জবা (Malvaviscus penduliflorus)।

কর্ণফুলী দূষণ

চবির উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল বলেন, কর্ণফুলী বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের প্রাণ। এই নদীর ওপর দেশের অর্থনীতি নির্ভরশীল। কিন্তু ক্রমেই এ নদীর দূষণ বেড়েই চলেছে। কর্ণফুলী নদী নিয়ে পরিচালিত গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে বঙ্গোপসাগর মোহনা থেকে কাপ্তাই পর্যন্ত প্রায় ৮৯টি উৎস নদী দূষণের জন্য দায়ী। এর মধ্যে ৫৩টি শিল্প-কারখানা, ১৪টি নৌযান মেরামতের জায়গাসহ বাজার নালা, খামার, শুঁটকি পল্লি অন্তর্ভুক্ত। অধিকাংশ উৎস সাগরের মোহনা থেকে কালুরঘাট ব্রিজ পর্যন্ত অবস্থিত।

তিনি বলেন, গবেষণায় ডলফিনের আধিক্যতা সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে শিকলবাহা ও বোয়ালখালী চ্যানেলে। দূষণ বন্ধ না হলে ভবিষ্যতে ডলফিনের স্বাভাবিক চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হবে। এতে করে বিলুপ্তির পথে ধাবিত হবে। বঙ্গোপসাগর মোহনা থেকে থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত নোঙর করে রাখায় নদীর স্বাভাবিক নাব্যতা এবং ডলফিনসহ জলজ প্রাণীদের স্বাভাবিক বিচরণ বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে।

গবেষণার সুপারিশ

কর্ণফুলী নদীর পরিবেশ ঠিক রাখতে ও দূষণ রোধে বেশকিছু  সুপারিশ করা হয়েছে। ইকোর সুপারিশগুলো হচ্ছে- পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে শনাক্ত করা ৮১টি প্রজাতির বিপন্ন উদ্ভিদ, ৬৩ প্রজাতির ভবিষ্যতে বিপন্ন হতে পারে এমন উদ্ভিদ এবং ৩৫৫ প্রজাতির ঔষধি উদ্ভিদসহ মোট শনাক্ত করা ৫২৮টি উদ্ভিদ প্রজাতি সংরক্ষণে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।

দূষণ রোধে কঠোর ও পরিকল্পিত দীর্ঘমেয়াদী ব্যবস্থা গ্রহণ। নদী দখল বন্ধ করা। নদীতে পলিথিন ও অন্যান্য সামগ্রী যাতে নিক্ষেপ না করে সেজন্য গণসচেতনতামূলক কর্মসূচি গ্রহণ করা। শিল্পপ্রতিষ্ঠান থেকে নির্গত বর্জ্যে যেন ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান না থাকে তা নিশ্চিত করা। নৌযান নোঙর যত কম করা যায় সেটি নিশ্চিত করা। নদীর তীরে অপরিকল্পিত বসবাস ও স্থাপনা নির্মাণ ইত্যাদি বন্ধ করতে পদক্ষেপ নেওয়া। নালা বা ড্রেনের দূষিত পানি শোধন করে নদীতে নির্গত করার ব্যবস্থা করা। নদীভাঙন রোধে উদ্ভিদ লাগানো।পলিথিন ব্যবহার বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া।