ঢাকা, সোমবার ২৫, নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৫০:০৬ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

দেশে নারীর কাজের পরিধি বেড়েছে

অনলাইন ডেস্ক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০২:২৮ পিএম, ২১ আগস্ট ২০১৯ বুধবার

মিনুরা, রাজশাহী জেলার ক্ষুদ্র-নৃগোষ্ঠি সাঁওতাল পরিবারের মেয়ে। গোদাগাড়ী থানার গোগ্রাম গ্রামে তাদের বসবাস। তার স্বামী শ্রী মানিক। পরিবারের সদস্য ৫ জন। কৃষিনির্ভর এ পরিবারটির আয়ের উৎস তিন বিঘা বর্গা জমি।

এছাড়া বাড়ির পাশে তাদের নিজস্ব একটি ডোবা আছে। ডোবাটি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকত। দীর্ঘদিন থেকেই নিজের পরিবারের জন্য মিনুরার কিছু করার ইচ্ছা ছিল। মিনুরার আগ্রহ ও ইচ্ছায় একটি এনজিও ওই ডোবায় কার্পজাতীয় মাছের ২ কেজি ধানী পোনা ছেড়ে দেয়। এনজিওটি তাকে বিভিন্ন পরামর্শও দেয়।

মিনুরা নিজের চেষ্টায় দেড় মাস পোনা পালন করে আঙ্গুলী পোনা তৈরি করে। দেড় মাস পর এ পোনা বিক্রি করে সে ৫ হাজার টাকা লাভ করে। ২ কেজি ধানী পোনার বাজারমূল্য ছিল ৮শ’ টাকা। খাবার বাবদ খরচ হয়েছে ২শ’ টাকা। এনজিওর সহযোগিতায় বিনামূল্যে ধানী পোনা ও মাছের খাবার না পেলেও তার লাভ হত ৪ হাজার টাকা।

শুধু মিনুরা নয়, এখন শহরের মতো গ্রামীণ নারীরাও নানা ধরণের উর্পাজনের প্রতি ঝুঁকেছে। নারীরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়ার কারণে তাদের সামাজিক ও পারিবারিক গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। তাছাড়া অর্থনৈতিকভাবে পরিবারের উপর তাদের নির্ভরশীলতা কমেছে। গ্রামের নারীরা বাড়ির পাশের পুকুর, ধানক্ষেত ও বড় পুকুরে খাঁচায় অনায়াসেই মাছ চাষ করছে।

কয়েক বছর যাবত নারী শুধু গার্মেন্টস সেক্টর নয়, কৃষিখাত, সূচিশিল্প, মৎস্যচাষ ও চিংড়ি রপ্তানীর কাজেও তাদের সমপৃক্ততা বাড়িয়েছে।

বিভিন্ন পরিসংখ্যান বলে, শহরের চেয়ে গ্রামে নারী কর্মজীবির সংখ্যা বেশি। নিজ পরিবারেও ফসল উৎপাদনের বিভিন্ন পর্যায়ে নারীর শ্রম পুরুষের তুলনায় বেশি।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৫-১৬ সালের পরিসংখ্যান বলছে, বিভাগীয় পর্যায়ে রাজশাহী, খুলনা ও রংপুরের শ্রমশক্তিতে নারীর অংশগ্রহণ বেশি। রংপুরে এ হার ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ। গ্রামে জনশক্তিতে যুক্ত নারীদের শতকরা ৬০ ভাগই শ্রম দিচ্ছে কৃষিতে। আর শহরে গার্মেন্টেসে।

ব্যুরো আরো জানায়, সবশেষে ২০১৫-২০১৭ সালে গ্রামে নারীর কাজের হার বেড়েছে। গ্রামে শতকরা ৩৮ দশমিক ৬ শতাংশ শ্রমজীবি হিসেবে রয়েছে। শহরে কমে হয়েছে ৩১ শতাংশ।

এদিকে সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) জানায়, পোশাক শিল্পে নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ ছিল শতকরা ৬৪ ভাগ এখন তা কমে ৬০ দশমিক ৮ শতাংশ। ১৯৯৫-৯৬ সালে শ্রমে নারীর অবস্থান ছিল শহরে ২০দশমিক ৫ শতাংশ, গ্রামে ১৭ দশমিক ৪ শতাংশ। ২০০৩ সাল পর্যন্ত শহরে এ হার বেশি ছিল।

গাজীপুরের গাছা গ্রামের মেয়ে সামিনা। তার বিয়ে হয়েছে ১৫ বছর বয়সে। এখন বয়স ছাব্বিশ বছর। বিয়ের পর থেকেই সে দিনে সতেরো ঘন্টা কাজ করে। তার পরিবারে সদস্য সংখ্যা সাতজন। এ সাতজনের খাওয়া দাওয়াসহ সেবা,সবকিছুর দায়িত্ব তার ওপরে।

সামিনা আরো জানায় ভোর পাঁচটায় ফজরের আজানের পর থেকেই তার দিন শুরু হয়। শেষ হয় রাত দশটায়। রান্নাবান্না, পশু পালন, পরিবারের সদস্যদের খাওয়ানো, দুই শিশু সন্তানকে মাদ্রাসায় দিয়ে আসা ও বিকেলে আনা সব রকমের কাজ তার করতে হয়। সামিনা উঠানে শাক সবজিও লাগায়। তার লাগানো মরিচ দিয়েই সংসারের প্রয়োজন মেটে। এছাড়া বেগুন শাক তো রয়েছেই।

অর্থনীতিবিদ নাজনীন আহমেদ বলেন, গ্রামে কাজে নারীর অংশগ্রহন বাড়া অবশ্যই ইতিবাচক। তা নারীর ক্ষমতায়নে প্রভাব ফেলবে।

সাভারের ষোলমাসী গ্রামের হাফিজা বেগমের তিনটি গরু। ৪০ বয়সী হাফিজা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে গরুগুলো কিনেছে।

এদিকে মহিলা অধিদপ্তর ও বিভিন্ন আয়বর্ধক কর্মসূচি যেমন সেলাই মেশিন ক্রয়, গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগী পালন, ক্ষুদ্র ব্যবসা, মৎস্য চাষ, নার্সারী ইত্যাদি বিষয়ে ঋণ দেয়। মহিলা অধিদপ্তরের ৬৪টি জেলার ৪৭৩টি উপজেলায় ক্ষুদ্র কর্মসূচি বাস্তবায়িত হচ্ছে।

বাংলাদেশ উন্নয়ন সংস্থা জানায়, ৯০ শতাংশের বেশি ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণকারী হচ্ছেন নারী। ঋণের ক্ষেত্রে ফসল উৎপাদনে, পশুর খামার ও হাঁস-মুরগি পলনে টাকা ব্যয় করেন। খামারে যুক্ত আছেন ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। ফসল উৎপাদনে ৪২ দশমিক ৩ শতাংশ।

খুলনায় রপ্তানীমুখী চিংড়ি খাতেও নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ বাড়ছে।

রংপুরের গাইবান্ধার বাসিন্দা সুরাইয়া (৩০) জানান, একসময়ে খুব অভাবে ছিলেন, এখন সূচিকর্ম করে মাসে ৭/৮ হাজার টাকা আয় করেন। বিশেষ করে, তারা টুপি সেলাই করেন। তাদের তৈরি টুপি মধ্যপ্রাচ্যেও যায়।