আ. লীগ সব সময় জনগণের পাশে থাকবে: প্রধানমন্ত্রী
বাসস
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১২:৪১ এএম, ২০ ডিসেম্বর ২০১৯ শুক্রবার
আ. লীগ সবসময় জনগণের পাশে থাকবে: প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতি হল জনগণের কল্যাণ করা। আওয়ামী লীগ সবসময় জনগণের পাশে থাকবে। আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন উপলক্ষে বৃহস্পতিবার দেয়া এক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আওয়ামী লীগের দুই দিনব্যাপী জাতীয় সম্মেলন আজ শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর) ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শুরু হবে। বিকেল সাড়ে তিনটায় সম্মেলন উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করব। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ২০২০-২০২১ সালে মুজিববর্ষ এবং ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপন করব। আমরা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করব। ২১তম জাতীয় সম্মেলনে এই আমাদের অঙ্গীকার।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ পুনরায় আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করেছে। জনগণকে দেওয়া প্রতিটি ওয়াদা আমরা বাস্তবায়ন করব। সংবিধান ও গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষার মাধ্যমে এতসব অর্জন সম্ভব হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের সরকার সন্ত্রাস-জঙ্গি, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে কাজ করছে। দুর্নীতি, মাদক ও সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান অব্যাহত থাকবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আমরা সুখীসমৃদ্ধ ও শান্তিপ্রিয় দেশ প্রতিষ্ঠা করতে চাই। আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি, আমরা এগিয়ে যাবই। কোন অপশক্তি দেশের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে পারবে না।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের গৃহীত উন্নয়ন পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নে ১১ বছরে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন সাধিত হয়। দেশ এখন অদম্য অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করেছি। অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ ৫টি দেশের একটি বাংলাদেশ।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নয়নের ‘রোল মডেল’। আমরা বিশ্বে এখন উন্নয়ন বিস্ময়। এ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮.১৩ শতাংশ। দারিদ্র্যের হার এখন ২১ শতাংশ ও মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৯০৯ মার্কিন ডলার। দুই কোটির বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। ৫ কোটির বেশি মানুষ মধ্যম আয়ের স্তরে উন্নীত হয়েছে। খাদ্য উৎপাদন বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ করা হচ্ছে। সাক্ষরতার হার ৭৩.৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের প্রায় এক-চতুর্থাংশ পরিবারকে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় আনা হয়েছে। ৯৫ ভাগ মানুষ বিদ্যুৎ সুবিধা পাচ্ছেন। স্বাস্থ্যসেবা মানুষের দোরগোড়ায়। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো থেকে মানুষ বিনামূল্যে ৩০ ধরনের ওষুধ পাচ্ছেন। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে হয়েছে ৭২ বছর ৯ মাস। যোগাযোগ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। মেট্রোরেল নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মাসেতু নির্মাণ করছি। ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়েছে। ৫৭তম দেশ হিসেবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করে মহাকাশ বিজয় করেছে বাংলাদেশ। আমরাই বিশ্বে প্রথম শত বছরের ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০’ বাস্তবায়ন শুরু করেছি। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকে দমন করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি। ভারতের সঙ্গে স্থলসীমানা সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছি। মিয়ানমার ও ভারতের সঙ্গে সমুদ্রসীমার শান্তিপূর্ণ সমাধান করেছি। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশ প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে বানচাল ও যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে বিএনপি-জামাত জোট আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে হত্যা করে শত শত নিরীহ মানুষকে, নির্বাচনের দিন ৫৮২টি স্কুল পুড়িয়ে দেয়, প্রিসাইডিং অফিসারসহ ভোটারদের হত্যা করে। বিএনপি-জামাতের এই অপরাজনীতিকে প্রত্যাখ্যান করে ২০১৪ এর ৫ জানুয়ারির দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ পুনরায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করে উন্নয়নের গতিকে সচল রেখেছে।’
তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর অতীতের সব জঞ্জাল পরিস্কার করে অর্থনীতি, কৃষি, শিক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদ্যুৎ, কর্মসংস্থান, বিনিয়োগ ও নারী অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ বিভিন্ন খাতে অর্জিত ব্যাপক উন্নয়ন সারাবিশ্বের প্রশংসা অর্জন করে। বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দা সত্ত্বেও বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যায়, মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পায়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নয়নের সুফল প্রত্যন্ত গ্রামের মানুষও উপভোগ করছে। আমরা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করেছি। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ বন্ধ করেছি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ এগিয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচারের রায় কার্যকর করা হয়েছে। জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার সম্পন্ন করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর করা হচ্ছে। ইতিহাস বিকৃতি বন্ধ করে জাতিকে মুক্তিযুদ্ধের সত্য ও সঠিক ইতিহাস উপস্থাপন করা হয়েছে। পাঠ্যপুস্তকের মাধ্যমে নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা জানতে পারছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সদ্য স্বাধীন, যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশকে জাতির পিতা যখন স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ার সংগ্রামে নিরন্তর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন, তখনই ঘাতকরা ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট কালরাতে তাঁকে সপরিবারে হত্যা করে। এর ধারাবাহিকতায় ৩ নভেম্বর কারাগারে হত্যা করা হয় জাতীয় চার নেতাকে।’
তিনি বলেন, ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত এবং নির্যাতিত-নিপীড়নের মাধ্যমে ধ্বংস করার চেষ্টা করা হয় জনগণের সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে। কিন্তু আওয়ামী লীগকে কোন অপশক্তি ধ্বংস করতে পারেনি। আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মী, সমর্থকেরা জীবন দিয়ে সকল প্রতিকূলতা ও ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে দলকে টিকিয়ে রেখেছে, শক্তিশালী করেছে।’
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এই উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন সংগঠন উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতি রাষ্ট্র বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা, বাঙালি জাতি হিসেবে বিশ্বে মর্যাদা অর্জন, আত্মপরিচয়ের সুযোগ প্রাপ্তি, মাতৃভাষা বাংলার মর্যাদা প্রতিষ্ঠা, উন্নয়নের রোল মডেলের স্বীকৃতি-সবই আওয়ামী লীগের অবদান। ১৯৪৯ সালে এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা লাভ করে জনমানুষের আর্থসামাজিক মুক্তির লক্ষ্যে। ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলন, ‘৬৬ এর ৬ দফা ও ‘৬৯ এর গণঅভ্যুত্থানের পথ ধরে জাতিকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্ব্দ্ধু করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। তিনি জেল, জুলুম অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রাম চালিয়ে যান এবং সমগ্র জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেন।’
তিনি বলেন, ‘১৯৭০’র নির্বাচনে বাঙালি জাতি আওয়ামী লীগের পক্ষে নিরঙ্কুশ রায় দেয়। ১৯৭১’এর ৭ মার্চ ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা করেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। শুরু হয় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন। চলতে থাকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি। ১৯৭১ এর ২৫ মার্চের কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর শুরু করে ইতিহাসের নির্মমতম গণহত্যা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। স্বাধীনতা ঘোষণা করার পরপরই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাঁকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানের নির্জন কারাগারে প্রেরণ করে। ১৯৭১ এর ১০ এপ্রিল জনগণের ভোটে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠিত হয়। ১৭ এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগরে এই সরকার শপথ গ্রহণ করে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের নেতৃত্বে পরিচালিত সফল মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি জাতি ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। প্রতিষ্ঠিত হয় বাঙালির হাজার বছরের লালিত স্বপ্নের ফসল-স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস পশ্চিম পাকিস্তানের নিভৃত কারাগারে বঙ্গবন্ধু অসহনীয় নির্যাতনের শিকার হন। জাতির পিতা ১৯৭২’র ১০ জানুয়ারি স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেন। বাঙালির বিজয় বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তনের মধ্য দিয়ে পূর্ণতা লাভ করে।’
বাণীতে প্রধানমন্ত্রী সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
এছাড়াও মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহিদ ও নির্যাতিত মা-বোন, ১৫ আগস্টের শহিদ, আগস্ট গ্রেনেড হামলার শহিদদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন এবং প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে যে সকল নেতাকর্মী অক্লান্ত পরিশ্রম ও শত প্রতিকূলতা মোকাবিলা করে আওয়ামী লীগ সংগঠনকে শক্তিশালী করে গণমানুষের সুবৃহৎ সংগঠনে পরিণত করেছেন তাদের শ্রদ্ধা জানান তিনি।
বাণীতে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের সংগ্রামী জনগণকে আন্তরিক অভিনন্দন এবং প্রাণপ্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সকল নেতাকর্মীকে অফুরান শুভেচ্ছা জানান।