ঢাকা, বৃহস্পতিবার ২৮, নভেম্বর ২০২৪ ১৩:৪৫:১২ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

‘অবৈধ কারবারে’ সম্পদের পাহাড় গড়েন পাপিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০১:১৯ পিএম, ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সোমবার

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

শামীমা নূর পাপিয়া যুব মহিলা লীগের পদ বাগিয়ে অভিজাত এলাকায় জমজমাট নারী ব্যবসাসহ ভয়ঙ্কর সব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। রাজনৈতিক কর্মসূচিতে গিয়ে নেতাদের ফুল দিয়ে সেই ছবিও অপব্যবহার করতেন। শুধু গত এক মাসেই এই নারী রাজধানীর অভিজাত এক পাঁচ তারকা হোটেলে বিশাল অঙ্কের বিল পরিশোধ করেছেন। আর এ অর্থ খরচের কারণেই গোয়েন্দাদের চোখ পড়ে পাপিয়ার ওপর। একের পর এক বেরিয়ে আসতে থাকে তার সব অপকর্মের কাহিনী।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আলোচিত এই নারী নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সদ্য বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক। তিনি নিজেকে কেন্দ্রীয় নেত্রী হিসেবেও পরিচয় দিতেন। এই পরিচয়ের আড়ালে ছিল তার অপরাধমূলক কাজকর্ম। গতকাল শনিবার সকালে স্বামী মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন, সাবিক্ষর খন্দকার (২৯), শেখ তায়্যিবা (২২)সহ আরও দুজন বিদেশে যাওয়ার সময় বিমানবন্দর এলাকা থেকে তাকে আটক করে র‌্যাব।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, পাঁচ তারকা হোটেলে নারী ও মাদক ব্যবসাই তার আয়ের মূল উৎস। দেশের অভিজাত কিছু মানুষ ও বিদেশিরাই এর গ্রাহক। ইন্টারনেটে স্কট সার্ভিস খুলে বসে খদ্দেরদের কাছে তাদের চাহিদামতো সুন্দরী তরুণী পাঠাতেন। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শিক্ষিত সুন্দরী তরুণীদের সংগ্রহ করতেন। একপর্যায়ে তাদেরকে ধণাঢ্য ব্যক্তিদের শয্যাসঙ্গী করতেন পাপিয়া। সে একাধিক অভিজাত হোটেলের রুম ভাড়া নিতেন নামে-বেনামে।

পাপিয়ার সব কর্মকাণ্ডের অন্যতম অংশীদার তার স্বামী মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন। এক সময় নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের আহ্বায়ক ছিলেন সুমন। পরে ছিলেন নরসিংদীর প্রয়াত পৌর মেয়র লোকমানের বডিগার্ড।

নরসিংদীবাসী জানান, নরসিংদী শহরের ব্রাক্ষন্দী মহল্লার মতিউর রহমানের ছেলে মফিজুর রহমান চৌধুরী সুমন। নরসিংদী শহর ছাত্রলীগের সাবেক আহ্বায়ক সুমন। প্রয়াত মেয়র লোকমান হোসেনের দ্বারা রাজনীতিতে হাতেখড়ি তার। শৈশব থেকেই সন্ত্রাস কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন সুমন। ২০০১ সালে পৌরসভার কমিশনার মানিক মিয়াকে যাত্রা প্যান্ডেলে গিয়ে হত্যার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ওই হত্যাকাণ্ডের এজহারভুক্ত আসামি সুমন ওরফে মতি সুমন। হত্যাকাণ্ড ও সন্ত্রাস কর্মকাণ্ডের ওপর ভর করে তার উত্থান। ২০০৯ সালে প্রেমের সম্পর্কে পর পাপিয়া চৌধুরীকে বিয়ে করেন সুমন।

সুমনকে বিয়ের পর পাপিয়া রাজনীতিতে পুরোপুরি জড়িয়ে পড়েন। লোকমান হত্যাকাণ্ডের বছর তিনেক পর পাপিয়া চৌধুরীর ওপর সন্ত্রাসী হামলা হয়। ওই সময় পাপিয়াকে গুলি করে সন্ত্রাসীরা। এরপর তারা নরসিংদী ছেড়ে ঢাকায় পাড়ি জমান। ঢাকায় এমপি সাবিনা আক্তার তুহিনের সঙ্গে সখ্য গড়ে ওঠে তাদের। এরপর থেকে পাপিয়া চৌধুরী ও তার স্বামী সুমন ওরফে মতি সুমন রাজধানীর সাবেক এক সংরক্ষিত এমপির আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন। ওই এমপির সঙ্গে তার গাড়ির ব্যবসা আছে বলে জানা গেছে।

এরপর ২০১৮ সালে নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক হয় পাপিয়া। নরসিংদীর শহরের ভাগদী এলাকায় কেএমসি কার ওয়াশ নামে একটি গাড়ির সার্ভিস সেন্টার রয়েছে তার স্বামী সুমনের। নরসিংদীতে রয়েছে সুমন ও তার স্ত্রী পাপিয়ার বিশাল কর্মীবাহিনী। মাঝেমধ্যেই তারা বিশাল শোডাউন দেন আওয়ামী লীগের মিছিল-মিটিংয়ে। পাপিয়ার স্বামী সুমন ঢাকায় সন্ত্রাসের পাশাপাশি অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গেও সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

নরসিংদী জেলা শহরে ভাগদী মারকাজ মসজিদ এলাকায় পাপিয়ার বাবা সাইফুল বারীর বাসা। সেখানে গিয়ে দেখা যায় একটি দোতালা পাকা বাড়ি তার বাবার। তার শ্বশুরবাড়ি ব্রাহ্মণদীতে চারতলা একটি বাড়ি আছে। রাজধানীর ফার্মগেট ইন্দিরা রোডে ‘রওশন ডমিনো রিলিভো’ বিলাসবহুল ভবনে তার ও তার স্বামীর নামে দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে। এ ছাড়া তার কালো ও সাদা রঙের দুটি হায়েস মাইক্রোবাস, একটি হ্যারিয়ার, একটি নোয়া ও একটি ভিজেল কার আছে। তার স্বামীর মালিকানায় থাইল্যান্ডে একটি বারও আছে বলে জানা গেছে। রাজধানীর এফডিসি গেটের সঙ্গে ‘কার এক্সচেঞ্জ’ নামে তার একটি গাড়ির শোরুম আছে বলে জানা গেছে।

নরসিংদীর শহরের ব্রাক্ষন্দীতে পাপিয়ার শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। তবে বাড়ির দারোয়ান জানান, বাসার সবাই ঢাকা চলে গেছে। এদিকে পাপিয়ার বাবার বাড়ি ভাগদীতে গিয়ে জানা যায়, পাপিয়া আর সুমন প্রায়ই রাজনৈতিক ও ব্যবসায়ীক কারণে নরসিংদী আসতেন। তবে কি কারণে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তা জানেন না বলে জানান তার বাবা সাইফুল বারী। সকালে সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এসে তাদের সম্পর্কে জানতে চান বলে জানান। তবে এলাকাবাসী তাদের সম্পর্কে ভয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হয়নি।

এদিকে নরসিংদী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মতিন ভূঁইয়ার কাছে তাদের বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান, এটা সুমন ও পাপিয়ার ব্যক্তিগত ব্যাপার। এই জায়গায় রাজনৈতিক কোনো বিষয় জড়িত নয়। তারা রাজনৈতিক পরিচয়ে নাম ভাঙিয়ে ঢাকা কি করছে সেটা দেখার কোনো সুযোগ আমাদের নেই। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের গ্রেফতার করেছে তারাই সব বের করবে। আর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবে কেন্দ্রীয় নেতারা।

-জেডসি