করোনা: মুখ থুবড়ে পড়েছে পার্লার ব্যবসা
মাজেদুল হক তানভীর
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৫:১৪ এএম, ৬ এপ্রিল ২০২০ সোমবার
করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী মানুষ ঘরে অবস্থান করছে। এর ফলে মুখ থুবড়ে পড়েছে দেশের সৌন্দর্যসেবা খাত বা বিউটি ইন্ডাস্ট্রি। সম্প্রতি এক গবেষণায় জানা গেছে, এই খাত থেকে দেশে বার্ষিক আয় ৫০০ কোটি ডলার। দেশের ১৮ শতাংশ নারী এ পেশায় জড়িত। ৩ লাখেরও বেশি বিউটিপার্লারে উদ্যোক্তা ও কর্মী আছে ১০ লাখেরও বেশি। করোনা পরিস্থিতি দীর্ঘায়িত হলে এই খাতের বিপুল সংখ্যক জনগোষ্ঠী কর্মহীন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সারা দেশের কয়েকজন বিউটি পার্লারের স্বত্বাধিকারী ও বিউটি এক্সপার্টরা জানিয়েছেন তাদের অবস্থার কথা-
টঙ্গীতে বসবাসরত বিউটি এক্সপার্ট ও ‘মুন মেকওভারের’ স্বত্বাধিকারী আকলিমা আকলিমা আক্তার শান্তি। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমরা পার্লার মালিকরা ভালো নেই। যারা বড় বড় ডেকোরেশনের পার্লার দিয়েছেন তারা থেকে শুরু করে একটা বেড এবং চেয়ার দিয়ে যারা কাজ করেন তারা কেউ ভালো নেই। আজকে ১৫/১৬ দিন আমাদের কাজ বন্ধ, সামনেও কবে পরিস্থিতি ঠিক হয় জানি না। আমাদের কাজ লোকজন নিয়েই, কবে কাজে ফিরতে পারব আল্লাহ জানেন। এমতাবস্থায় আমাদের সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ছে।’
‘মুন মেকওভারের’ স্বত্বাধিকারী বলেন, ‘ঘর ভাড়া, পার্লার ভাড়া, স্টাফের বেতন, বাজার সব মিলিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। আর ১০ দিন এমন চললে ডাল-ভাত খাওয়ার উপায় থাকবে না। এমতাবস্থায় আপনার সুদৃষ্টি কামনা করি।’
‘আমরা ত্রাণ বা এককালীন সাহায্য চাই না। আমাদের যদি এক বছর মেয়াদী লোনের ব্যবস্থা করে দেন তাহলে আমরা সেই লোন দিয়ে এই দুঃসময়ে জীবন পরিচালনা করতাম এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কাজ করে লোন পরিশোধ করব। আমরা চাই সরকারি খাতে পার্লার জগতের নাম যুক্ত হোক। আমরাও দেশের উন্নয়নে ভূমিকা রেখে আসছি, যা কখনোই সবার সামনে আসে না’, বলেন আকলিমা।
এই বিউটি এক্সপার্ট বলেন, ‘আমরা খেটে খাওয়া মানুষ, যাদের ট্রেড লাইসেন্স আছে সব সুবিধা শুধু তাদের জন্য অব্যাহত রাখলে সবাই সুবিধা পাবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী- যারা নতুন উদ্যোক্তা, নতুন পার্লার তারা এখনো ট্রেড লাইসেন্সের সুযোগ করে উঠতে পারেনি। তাদের জন্য ব্যবস্থা নিন দয়া করে, নতুনদের জন্য কী কী করণীয় শর্ত অনুযায়ী আমরা কাজ করতে রাজি আছি। আমরা এখন হতাশার সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছি, আমাদের দিকে একটু হাত বাড়িয়ে দিন। আমরা নারীরাও দেশের উন্নয়নের একটি অংশ হয়ে সারা জীবন আপনার কাছে কৃতজ্ঞ থাকতে চাই।’
ভোলা সদরের একজন মেকআপ আর্টিস্ট, বিউটিশিয়ান ও ‘রাহা ব্রাইডাল হাউজের’ স্বত্বাধিকারী তিসা। তিনি বলেন, ‘দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে গত ১৬ মার্চ স্বেচ্ছায় স্বপরিবারে হোম কোয়ারেন্টিন হয়ে যাই। আমার পার্লারে চারজন মেয়ে কাজ করে। তাদের মার্চ মাসের পুরো বেতন দিয়ে আপাতত কাজে আসতে নিষেধ করেছি। দেশের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করলে, জানি না কবে এই বন্দীদশা থেকে মুক্তি পাবো। কিন্তু এই অবস্থায়ও কর্মচারীদের বেতন কন্টিনিউ করতে হচ্ছে। অথচ ইনকাম বন্ধ। এমতাবস্থায় সরকারি সহায়তা ছাড়া আমাদের ঘুড়ে দাঁড়ানোর উপায় নেই। আমরা নিজেরা চলতেই হিমশিম খাচ্ছি। আমরা চাই সরকারিভাবে নারী উদ্যোক্তা হিসেবে আমাদেরকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হোক।’
রাজধানীর মগবাজারে অবস্থিত ‘শান্তিস মেকওভারের’ স্বত্বাধিকারী আফরোজা খানম শান্তি বলেন, ‘আমার সেলুনে চারজন মেয়ে কর্মী কাজ করেন। আমার কাজ অনলাইন ভিত্তিক। আমি হোম সার্ভিস দিয়ে থাকি। মার্চের ১৮ তারিখ পর্যন্ত আমার পার্লার খোলা ছিল। এর পর করোনা পরিস্থিতির কারণে বন্ধ করতে বাধ্য হই। প্রতি বছর পহেলা বৈশাখ ও ইস্টার সানডেতে আমাদের ব্যস্ত সময় কাটাতে হয়। কিন্তু এবার সব স্থগিত হওয়ায় বড় ধরনের ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে কর্মীদের বেতন দেওয়া কঠিন হয়ে যাবে।’
শান্তি আরও বলেন, ‘কর্মীদের বেতন দিতে না পারলে তারাও সমস্যায় পড়বেন তাদের পরিবার নিয়ে। মে মাসেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সর্বশান্ত হতে হবে। তাই সরবার সহজ শর্তে লোনের ব্যবস্থা করে দিলে আমাদের এই খাত রক্ষা পাবে।’
নারায়ণগঞ্জের ‘দুলহান বিউটি পার্লারের’ স্বত্বাধিকারী সুলতানা আফরোজ বলেন, ‘২০ মার্চ থেকে আমাদের একমাত্র আয়ের উৎস বন্ধ করে দিতে হয়েছে।ছুটি দিতে হয়ছে কর্মচারীদের।অল্প বেতন দিয়ে কর্মীদের বিদায় করতে হয়েছে। জানি না আর তাদের কবে আমরা পাবো। কবে এই দুর্যোগ থেকে মুক্তি পাবো। মুক্তি পেলেও ফিরে পাবো কিনা কর্মচারীদের। সব মিলে দুশ্চিন্তায় ঘিরে ধরেছে। বাংলাদেশের সব বিউটিসিয়ানদের পক্ষে প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, এই খাত ও এর সঙ্গে জড়িতের রক্ষার্থে কার্যত পদক্ষেপ নিন।’
অনেকটা একই সুরে কথা বলেন টঙ্গীর বিউটিশিয়ান ও উত্তরার ‘স্টাইলিন হেয়ার অ্যান্ড বিউটি একাডেমির’ সিনিয়র মার্কেটিং অফিসার ময়না আক্তার। তিনি বলেন, ‘করোনার ছোবলে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি বাংলাদেশের বিউটি ইন্ডাস্ট্রিজের পার্লার মালিকরা। আমরা কেউই পার্লার খোলা রাখতে পারছি না। আয় পুরোপুরি বন্ধ হওয়ায় দিশেহারা আমরা। চক্ষু লজ্জায় কারো কাছে কিছু প্রকাশও করতে পারছি না। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন আমাদের বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন।’