করোনা: মৃত্যুর আগে রোগী-পরিবারকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন যিনি
অনলাইন ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০২:৩৩ পিএম, ১৮ এপ্রিল ২০২০ শনিবার
জুয়ানিতা নিত্তলা, লন্ডনের রয়াল ফ্রি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের প্রধান নার্স।
জুয়ানিতা নিত্তলা, লন্ডনের রয়াল ফ্রি হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রের প্রধান নার্স। নিত্তলা ইংল্যান্ডের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবায় (এনএইচএস) কাজ করছেন গত ১৬ বছর ধরে।
তিনি নিবিড় পরিচর্যা সেবায় বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত নার্স। এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে এক সকালে নিত্তলা যখন তার শিফটে যোগ দিলেন নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটের (আইসিইউ) ডাক্তার তাকে বললেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত একজন রোগীর চিকিৎসা তাকে বন্ধ করে দিতে হবে।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত সঙ্কটজনক অবস্থার রোগীদের জন্য ভেন্টিলেটরের ভূমিকা বিশাল। ভেন্টিলেটর থাকার ওপর অনেক সময় একজন রোগীর জীবন-মৃত্যু নির্ভর করে।
ভেন্টিলেটর তাদের ফুসফুসে কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন জোগায় এবং কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে আনে। অর্থাৎ রোগী যখন নিজে নিজে শ্বাসপ্রশ্বাস নিতে পারে না, তাকে কৃত্রিমভাবে শ্বাস নেওয়ায় ভেন্টিলেটর।
কিন্তু এই ভেন্টিলেটরে দেওয়ার মানে এই নয় যে এতে সব রোগীর জীবন বাঁচবে। সে কারণেই এখানে চিকিৎসকদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয় থাকে যে কখন তারা মনে করবেন সেই রোগীর আর বাঁচার সম্ভাবনা নেই এবং ভেন্টিলেটর চিকিৎসা বন্ধ করে দিতে হবে।
ভেন্টিলেটর বন্ধ করে দেওয়াটা খুবই মানসিক চাপের এবং কষ্টের মুহূর্ত। জুয়ানিতা নিত্তলা বলেন, ‘আমার মাঝে মাঝে মনে হয় ওই ব্যক্তির মৃত্যুর জন্য আমিই দায়ী।’
নিত্তলাকে সেদিন যে রোগীর ভেন্টিলেশন বন্ধ করতে বলা হয়- তিনি ছিলেন পেশায় একজন কমিউনিটি নার্স। বয়স ৫০-এর কোটায়। নিত্তলা তার মেয়েকে জানালেন গোটা প্রক্রিয়া সম্পর্কে।
‘আমি তাকে আশ্বস্ত করলাম তার মায়ের কোনো কষ্ট হচ্ছে না। তিনি খুব প্রশান্তির মধ্যে আছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম তার মায়ের কোনো শেষ ইচ্ছা আছে কি না এবং ধর্মীয়ভাবে তিনি কিছু চান কি-না।’
আইসিইউ-তে বিছানাগুলো পাশাপাশি। নিত্তলার চারপাশে যত রোগীর তিনি দেখাশোনা করছেন তারা সবাই অচেতন। মহামারির কারণে নিত্তলার মতো আইসিইউ নার্সদের এখন দম ফেলার সময় নেই। সব চিকিৎসাকর্মী কয়েক মুহূর্তের জন্য কাজ বন্ধ রাখলেন।
নিত্তলা জানান, 'নার্সরা কথা বলা বন্ধ করে দিলেন। রোগীর সম্মান এবং তাকে স্বস্তি দেওয়াটাই তখন আমাদের অগ্রাধিকার।'
নিত্তলা রোগীর কানের কাছে ফোন ধরলেন এবং তার মেয়েকে বললেন ‘কথা বলুন’।
‘আমার কাছে ওটা একটা ফোন কল মাত্র। কিন্তু তার পরিবারের জন্য ওটা ছিল বিশাল পাওয়া। ওরা চেয়েছিলেন ভিডিও কল করতে। কিন্তু দুভার্গ্যবশত আইসিইউ-র ভেতরে মোবাইল ফোন ব্যবহারের অনুমতি নেই।’