ঢাকা, মঙ্গলবার ২৬, নভেম্বর ২০২৪ ৬:৫৮:৫৮ এএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

জেনেসিস

শান্তা মারিয়া

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ১০:১৭ পিএম, ২১ মে ২০২০ বৃহস্পতিবার

শান্তা মারিয়া

শান্তা মারিয়া

ধীর পায়ে সমুদ্রের তীরে এসে দাঁড়ালো তারা। স্বচ্ছ নীল জল। আকাশও ঝকঝকে নীল। বেলাভূমিতে কাঁকড়ার ঝাঁক হেঁটে যাচ্ছে লাল চাদর হয়ে। নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে কচ্ছপ। এখান থেকেই দেখা যাচ্ছে সাগরের বুকে ডলফিনদের খেলা।  ঢেউয়ের গর্জন, সীগালদের কলকাকলি ছাড়া আর কোথাও কোন শব্দ নেই। একটু পরই বৃষ্টি এলো। অ্যাসিড বৃষ্টি নয়। নির্মল বারিধারা নেমে এলো আকাশ থেকে। তারা অঞ্জলি ভরে পান করলো সেই সুশীতল সুধা। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে হেঁটে চললো তীরের সতেজ ঝাউগাছগুলোর দিকে। তারা এই পৃথিবীর শেষ মানব মানবী।

কোভিড ১৯ নামে একটি ভাইরাসের আক্রমণে মানব সভ্যতা যখন মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করছিল তার মাত্র এক মাস আগে তারা ছোট্ট একটি ইয়টে চড়ে মধুচন্দ্রিমায় ভেসে পড়েছিল সাগরে। মাঝ সাগরেই তারা ইন্টারনেটের সুবাদে মহামারীর খবর পায়। কিন্তু কিছু করার সাধ্য ছিল না। এক বছর পরে যখন তারা বন্দরে এসে নামলো ততো দিনে সব শেষ। তারা এখনও খুঁজে দেখেনি কোন গভীর অরণ্যে কিংবা বিছিন্ন কোন দ্বীপে মানব জাতির কোন বংশধর, কোন সমাজ বেঁচে আছে কিনা। হয়তো আছে, হয়তো নেই। তবে তাদের পরিচিত বিশ্ব যে শেষ হেয় গেছে সেকথা বুঝতে তাদের দেরি হয়নি।  শোক? হতাশা? বেঁচে থাকার যুদ্ধ তাদের এগুলো অনুভব করতে দেয়নি। তারা শুধু বুঝেছে তাদের বাঁচতে হবে। তারা খুঁজে নিয়েছে প্রকৃতির কোলে একটু আশ্রয়। শেষ পর্যন্ত বেঁচে থাকাই তো জীবনের সার্থকতা।

ঝাউগাছের নিচে দাঁড়িয়ে তারা দেখছিল সাগরের বুকে বিকেলের রোদের রূপ। মেয়েটি তার উদরের উপর এক হাত রাখলো। সেখানে নতুন প্রাণের স্পন্দন। ছেলেটিও তার হাতের উপর হাত রাখে। সেও অনুভব করছে এই আগমন ধ্বনি। ঘুণে ধরা সভ্যতার চিহ্নগুলো অনেক আগেই ঢেকে দিয়েছে, গ্রাস করে নিয়েছে প্রকৃতি। এখন বিশ্বে কোথাও কোন যুদ্ধ নেই, কোন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা নেই, বাজার দখলের লালসা নেই। শেষ বিকেলের কনে দেখা আলোয় তারা দুজনেই তাকালো দূষণমুক্ত সবুজ প্রকৃতির দিকে।  ধুয়ে মুছে নতুন এক মানব জাতির জন্য তৈরি হচ্ছে পৃথিবী।