করোনাভাইরাস এবং আমাদের সচেতনতা
হাসিনুস সাবাহ
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০৩:০৬ পিএম, ৩০ মে ২০২০ শনিবার
দিন দিন বাড়ছে করোনা ভাইরাসের প্রকোপ। জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় বলছে, এখন পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে মৃতের সংখ্যা অন্তত সাড়ে ৩ লাখ আর আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫৬ লাখ।
প্রাণঘাতী ক্ষুদ্র দেখতে না পাওয়া ভাইরাসটির বিরুদ্ধে লড়তে লড়তে মানব জাতি আজ অনেকটাই বিপর্যস্ত। ইউরোপের অনেক দেশে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ কিছুটা কমে আসলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, পর্যাপ্ত সতকর্তা গ্রহণ করা না হলে বছরের শেষের দিকে, দ্বিতীয় দফায় আবারো ভয়াবহ সংক্রমণের মুখে পড়বে তারা। এদিকে, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা এবং এশিয়ার দক্ষিণাঞ্চল ভাইরাসটির সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। ইউরোপের পর এখন দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিলকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় হটস্পট হিসেবে ধরা হচ্ছে।
পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতেও। ভারতে প্রতিদিনই বাড়ছে কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। দেশটিতে এরই মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজারের বেশি আর মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৪ হাজার। ব্যতিক্রম নয় বাংলাদেশেও। দেশটিতে এরই মধ্যে মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫০০, আক্রান্ত ৩৫ হাজারের বেশি।
চীনে প্রথম ভাইরাসটির সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর পেরিয়ে গেছে পাঁচ মাস, এখন পর্যন্ত আবিষ্কার করতে পারা যায়নি কোন টিকা বা প্রতিরোধের কোনো উপায়। শুরুর দিকে ম্যালেরিয়ার জন্য ব্যবহৃত হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ওষুধটিকে কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় কার্যকরী ভাবা হলেও এখন স্বাস্থ্যগত ঝুকি বিবেচনা করে হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনের ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। তার মানে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ রুখতে একমাত্র অস্ত্র জনগণের সচেতনতা। যেহেতু কোভিড-১৯ সহসাই আমাদের পিছু ছাড়ছে না তাই বেঁচে থাকার জন্য স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলার কোনো বিকল্প নেই।
ভিড় এড়িয়ে চলা, বাইরে চলাচলের সময় মাস্ক ব্যহার করা, গ্লাভস ব্যবহার করা কিংবা অপ্রয়োজনে বাইরে যাওয়া বন্ধে বার বার তাগিদ দেওয়া হলেও সেটি মানতে আমাদের সবচেয়ে অনীহা। এবারের ঈদে তার প্রমাণ স্পষ্ট। পরিবারের সবাইকে নিয়ে ঈদ করা ছাড়া আমাদের ঈদ হয় না সেটি যেমন সত্য তেমন সত্য আপনার কেবলমাত্র একটি আকাঙ্ক্ষার জন্য পুরো পরিবার, প্রতিবেশী এমনকি গ্রামকে ঝুঁকিতে ফেলছেন আপনি। আপনি আমি কেন ভাবছি না আমাদের আপনজনকে নিরাপদে রাখতেই আমাদের এ সংযম। হয়তো এক ঈদে বাড়ি যাওয়া বা বাইরে ঘুরতে যাওয়ার অনুশুচনায় ভুগতে হবে সারা জীবন।
সংক্রমণের ঝুঁকির ভয়াবহতা ঠেকানো শুধুমাত্র সরকারের দায়িত্ব নয়, পুরো দেশকে লকডাউন কিংবা বন্ধ করে এই বির্পযয় থেকে মুক্তি পাওয়াও সম্ভব নয়। কেবল এবং কেবলমাত্র সচেতনতা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনেই করোনা মোকাবিলা সম্ভব। দেশের অর্থনীতির কথা চিন্তা করে ৩১ মে থেকে শিথিল করা হয়েছে লকডাউন। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না শিথিল করা মানেই অযথা ঘুরো বেড়ানো নয়। এই শিথিলের অর্থ আপনার-আমার দায়িত্ব বাড়িয়ে দেওয়া, যেন সবাই আরও সচেতন হয়ে চলাচল করি।
লেখক : হাসিনুস সাবাহ, লেকচারার, সাংবাদিকতা ও মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, সেন্ট্রার উইমেন্স ইউনিভার্সিটি