ঢাকা, রবিবার ২৪, নভেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৩:৫৭ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

রাজপথে নেই বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশিত : ০৯:১৮ পিএম, ১০ জানুয়ারি ২০১৭ মঙ্গলবার

রাজপথে নেই বিএনপি। আপাতত নেই কোনো কর্মসূচি। দলটির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন কমিশন সংস্কারে ১৩ দফা প্রস্তাব দেওয়ার পর তা রাষ্ট্রপতির বিবেচনায় রয়েছে। ৫ জানুয়ারি দলটির ভাষায় গণতন্ত্র হত্যা দিবস উপলক্ষে বিএনপির নেতাকর্মীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ করেছে এবং পুলিশ তাতে ব্যাপকভাবে বাধা দিয়েছে। ঢাকায় বিএনপির অফিস ঘেরাও করে রাখে পুলিশ। সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি।

সারাদেশে কর্মসূচি ঘোষণার পরও বেশ কয়েকটি জেলায় পুলিশ বিএনপিকে রাজপথে নামতে দেয়নি। জানুয়ারির প্রথমভাগে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠন একাধিক সভাসমাবেশ করেছে। তবে বিএনপির জন্যে সে সুযোগ ছিল না। বিএনপির এই গণতান্ত্রিক অধিকার না পাওয়ায় দলটি রাজনৈতিক কর্মসূচি এড়িয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিএনপির একাধিক নেতা এধরনের মন্তব্য করেছেন। বিএনপির পুরো মনোযোগ নির্বাচন কমিশন সংস্কার ও শক্তিশালী করে প্রতিষ্ঠানটিকে গড়ে তুলতে সরকার কি উদ্যোগ নেয় তার প্রতি। বিএনপি নেতারা মনে করছেন, সরকার নানাভাবে দলটিকে উস্কানি দিচ্ছে। সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে রাজপথে কোনো সভা সমাবেশ করতে না দেওয়া সরকারের এধরনের একটি চেষ্টা হিসেবে দেখছেন বিএনপি নেতারা। বিএনপির একজন নেতা বলেছেন, যদি দলটি রাজপথে নামে তাহলে সরকারের এধরনের চেষ্টা হিতে বিপরীত বা বুমেরাং হবে।

১৯৯১ সাল থেকে তিনবার সরকার গঠন করেছে বিএনপি। ২০০৬ সাল থেকে প্রায় একদশক ধরে বিএনপি অফিস ব্যবহার করতে পারছে না। যথাযথ কোনো কর্মসূচি পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। দলটির নেতারা বিশ্বাস করেন সরকারের অনমনীয় অবস্থান মোকাবেলা করতে বিএনপির নেতাকর্মীরা রাজপথে নামলে সরকার এর সুযোগ নেবে এবং নির্বাচন কমিশন সংস্কার থেকে জনগণের মনোযোগ অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিতে সমর্থ হবে। ২০১৪ সালে নির্বাচন প্রত্যাখান করার পর গত ২৫ বছরে বিএনপির কোনো প্রতিনিধি সংসদে নেই। দলটির রাজনৈতিক অস্তিত্বের জন্যে এখন একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। আগামী নির্বাচনে দলটি অংশ নেবে কি না তা নির্ভর করছে নির্বাচন কমিশন সংস্কার ও প্রতিষ্ঠানটির নিরপেক্ষতার ওপর। রাজপথে কোনো সমাবেশ করা অনুমতি না দেওয়ায় বিএনপি ধীরে চল নীতি নিয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বিএনপি নেতা বলেন, এধরনের পরিস্থিতিতে আমরা কঠোর কর্মসূচি নিলে নির্বাচন কমিশন সংস্থার ও শক্তিশালী করার যে উদ্যোগ দলটি নিয়েছে তা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই কোনো কঠিন কর্মসূচি আমরা দিতে চাচ্ছি না।

৫ জানুয়ারির একতরফা নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১৫৩ জন সংসদ সদস্য নিয়ে সরকার গঠন করে। এরপর বিএনপি সারাদেশে প্রতিবাদ কর্মসূচি দেয় এবং প্রায় বছরব্যাপী এ কর্মসূচি চলাকালে শতাধিক ব্যক্তি মারা যায়। আগুন বোমায় এদের অনেকেই মারা যায় এবং বিএনপিকে এজন্যে দায়ী করে সরকারি দল। তবে বিএনপির ফের নির্বাচন দেয়ার দাবি সরকার পূরণ করেনি। সর্বশেষ গত বছর বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচন কমিশন সংস্কার ও শক্তিশালী করতে প্রস্তাব দেন। বিএনপির নেতারা এ বিষয়টি নিয়ে রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদের সঙ্গে বঙ্গভবনে দেখা করেন। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতারাও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে একই দাবিতে দেখা করে। বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য আব্দুল মঈন খান বলেছেন, তার দল উদার গণতান্ত্রিক দল। আলোচনা ও দরকষাকষির মাধ্যমেই রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের অবসান চায় বিএনপি। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এছাড়া আর অন্য কোনো সুযোগ নেই। শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরে শক্তিশালী ও নিরপেক্ষ একটি নির্বাচন কমিশনও জরুরি বলে তিনি অভিমত দেন।

তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচন কমিশন সংস্কার ও শক্তিশালী করতে এজন্যেই উদ্যোগ নিয়েছে। নির্বাচনের সময় সঠিক সরকার যাতে থাকে এজন্যেই তার দল এধরনের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানান তিনি। এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে নির্বাচন আহবান জানিয়ে বিএনপি হরতাল, অবরোধসহ নানা ধরনের কর্মসূচি দিলেও এখন কোনো কর্মসূচি না দিলেও জনগণের সমর্থন কামনা করেছে।

গত রোববার পাবনা বিএনপির আয়োজনে ‘জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় দলটির স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বক্তব্য রাখেন। বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির আরেক সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেছেন, সরকার প্রহসনের নির্বাচন স্মরণ করতে চায় না বলেই বিএনপিকে গত ৫ জানুয়ারি কোনো কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি। নৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে সরকারি দল দুর্বল এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারি এলেই সরকার তাই কঠোর পদক্ষেপ নেয়। তিনি বলেন, জনগণ বিএনপির কর্মসূচিতে যোগ দিত, সরকার তা জানে। সরকার আমাদের কর্মসূচিতে বাধা দিচ্ছে এবং জনগণের মধ্যে এ নিয়ে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হচ্ছে এবং চূড়ান্তভাবে সরকারই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।