ভাল থাকুক এসময়ের কাদম্বিনীরা
সোমা দেব
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ১২:১৭ এএম, ১৮ জুলাই ২০২০ শনিবার
ভাল থাকুক এসময়ের কাদম্বিনীরা : সোমা দেব
ডা. স্নিগ্ধা সরকার। নিউরোলজিতে পোস্ট গ্র্যাজুয়েশন করছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ থেকে। ছোটবেলায় ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন থাকলেও অল্পের জন্য সরকারি মেডিকেল কলেজে চান্স পাননি। কিন্তু নিন্মমধ্যবিত্ত পরিবার হওয়া স্বত্বেও একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন। ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যান। শুধুমাত্র ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন বলে। যেহেতু নিন্মমধ্যবিত্ত পরিবার এবং লোন নিয়ে কষ্ট করে পড়তে হচ্ছে তাই ভাল ফলাফল করার চিন্তুাটা মাথায় চেপে বসে। এমবিবিএস ফাইনাল পরীক্ষায় সারা বাংলাদেশে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন স্নিগ্ধা। এরপর তিনি নিজেকে আরও এগিয়ে নিতে উচ্চশিক্ষা নিতে চান। এরই মধ্যে বিয়ে এবং মেয়ে এসেছে কোল জুড়ে।
এ অবস্থায় উচ্চশিক্ষার পথটাও সহজ ছিল না। সেসময় স্বামীর পোস্টিং আফ্রিকায়। এছাড়া স্নিগ্ধার ইচ্ছা নিউরোলজি নিয়ে পড়ার। কিন্তু পরিবার থেকে চাপ আসে মেডিসিন নিয়ে পড়ার জন্য। তাহলে ঢাকাতে থেকেই পড়াশোনা করতে পারবেন। কিন্তু তাঁর নিজের অদম্য ইচ্ছায় কয়েক মাসের ছোট্ট বাচ্চা নিয়ে একা ময়মনসিংহ চলে যান নিউরোলজি নিয়ে উচ্চ ডিগ্রি লাভের আশায়। যেখানে তাঁর কলেজের প্রফেসররাও বাধা দিচ্ছিলেন। মেয়ে ডাক্তার নিউরোলজি নিয়ে পড়ার থেকে মেডিসিন নিয়ে পড়বে, এমন কথাও অধ্যাপকদের কাছ থেকে শুনেতে হয়েছিলেন। কিন্তু কোথায় যেন নিজেকে প্রমাণ করার চিন্তাটা মাথাচাড়া দেয়। শুধুমাত্র মেয়ে বলে নিজের ইচ্ছাকে জলাঞ্জলি দেবে কেন? তাই অচেনা এক শহরে যেখানে শুধু তিনি একা থাকবেন বলে অনেকে বাসা ভাড়াও দিতে চায়নি, যখন তখন বাসা ছেড়ে দেবার হুমকিও দিয়েছে। দমে যাননি স্নিগ্ধা।
পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি স্নিগ্ধা গত ৩ এপ্রিল থেকে প্রথমে সূর্যকান্ত হাসপাতাল এবং পরে ময়মসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রথমে আইসোলেশন ইউনিট, অবজারভেশন ইউনিট, নর্মাল ইউনিটের দায়িত্ব পালন করেন রেসিডেন্ট ডাক্তার হিসেবে। আগামী ২৫ জুলাই থেকে শুরু হবে করোনা ইউনিটে কাজ করার সরাসরি দায়িত্ব। শুরুতে অল্প ট্রেনিং নিয়ে স্নিগ্ধাসহ কয়েকজন শুরু করেন এই করোনাকালে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার দায়িত্ব।
কথা প্রসঙ্গে ডা. স্নিগ্ধা সরকার জানান, ‘কাউকে না কাউকে তো এগিয়ে আসতেই হবে। এই সঙ্কটকালে ভয় পেয়ে পিছিয়ে থাকলে তো চলবে না। পরিবারের অনেক বাধার মুখেও আমি এ সময় কাজে এসেছি।’
তিনি জানান, অনেক কষ্ট হয় যারা করোনা ইউনিটে বা এই সময়ে হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন। ছোট বাচ্চা বাসায় রেখে কাজ করছেন। সারাক্ষণ পিপিই পরে শরীরে অ্যালার্জি, র্যা শ হয়ে গেছে।
তিনি জানালেন তাঁর একজন সহকর্মীর এই সময় স্বাস্থ্যসেবা দিতে গিয়ে, অক্লান্ত শারীরিক ও মানসিক চাপে অকাল গর্ভপাত হয়ে যায়। তারপরেও তারা দিনের পর দিন সেবা দিয়ে চলেছেন।
এই নারী চিকিৎসকরা জীবন, সংসার, নিজের নিরাপত্তা, সামাজিক বাধা বিপত্তিকে তুচ্ছ করেই এই প্রবল প্রতিকূল সময়ে জনসেবা করে চলেছেন। একবারও নিজের কথা ভাবছেন না। নারীর এই যে আত্মত্যাগ, জীবনকে তুচ্ছ করে চিকিৎসাবিদ্যাকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ার ভাবনা তা খুব সহজ ছিলনা। সেই পরিপ্রেক্ষিতে মানবজাতির কল্যাণ সাধনে দীক্ষিত ডাক্তাররা একবারও পেছনে ফিরে তাকান না।
নারী চিকিৎসকরা আজ সম্মিলিতভাবে এগিয়ে এসে মানবজাতিকে প্রচন্ড মহামারি, সঙ্কটকাল থেকে তুলে আনার দায়িত্ব পালন করছেন। এই মানবসেবার ব্রত পালনের আলোকবর্তিকা দেখিয়েছিলেন কাদম্বিনী বসু ওরফে কাদম্বিনী গাঙ্গুলী।
ইউরোপীয় চিকিৎসা শাস্ত্রে শিক্ষিত দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম মহিলা চিকিৎসক কাদম্বিনী গাঙ্গুলী। যিনি বাংলার হাজারো নারীদের চিকিৎসাশাস্ত্রে নিজেকে মানবকল্যাণের পথে সমর্পণ করার টিমটিমে আলোকশিখাটি জ্বালিয়ে, মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে তাকে মশালে রূপান্তরিত করেছিলেন। তৈরি করেছিলেন নতুন পথ। যে পথে প্রচন্ড বাধা বিপত্তিকে মোকাবেলা করতে হয়েছিল তাকে। আজ ১৮ জুলাই এই তেজস্বিনী বাংলার প্রথম নারী ডাক্তার কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্মদিন।
তাঁর জন্ম এমন এক সময়ে যখন প্রাচীনপন্থীরা নারীশিক্ষার ঘোর বিরোধী। তা স্বত্বেও স্ত্রী স্বাধীনতার সমর্থকেরা প্রবল উৎসাহে নারীদের এগিয়ে যাওয়ার সোপানের একেকটি ধাপ তৈরি করছেন। ঠিক এমন টানাপোড়েনের মধ্যেই নারীমুক্তি আন্দোলনের নেতা ব্রজকিশোর বসুর কন্যা কাদম্বিনী বসুর জন্ম, ১৮৬১ সালের ১৮ জুলাই।
ব্রজকিশোর বসু বরিশালের চাঁদসী থেকে পাড়ি জমান ভারতে। বিহারের ভাগলপুরে শিক্ষকতা করতেন তিনি। প্রচন্ড আধুনিকমনা, নারীশিক্ষা ও নারী স্বাধীনতার প্রবল পক্ষপাতী ব্রজকিশোর বসু এবং অভয়চরণ মল্লিকের নেতৃত্বে দেশের প্রথম মহিলা সমিতি ‘ভাগলপুর মহিলা সমিতি’ স্থাপিত হয়। এসময় কাদম্বিনীর বয়স মাত্র দুই বছর। এমন আধুনিক পরিবেশই তাঁকে গড়ে তুলেছিল সমস্ত সংস্কার, কুসংস্কারাচ্ছন্ন সমাজের বাইরে পা রাখতে। পিসতুতো দাদা কলকাতা হাইকোর্টের ব্যারিস্টার মনোমোহন ঘোষ নারীশিক্ষার অন্যতম দিকদর্শক এবং বাবা ব্রজকিশোর বসুর আধুনিক চিন্তাধারার আঁচ পড়েছিল কাদম্বিনী বসুর জীবনে। তাই তিনি নারীদের শুধু স্ত্রী, জায়া, জননী, ভগিনীর বাইরেও স্বতন্ত্র মানুষ হিসেবে বাঁচতে, নিজের অধিকার ছিনিয়ে নিতে, স্বাধীনভাবে এগিয়ে যাওয়ার লড়াইয়ে প্রথম পদক্ষেপটি রেখেছিলেন। ঠিক অবাস্তব কল্পনার মতো, রাতঘুমের স্বপ্নের মতো নারী ডাক্তার হওয়ার সাহস দেখিয়েছিলেন তিনি। শুধুমাত্র অন্তঃপুরের মহিলা না হয়ে মহল থেকে বেরিয়ে স্বাধীন নারী হয়ে আত্মমর্যাদাপূর্ণ হওয়ার পথে পা বাড়িয়েছিলেন।
তাঁর এই স্বপ্ন পূরণের পথটি ছিল ভীষণ প্রতিকূল। যেখানে নারী মানেই স্ত্রী, অন্তঃপুরের মহিলা। বারো, চৌদ্দ বছর পেরোলেই বিয়ে না হলে যাকে আইবুড়ো খেতাব পেতে হয়, যার জীবন ছিল সারাজীবন স্বামী আর শ্বশুড়বাড়ির সেবাযত্ন করে, সন্তান জন্মদান আর তাদের লালনপালনে কাটিয়ে দেওয়ার। সেখানে লেখাপড়া শেখা এবং ডাক্তার হওয়া সমাজ কোনভাবেই মেনে নিতে পারেনি। আর এ কারণেই কাদম্বিনীকে সহ্য করতে হয়েছে বহু গঞ্জনা, পেরোতে হয়েছে বহু বাধা। সেই বাধা, বহু প্রতিকূলতা সরিয়ে আজকের অসংখ্য নারীর চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্নের পথ তৈরি করেছেন তিনি।
মনোমোহন, দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়, দুর্গামোহন দাসসহ নারী স্বাধীনতার পক্ষে যারা কাজ করতেন, যারা নারীশিক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছেন তারা মেয়েদের স্কুল তৈরি করতে চেয়েছিলেন। যেখানে মেয়েরা পড়াশোনা করবে, স্বাধীনভাবে থেকে নিজের অধিকারের পক্ষে লড়াই করবে। সেই চিন্তা থেকেই কোলকাতার ২২ নম্বর বেনিয়াপুকুর লেনে ১৮৭৩ সালে ‘হিন্দু মহিলা বিদ্যালয়’ নামে একটি স্কুল স্থাপন করেন তারা। অ্যানেট অ্যাক্রয়েড নামে একজন বিদেশী শিক্ষিকাকেও তারা সঙ্গে পেয়ে যান। যিনি এই স্কুলে মেয়েদের শিক্ষাদান করবেন। ১৩ বছর বয়সে কাদম্বিনী এই স্কুলে তার শিক্ষা জীবন শুরু করেন।
কিন্তু মাত্র আড়াই বছর পরই স্কুলটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে অবশ্য ১৮৭৬ সালের পহেলা জুন ওল্ড বালিগঞ্জ রোডে আবারও ‘বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয়’ নামে স্কুলটি চালু হয়। এই স্কুলটিই মেয়েদের জন্য তখনকার প্রথম ইংলিশ বোর্ডিং স্কুল। পরবর্তীতে স্কুলটি আবারও বন্ধ হয়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। অনেক ঝক্কি ঝামেলা সামলিয়ে ১৮৭৮ সালে বঙ্গ মহিলা বিদ্যালয়কে বেথুন স্কুলের সঙ্গে একত্রিত করা হয়। এভাবেই স্কুলটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার প্রচেষ্টা করা হয়।
এই স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু করেছিলেন কাদম্বিনী। আবার এই স্কুল থেকেই এন্ট্রান্স বা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসা প্রথম ছাত্রীও ছিলেন তিনি। মাত্র এক নম্বরের জন্য প্রথম বিভাগ পাননি তিনি। পরে অবশ্য নারীশিক্ষার বিরোধীদের তিনি দেখিয়ে দিয়েছিলেন তার মেধার জোর।
সেসময় লর্ড লিটন তার প্রশংসা করেছিলেন এবং লেডি লিটন কাদম্বিনীর হাতে পুরস্কার ও সার্টিফিকেট তুলে দেন। এই কাদম্বিনীর উচ্চশিক্ষার জন্য বেথুন স্কুলকে কলেজে রূপান্তরিত করার কথা ভাবে সরকার। তা বাস্তবায়িতও হয়। ১৮৭৮-৭৯ সালে ডিরেক্টর অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন এ ডব্লিউ ক্রফট রিপোর্টে এমনটাই জানানো হয়েছে।
কাদম্বিনী প্রথমে আর্টস নিয়ে পড়তে চেয়েছিলেন। এ জন্য বেথুন কমিটি কটক কলেজের নামকরা অধ্যাপক শশীভূষণ দত্তকে নিয়োগ দেয় শিক্ষক হিসেবে। শশীভূষণ একই সঙ্গে ইংরেজি, দর্শন, অঙ্ক ও ইতিহাসে পারদর্শী ছিলেন। একমাত্র ছাত্রী কাদম্বিনী ও একমাত্র প্রভাষক শশীভূষণ দত্তকে নিয়ে শুরু হয় বেথুন কলেজের যাত্রা।
এ ঘটনায় পুরো বাংলায় সাড়া পড়ে যায়। নারীশিক্ষার উপর ইতিহাসের জন্মলগ্ন থেকে যে কালিমা লেপন করা ছিল, অগ্নিস্ফুলিঙ্গতে যে ছাই চাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল তা যেন এক ঝটকায় সরে যায়।
১৮৮৩ সালের জানুয়ারিতে বিএ পাশ করলেন কাদম্বিনী। কাদম্বিনীর সাথে আরো একজন গ্র্যাজুয়েট হয়েছিলেন। তিনি চন্দ্রমুখী বসু। দেশের দুইজন নারী গ্র্যাজুয়েট হওয়ার খবর ব্যাপক আলোড়ন তুলেছিল সেসময়। বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে দুইজন নারীর ডিগ্রি নেওয়া দেখতে ক্যাম্পাস ভেঙে পড়েছিল মানুষের ভীড়ে। সেই ভীড় সামলাতে পুলিশকেও হিমশিম খেতে হয়েছিল।
সমাজের ভয়ানক রক্তচক্ষুকে মোকাবেলা করে যেমন কাদম্বিনী এখানে পৌঁছাতে পেরেছিলেন তেমনি প্রশংসাও পেয়েছেন। এসময় কবি হেমচন্দ্র এই দুই গ্র্যাজুয়েট বিদূষী নারীকে নিয়ে কবিতা লিখেছিলেন।
এখানেই শেষ নয় কিন্তু। এরপর কাদম্বিনী পা বাড়ান আরেক স্বপ্নের পথে। যে কারণে তিনি বাংলার তাবৎ নারী চিকিৎসকের স্বপ্নের দুয়ার খুলে দেওয়ার আলোকবর্তিকা নিয়ে সামনের পথে এগিয়ে যান। তাঁর সহপাঠি চন্দ্রমুখী কিন্তু বেথুনেই এমএ ক্লাসে পড়াশুনা শুরু করেন। কিন্তু কাদম্বিনী তখন এমবিবিএস পড়ার সিদ্ধান্ত নেন। এই সিদ্ধান্ত নেওয়া একজন নারীর জন্য কতটা সাহস, প্রত্যয়, দৃঢ়তার পরিচয় তা সেসময়ের সমাজব্যবস্থা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়।
যেসময় সতীদাহ প্রথা থেকে কেবল সমাজ বেরিয়ে এসেছে। তাও প্রাচীনপন্থীরা ভীষণ নাখোশ। বিধবাবিবাহ আইন বহু লড়াই করে পাস হয়েছে। অসংখ্য মেয়ে বাচ্চার জন্মদান করতে গিয়ে, ঠিকমত খেতে না পেয়ে, গর্ভকালীন জটিলতায়, নানা অসুখে চিকিৎসা না পেয়ে মারা যাচ্ছে। ঠিক সে সময় একজন মেয়ের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখা এবং সেই স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দেওয়া দুঃসাহসের মতোই কাজ।
কাদম্বিনী মেডিকেলে পড়তে চেয়ে প্রথমবার আবেদন করেছিলেন ১৮৮১ সালে। কিন্তু সে বছর কলকাতা মেডিকেল কাউন্সিল তাতে কোনো সাড়া দেননি। অথচ সে সময়ের শিক্ষা অধিকর্তা এ ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন। এই ফাঁকে কাদম্বিনী বিএ ক্লাসে ভর্তি হন এবং যথারীতি ভালভাবে পাশ করেন। ১৮৮৩ সালের জানুয়ারিতে বিএ পাশ করেই তিনি আবারও আবেদন করেন। এবার ডিপিআই ৪ জুন মেডিকেল কাউন্সিলে চিঠি পাঠায়। একই বছর ২৯ জুন (মতান্তরে ২৩ জুন) মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন কাদম্বিনী। স্বপ্নের সিঁড়িতে পা রাখেন এই তরুণী।
ভর্তি হয়েই সারা নয়, এখানেও কাদম্বিনীকে ভীষণ প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়। এমনকি মেডিকেলের চিকিৎসকরাও মেনে নিতে পারছিলেন না একজন নারী মেডিকেলের ছাত্রী। স্ত্রী শিক্ষার বিরোধী, রক্ষণশীল মানসিকতার শিক্ষক ডা. রাজেন্দ্রচন্দ্র চন্দ্র কাদম্বিনীর মেডিকেলে পড়ার ব্যাপারে প্রতিবাদও করেছিলেন। শুধু তাই নয়, তাঁকে মেডিসিন পেপারে মৌখিক পরীক্ষায় এক নম্বরের জন্য ফেল করিয়ে দেন এই শিক্ষক।
এদিকে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ, মেডিসিনের অধ্যাপক ও অন্যতম পরীক্ষক জে এম কোটস বুঝতে পেরেছিলেন, কাদম্বিনীর সাথে অন্যায় করা হচ্ছে। তাঁর ইচ্ছাতেই সিন্ডিকেটে আলোচনার পর কাদম্বিনীকে ‘লাইসিনসিয়েট ইন মেডিসিন অ্যান্ড সার্জারি’ বা এলএমএসের সার্টিফিকেট দেওয়া হয় ১৮৮৬ সালের ৭ আগস্ট। দু’বছর পর আবারও সেই একই শিক্ষক রাজেন্দ্রচন্দ্র চন্দ্র ফাইনালে তার বিষয়ে কাদম্বিনীকে ফেল করান। অবশেষে অধ্যক্ষ কোটস নিজের অধিকারবলে কাদম্বিনীকে ‘গ্র্যাজুয়েট অফ দ্য মেডিকেল কলেজ অব বেঙ্গল’ বা জিএমসিবি উপাধি দেন। অনেক প্রতীক্ষা আর লড়াইয়ের পর ১৮৮৮ সালে ডাক্তার হয়ে প্র্যাকটিসের ছাড়পত্র পান কাদম্বিনী।
তিনি ১৮৮৮ সাল থেকেই প্রাইভেট প্র্যাকটিস শুরু করেন। ১৮৯০ সালে কোলকাতার লেডি ডাফরিন হাসপাতালে চাকরি পান কাদম্বিনী। সেসসময় তাঁর বেতন ছিল তিনশো টাকা।
এত প্রতিকূলতার পরও কাদম্বিনী মেডিকেলে পড়াশুনা করেছেন বৃত্তি নিয়ে। বৃত্তির টাকার পরিমান ছিলো মাসে ২০ টাকা। সে সময়ের বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করা সেবিকা ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেল এক চিঠিতে লিখেছিলেন ‘ভারতের মতো গোঁড়া দেশের একটি মেয়ে বিয়ের পর ডাক্তারি পড়ছে! একটি বা দু’টি সন্তানের জন্মের সময়েও মাত্র তেরো দিন কলেজ কামাই করেছে। সম্ভবত একটি লেকচারও মিস করেনি সে!’
শিক্ষক রাজেন্দ্রচন্দ্র চন্দ্র ফাইনালে তাঁর বিষয়ে কাদম্বিনীকে ফেল করানোর কারণে ডাক্তারির এমবি বা এলএমএসের ডিগ্রির সার্টিফিকেট ছিল না তাঁর। তাই ইডেন হাসপাতালে কাজের সুযোগ পেলেও সেখানে তিনি নার্সের মর্যাদা পেতেন। রোগ নির্ণয় বা অস্ত্রোপচার করতে দেওয়া হতো না তাঁকে। কাদম্বিনী বা নারী স্বাধীনতার প্রতি বিরুদ্ধবাদীরা এই বিষয়টিকে কেন্দ্র করে কাদম্বিনীর যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেন। ব্যঙ্গ বিদ্রুপ করতেন। এমনকি তাঁকে চিকিৎসকের দায়িত্ব দেওয়ারও প্রতিবাদ করতেন।
ঠিক এই বিষয়গুলোই শাপে বর হয়ে উঠল কাদম্বিনীর জীবনে। কাদম্বিনী আরও উচ্চশিক্ষার চিন্তা করলেন। তিনি এই বিদ্রুপের জবাব দিতে বিলেতে গিয়ে ডাক্তারি ডিপ্লোমা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। যদিও তখন নারী চিকিৎসক হিসেবে প্রথম তিনি ‘হিন্দু প্যট্রিয়ট কিংবা ‘বেঙ্গলি’র মতো পত্রিকায় নিয়মিত বিজ্ঞাপন দিয়ে প্র্যাকটিস করতেন।
যেমন ভাবা তেমন কাজ। ১৮৯২ সালে তিনি ইংল্যান্ডে চলে যান। এক বছর পর এলআরসিপি (এডিনবোরা), এলআরসিএস (গ্লাসগো) এবং ডিএফপিএস (ডাবলিন) ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরেন। ১৮৯৩ সালের জুলাই মাসে স্কটিশ কলেজের তিনটি ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফেরার পর সেই সময়ের পত্রপত্রিকাগুলো তাঁর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। এর মধ্যে ‘বামাবোধিনী’, ‘ইন্ডিয়ান মেসেঞ্জার’ পত্রিকা অন্যতম।
এতসব ডিগ্রি, অক্লান্ত পরিশ্রম, ত্যাগ, সমাজের রক্তচক্ষুকে ভস্ম করে দিয়েও কিন্তু কাদম্বিনী তাঁর যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি পান নি। এখানেও তাঁকে সেই বিরোধীদের চাপের মুখে পড়তে হয়। তাই ডাফরিন হাসপাতালে সিনিয়র ডাক্তারের চাকরি ছেড়ে পুরোপুরি প্রাইভেট প্র্যাকটিস শুরু করেন তিনি।
মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার কিছুদিন আগে ১৮৮৩ সালের ১২ জুন কাদম্বিনী বিয়ে করেন তাঁর প্রাক্তন শিক্ষক দ্বারকানাথ গঙ্গোপাধ্যায়কে। দ্বারকানাথ ছিলেন উদারপন্থী মানুষ। নারীশিক্ষা ও নারী স্বাধীনতার অন্যতম পৃষ্ঠপোষক এবং বিশিষ্ট সমাজ সংস্কারক। কিন্তু ব্রাহ্মমতে এই বিয়ে সমাজের অনেকেই মানতে পারেনি তখন। দ্বারকানাথের বয়স তখন ৩৯। স্কুল শিক্ষক দ্বারকানাথ ছিলেন বিপত্নীক। দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে তাঁর। একুশ বছর বয়সের বিদূষী, সুন্দরী কাদম্বিনী তাঁকে বিয়ে করায় সমাজে সমালোচনার ঝড় উঠে। অনেক ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিও বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকেননি।
কিন্তু কাদম্বিনী সব সময় ভেবেছেন, তাঁর জীবনসঙ্গী হবেন উদার মনের মানুষ। শুধুমাত্র মুখে বলা নয়, নারী স্বাধীনতাকে সত্যি সত্যি হৃদয়ে ধারণ করবেন সেই পুরুষ। আর ঠিক সেভাবেই জীবন-যাপন করবেন। এ কারণেই এই ব্যতিক্রমী সম্পর্কে বাধা পড়েছিলেন কাদম্বিনী। বিয়ে করেছিলেন দ্বারকানাথকে। দ্বারকানাথও নিজের উদারতার প্রমাণ দিয়েছিলেন বার বার।
হিন্দু রক্ষণশীল সমাজ কাদম্বিনীকে লাগাতার আক্রমণ করেছে। ১৮৯১ সালে রক্ষণশীল বাংলা পত্রিকা ‘বঙ্গবাসী’ নারী স্বাধীনতাকে কটাক্ষ করে এবং কাদম্বিনীকে সরাসরি ‘চরিত্রহীনা’ বলে। এজন্য শুধু কাদম্বিনী নয়, সমস্ত নারী সমাজের জন্য দ্বারকানাথ ১৮৯১ সালে ওই পত্রিকার বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দেন। মামলায় জিতেও যান দ্বারকানাথ এবং কাদম্বিনী। ‘বঙ্গবাসী’র সম্পাদক মহেশচন্দ্র পালকে একশো টাকা জরিমানা এবং ছয় মাসের কারাদন্ড দেয়া হয়।
কাদম্বিনী তাঁর ক্যারিয়ারের সাথে অন্য কোনো কিছুকে গুলিয়ে ফেলেননি। অটল থেকেছেন তাঁর লক্ষ্যে। দৃঢ় ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এই নারী সমাজ, সংসার, স্বামী, সন্তানের সেবা করেই শুধু জীবন উৎসর্গ করেননি। তৎকালীন রক্ষণশীল সমাজকে যে চ্যালেঞ্জ ছুড়েছিলেন তাতে জয়ী হয়েছেন। অসংখ্য বাধা বিপত্তিও তাঁর ক্যারিয়ারে কোনো ফাটল ধরাতে পারেনি। কলকাতা মেডিকেল কলেজে যারা তাঁর ডিগ্রি পাওয়ার ব্যাপারে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল তাদের দাঁতভাঙা জবাব দেন তিনি। নিজের আট সন্তানকে সৎ মেয়ে বিধুমুখী আর তাঁর স্বামীর কাছে রেখে ইংল্যান্ডে পড়তে চলে যান।
১৮৯৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি মিস প্যাশ নামে এক নারীর সঙ্গিনী হয়ে জাহাজে একা বিদেশযাত্রা করেন। লন্ডনে পৌঁছান ২৩ মার্চ। পরের বছর ফিরে এলে তাঁর ছোট ছেলে প্রভাতচন্দ্র নাকি মাকে চিনতে পারেনি। কাদম্বিনী যদিও এজন্য কেঁদেছিলেন লুকিয়ে। কিন্তু সংসার তাঁর লক্ষ্যে পৌঁছাতে কোনো বাধা হয়নি কখনো।
কাদম্বিনীর এই সৎ মেয়ে বিধুমূখী বিশিষ্ট সাহিত্যিক উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর স্ত্রী। আর এই বিধুমুখীই হলেন বাংলা সাহিত্যের বিশিষ্ট লেখিকা লীলা মজুমদারের জেঠিমা। বিধুমুখীর মেয়ে পুণ্যলতা চক্রবর্তী তাঁর ‘ছেলেবেলার দিনগুলি’ বইয়ে কাদম্বিনী সম্পর্কে লিখেছেন ‘একদিকে খুব সাহসী আর তেজস্বীনা, অন্যদিকে ভারি আমুদে মানুষ ছিলেন তিনি। যেখানে বসতেন হাসি, গল্পে একেবারে মাতিয়ে তুলতেন। সঙ্গে সঙ্গে হাতও চলত। আমরা হাঁ করে তাঁর গল্প শুনতাম আর তাঁর আঙুলগুলির খেলা দেখতাম। কী অদ্ভূতভাবে তাড়াতাড়ি কী সুন্দর লেস বোনা হচ্ছে।’ কাদম্বিনী যে পুণ্যলতার মায়ের বিমাতা একথা পুন্যলতা নিজে এবং তাঁর ভাইবোন সুকুমার, সুখলতা, সুবিনয়রা ছোটবেলায় কেউ জানতেন না।
কাদম্বিনী যে ভাবে অস্ত্রোপচার করতেন, সেই সমান দক্ষতায় লেসও বুনতে পারতেন। ঘোড়ায় টানা গাড়িতে চেপে রোগী দেখতে যাওয়ার পথটুকু লেস বুনতে বুনতে যেতেন। এই জ্যান্ত টাট্টু ঘোড়াটি তিনি উপহার পেয়েছিলেন নেপালের রাজপরিবার থেকে। একবার নেপালের রাজা জঙ বাহাদুরের মা ভীষণ অসুস্থ হয়ে পড়েন। মাকে বাঁচাতে শেষ চেষ্টা হিসেবে সেসময় চিকিৎসক কাদম্বিনীর ডাক পড়ে। কাদম্বিনীর দক্ষ চিকিৎসা আর ওষুধে রাজমাতা সুস্থ হলেন। তাই রাজমাতাকে সারিয়ে তোলার পুরস্কার হিসেবে তিনি এই সাদা রঙের জ্যান্ত টাট্টু ঘোড়াসহ প্রচুর অর্থ, দামি পাথর বসানো সোনার গহনা, মুক্তার মালা, রূপার বাসন, তামা-পিতল-হাতির দাঁতের জিনিসপত্র উপহার হিসেবে পান।
কাদম্বিনী ছিলেন কংগ্রেসের প্রথম নারী বক্তা। ১৮৯০ সালে তিনি কলকাতা কংগ্রেসের ষষ্ঠ অধিবেশনে বক্তব্য দেন। ১৮৮৯ সালে বোম্বে শহরে কংগ্রেসের পঞ্চম অধিবেশনে প্রথম যে ছয়জন নারী প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছিলেন কাদম্বিনী ছিলেন তাঁদের অন্যতম। তিনি গান্ধীজীর সহকর্মী হেনরি পোলক প্রতিষ্ঠিত ট্রানসভাল ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশনের প্রথম সভাপতি এবং ১৯০৭ সালে কলকাতায় অনুষ্ঠিত মহিলা সম্মেলনের সদস্য ছিলেন। ১৯১৪ সালে তিনি কলকাতায় ব্রাহ্ম সমাজের অধিবেশনে সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯২২ সালে বিহার ও উড়িষ্যার নারীশ্রমিকদের অবস্থা তদন্তের জন্য সরকার কবি কামিনী রায় ও ডা. কাদম্বিনীকে নিযুক্ত হয়েছিলেন। কাদম্বিনী চা বাগানের শ্রমিকদের শোষণের বিরুদ্ধে সব সময় সচেতন ছিলেন।
জীবনের শেষ দিনও শত প্রতিকূলতার দ্বার ভেঙ্গে নিজেকে জয় করেছিলেন তিনি। সময়কে জয় করেছিলেন ডা. কাদম্বিনী গাঙ্গুলী। প্রচন্ড আত্মতৃপ্তি নিয়ে বাড়ি ফিরেছিলেন শেষ দিন। এত বাধা পেরিয়ে যিনি এসেছিলেন নতুন ইতিহাস রচনা করতে করতে, তিনি নিজের জীবনে পরম তুষ্টি নিয়েই পরপারে চলে যান।
১৯২৩ সালের ৩রা অক্টোবর। হাসপাতালে একটি জটিল অস্ত্রোপচার সেরে দুপুরে বাড়ি ফেরেন ক্লান্ত কিন্তু তৃপ্ত কাদম্বিনী। বাড়ি ফিরে পুত্রবধূ সরলাকে তিনি বলেছিলেন ‘আজকের অপারেশন দেখলে আর কেউ বলতে পারবে না, ডাক্তার গাঙ্গুলীর অপারেশনের হাত নেই।’
সরলাকে খাবার দিতে বলে স্নান করতে যান কাদম্বিনী। অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়। কিন্তু তিনি ফেরেন না! পরে দোতলায় গিয়ে দেখা যায় কাদম্বিনীর সেরিব্র্যাল অ্যাটাক হয়েছে। আর চোখ খোলেননি কাদম্বিনী। সে সময় তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৬৩। তাঁর হাতব্যাগে পাওয়া যায় শেষ রোগী দেখার ভিজিট ৫০ টাকা। এই টাকা তাঁর শেষকৃত্যের কাজে লাগানো হয়েছিল।
যেসময় ভারতবর্ষের নারীরা জানতেন না, চারদেয়ালের চৌহদ্দি পেরিয়ে বাইরেও একটা জগত আছে। নারীদেরও আছে স্বাধীনভাবে বাঁচার অধিকার। মানবসেবার মতো মহান ব্রত, ডাক্তারির মতো কঠিন বিষয় পড়ার ক্ষমতাও মেয়েরা রাখে। সহমরণের মতো অমানবিক নিয়ম থেকে আইনের মাধ্যমে রক্ষা পেয়েই যখন তারা নিজেদের সৌভাগ্যবান ভাবা শুরু করেছেন ঠিক সেই সময় প্রাচীনপন্থী রক্ষণশীলদের প্রবল বিরোধিতার মুখে ঝামা ঘষে বাইরের জগতে পা রাখা নারী কাদম্বিনী। যিনি বাংলার তাবৎ নারী চিকিৎসকদের অগ্রদূত। আজ ১৮ জুলাই তাঁর জন্মদিন। এদেশে এরকম আরো বহু কাদম্বিনী জন্মাবে, তাঁর জন্মদিনে এরকম প্রত্যাশা আমরা করতেই পারি।
আর আজকের কাদম্বিনীরা যারা প্রথমসারির যোদ্ধা হিসেবে লড়ে যাচ্ছেন এই মুহূর্তে, পৃথিবীর অসুখ সারিয়ে তোলার মহান ব্রত নিয়ে। সেবা দিতে গিয়ে জীবনকে তুচ্ছ করছেন, তারা সকলে ভাল থাকুন, থাকুন নিরাপদ।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ঋণস্বীকার:
১. মহিলা ডাক্তার ভিনগ্রহের বাসিন্দা: চিত্রা দেব
২. ছেলেবেলার দিনগুলি: পুন্যলতা চক্রবর্তী
৩. প্রথম মহিলা ডাক্তার: মালা দত্ত রায়
৪. বাংলার নারী প্রগতির পথিকৃৎ দ্বারকানাথ ও কাদম্বিনী গঙ্গোপাধ্যায়-পূরবী বসু, সংস্কৃতির মাসিক পত্রিকা শব্দঘর ঈদসংখ্যা ২০১৬ http://shabdaghar.com/?p=87
৫. Kadambini Ganguly, Woman of Substance, The Times of India, Jul 18, 2011.
৬. A glimpse on the life of Kadambini Ganguly, first Indian female physician, আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন সংস্করণ, ১১ মে ২০১৯ https://www.anandabazar.com/supplementary/patrika/a-glimpse-on-the-life-of-kadambini-ganguly-first-indian-female-physician-1.990723
৭. Some unknown stories about first South Asian female physician Kadambini Ganguly, আনন্দবাজার পত্রিকা অনলাইন সংস্করণ ১৫ জুলাই ২০১৭ https://www.anandabazar.com/supplementary/patrika/some-unknown-stories-about-first-south-asian-female-physician-kadambini-ganguly-1.642506
৮. অনন্যা কাদম্বিনী-সুবীরকুমার চট্টোপাধ্যায়