নজরদারিতে সাবরিনা-আরিফের ঘনিষ্ঠরা, শনাক্ত দুই ডজন
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০২:৩৬ পিএম, ১৯ জুলাই ২০২০ রবিবার
ছবি: সংগৃহীত
ডা. সাবরিনা ও আরিফের মোবাইল ফোনের কললিস্টের সূত্র ধরে গোয়েন্দারা প্রায় দুই ডজন সন্দেহভাজনকে শনাক্ত করেছেন এবং নজরদারিতে রেখেছেন। তাদের ব্যাকগ্রাউন্ডসহ নানা তথ্যউপাত্ত যাচাই করা হচ্ছে। তাদের গতিবিধিও পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তাদের মধ্যে ওভাল গ্রুপ ও জেকেজির সাত পরিচালকসহ স্বাস্থ্য অধিদফতর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, আরিফ ও সাবরিনার বন্ধু ও বান্ধবীও রয়েছেন।
করোনা ভাইরাস পরীক্ষার রিপোর্ট জালিয়াতির ঘটনায় জেকেজি হেলথ কেয়ারের কথিত চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা ও তার স্বামী আরিফ চৌধুরীকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদে ধীরে ধীরে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বেরিয়ে আসছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম প্রকাশ করছেন না গোয়েন্দারা। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। আরেকটি সূত্র জানায়, শুক্রবার মধ্যরাতে রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো. শাহেদ এবং জেকেজির ডা. সাবরিনাকে মুখোমুখি করা হয়েছিল। তবে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায়নি।
জানা গেছে, জেকেজির কর্মীদের বেতন মিটিয়ে ভুয়া টেস্টের নগদ সাড়ে তিন কোটি টাকা বিভিন্নজনের কাছে রেখেছেন আরিফ ও ডা. সাবরিনা। তাদেরও শনাক্ত করেছেন গোয়েন্দারা। ডা. সাবরিনা ও আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদে গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন- সরকারের করোনা ফান্ডের ৫০০ কোটি টাকার দিকে নজর পড়েছিল আরিফ ও সাবরিনার।
ওই ফান্ড থেকে টাকা হাতিয়ে নিতে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়ের চার কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করেছিলেন তারা। কর্মকর্তাদের নামও তারা জানিয়েছেন। সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ পাওয়ার পর তাদেরও ডিবি জিজ্ঞাসাবাদ করবে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, ডা. সাবরিনার ফেসভ্যালুকে পুঁজি করেই চলছিল জেকেজির প্রতারণামূলক কর্মকাণ্ড। শুক্রবার রাতেও ডা. সাবরিনা ও আরিফকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তবে তারা মুখ খুলতে চাইছেন না।
শনিবার দুপুরে সাংবাদিকদের সঙ্গে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার মো. আবদুল বাতেন কথা বলেন। ডা. সাবরিনার অনিয়মের বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কোনো কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তদন্তের সঙ্গে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে তাদেরই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
তিনি বলেন, ডা. সাবরিনা মূলত চিকিৎসক হিসেবে নিজের ফেসভ্যালু এবং পরিচিতিকে পুঁজি করে প্রতারণা করেছেন। নিশ্চয় কোনো না কোনো জায়গা থেকে ডা. সাবরিনা সহযোগিতা পেয়েছেন উল্লেখ করে পুলিশ কর্মকর্তা বাতেন বলেন, আমরা তার বিষয়ে যে তথ্য পেয়েছি সেসব স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়ে পাঠাব।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, নিজের নামে নিবন্ধন করা দুটি সিমকার্ড থাকলেও ডা. সাবরিনা সেগুলো ব্যবহার না করে এক রোগীর নামে নিবন্ধন করা সিমকার্ড ব্যবহার করতেন। অন্যের সিমকার্ড ব্যবহার করে প্রতারণা আরও বড় ধরনের অপরাধ। কারণ এ ধরনের সিম কার্ড ব্যবহার করে তার দায় অন্যের ওপর চাপানো যায়।
শনিবার মিন্টু রোডে ডা. সাবরিনার গাড়িচালক রফিকুল জানান, আরিফ চৌধুরীর সঙ্গে দাম্পত্য কলহের কারণেই তার (সাবরিনা) এ পরিণতি। তিনি বলেন, ‘আরিফ চৌধুরীর সঙ্গে ঝগড়ার একপর্যায়ে ডা. সাবরিনা স্বাস্থ্য অধিদফতরে গিয়ে এক বড় কর্মকর্তাকে জানিয়ে আসেন, তিনি আর আরিফ চৌধুরীর সঙ্গে নেই। বিষয়টি সাবরিনা তার সঙ্গে শেয়ার করেন।’
প্রতিদিনই ডা. সাবরিনার জন্য খাবার ও জামা কাপড় নিয়ে মিন্টু রোডে যান রফিকুল। কিন্তু তার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাননি একদিনও। রফিকুল আরও বলেন, ‘ডা. সাবরিনার বাবা অসুস্থ। আর দেখাশোনা করার মতো তার কোনো আত্মীয়-স্বজন নেই।’
অপর একটি সূত্র জানায়, শুক্রবার মধ্যরাতে রিজেন্ট হাসপাতালের মালিক মো. শাহেদ এবং জেকেজির ডা. সাবরিনাকে মুখোমুখি করা হলে তাদের দু’জনের মুখেই স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রভাবশালী এক কর্মকর্তার নাম উঠে আসায় দু’জনকে সামনাসামনি করে ওই কর্মকর্তা সম্পর্কে জানার চেষ্টা করেন গোয়েন্দারা। এ সময় সাবরিনা জানান, আরিফের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হলে স্বাস্থ্য অধিদফতরে গিয়ে তিনি ওই কর্মকর্তাকে অনিয়ম সম্পর্কে জানিয়েছেন। তাকে বলেছিলেন, এখন থেকে আমি (সাবরিনা) আর আরিফের সঙ্গে নেই। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, যা হওয়ার তো হয়েই গেছে, এখন আর মাথা গরম করা যাবে না। তবে শাহেদ কি বলেছেন, সে বিষয়ে কিছু বলতে চায়নি সূত্রটি।
করোনা জালিয়াতির আইডিয়া শাহেদের কাছ থেকে পেয়েছেন ডা. সাবরিনা! গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মো. শাহেদের সঙ্গে জেকেজির চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা চৌধুরীর ঘনিষ্ঠতা ছিল। তারা পরস্পরকে আগে থেকে চিনতেন। তাদের জানাশোনা ছিল দীর্ঘদিনের। নিয়মিত তারা পার্টিতে অংশ নিতেন। সেই পার্টিতে চলত ডিজে-মাদকতা। শাহেদ-সাবরিনা ছাড়া সেই পার্টিতে সমাজের আরও অনেক চেনামুখ অংশ নিতেন। গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদে শাহেদ ও সাবরিনা একে অপরকে চেনা-জানার কথা অকপটে স্বীকার করেছেন।
-জেডসি