ছড়ার ছন্দে বঙ্গবন্ধু: আইরীন নিয়াজী মান্না
আইরীন নিয়াজী মান্না
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০২:১৯ এএম, ১৫ আগস্ট ২০২০ শনিবার
ছড়ার ছন্দে বঙ্গবন্ধু: আইরীন নিয়াজী মান্না
১৫ আগস্ট উপলক্ষে কিশোর লেখার পাঠকদের জন্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মজিবুর বহমানকে নিবেদিত আইরীন নিয়াজী মান্নার কয়েকটি ছড়া উপস্থাপন করা হলো।
সেই রাজপুত্র
ছেলে : কোন দেশের সেই রাজপুত্র কোন সে মা গো ছেলে,
যার জন্য চোখ ছলোছল পনেরো আগস্ট এলে।
তোর কেনো বল্ চোখ ভরে যায় টলোমলো জলে!
চোখের জল আড়াল করিস মিথ্যে কিসের ছলে?
আমায় তুই বল্ মা গো সেই রাজপুত্রের কথা,
দোহাই এবার ভাঙ মা তোর কথার নিরবতা।
মা : সে এক রাজপুত্র, দু’চোখ ভরা স্বপ্ন ছিলো যার,
সোনার বাংলা গড়বে এবার আশা ছিলো তার।
সেই সে রাজা দিলেন যে দিন স্বাধীনতার ডাক,
বীর বাঙালি উঠলো জেগে, পাককিরা অবাক!
মুক্ত বাতাস, নিজের ভূমি, থাকবো সবাই সুখে,
এমন সময় বর্গিরা তো আসলো হঠাৎ রুখে।
রাজপুত্র অভয় দিলেন দেশবাসীদের ডেকে।
বজ্রকণ্ঠে সবার চোখে এক স্বপ্ন দিলেন এঁকে!
উঠলো জেগে দেশের মানুষ, উঠলো জেগে সব
এবার বাংলা স্বাধীন হবে, উঠলো কলরব।
ছেলে : তারপর আর কী হলো মা, বল্ না আমায় বল্,
কোনো ঝরছে অমন করে তোর চোখেরই জল!
কোথায় গেলেন সে রাজপুত্র, কোথায় তিনি আজ?
কেমন ছিলো বল্ মা গো তার কথার কারুকাজ।
মা : বলবো কি আর রাজপুত্রের বীরত্বের সে কথা,
রূপকথাকেও হার মানাবে সেই অমরগাঁথা!
ঝাঁপিয়ে পড়লো যুদ্ধে সবাই রাজপুত্রের ডাকে,
পাক প্রশাসন রাজপুত্রকেই বন্দি করে রাখে!
একাত্তরে উত্তাল দেশ, সব স্বাধীন হবে ঠিক,
হঠাৎ করে বোমার ঘায়ে ভাঙলো চতুরদিক।
পঁচিশ মার্চ মধ্যরাতেই হামলা করলো তারা,
ত্রিশ লাখ শহীদ হলেন, কেউ বা স্বজনহারা।
নয়, নয়টি মাস যুদ্ধ শেষে ডিসেম্বরের ষোলো,
সোনালি এক বাংলাদেশের জন্ম সেদিন হলো।
তারপর কি হলো রে খোকন জানিস নাকি তুই?
অমন কথা কেমন করে তোমায় খোকন কই!
সেই যে রাজা, রাজপুত্র যিনি দিলেন স্বাধীনতা,
হঠাৎ কারা ভুলে গেলো তার অবদানের কথা!
দুষ্টু লোকে মারলো তাকে, ঠিক করলো বুকে গুলি,
এমন কথা কার কাছে কই, কেমন করে ভুলি!
ছেলে : কোথায় মা ঘুমিয়ে আছেন বাংলাদেশের পিতা?
চোখের জল মুছে এবার বলবি আমায় কি তা?
মা : গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, সবুজ-শ্যামল গাঁয়,
জাতির পিতা শেখ মুজিবুর একলা যে ঘুমায়।
স্বাধীনতার শপথ
অত্যাচারি শাসক ওরা ভীনদেশীদের দল
ভেবেছিলো বীর বাঙালির বাহুতে নেই বল
বাংলা মাকে গ্রাস করতে করলো কত ছল।
সাত মার্চে, একাত্তরে শেখ মুজিবের ডাকে
ছেলে-বুড়ো কেউ কি আর বন্দি ঘরে থাকে?
শহর ছেড়ে ছড়িয়ে পড়ে হাজার নদীর বাকে।
যার যা আছে তাই নিয়ে নামলো পথে সবাই
ভীনদেশী অই শত্রুদের করতে হবে জবাই
স্বাধীনতা আনতে হবে শপথ নিলো সবাই।
মুজিব তোমার জন্য
ধন্য মুজিব ধন্য
সোনার বাংলা স্বাধীন হলো
শুধুই তোমার জন্য।
চোখে তোমার স্বপ্ন ছিলো,
বুকটি ভরা আশা,
দেশের প্রতি ছিলো তোমার
অগাদ ভালোবাস।
একাত্তরের সাত মার্চ
তুমি দিলে ভাষণ,
শত্রুপক্ষ কাঁপলো ভয়ে
নড়লো তাদের আসন।
বজ্রকন্ঠে অভয় দিয়ে
স্বাধীন করলে দেশ;
সবার মুখে ফুটলো হাসি
দূঃখ হলো শেষ।
পঁচাত্তরের মধ্য আগস্ট
তোমার বুকেই গুলি!
এমন কথা কার কাছে কই
কেমন করে ভুলি।
স্মৃতি’৭১
এক যে ছিলেন বাঁশিঅলা
হাতে নিয়ে বাঁশি
বলেন ডেকে আমরা সবাই
দেশকে ভালোবাসি।
একাত্তরের সাত মার্চ
দিলেন তিনি ভাষণ,
পাক প্রশাসন বুঝলো এবার
টললো তাদের আসন।
একাত্তরের ছাব্বিমে মার্চ
ঝড়লো বুকের রক্ত,
ব্যাপার যে কি ঘটলো হঠাৎ
বোঝাই হলো শক্ত।
রাতের আলোয় অস্ত্র হাতের
উঠলো করে চিক্চিক্,
স্বাধীন হবে জন্মভূমি
বুঝলো সবাই ঠিকঠিক।
তিরিশ লাখ শহীদ হলো
পঙ্গু হাজার প্রাণ,
জীবন দিয়ে রাখলো ছেলে
মাতৃভূমির মান।
ন’মাস হলো যুদ্ধ করা
মিটলো মনে জ্বালা,
বীর বাঙালী পড়লো গলায়
স্বাধীনতার মালা।
টুঙ্গিপাড়ার ছেলে
শ্যামল গাঁয়ের একটি ছেলের
গল্প বলি শোনো,
একটুও নয় মিথ্যে কথা
রুপকথা নয় কোনো।
তার দু’চোখে স্বাধীনতার
স্বপ্ন ছিলো আঁকা,
তার হৃদয়ে সোনার বাংলা
যত্নে ছিলো রাখা।
সেই ছেলেটি ডাকলো যখন
উঠলো জেগে সব
চারদিকে যে উঠলো মাতম
স্বাধীনতার রব।
শেখ মুজিবুর সেই ছেলেটি
স্বাধীনতার প্রাণ,
একুশ বছর যায়নি বলা
সেই ছেলেটির দান।
টুঙ্গিপাড়ার সেই যে কিশোর
জাতির সেযে পিতা,
স্বাধীনতার স্রষ্টা পুরুষ
ভুলতে পাড়ি কি তা?
সেই সে বালক
মধুমতি নদীর পাড়ে ছোট্ট একটি গ্রাম,
বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে গেছে সেই গাঁয়েরই নাম।
সবুজ-শ্যামল সেই গাঁয়েরই ছোট্ট একটা বালক,
সবুজ পথে ঘুরতে গিয়ে আনতো পাখির পালক।
গাঁয়ের পথে ঘুরে ঘুরে দেখতো লোকের ব্যথা
অবুঝ মনে কষ্ট হতো জমতো নানান কথা!
দুখির দুঃখে কাঁদতো সে যে কষ্ট পেতো কত,
মনের মাঝে স্বপ্ন যত দুলতো অবিরত।
প্রতিবাদী বালক দেখে ভীনদেশীদের দল
সোনার দেশকে কবজা করতে করছে নানা ছল।
ব্রিটিশ গেলো ভাঙলো ভারত, হলো পাকিস্তান
সোনার বাংলা দখল করে করলো যে শ্নশান।
সেই যে বালক প্রতিবাদী কষ্ট যে তার মনে
স্বাধীন করতে মাতৃভূমি স্বপ্নের জাল বোনে।
জেল ও জুলুম অত্যাচার আর মৃত্যুকে নেই ভয়
গাঁয়ের বালক উঠলো ফুঁসে; জয় হবে নিশ্চয়।
সেই সে বালক ছোট্ট বালক জাতির সেতো নেতা
তার ডাকেতে জাগলো সবাই ভাঙলো নীরবতা।
দেশ স্বাধীনের স্বপ্ন মনে আঁকলো সবাই যখন
সেই নেতা এক ঐতিহাসিক ভাষণ দিলেন তখন।
রেসকোর্সে সাত মার্চে, হাজার লোকের ভিড়
কালো কোর্টে নেতা এলেন সৌম্য এবং ধীর।
হাত উঁচিয়ে বীরদর্পে দিলেন সে কি ভাষণ!
পাকপ্রশাসক বুঝলো এবার নড়লো তাদের আসন।
প্রিয় নেতা স্বাধীনতার দেন ঘোষণা যেই
সাহস বুকে যুদ্ধে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে সেই।
মুক্ত হলো জন্মভূমি; স্বাধীন হলো দেশ
জন্ম নিলো সোনার বাংলা; মুক্ত বাংলাদেশ।
১৫ আগস্ট ২০২০