লিসা কার্টিসের ঢাকা সফরে গুরুত্ব পাবে রাশেদ চৌধুরীর প্রত্যাবাসন
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত : ০৬:৫০ পিএম, ২৮ জুলাই ২০১৭ শুক্রবার
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট ও ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সিনিয়র ডিরেক্টর লিসা কার্টিসের ঢাকা সফরের সময়ে বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি জোরালোভাবে উপস্থাপন করবে বাংলাদেশ। লিসা কার্টিস দু’দিনের আনুষ্ঠানিক সফরে রবিবার প্রথম ঢাকায় আসছেন। রাজনৈতিকভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত লিসাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠদের একজন হিসেবে মনে করা হয়।
সফরের সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহি চৌধুরী, পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হকের সঙ্গে লিসার সাক্ষাৎ করার কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, এই প্রথমবারের মতো ট্রাম্প প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনা হচ্ছে এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্ক নির্ধারণের ক্ষেত্রে এ সফর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সব বিষয় নিয়ে আলোচনার কথা থাকলেও লিসা ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের সিনিয়র ডিরেক্টর হওয়ার কারণে নিরাপত্তা বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব পাবে। এছাড়া বাংলাদেশের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীর প্রত্যাবাসনের বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরা হবে। বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীর প্রত্যাবাসন বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি রাশেদ চৌধুরী দুই দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। বাংলাদেশ দীর্ঘদিন থেকে তার প্রত্যাবাসনের জন্য ওয়াশিংটনকে অনুরোধ জানিয়ে আসছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, আমরা রাশেদ চৌধুরীর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনকে অবহিত করেছি এবং বিষয়টি তাদের বিচার বিভাগের বিবেচনাধীনে আছে বলে জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আরেক খুনি একেএম মহিউদ্দিন আহমেদের রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ নাকচ করে দিলে ২০০৭ সালে তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রত্যাবাসন করা হয়। বিচার বিভাগের রায়ে তাকে একজন সন্ত্রাসী (টেরোরিস্ট) হিসেবে অভিহিত করা হয়।
রায়ে আরও বলা হয়, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। ওই কর্মকর্তা বলেন, মহিউদ্দিন আহমেদ ও রাশেদ চৌধুরী একই অপরাধ করেছেন এবং আমরা যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনকে মহিউদ্দিন আহমেদের রায়ের উদ্ধৃতি দিয়ে বারবার বলেছি, রাশেদ চৌধুরীও তাদের বিচার বিভাগের মত অনুযায়ী একজন টেরোরিস্ট এবং যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। রাশেদ চৌধুরীর প্রত্যাবাসন বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে একটি গুণগত পরিবর্তন আনবে বলে মনে করেন ওই কর্মকর্তা। নিরাপত্তা সহযোগিতা বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা সহযোগিতা অনেক পুরনো হলেও গত বছর হলি আর্টিজানের ঘটনার পরে এর ব্যাপ্তি ও গভীরতা বেড়েছে এবং যুক্তরাষ্ট্র এ বিষয়ে সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আরেকটি সূত্র জানায়, বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র প্রশিক্ষণ, সরঞ্জামাদি, তথ্য ও অন্যান্য বিষয়ে বাংলাদেশকে সহায়তা দিয়ে থাকে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান তদন্ত সংস্থা এফবিআই এর একটি অফিস তাদের ঢাকা দূতাবাসে আছে।
তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে কাজ করছে এবং উগ্র সহিংসতাবাদ মোকাবিলায় আমাদের সহযোগিতা সামনের দিনগুলোতে আরও বাড়তে পারে। রাজনৈতিক সম্পর্ক ২০০৯ সালে বাংলাদেশে ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ এবং ডেমোক্র্যাট প্রার্থী বারাক ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। গত আট বছর ধরে দু’দেশ সন্ত্রাসবাদ দমনে একসঙ্গে কাজ করলেও গ্রামীণ ব্যাংকের ড. ইউনূস, পদ্মা ব্রিজ, জিএসপিসহ আরও কয়েকটি বিষয় নিয়ে মতদ্বৈততা ছিল।
সরকারের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, যেকোনও দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে মতৈক্য ও মতবিরোধ থাকবে এবং আমাদের চেষ্টা থাকবে মতৈক্যের ক্ষেত্র বাড়ানো এবং মতবিরোধ কমানো। লিসা কার্টিসের সফরের সময়ে আগামী বছরগুলোর জন্য সহযোগিতার নতুন ক্ষেত্র খুঁজে বের করা এবং আগের বিরোধ কমিয়ে আনার দিকে নজর দেওয়া হবে বলে তিনি জানান। ট্রাম্প প্রশাসনে যোগদানের আগে লিসা কার্টিস হেরিটেজ ফাউন্ডেশনে সিনিয়র রিসার্চ ফেলো হিসেবে ২০০৬ সালে যোগদান করেন। হেরিটেজ ফাউন্ডেশনে যোগদানের আগে তিনি ১৬ বছর যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ে কাজ করেছেন। তিনি সিএনএন, ফক্স নিউজ চ্যানেল, বিবিসিসহ বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে পরিচিত মুখ।