স্বপ্নবাজ তরুণী উদ্যোক্তা মিমি এখন লাখপতি
অনলাইন ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০২:৪১ পিএম, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ রবিবার
কামরুন নাহার মিমি
কর্মবিমুখী শিক্ষায় শিক্ষিত অসংখ্য বেকারের মধ্যে চাকরি এখন সোনার হরিণ। এ অবস্থায় অনেকেই সাহসী যুবক বেকারত্বের বিষবাষ্প থেকে বেরিয়ে নিজেকে মুখোমুখি করেন উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চ্যালেঞ্জে। তেমনই এক স্বপ্নবাজ তরুণী উদ্যোক্তা কামরুন নাহার মিমি।
মিমি কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজ (কুভিক) এর ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। কৃষক বাবার বড় মেয়ে সে। বড় ভাই না থাকাতে একমাত্র আয়ের মানুষ মিমির বাবা। ছোটবেলা থেকেই আত্মবিশ্বাসী মিমি শুধুই আত্মনির্ভরশীল হওয়ার স্বপ্ন দেখে আসছিল।
২০১৬ সালে মিমি কুমিল্লার শহরে যান পড়াশোনার জন্য। কুমিল্লায় এসেই শুরু করেন টিউশন ও প্রাইভেট পড়ানো। টিউশনের টাকাতেই চলতো তার পড়াশোনা। এভাবেই মিমি আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেন।
হঠাৎ একদিন বাসায় সবার সাথে টেলিভিশন দেখছিলেন ঠিক তখনই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি কথা তার কানে আসে। আর তা হলো লেখাপড়া শেষে চাকরির পিছনে না দৌড়ে উদ্যোক্তা হওয়ার আহবান।
এর পরেই আসে উদ্যোক্তা হওয়ার চিন্তা। তারপর বন্ধুদের মাধ্যমে যুক্ত হয় উই নামক উই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম। কর্মজীবন শুরু করার লক্ষ্যে ২০২০ এর এপ্রিলে কুমিল্লার খাদি থ্রি পিস ও পাঞ্জাবি নিয়ে শুরু ই-কমার্স উদ্যোগ ‘পল্লীর হাঁট’।
প্রাচীনকাল থেকেই এ উপমহাদেশে হস্তচালিত তাঁতশিল্প জগদ্বিখ্যাত। দেশের চাহিদা মিটিয়ে সবসময় এ তাঁতের কাপড় বিদেশেও রপ্তানি হয়। কুমিল্লার খাদি কাপড়ের কদর আজও বিশ্বজুড়ে।
মিমির উদ্যোক্তা হওয়ার পিছনে এ চিন্তাগুলোই কাজ করছিল। শূন্য থেকে মিমি কিভাবে লাখপতি হলেন এ প্রসঙ্গে মিমি বলেন, সব সময়ই ইচ্ছা ছিলো নিজের জন্য নিজেই কিছু করবো। আমার বন্ধু কারিমা আক্তার রুমি আমাকে এ পথ দেখায়। সে আমাকে একটা ফেইসবুক গ্রুপে জয়েন্ট করায়। গ্রুপটাতে অনেক উদ্যোক্তা মেয়েকে দেখি।
তিনি বলেন, এ সময় আমার খাদি নিয়ে কাজ করার চিন্তা আসে। পরে আমি আমার ছোট কাকার সাথে বিষয়টা শেয়ার করি। কাকা আমাকে মানসিক ভাবে আশ্বস্ত করে। পরে কাকাই আমাকে তাঁতি বাড়িতে নিয়ে যান।
মিমি বলেন, প্রথমে আমি পাঞ্জাবি আর থ্রি-পিস নিয়ে কাজ শুরু করি। পরে শাড়ি ও বিভিন্ন পণ্য যুক্ত করি। এভাবেই আমার শুরু। ই-কমার্স করার জন্য নির্দিষ্ট সময় ও অফিসের প্রয়োজন নেই। সবদিক থেকেই পরে এই ই-কমার্স পেশা আমার স্বপ্ন থেকে সত্যিতে পরিণত হয়।
মিমি বলেন, উদ্যোক্তা জীবন মানেই চ্যালেঞ্জে ভরপুর। আর নারী হলেতো কথাই নেই। কিন্তু আমার বিষয়টা সম্পূর্ণ ভিন্ন। কেননা আমাকে পরিবার থেকে সাপোর্ট দিয়েছে। তেমন কোন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়নি। এসব ক্ষেত্রে আমি বেশি সাপোর্ট পেয়েছি আমার ছোট কাকা মোঃ সোহেলের কাছ থেকে।
তিনি বলেন, কিন্তু ঝামেলায় পড়েছি প্রোডাক্ট পাঠানো নিয়ে। লকডাউনের মাঝে প্রতি সপ্তাহে ৩/৪ বার গ্রামের বাড়ি দেবিদ্বার উপজেলা থেকে কুমিল্লা যেতে হতো শুধু কুরিয়ার করার জন্য। কারণ আশাপাশে কোন কুরিয়ার ছিল না। যেহেতু শুরু থেকে প্রোডাক্ট প্যাকেজিং, কাস্টমার, ডেলিভারি সবকিছু একা ম্যানেজ করতে হয়েছে, সেক্ষেত্রে আমার উদ্যোক্তা জীবন ভীষণ চ্যালেঞ্জিং ছিলো। মূলত আমার কাজের প্রতি আন্তরিকতা আর ভালোবাসাই এসব চ্যালেঞ্জ জয় করতে সাহায্য করেছে।
মিমি আরও বলেন, উইমেন্ড অ্যান্ড ই-কমার্স ফোরাম (উই) দেশী পণ্যের সবচেয়ে বড় প্লাটফর্ম। আমরা যারা দেশী পণ্য নিয়ে কাজ করি তাদের জন্য উই ফেসবুক গ্রুপ একটা আত্মবিশ্বাসের জায়গা।
তিনি বলেন, উইতে এসে মাত্র ৫ মাসে আমি যে নাম ও সম্মান পেয়েছি তা আমাকে আরো পাঁচ বছর এগিয়ে নিয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা করোনা ভাইরাসের প্রভাবে ব্যবসা গুটিয়ে বসে থাকাতে হতো সেখানে উইতে এক্টিভ থেকে লাখ টাকা সেল পেয়েছি।
ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা জানিয়ে মিমি বলেন, পল্লীর হাঁট নিয়ে আমার একটা লক্ষ্য আছে। আমার নিজেই একটা শো-রুম করার চিন্তা আছে। তবে সেটা আরও সময় লাগবে। মূল কথা হলো কুমিল্লার খাদি নতুন ডিজাইনে বিশ্ব দরবারে ছড়িয়ে দিতে চাই।
লাখপতি হওয়ার বিষয়ে মিমি বলেন, আমি সত্যিই লাখপতি হবো এমন আশায় এ কাজটা শুরু করিনি। কিন্তু উই গ্রুপ, আমার বন্ধুদের সাহায্য আর আমার কাকার সহযোগীতায় আজ এতটুকু এসেছি। এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখের বেশি টাকার পণ্য বিক্রি করেছি। তাদের সবাইকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই।
সূত্র: বাসস