ঢাকা, রবিবার ২৪, নভেম্বর ২০২৪ ১৩:২৫:১৩ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

এখনকার ছেলেমেয়েরা কি নোংরা শব্দের ব্যবহারকে স্মার্টনেস মনে করে

ঈহিতা জলিল

উইমেননিউজ২৪.কম

প্রকাশিত :

এখনকার ছেলেমেয়েরা কি নোংরা শব্দের ব্যবহারকে স্মার্টনেস মনে করে? হয়তো আগেও ছিলো আমি খেয়াল করিনি! গত কয়েকদিন ধরে খেয়াল করলাম সদ্য স্কুল-কলেজ পেরুনো ছেলেমেয়েরা যে ভাষায় এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে সম্বোধন করছে, আর নিজেকে তুলে ধরছে। জাস্ট কল্পনা করা যায়না!

যারা এমন করছো তাদের বলছি এটাকে আর যাই হোক স্মার্টনেস বলে না। তোমরা হয়তো ভাবছো ভাষার এই প্রয়োগগুলো তোমাকে রাফ এন টাফ অর কুল লুক দিবে। এটা একদমই ভুল ধারনা। এতে যেটা হবে কেউ হয়তো তোমাদের সাথে সাময়িক টাইম পাস করবে কিন্তু সারাজীবনের জন্য তোমাদের সাথে কোন সম্পর্কেই জড়াবেনা।

ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা, তোমাদের জন্য কিছু গাইড লাইন থাকলো:

প্রথমেই আমার ছোটবেলার একটা ঘটনা বলি। আমি কবে থেকে বইমেলায় যাওয়া শুরু করি আমার মনে নেই। আব্বুর সাথেই যেতাম সবসময়। একবারের একটা হালকা স্মৃতি মনে পরে বোধহয় পহেলা ফাল্গুন ছিলো কারন অনেক হলুদ শাড়ি পড়া, খোঁপায় গাঁদা ফুল জড়ানো মেয়েরা ছিলো। আমি আব্বুর হাত ধরে হাঁটছিলাম আর শাড়ি পড়া মেয়েগুলো, পান্জাবী পড়া ছেলেগুলো কেউ আমার ঝুঁটি ধরে টানছিলো, কেউবা আমার গাল! কিছু বই আমার মনের ঠিক মাঝখানে গেঁথে আছে। কালিপদ রায়ের ছোটদের মুক্তিযুদ্ধ। আমি সম্ভবত তখন ক্লাস থ্রী তে পড়ি। ঐ বইটা মুক্তিযুদ্ধকে আমার ভিতরে এমনভাবে বসিয়ে দিয়েছে যে আমি আজো শিহরিত হই। বইটা আমি হারিয়ে ফেলেছি। আমার ছেলের জন্য আমি এখনো খুঁজি কিন্তু পাইনা। শাহরিয়ার কবিরের বই প্রথম পড়ি ক্লাস ফোরে। আলোর পাখিরা। বাবরি মসজিদকে কেন্দ্র করে যে দাঙ্গা হয়েছিলো তার উপর বইটা। নারায়ে তাকবীর আল্লাহু আকবর, হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই ভায়ে ভায়ে ভেদ নাই, এই স্লোগানগুলোর সাথে আমার পরিচয় ঐ বইটি থেকেই। আমার স্কুলে তখন প্রতিবছর বইমেলা হতো। আব্বু আমাকে বই কিনে দেওয়ার সাথে সাথে আম্মুর জন্যও বই কিনতো। আর ঐ বইগুলো চুরি করে আমি পড়ে ফেলতাম। এভাবেই রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতা পড়ে ফেলেছিলাম ক্লাস ফাইভে থাকতেই। কি বুঝেছিলাম জানিনা তবে অমিত, লাবণ্য আর কেটি (কেতকী) যে আমার মনে বাস করা শুরু করেছে তা বেশ বুঝতে পারতাম!! তো, চোরের দশদিন আর গৃহস্থ্যের একদিন! চোখের বালি পড়া শুরু করে আম্মু বড়মামীর সাথে গল্প করছিলো। বড় মামী বলছিলো, আচ্ছা আপা, আপনার পড়া হলে আমিও পড়বো। এখন আমি তো শুনেছি কারন কান তো আমার ওদের গল্পেই ছিলো! আর কি তর সয়! শুরু হয়ে গেলো মিশন "চোখের বালি"। এখন আম্মুর দেওয়া চিহ্ন আর আমার দেয়া চিহ্ন আম্মু তো ধরে ফেললো যে সে ছাড়াও আরো কেউ এটা পড়ছে। আর আমি ছাড়াতো বাসায় আর কেউ নাই! বসে গেলো বিচার সভা। আব্বু, আম্মু, বড় মামা আর বড় মামী। বড় মামা তক্কে তক্কে আছে উত্তম মধ্যম শুরু হওয়ার উপক্রম হলেই আমাকে কোলে নিয়ে চম্পট দিবে। বড় মামীর দৃষ্টি বলছে, আর কাম পাস না! হুদাই মাইরটা খাবি! আজকে আমিও বাঁচাইতে পারুম না!। আম্মুর তো রনরঙ্গীনি মূর্তি!

আব্বু: কি বিষয়?

আম্মু: তোমার ষষ্ট শ্রেণী পড়ুয়া কণ্যা চুরি করে চোখের বালি পড়ছে!

আব্বু: কিছুক্ষন চুপ থেকে, আচ্ছা ঠিক আছে বই-ই তো পড়েছে আর তো কিছু করে নাই।

আম্মু: ওর কি চোখের বালি পড়ার বয়স হয়েছে!

[আব্বু: থাক পড়ুক, ভালো মন নিয়ে পড়লে সবই ভালো। ( খুবই দামী কথা)

আমাকে বললো, তোমার পড়তে ভালো লাগে পড়ো, পড়ার কোন ভালো মন্দ নেই। সব পড়বে। কিন্তু গ্রহন করবে শুধু ভালোটা।]

আমার আজকের লেখার এটাই মূল প্রতিপাদ্য বিষয়।

ভালো কে গ্রহন করা আর মন্দকে বর্জন করা। আমি জানি, তোমরা যে ফেসবুক চালাও এই ঘটনা তোমাদের অনেকের বাবা-মা ই জানেন না। কিন্তু এই দুনিয়ায় এসেই যখন পরেছো, যা তোমাদের এই বয়সে জানার কথা না, দেখার কথা না। তার সবই দেখছো, পড়ছো। এখন তোমাদের করনীয় কি!

আমার ছেলেও এমন অনেক কিছু বলে/করে যা ওর এই বয়সে বলা বা করার কথা না। এইতো কয়েকদিন আগেই ও এমন একটা সাইন দেখিয়েছে যা অর্থ খুবই খারাপ! ও এটা শিখলো কোথা থেকে! আমরা তো এটা করিনা। আমরা কিন্তু ওকে বকিনি। আগে জিজ্ঞেস করেছি তুমি এটা কোথা থেকে শিখেছো? ও বলেছে স্কুল থেকে। যে বা যাদের কাছ থেকে শিখেছে তাঁরাও এটার মানে জানেনা। ওকে বলা হলো এই সাইন দিয়ে খুবই খারাপ একটা গালি বোঝানো হয়। ও বুঝলো এবং আমার ধারনা ও এটা আর করবে না।

এখন তোমরাও হয়তো এমন অনেক কিছু দেখবে, পড়বে যার অর্থ তুমি জানোনা, বোঝনা। তখন তুমি কি করবে? প্রথমেই বাবা-মাকে বলবে। কারন বাবা-মায়ের চেয়ে ভালো বন্ধু আর নেই। তাঁরা হয়তো প্রথমে একটু রাগ করবেন কিন্তু তোমাকে সঠিক পথ দেখাবেন। আর যদি অন্যকে বলো তাহলে তোমার গোপন কথাটি আর গোপন থাকবে না। সেটি পাঁচ কান ঘুরে তোমার সমালোচনা হবে যা শুনতে কারোই ভালো লাগবে না। ফেসবুক কে তুমি ভালো-মন্দ সব কাজেই ব্যবহার করতে পারবে। এটা তোমার উপর নির্ভর করে তুমি কি চাও। ফেসবুকে অনেক লেখা আছে তুমি পড়তে পারো, অনেক বড় বড় মানুষ আছেন যাদের জীবনাচরণকে ফলো করতে পারো। আবার এমন লেখাও আছে যা থেকে তুমি বিভ্রান্ত হতে পারো, এমন মানুষও আছে যাদের জীবনাচরণ তোমাকে শেষ করে দিতে পারে। তাই তোমাদের সামনে সব পথ খোলা কোন পথে যাবে ওটা তুমি ঠিক করবে। তোমরা নিশ্চয়ই " দিল ওয়ালে দুলহানিয়া লে যায়েঙ্গে" মুভিটা দেখেছো। ওখানে ফরিদা জালাল (কাজলের মা) কে শাহরুখ বলেছিলো, যার বাংলা করলে এরকম একটা কিছু দাঁড়ায়, " যদি তুমি সত্যের পথে থাকো তাহলে তোমার চলার পথ অনেক কঠিন হবে, কিন্তু এই পথে থেকে তুমি যা পাবে তা তোমার কাছে স্থায়ী হবে। আর যদি তুমি মিথ্যার পথে থাকো, তাহলে তুমি খুব সহজে যা চাও তা পেয়ে যাবে কিন্তু সেটা তোমার কাছে স্থায়ী হবে না"। এখন তুমি সিদ্ধান্ত নাও তুমি কি চাও! স্থায়ী কিছু না অস্থায়ী? আমি জানিনা আমার কথা তোমাদের ভালো লাগবে কি না। তবু বললাম, আমার এই কথাগুলো যদি তোমাদের একজনের মাঝেও কোন পরিবর্তন আনতে পারে। আমি বুঝবো আমি স্বার্থক। আমার সন্তানকে আমি এই পৃথিবীতে একা রেখে যাচ্ছিনা। কেউ না কেউ থাকবে যে আমার সন্তানকে তাঁর ভুল ধরিয়ে দিয়ে সঠিক শিক্ষা দিবে। আর এটা তোমরাই। আমি জানি তোমরাই পারবে। তোমরা আমাদের আগামী, আমাদের ভবিষ্যত। আমরা যখন থাকবো না তখন একে অন্যের কাঁধে কাঁধ রেখে বাঁচবে, যুদ্ধ করবে। কোন ধর্ম-বর্ন তোমাদের একতাকে ভাঙতে পারবে না। তোমরা যাই করবে তার মধ্যেই মানুষের মঙ্গল নিহিত থাকবে। তোমাদের প্রতিটা পদক্ষেপ হবে মানুষের উন্নতির জন্য, ভালোর জন্য। আমি জানি তোমরা পারবে।

এখন যে কথা দিয়ে শুরু করেছিলাম, ভাষার ব্যবহার। এমন কোন ভাষা ব্যবহার কোরো না যা সবার সামনে উচ্চারন করা শোভন না। তোমরা সবাই স্কুল- কলেজে যাও। তোমরা জানো কোথায় কোন কথা বলতে হবে। তোমাদের ফেসবুকে অনেক সিনিয়র/জুনিয়র এড করা আছে ঐ ধরনের ভাষা কারো জন্যই স্বাস্থ্যকর নয়। আর মনে রাখবে নিজের চেয়ে বড় কারো সাথে বন্ধুত্ব করবে না। সে বড় জোর তোমার গাইড হতে পারে, ফিলসফার হতে পারে। বন্ধু নয়। বন্ধু হবে তোমার সমবয়সী অথবা কাছাকাছি বয়সী কেউ।

আরেকটা কথা, লিখলে বানান ভুল হবেই। তবে কিছু বানান, যেগুলো আমরা সবসময়ই ব্যবহার করি সেগুলো ভুল করা একজন রেগুলার ছাত্রের করা ঠিক না। সেটা শিক্ষার জন্য অসম্মানের। তাই লেখার আগে ডিকশনারিতে বানান দেখে নেবে।

# এমন কোন কাজ করবে না যে কাজের জন্য বার বার `সরি` আর `প্লিজ` বলতে হয় এই শব্দ দুটি যত কম ব্যবহার করতে পারবে ততই ভালো।

# ভুল করলে অবশ্যই সরি বলবে।

# যে তোমার ভুল ধরে দিবে সেই তোমার প্রকৃত ভালো চায়।

# চাটুকারিতা আর প্রশংসা দুটি শব্দের পার্থক্য জানবে।

# যতই পড়বে ততই জানবে।

# সবার সব কিছু থাকবে এটা জরুরী না, নিজের যা আছে তাই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকবে।

# নিজেকে অন্যের সাথে তুলনা করবে না, আল্লাহ কাউকেই খালি হাতে পাঠাননি।

# নিজের ভালো দিক, খারাপ দিক খুঁজে বের করো আর সেই অনুযায়ী কাজ করো।

# নিজের সমালোচনা করো অন্যের না।

# যে কাজই করো আগে পড়াশুনা শেষ করো।

পড়াশোনার কোন বিকল্প নাই।

# কিছু বিষয় বইয়ে লেখা থাকে না, তাই নৈতিকতার শিক্ষা গ্রহন করো, সৎ জীবন যাপন করো।

# মেয়েদের সম্মান করো।

# সম্মান দিলে সম্মান পাওয়া যায়।

সব শেষে বলবো, জীবন সুন্দর হোক। রঙিন হোক। কারন বেঁচে থাকাটাই আনন্দের।