ঢাকা, শনিবার ২৩, নভেম্বর ২০২৪ ১৯:৩৪:৫৯ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

মেধা ও মননের অপূর্ব সমাহার ছিল শিশু রাসেলের মনে

বাসস

উইমেননিউজ২৪

প্রকাশিত : ০৭:৪০ পিএম, ১৮ অক্টোবর ২০২০ রবিবার

মেধা ও মননের অপূর্ব সমাহার ছিল শিশু রাসেলের মনে

মেধা ও মননের অপূর্ব সমাহার ছিল শিশু রাসেলের মনে

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুবিজুর রহমানের ছোট ছেলে শহীদ শেখ রাসেলের শিক্ষিকা গীতালি দাশগুপ্তা বলেছেন, মেধা ও মননের অপূর্ব সমাহার ছিল শিশু রাসেলের কচি মনে। তার শিশু মন ছিল মানবিকতায় ভরা।
শেখ রাসেলের ৫৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে শনিবার রাতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ওয়েবটিম আয়োজিত ওয়েবিনারে তার গৃহশিক্ষিকা এভাবেই নিজের ছাত্রের মেধা ও কোমল মনের অকৃত্রিম প্রশংসা করেন।
একবার শেখ রাসেল অংক করাতে যে কৌশলের আশ্রয় নিয়েছিলেন, সে প্রসঙ্গে গীতালি দাশগুপ্তা জানান, যখন রাসেলকে বলা হয়েছে অংকগুলো না করলে তারা কষ্ট পাবে, তখন অংকগুলো যাতে কষ্ট না পায় তাই ঝটপট অংক করেছিল রাসেল।
শেখ রাসেলকে পড়ানোর প্রসঙ্গে গীতালি দাশগুপ্তা বলেন, ‘আমার সামনে পরীক্ষা থাকায় শেখ রাসেলকে পড়াবো না বলে আমি মানা করে দেই। এই কথা শুনে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বললেন- ৩০ মিনিট? আমি বললাম, তাও সম্ভব না। তিনি আবার বললেন- ২০ মিনিট? আমি চুপ করে রইলাম, মানে ২০ মিনিটও সম্ভব না। তারপর তিনি আবারও বললেন- ১৫ মিনিট? তখন আমার কাছে মনে হলো, একজন মা তার ছেলের জন্য মাত্র ১৫ মিনিট সময় চাইছেন, এই সময়টুকু তো আমার দেওয়া উচিত। আমি চেঞ্জ হয়ে গেলাম। তারপর আমি কাকিমার (বঙ্গমাতার) দিকে তাকিয়ে বললাম, এই রাস্তায় কি বাস চলে? নইলে আমি যাতায়াত করবো কীভাবে? আমার তখনো এই বোধটুকু নেই যে, আমি কাকে যাতায়াতের কথা বলছি। তখন বঙ্গমাতা বললেন- আপনি পড়াবেন? তাহলে যাতায়াতের ব্যবস্থাটুকু আমিই করবো।’
এর পরবর্তী অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে শেখ রাসেলের গৃহশিক্ষিকা গীতালি দাশগুপ্তা বলেন, ‘শেখ রাসেলকে যেটা শিখিয়েছি সে তা কোনোদিন ভোলে নাই। শেখ রাসেল একবার বলে- আমি আর অংক করবো না! আমি প্রশ্ন করলে বলে- আমার ইচ্ছে করে না। এরপর আমি চিন্তা করলাম, কীভাবে শেখানো যায়। বললাম যে, তুমি স্কুলে চকলেট নিয়ে যাও? সে বললো- হ্যা, আমি বললাম, একা একা খাও তাই না?, রাসেল বললো- নাহ, একা খাই না, বন্ধুদের দিয়ে খাই। তখন বললাম, এই যে তুমি দুইটা অংক রেখে দিলে, তারা কষ্ট পাবে না? রাসেল বললো- কেন কষ্ট পাবে? ওরা কী কথা বলতে পারে? খুব অবাক ও! আমি বললাম, এই যে আমাদের বাংলাদেশ আছে, তেমনই একটা অংকের দেশ আছে। তারা নিজেরা নিজেরা কথা বলতে পারে। কষ্ট পেয়ে যাবে। এরপর রাসেল টপ টপ করে দুটো অংক করে বলে- এখন তো আর ওরা রাগ করবে না। এখন তো আর অংকের দুঃখ নাই।’
কথাসাহিত্যিক ও শিশু একাডেমির সাবেক চেয়ারম্যান সেলিনা হোসেন বলেন, ‘আমি তাকে স্বাধীনতার স্বপ্নের প্রতীকী শিশু হিসেবে দেখি। রাসেলের হাতে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে একটি ছবি আছে, তা দেখলে আমার কাছে প্রতীকী অর্থে সে বড় হয়ে যায়। ছোট বেলা থেকেই দেশাত্ববোধ ছিল তার মাঝে। একেবারে পরিবার থেকে পাওয়া।’
বিশিষ্ট অভিনেতা ও সম্প্রীতি বাংলাদেশের আহবায়ক পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘শিশু রাসেল মায়ের কাছে যাবে বললে ওকে মায়ের কাছে নিয়ে তাকে হত্যা করে ঘাতকরা। এটি কোনো তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নয়! এটি কিন্তু পরিকল্পিত সিদ্ধান্ত। তারা জানতো তাকে যদি রেখে দেওয়া হয়! তার মধ্যে তো শেখ মুজিবের রক্ত আছে, বঙ্গমাতার রক্ত আছে।’
আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, ‘আমরা জানি না শিশু রাসেল বড় হয়ে কি হতো, কি করতে পারতো। কিন্তু আমরা জানি তার পরিবার শুধু মানুষদের দিয়েই গেছে। এতেই বোঝা যায়, পরিবারের অন্যান্য সন্তানরা বেঁচে থাকলে কি দিতে পারতেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রো-ভিসি অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমেদ বলেন, ‘শেখ রাসেল যেদিন জন্মগ্রহণ করলো, সেদিন শেখ রেহানার মতো আমার কাছেও মনে হয়েছে- আমারও ছোট্ট ভাই হয়েছে। রাসেলের কথা বলতে গেলে আমার ১৫ আগস্টের কথা মনে পড়ে যায়। সেদিন কী ভয়ংকর রূপ ছিল, আমরা তো পাশেই ছিলাম। গোলাগুলির শব্দ শুনেছি। ছোট্ট শিশুর মনের অবস্থা সেদিন কি হয়েছিল! আর যেই পাশুরা এই বাচ্চার বুকের ওপর গুলি চালালো, তারা কি ভাবে পারলো। তাদের কি একটুও মায়া দয়া হয়নি? একটুও হাত কাঁপেনি? একটুও বুক কাপেনি? আজকের দিনে এটুকু চাই ও যেখানে থাকে ভাল থাকে, ওর আত্মার শান্তি কামনা করছি।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদরের ছোট ছেলে শেখ রাসেল ১৯৬৪ সালের এই দিনে ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বর বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট দেশাদ্রোহী বর্বর ঘাতক চক্রের নির্মম বুলেটে প্রাণ হারাতে হয় ইউনিভারসিটি ল্যাবরেটরি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র শিশু রাসেলকেও। কিন্তু এই নির্মম মৃত্যুর মধ্য দিয়েই যেনো মৃত্যুঞ্জয়ী হয়ে উঠেছেন রাসেল।