ঢাকা, রবিবার ২৪, নভেম্বর ২০২৪ ১২:২৫:২০ পিএম

First woman affairs online newspaper of Bangladesh : Since 2012

শান্তি কি আর আসবে কখনো?

অদিতি ফাল্গুনী

উইমেননিউজ২৪.কম

প্রকাশিত : | আপডেট: ১১:০৬ পিএম, ১০ জুন ২০১৮ রবিবার

ঢাকায় ফিরলাম মাত্রই। এত লং রুটের বাস জার্নিতে আমার সবসময় বমি হয়। গেলাম বমি করতে করতে- আর আসলামও তাই। এখন বেশ অসুস্থ বোধ করছি। একটা বিষয় কি- চোখে দেখার কোন বিকল্প নেই। ঢাকায় বসে হাজার পত্রিকা পড়ে, টিভি দেখে লাভ হবে না যদি স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ না করেন। এদিকে বন্যার পরই তিন লাখের উপর শরণার্থী নিয়ে আমাদের চালের বাজার চড়া হয়ে উঠেছে। টেকনাফে বসেই জানলাম নিসর্গবিদ দ্বিজেন শর্মার প্রয়াণের সংবাদ। তাঁর আত্মার প্রতি শ্রদ্ধা।
অসংখ্য সাধারণ নর-নারী যারা একটি দেশ থেকে পালিয়ে এখানে এসে আশ্রয় নিয়েছে রাস্তায়- তাদের ন্যূণতম ঠাঁই দেবার মানবিক প্রয়োজনেই আবার উজাড় করতে হচ্ছে পাহাড় ও বন, কুতুপালং ক্যাম্পের পাশে গিয়ে প্রথমবারের মত এদেশে দেখতে পেলাম আফগান নীল বোরখা- অথচ উপর থেকে যা মনে হয় যে রোহিঙ্গা মানেই দাড়ি-টুপি-বোরখায় আচ্ছাদিত এক গভীর ধর্মভীরু জনগোষ্ঠি, তার ভেতরে কত না মোচড়! দিনে হোটেলের নিচে রাস্তায় যে মেয়েগুলো কালো বোরখায় রোদে পুড়ছে তারাই সন্ধ্যার পর বোরখা খুলে থামি আর ব্লাউজের আরাকানী পোশাকে স্বচ্ছন্দ! এদেশে এলে বোরখাটা পরা বেড়ে যায় তাদের যেন এদেশের মানুষ তাদের যথেষ্ট পরিমাণ ‘মুসলিম’ ভাবে- জানালেন এক রোহিঙ্গা পুরুষ দোভাষী মারফত। যে মিয়ানমারে এত অত্যাচারিত তারা, সেই মিয়ানমারকেই আজো ভালবাসার স্বদেশ মনে করেন বিশেষত: প্রবীণ প্রজন্ম। উখিয়ার পথে চেহারা দেখেই শিক্ষিত মনে হয়েছে এমন কয়েকজন সদ্য তরুণকে নাম জিজ্ঞাসা করলে সরল হাসিতে আমার ডায়েরিতে লিখে দিলেন বার্মিজ হরফে তাদের নাম। ওরা বর্মী ভাষায় পড়া-শোনা করেছে। বাংলা বর্ণমালা তারা জানে না। মাসের নামও জানে বর্মী ভাষায়। অ-নিবন্ধিত লেদা ক্যাম্পে অনেক অনুরোধের পর বলিরেখাকুঞ্চিত এক মাতামহী শুনিয়েছিলেন ‘বৈরাত’ বা ‘বিয়ের গীত।’ মুসলিম রোহিঙ্গাদের মুখে ছোটবেলা থেকে শোনা মুসলিম নামগুলো যেমন বর্মী উচ্চারণের প্রভাবের জন্যই একটু অচেনা লাগে, হিন্দু রোহিঙ্গাপাড়াতেও ‘পূজা’ নামে মেয়েটি তার নামের উচ্চারণ করে ফেলল ‘ফুইজা।’ বেশ বর্মী শুনতে, তাই না? ‘ফুপু’ শব্দটি যেমন এখন রোহিঙ্গারা বলে ‘ফু।’ হিন্দু রোহিঙ্গাপাড়া ও মুসলিম রোহিঙ্গাপাড়া থেকে কিছু পাল্টাপাল্টি বয়ানও পাওয়া গেল যা কাল-পরশু নাগাদ লিখব। অং সান সূচির উপর আস্থা রাখেন আজো কোন কোন রোহিঙ্গা প্রবীণ। এক বৃদ্ধ কৃষক বললেন, ‘এদেশে সবাই টাকা ছুঁড়ে দিচ্ছে। আমার দেশে আমার ১২ কানী (৩৬ বিঘা) জমি। আমি কি টাকা টোকাব? ও দেশে আমার বাবা-দাদার কবর । শান্তি হলেই চলে যাব।’
...শান্তি কি আর আসবে কখনো? কে জানে? আপাতত: এর বেশি লিখতে পারছি না। ভয়ানক ক্লান্ত।