রাজধানীতে শীতের পিঠা বিক্রির ধুম
আফছানা খান নিশা
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০২:৩০ পিএম, ১০ জানুয়ারি ২০২১ রবিবার
চলছে পিঠা বানানোর কাজ
বাঙালির খাদ্যসংস্কৃতিতে ভাতের পরে যে খাবারটি নিয়ে সবচেয়ে বেশি চর্চা হয় তা হলো পিঠা। যেই পিঠাই হোক না কেন ভোজনপ্রিয় বাঙালির কাছে তা জনপ্রিয়। গ্রাম-বাংলা থেকে শুরু করে শহুরে জীবন কোথায় নেই পিঠা।
টোনা-টুনির গল্পেও হাতে ধেড়ে বাঘকে নাজেহাল হতে হয়েছিল সেই পিঠা খাবার লোভেই। পিঠা নিয়ে এত সব গল্পগাছা যে দেশের মানুষের জীবনে ভেসে বেড়ায় জনপদ থেকে জনপদে, এক প্রজন্ম থেকে আর এক প্রজন্মে, সে দেশের মানুষ পিঠা প্রেমিক হবে, এতে আর আশ্চর্যের কী আছে!
গ্রাম বাংলায় ঘরে ঘরে পিঠাপুলির উৎসব চললেও শহরের চিত্র ভিন্ন। যান্ত্রিক জীবনে ইচ্ছা থাকলেও উপায় হয়ে উঠে না পিঠা বানানোর। তাই বলে শীতে পিঠা খাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে শহরবাসীরা, মোটেই না! শীতের তীব্রতা কম হলেও শহরের বিভিন্ন স্থানে রাস্তার পাশে দেখা মিলছে ভাসমান পিঠার দোকান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি চত্বরে ভাপা পিঠা বিক্রেতা মোহাম্মদ ইব্রাহীম (২৮)। তিনি জানান, দীর্ঘদিন ধরে পিঠা বিক্রির কাজ করছেন তিনি। প্রতিদিন একই স্থানে বিকেল ৪টা থেকে পিঠা বিক্রি শুরু করেন। বিক্রি চলে রাত ১১টা অব্দি। ভ্যানেই ভাপা পিঠা তৈরি করে বিক্রি করেন।
তিনি আরও জানান, গরম এই ভাপা পিঠা খেতে হলে ক্রেতাকে গুনতে হবে ১০ টাকা করে। ক্রেতার সুবিধার জন্য পিঠার পাশাপাশি তিনি বিক্রি করছেন বিভিন্ন সাইজ ও দামের পানির বোতলও।
টিএসসির মোড়েই প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত পিঠা বিক্রি করেন আখতার হোসেন (২৬)। অনেক বছর ধরেই পিঠা তৈরির পেশায় আছেন। তিনি জানান, সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত বিক্রি বেশি ভালো হয়।
রাস্তার ঠিক বিপরীত পাশেই চোখে পড়ল মোহাম্মদ বাবুল হোসেন (৩৫) নামের এক ব্যক্তি পিঠা তৈরি করছিলেন। বেশ ব্যস্ততা তার। পিঠা তৈরি করছেন, পাশেই রয়েছে দুজন ক্রেতা।
কথা বলে জানা যায়, এক থেকে দের মাস ধরে এই পেশায় আছেন তিনি। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত ভ্যানে ভাপা পিঠা তৈরি করে বিক্রি করেন তিনি। এতে বেশ লাভ হয় তার। প্রতিদিনি ১ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা আয় করেন। অন্যান্য বিক্রেতাদের মতো তিনিও ক্রেতাদের জন্য পানির ব্যবস্থা রেখেছেন।
এদিকে পুরান ঢাকার ইসলামপুর এলাকার চায়না মার্কেটের সামনে রয়েছে মোহম্মদ আব্দুল কাদের হাওলাদারের (৬৫) ছোট একটি টং দোকান। এখানে দীর্ঘ ১২ বছর ধরে তিনি পিঠা বিক্রি করছেন। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ২ ধরনের পিঠা বিক্রি করেন। চিতই পিঠা আর ডিম চিতই পিঠা। সঙ্গে রয়েছে ৪ রকমের ভর্তাও। প্রতিদিন ৪ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজার টাকা আয় করেন তিনি। তার কাজে সাহায্যে জন্য রেখেছেন নাতি মোহাম্মদ জুয়েলকে (২০)। তাকে দিন হিসেবে টাকা এবং খাবার দেন।
শত বছর ধরে চলে আসা এই জনপ্রিয় খাবারের সেকাল আর একালে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু পিঠাকে প্রজন্মান্তরে প্রবাহিত রাখার পুরো কৃতিত্ব নারীদের ও ভাসমান এসব পিঠা ব্যবসায়ীদের।
লেখক : আফছানা খান নিশা, শিক্ষার্থী, জার্নালিজম অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগ, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি।