আত্ম-কর্মসংস্থানের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত জামালপুরের খুশি
অনলাইন ডেস্ক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০১:০৮ এএম, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২১ শুক্রবার
আত্ম-কর্মসংস্থানের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত জামালপুরের খুশি
এক সময় পরিবারের নিত্য চাহিদা মেটাতে হিমশিম খেতে হতো জামালপুরের খুরশিদা বেগম খুশির। এখন তিনি তার এলাকায় আত্ম-কর্মসংস্থানের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ৪৬ বছর বয়সী এই উদ্যোক্তা নারী তমাল তলা এলাকায় চালাচ্ছেন “খুশি বস্ত্রালয়” নামের এক বুটিক হাউজ। আর এ বুটিজ হাউজ থেকে তার মাসিক আয় প্রায় ২৫ হাজার টাকা। কিন্তু তার এ পথ চলা কখনোই অতটা মসৃণ ছিল না।
দারিদ্র্যের মধ্যে বেড়ে উঠা খুশি খুব বেশি পড়ালেখা করতে পারেননি। স্কুলের গন্ডি পেরোনের আগেই শিক্ষা জীবন থেকে বিদায় নিতে হয় তাকে। মাত্র ১৬ বছর বয়সে তাকে বিয়ে দিয়ে দেয় তার বাবা। বিয়ের দু’বছর পর তাদের ঘরে আসে প্রথম কন্যা সন্তান। কিন্তু খুশির স্বামী স্থানীয় ব্যবসায়ী আব্দুল আলীমের পক্ষে সংসারের খরচ মেটানো খুব কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছিল। এভাবেই চলছিল তাদের সংসার। খুশি পাশের এক হ্যান্ডিক্রাফটের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষানবীশ হিসেবে কাজ শুরু করে। ইচ্ছে ছিল সেখান থেকে যা আয় হবে তা সংসারের কাজে লাগাবে।
তিনি বলেন, একদিন আমি আমার বাড়ির পাশের এক বাড়িতে যাই। সেখানে দেখি নকশী কাঁথার উপর এ্যাম্ব্রয়ডারির কাজ করছেন কয়েকজন নারী। সেখান থেকে আমি একটা আইডিয়া পাই।
তিনি বলেন, আমি যখন মাত্র ২০ বছর তখন এলাকার এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ‘সৃজন হস্তশিল্প’ এ কাজ নিই। সেখানে প্রতিদিন কাজ করতে হত ১২ ঘন্টা। আর মাসিক বেতন ছিল ৫০০ টাকা। যদিও টাকাটা খুবই সামান্য ছিল, কিন্তু আমি আনন্দিত ছিলাম কারন এখানে আমি কাজটি শেখার সুযোগ পেয়েছি। এখানে কাজ করে কীভাবে কম্বল, বিছানার কাপড়, কোল বালিশের কাভার, বালিশের কাভার, শাড়ি এবং মহিলাদের অন্যান্য কাপড়ে এ্যাম্ব্রয়ডারি করা যায় তা শিখতে পেরেছি। আমার কাজে মালিক খুশি হয়ে মাত্র দু’মাস পর আমার বেতন বাড়িয়ে করেন ১,৫০০ টাকা। মূলতঃ তখন থেকেই আমি স্বপ্ন দেখতে শুরু করি একদিন আমিও বাড়িতে এই এ্যাম্ব্রয়ডারির ব্যবসা শুরু করব।
তার স্বামীর সহযোগীতায় খুশি ঢাকা ভিত্তিক কয়েকটি বুটিক হাউজেন সাথে পরিচিত হন। সে সময় তিনি ঢাকা থেকে কয়েকটি পাঞ্জাবীও কিনে নিয়ে যান। সেসব পাঞ্জাবীর উপর তিনি আবার এ্যাম্ব্রয়ডারির কাজ করেন। চাকরির পাশাপাশি সেখান থেকেও তার কিছু বাড়তি আয় হতে থাকে।
তিন বছর সেখানে কাজ করার পরা খুশি সেই চাকরি ছেড়ে ‘শতদল’ নামের আরেকটি বুটিক হাউজে চাকরি নেন। সেখানে তিনি যোগ দেন একজন ডিজাইনার হিসেবে। আর মাসিক বেতন ছিল ৩,০০০ টাকা।
সেখানে এক নাগাড়ে পাঁচ বছর কাজ করেন। ফলে তার নানা ধরণের অভিজ্ঞতা হয়। বাড়ে দক্ষতাও যা তাকে তার স্বপ্ন পূরণের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। স্বপ্ন দেখেন নিজে উদ্যোক্তা হওয়ার।
২০১৩ সালে খুশি তার দ্বিতীয় চাকরিটিও ছেড়ে দেন। বাড়িতে শুরু করেন ছোট ব্যবসা ‘খুশি বস্ত্রালয়’। সেসময় তার পূঁজি ছিল ২০ হাজার টাকা। এসময় তিনি কয়েকজন নারীকে কাজ করার জন্য নিয়ে আসেন এবং কয়েকজন নারী সুপারভাইজার নিয়োগ দেন। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে নকশী কাঁথা, বিছানার কাপড়, বালিশের কাভার, ওয়াল মেটসহ নারীদের বিভিন্ন কাপড়ে এ্যাম্ব্রয়ডারির কাজ হয়।
খুশি বলেন, এই ব্যবসা করে এক যুগে আমি ১ দশমিক ৫ লাখ টাকা জমিয়েছি। আর সব টাকাই আমি আমার ব্যবসায় মূলধন হিসেবে খাটিয়েছি।
তার স্বামীও তার এ ব্যবসার সাথে জড়িত।
তিনি বলেন, আমি আমার সহধর্মীনিকে নিয়ে খুব গর্বিত। একসময় খুব কষ্ট হত সংসার চালাতে। এখন সে হাল ধরেছে। সমাজে ব্যবসায়ী হিসেবে তার একটি পরিচিতি রয়েছে। সবাই সম্মান করে। আমাদের ছেলেমেয়েরাও ভালো আছে। তারা স্কুলে যাচ্ছে।
জামালপুর হ্যান্ডিক্রাফট এন্টারপ্রেনার্স এসোসিয়েশনের কার্যকরী সদস্য মাকসুদা হাসনাত বলেন, খুশি এই এলাকায় একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। শুধুমাত্র নিজের একার ঐকান্তিক চেষ্টা এবং পরিশ্রমের কারণে সে আজ প্রতিষ্ঠিত। খুশি অন্যদের জন্য অনুকরণীয়।