কানাডার পথে-প্রান্তরে
আসমা আক্তার
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ১১:৫৬ পিএম, ৭ অক্টোবর ২০১৭ শনিবার | আপডেট: ০৫:৪২ পিএম, ১৮ অক্টোবর ২০১৭ বুধবার
আসমা আক্তার
অবশেষে শেষ হল পাঁচ দিনের সফর, টরেন্টো-নায়াগ্রা-সাটবেরী-সল্টসেন্টমেরী-থান্ডারবে-কেনোরা হয়ে উইনিপেগ। মনে হয় কানাডার অর্ধেক দেখা হয়ে গেল। এই দীর্ঘ পথ শরীর ও মনকে ক্লান্ত করতে পারেনি। কারণ কিছুদূর পরপরই ছিল হাইওয়েতে থাকা ফাস্ট ফুডের দোকানে খাওয়া দাওয়া।
কি সুন্দর ব্যবস্থা! যেখান থেকে গাড়ির জন্য তেল নেয়া হবে সেখানেই রয়েছে খাবার ব্যবস্থা আর ওয়াসরুম। প্রতিটি ওয়াশরুম একই নিয়মের। একদিকে গরম আরেকদিকে ঠান্ডা পানি। সাথে লিকুইড সাবান আর হাত শুকানোর যন্ত্র। এটা পাবলিক প্রাইভেট সব প্রতিষ্ঠানের সাথেই আছে।
এ যাত্রায় প্রায় সব খাবার ব্র্যান্ডই টেস্ট করা হয়ে গেছে। কিছু পরিচিত আর কিছু অপরিচিত নামের যেমন মেকডোনাল্স, সাবওয়ে, এ এন্ড ডব্লিউ, টিম হরটন্স, বার্গার কিং, আফগান কাবাব, মুনসুন ইন্ডিয়ান ফুড। আরও বেশ কয়েকটি নাম মনেই করতে পারছি না।
টরেন্টো শহরের বিল্ডিংগুলো দেখে আমি তো হাঁ। কত যে নতুন নতুন মাল্টিস্টোরিড বিল্ডিং। ১০০ না ২০০ তলা চলতি পথে গোনা সম্ভব হয়নি। ভাল লাগল বাংলাদেশি এলাকাটি। ভিনদেশে বাঙালিরা নিজের এলাকা নির্দিষ্ট করে নিয়েছে। নিজের ভাষায় পত্রিকা, দেশি জিনিসের ব্যবসায় জমজমাট তারা। মন ভরে গেল দেখে। কোহিনুর মামার সুবাদে দেশী দোকানে ডালপুরি খেলাম। মিলি মামিকে বিদায় দিতে পারিনি। তবে মামার কাছ থেকে বিদায় নিতে কষ্ট লেগেছে। টরোন্টো শহর থেকে বের হতে অনেক সময় লাগল। কারণ বারবার পথ পেচ খাচ্ছিল।
নায়াগ্রার কথা মোটামুটি সবারই জানা। নায়াগ্রা নদীর ছোট ফলটি আমেরিকার সীমান্তে আর বড়টি কানাডায়। সকালে একরকম দৃশ্য, দুপুরে অন্যরকম রংধনুর রঙ। সন্ধ্যায় আরেকরকম আর রাতে আলোর ছটায় ভিন্নরকম। ও পাশে আমেরিকার পতাকা আর এ পাশে কানাডার। দুটো দেশ পাশাপাশি কত শান্তিতে বসবাস করছে। একসাথে মনে হল দুটো দেশ দেখে ফেলেছি!
আরো কিছু ছোট ঝরণা পার হয়ে এসেছি পথে। পাহাড়ের ভিতর দিয়ে উঁচু নিচু রাস্তা। কখনো কানে শোঁ শোঁ শব্দ, উচ্চতার জন্যে কানে কিছু শুনিনি। কখনো মনে হয় পানির মধ্য দিয়ে পাড়ি দিতে হবে রাস্তা। কখনো সাগর একপাশে রেখে আমাদের গাড়িটি পাশাপাশি এগিয়ে চলেছে প্রায় একই উচ্চতায়। পাহাড় কাটা রাস্তা, পাহাড়ের কান্না, কখনো পাথর বেয়ে বেয়ে কখনো পাথরের মধ্য দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি। কখনো বিশাল নদীর মাঝখানে দ্বীপ। দেখা মেলে নানা রকম ঘর বাড়ি, মাছ ধরা, স্পিড বোট আর নানা রঙের গাছের। মন হারিয়ে যায় নানা রঙের গাছের পাতায়। এর আগে নীল আকাশটা এত কাছে কখনো আসেনি, আর সাদা মেঘগুলো এভাবে ছুঁয়ে যায়নি। আগে কখনো হরিণ-মানুষ খোলা জায়গায় একসাথে দেখিনি। রাতে দুবার ভালুকের দেখা মিলেছিল রাস্তায় আর দিনে রাস্তার পাশে ছিল হরিণ। সাগরের তীর বেয়ে লেগে গেছে আকাশে আর সরাসরি সূর্যাস্ত। দেখতে দেখতে মনে হল সূর্যটা অনেক বড় এখানে।
একটু পর পর হরিণ আর ভালুকের ছবি দিয়ে সতর্কতা। আর সেই সাথে স্পিড নিয়ন্ত্রণ সতর্কতা। এটা শুধু সতর্কতা বললে ভুল হবে। পুলিশের গাড়ি চুপিচুপি বসে থাকে। আমাদের গাড়ি ধরা খেলো ৯০-এর জায়গায় ১২০ স্পিড উঠেছিল বলে। এতগুলো মানুষ কেউ টের পেলাম না কোথা থেকে এলো ওরা। পুলিশ এসে বললো, ’তোমাদের ২২০ ডলার জরিমানা হয়েছে। কিন্তু বাচ্চা যেহেতু কাঁদছিল তাই সবচেয়ে কমটা দিলাম।’ এই পুলিশ এখানকার সবচেয়ে মূল্যবান খেতাবের অধিকারী। অর্থাত্ ফাস্টক্লাস সিটিজেন হোল্ডার। মূলতঃ তারা মানুষের বন্ধু, সকল বিপদেই এগিয়ে আসে, আর নিয়ম ভাঙ্গলেই জরিমানা।
কাঠ দিয়ে বেশির ভাগ ঘর-বাড়ি তৈরি। বাড়িগুলো বিশেষভাবে তৈরি ঠান্ডা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই। একেকটা এলাকায় একেক ডিজাইন। থাকার বাড়িগুলি একতলা বা বেশি হলে দোতলা। পাহাড়কে ঘিরেই আধুনিক ঘর বাড়ি আর রাস্তা, ব্রিটিশ মডেল মনে হয়েছে।
তারপর মেনিটোভা প্রদেশ। এ প্রদেশে ঢুকতেই ধীরে ধীরে শুরু হল সমতল ভূমি। মাঠের পর মাঠ। জমিতে ফসল আর বেশিরভাগ খালি জায়গা। আশ্চর্য হলাম প্রায় তিন হাজার মাইল রাস্তায় মাঝে মাঝে রাস্তা মেরামতকারিদের ছাড়া রাস্তায় বা তার পাশে কোন মানুষ নেই। এত সুন্দর গাছপালা ও নদী দিয়ে সাজানো দৃশ্য দেখে প্রশ্ন হচ্ছিল কে ওদের যত্ন করে? কত যে মনোরম দৃশ্য বলে বোঝাতে পারব না। তাই কিছু ছবি সংযুক্ত করলাম।
দীর্ঘ পথে ওয়াসফিয়া আনন্দ দিয়ে ভরে রেখেছে সবটুকু সময়। ওর মিষ্টি কথা আর প্রাণবন্ত হাসি স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আইযা এত ছোট তবু আমাদের সঙ্গ দিয়েছে। অনেক শুকরিয়া আল্লাহ্ তায়ালার নিকট।