ফুলকন্যা কুলসুম
ইভা ইমন
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ০৪:০৪ পিএম, ১১ অক্টোবর ২০১৭ বুধবার | আপডেট: ০২:৩৭ পিএম, ২০ অক্টোবর ২০১৭ শুক্রবার
রাজধানীর বিজয় সরণীর মোড়ের সিগন্যালে দেখা মেলে কুলসুমের। বয়স কত হবে! বড় জোড় দশ কি এগারো। ওরা একই বয়সি কয়েকটি মেয়ে দল বেঁধে ফুল বিক্রি করে এই মোড়ে। ট্রাফিক সিগন্যালে সারি সারি গাড়ি দাঁড়ালেই কুলসুমরা দৌঁড়ে যায় গাড়ির দিকে। ’স্যার/ম্যাডাম, ফুল লাগবনি, ফুল, ভাল ফুল’ বলে আরজি জানায় গাড়ি থেকে গাড়িতে। বেশির ভাগই নেয় না। আবার কেউ কেউ ফুল না কিনেও টাকা দেয়।
কাজের অবসরে কথা হয় কুলসুমের সাথে। ও প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ টাকার মতো ফুল বিক্রি করতে পারে। ঝড়-বৃষ্টির দিন বেরোতে পারে না। অসুস্থ্য হলে তো আরও সমস্যা। ফুল বিক্রি করতে না পারলে কুলসুমদের ঘরে খাবারের কষ্ট হয়। থাকারও কষ্ট। ওরা চার ভাই বোন। ও সবার বড়। বাবা রিক্সা চালাতো। এখন প্যারালাইসিস রোগী। কাজ করতে পারে না। মা-ই কঠোর পরিশ্রম করে সংসার চালায়। আগের চেয়ে মার আয় কমে গেছে। তাই অসুখ কিংবা অনিচ্ছা, কোনো কিছুর কাছেই হার মানে না কুলসুম। মাকে সহযোগীতা করতে হবে যে। ওরা থাকে শাহীনবাগ বস্তিতে।
রাস্তায় ফুল বিক্রির সময় গাড়ির নিচে চাপা পড়ার ঝুঁকি আছে। কিন্তু টাকা পাওয়ার জন্য এধরনের ঝুঁকির মধ্যে থেকেও কুলসুম ফুল বিক্রির কাজ করছে। তার কোনো ভয় নেই। টাকা না পেলে ঘরে সবাই না খেয়ে থাকবে যে।
কুলসুম করুণ একটি অভিজ্ঞতার কথা জানায়। নাজুফা নামের একটি মেয়ের করুণ মৃত্যুর কথা বলে সে। কিছুদিন আগেই ঘটনাটা ঘটে ওর চোখের সামনে। সময়টা ছিল পড়ন্ত দুপুর। নাজুফা ৫ টাকার একটি ফুল বিক্রি করে। টাকাটা নেয়ার আগেই সিগন্যাল ছেড়ে দেয়। জানালা দিয়ে বাড়িয়ে দেয়া একটি ৫ টাকার নোটের দিকে ছুটতে ছুটতে গাড়ি চাপায় চিরতর স্তদ হয়ে যায় নাজুফা। কুলসুম ধরাগলায় বলে, ’সারা রাস্তা টকটকে লাল রক্তে ভাইস্যা গেছিল’।
কুলসুমের চোখ ঝাপসা হয়ে ওঠে। সহসাই সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করে। সিগন্যাল পরে গেছে। গাড়িগুলো থামবে এখনই। ফুল হাতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে কুলসুম। ওকে যে থামলে চলবে না! ফুল বিক্রি করতে হবে। সিগন্যালের দিকে ছুটে যায় কুলসুম।