বিশ্বের নারী পরিচালিত একমাত্র বাজার
অন্তরা আলম
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ১২:৫৪ পিএম, ২১ অক্টোবর ২০১৭ শনিবার | আপডেট: ০৫:০০ পিএম, ২১ অক্টোবর ২০১৭ শনিবার
ভারতের তথা বিশ্বের একমাত্র নারীপরিচালিত বাজার রয়েছে দেশটির উত্তর-পূর্বের মণিপুর রাজ্যে। সেদিক থেকে দেখলে সারা বিশ্বের কাছে এক উদাহরণ সৃষ্টি করেছে এই বাজার। এবং সবচেয়ে বড় কথা এটা কোনও নতুন গজিয়ে ওঠা বাজার নয়।
পুরুষ এখানে শুধুই ক্রেতা। এই বাজার চালান নারীরাই। পুরুষরা এখানে আসতে পারেন অবশ্যই। তবে শুধুমাত্র ক্রেতা হিসাবে, দোকানি হিসাবে নয়।
পাঁচশো বছরের পুরনো বাজার : মণিপুরের এই বাজারকে বলা হয় মাদার্স মার্কেট। আর স্থানীয় ভাষায় ইমা কেইথেল। বিগত পাঁচশো বছর ধরে এই বাজার চলছে। এবং এখানে মোট ৪ হাজার দোকানির প্রত্যেকেই নারী। প্রতিদিন হাজারো-লাখো ক্রেতা এখানে ভিড় জমান। পুরোটাই পরিচালিত ও নিয়ন্ত্রিত হয় নারীদের দ্বারা।
বাজারের দায়িত্বে নারীরা : মণিপুরে যখন রাজার শাসন ছিল। সেই সময় থেকেই নারীদের মধ্যে ব্যবসা করার রীতি চালু হয়। তারপর এতবছর কেটে গেলেও সেই ব্যবস্থা অটুট রয়েছে। পুরুষের পাশাপাশি মহিলারাও যে ব্যবসা সামলাতে পারদর্শী তা এখানে এলেই বোঝা যাবে।
বাজারের ইতিহাস : কীভাবে এখানে নারীরা ব্যবসা শুরু করলেন তা নিয়ে মজার কাহিনি রয়েছে। এখানকার রাজা মাঝে-মাঝেই পুরুষদের সমন পাঠিয়ে ডেকে নিতেন। যার ফলে সংসার সহ নানা কাজ নারীদের একাই দেখতে হতো। যাদের ব্যবসা ছিল তাঁরা ব্যবসা দেখতেন। এভাবেই ধীরে ধীরে মণিপুরে ব্যবসায়ী মহিলা সমাজের গোড়াপত্তন হয় ও পরে তা বহরে আরও বেড়ে ওঠে।
বিবাহিত দোকানি : এই বাজারের আর একটি বিশেষত্ব হল, এখানকার সমস্ত দোকানি নারীরাই বিবাহিত। অবিবাহিতদের এখানে ব্যবসা করার কোনও অনুমতি নেই। সকলেই সংসার সামলানোর পাশাপাশি ব্যবসাও সামলান।
সমাজের বিরুদ্ধে লড়াই : বিভিন্ন সময়ে নারীদের এই বাজারের উপরে আক্রমণ নেমে এসেছে। ষড়যন্ত্র করা হয়েছে যাতে বাজার ভেঙে যায়। তবে নারীরা রুখে দাঁড়িয়েছেন। স্বাধীনতার আগে ১৯০৪ ও ১৯৩৯ সালে মহিলারা রীতিমতো লড়াই করে বাজার রক্ষা করেছেন। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই বাজার বেশ কিছুদিন পুরোপুরি বন্ধ ছিল।
সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ : ২০০৩ সালে মণিপুর সরকার এই বাজার অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। এখানে নতুন সুপার মার্কেট করার পরিকল্পনা হয়। তখন ফের প্রতিরোধ শুরু হয়। তা ভেস্তে যায়। এখন ফের রমরমিয়ে ব্যবসা চলছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ এই বাজার দেখতে আসেন।
হরেক সামগ্রীর বাজার : এই বাজারের এক এক জায়গায় এক এক ধরনের সামগ্রী পাওয়া যায়। একটি বিল্ডিংয়ে ফল, শাক-সবজির বাজার, অন্যটিতে হস্তশিল্প, আর একটিতে প্রসাধনী তো কোনওটাতে জামাকাপড়ের সম্ভারে ঠাসা। পুরোটাই একটা শপিং মলের চেয়ে কম যায় না।
প্রতিযোগিতার লড়াই : প্রতিযোগিতার বাজারে লড়াই করতে গিয়ে এখানকার নারী দোকানিরা বেশি মার্জিন রেখে লাভ করতে পারেন না। বছরে গড়ে ১ থেকে ২ লক্ষ টাকা আয় হয় নারী দোকানিদের। তাছাড়া বাইরের পণ্য অনেক সময় কমদামে বিক্রি হয় যা এখানকার দোকানিদের সমস্যায় ফেলে দেয়। এই সবকিছু সত্ত্বেও লড়ে যাচ্ছেন বিশ্বের একমাত্র মহিলা পরিচালিত বাজারের দোকানিরা।