বাদলা দিনে কেইকো মাদামের সঙ্গে
প্রবীর বিকাশ সরকার
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ০৩:২৭ পিএম, ২২ অক্টোবর ২০১৭ রবিবার | আপডেট: ০৪:০৭ পিএম, ২২ অক্টোবর ২০১৭ রবিবার
জাপান শীর্ষ রবীন্দ্রগবেষক অধ্যাপক কাজুও আজুমা চলে গেছেন ২০১১ সালে। কিন্তু এখনো আমাদের মাঝে আছেন তাঁর সহধর্মিণী মাদাম কেইকো আজুমা। এ বছর ৮১তে পড়লেন। এখনো রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে ভাবেন, লেখেন এবং বক্তৃতা দেন। এখনো তোওহোও গাকুয়েন ইনস্টিটিউটে বাংলা ভাষা পড়াতে যান জাপানি ছাত্র-ছাত্রীদেরকে! ভাবাই যায় না!
প্রতি মাসেই দু-তিনবার করে ফোনে কথা বলি।খোঁজ-খবর নিই। ব্যস্ততার কারণে যেতে পারি না। একা থাকেন ছোট্ট একটি ঘরে। যদিও পাশেই রয়েছে বড় ছেলের পরিবার। দুই নাতিকে দেখাশোনা করেন। স্বামীর নানা স্মৃতি ছুঁয়ে ছুঁয়ে কতকিছু ভাবেন! নিজে রাাঁধেন, বাড়েন এবং একাই খান। সামনে দেয়ালে স্বামীর ছবি, তিনি মিটি মিটি হাসছেন---এতেই খুশি কেইকো মাদাম। তবু তো আছেন, ছবিতে আছেন চিরকালের চেনাজানা মানুষটি! এটাইবা কম কীসে?
একসময় কতজন আসতেন তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাৎকরার জন্য। আর আজকে কেউ ভুলেও ফোন করেন না, হেসে হেসে বলছিলেন। আমি দেখলাম তাঁর দুচোখে মাকড়শার জালের মতো ফিনফিনে অশ্রু চিক চিক করছে।
আজকে গিয়েছিলাম দুপুরের পর বৃষ্টি মাথায় নিয়ে।গত দুসপ্তাহ ধরে বৃষ্টি আর বৃষ্টি। কেবল বৃষ্টি।অবশ্য বৃষ্টির দেশই জাপান, একশ প্রকাশের বৃষ্টি এই দেশের জলবায়ুতে ভেসে বেড়ায়! তবু হেমন্তের ঝিরিঝিরি--ঝরঝর বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ২৫ বছরের অধিক পরিচিত সেই উঁচু-নিচু সবুজ নির্জনপ্রায় রাস্তা ধরে হাঁটতে হাঁটতে চলছিলাম আর ভাবছিলাম: কত দ্রুত আনন্দমুখর দিনগুলো উড়ে গেল! কতদিন কত আড্ডা দিয়েছি আজুমা দম্পতির সঙ্গে তাঁদের পুরনো কাঠের দ্বিতল বাড়ির দোতলায়। কেইকো মাদাম বাঙালি রান্না করে কাছে থেকে খাইয়ে তারপর ছেড়েছেন! কী সুস্বাদু রান্নাই না তিনি জানেন! মুরগির মাংশ, মুশুরের ডাল, সবজি, ভাজি অনায়াসে রাঁধতে পারেন এখনো। ভাবতে অবাক লাগে যে, জাপানি দম্পতি বাঙালি খাবার দিয়ে কত অসংখ্য বাঙালিকে আপ্যায়ন করেছেন বাড়িতে!
আরও ভাবতে কী আনন্দই না হয়, দুজনের দুটি জীবন একটা জীবনে, একটি শাখায়, একটি ফুলগুচ্ছে, একটি পথে মিলিত হয়েছিল ষাটের দশকে রবীন্দ্রনাথকে ভালোলাগার মধ্য দিয়ে! সেই রংধনুরং ভালোলাগায় আর মরিচা ধরেনি।একনাগারে কাটিয়ে দিলেন দীর্ঘ-দীর্ঘ বছর বাংলা ভাষা এবং রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে নিভৃতে, সযতনে।
আজকে নতুন খবর দিলেন, আজুমা স্যারের বহু লেখা এখানে সেখানে ছড়িয়েছিটিয়ে ছিল সেগুলোকে তিনি সংগ্রহ করে একটি সংকলনে বেঁধেছেন। বিখ্যাত দাইসান বুমমেইশা প্রকাশনা সংস্থা ৭০০ পৃষ্ঠার গ্রন্থটি প্রকাশ করতে যাচ্ছে।মূল্য ৭০০০ ইয়েন! নভেম্বর মাসের ১৫ তারিখ ভারতীয় দূতাবাসে অনুষ্ঠিত হবে গ্রন্থটির প্রকাশনা অনুষ্ঠান। বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত থাকবেন। সম্ভবত রাষ্ট্রদূতও আসন অলঙ্কৃত করতে পারেন। অনুরোধ করলেন, বললেন, আমি কিন্তু আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়ে দেব আপনাকে, অবশ্যই আসবেন।
কী সৌভাগ্য আমার! আমি হেসে বললাম, আপনি বলেছেন এতেই আমি আনন্দিত এবং তৃপ্ত। অশেষ ধন্যবাদ সেনসেই!
সন্ধেবেলা বাদলভেজা বাতাসে অচেনা পথফুলের ঘ্রাণে একটু চঞ্চল হল হৃদয়: পরবর্তী জন্মে আবার কি দেখা হবে এমন রবীন্দ্রভক্ত বিদেশি বন্ধুদের সঙ্গে? দেখা হলে ভালো হবে, ভালো লাগবে।