জল চাই
ঝর্ণা মনি
উইমেননিউজ২৪.কম
প্রকাশিত : ০৫:৫৪ পিএম, ২৮ অক্টোবর ২০১৭ শনিবার | আপডেট: ০২:৪৬ পিএম, ১২ নভেম্বর ২০১৭ রবিবার
সবটুকু সুধা ঢেলে,
মোমের সলতের মতো গলতে গলতে
চিম্বুক পাহাড়ের অষ্টাদশী মেঘকে বললাম,
জল চাই, একটু জল।
চৈত্র্যের প্রখর খরতাপে পুড়তে পুড়তে
বললাম, একটু জল চাই।
তৃষ্ণার্ত চাতকপাখির মতো দিনের পর দিন তাকিয়ে
থেকেছি চিম্বুক পাহাড়ের দিকে
অষ্টাদশী মেঘের নৃত্য বুকের মাঝে
উতাল-পাতাল করে।
ভরা বর্ষার আবেদন নিয়ে বললাম,
জল চাই একটু।
কথা শুনলি না হত”ছাড়ি।
এরপর পেরিয়ে গেছে অযুত-নিযুত কাল।
শ্রাবণ আবেদনে টুইটুম্বুর তুই।
মিষ্টি হেসে একদিন বললে,
‘জল নেবে, সত্যিই?’
শুরু হলো তোর ছুটে চলা।
হঠাৎ হাসির শব্দ, হিহিহিহিহিহি
কোথাও বান ডেকেছে বুঝি!
হৃদয় ভারি হয়ে আসে আমার।
তোর বাড়ন্ত ঢেউ ছুঁয়ে যায়
এ ঘাট, ও ঘাট।
এ নদী, ও নদী।
কোনো একদিন ভরা পূর্ণিমা রাতে
বানডাকা নদীটি মিলিত হলো
উত্তাল সমুদ্রে।
তারপর তোর কত্তো উচ্ছলতা!
একদিন বললাম, আর কত ছুটে চলবি?
অনেক হয়েছে, এইবার থাম পোড়ামুখী
একটু ক্ষ্যামা দে মা।
আবারো হেসে উঠলি খিলখিল করে।
তোর হাসি কাঁপন ধরিয়ে দিল,
বুকের ভেতর, মাইরি।
বললাম, থাম বাপু!
এবার, ক্লান্ত হও।
হেসে উঠলি আরো জোরে।
তোর ছলাৎ ছলাৎ ছন্দে
ভেসে যায় আমার দীর্ঘশ্বাস।
তবুও কথা শুনলি না হতভাগী!
চঞ্চলা ঝর্ণার মতোই দাপিয়ে
বেড়াচ্ছিস দূ-কূল।
ভেঙে যাচ্ছিস পাথর-বালি-নুড়ি।
বললাম, এইবার, এইবার থামবি পোড়ামুখী?
আমার বয়স হয়েছে;
আমি কি আর ছুটতে পারি?
আমাকে রেখেই ছুটে বেড়ালে
ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল।
অনেকদিন, অনেকদিন তোকে দেখি না। শুধু
তোর জোসনা রাতের শব্দ শুনতে পাই
ঘুমে, জাগরণে।
সে কি তোর ছুটে চলার নিক্কন
নাকি আমার দীর্ঘশ্বাস? বুঝতে পারি না।
তবুও চিম্বুক পাহাড়ের পাদদেশে দাঁড়িয়ে
প্রতিদিন খুঁজি আমার ‘সেই অষ্টাদশীকে’।
তোর বুক থেকে হাওয়া ছুটে বেড়ায়
আকাশে বাতাসে।
নি:শ্বাসের অক্সিজেনে খোঁজে বেড়াই তোর অস্তিত্ব।
মনে হয়, তোকে পাওয়ার জন্যই
বেঁচে আছি এই আমি।
প্রতিদিন পেছনে ফেলে আসা হাজার বছরের
প্রার্থনা জমা করে; নতজানু হয়ে বলি,
‘জল চাই; একটু জল।