ডা: সাবিরা খুন: ২৬ দিনেও রহস্য উদ্ঘাটন হয়নি
নিজস্ব প্রতিবেদক
উইমেননিউজ২৪
প্রকাশিত : ০১:০৭ পিএম, ২৬ জুন ২০২১ শনিবার
ছবি: সংগৃহীত
রাজধানীর কলাবাগানে চাঞ্চল্যকর চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমান লিপি হত্যাকাণ্ডের রহস্য এখনো অজানা। প্রায় এক মাস হতে চললেও এই নৃশংস খুনের কোনো ক্লু খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। তদন্ত সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, হত্যাকাণ্ডের শিকার চিকিৎসক সাবিরা রহমান লিপির কাছের স্বজন, ঘটনাস্থল বাড়ির ভাড়াটিয়াদের জিজ্ঞাসাবাদ এবং প্রযুক্তির সহযোগিতা নেয়া হলেও এখন পর্যন্ত খুনের কূলকিনারা পাওয়া যায়নি।
সবধরনের ক্লু মাথায় রেখে মামলার তদন্ত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কলাবাগান থানার ওসি পরিতোষ চন্দ্র দাস। তিনি বলেন, কী কারণে বা কারা এ ঘটনার সাথে জড়িত এ বিষয়ে একাধিকবার তার স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের সাথে হত্যার সংশ্লিষ্টতার কোনো প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। ঘটনা নিশ্চিত হতে আমরা তদন্তে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ব্যবহার করছি। সেক্ষেত্রে অবশ্যই এ ঘটনার প্রকৃত কারণ এবং দায়ীদের চিহিৃত করতে পারব।
তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নিহত চিকিৎসক সাবিরা রহমানের ব্যবহৃত মোবাইল রাসায়নিক পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়। সেখান থেকে প্রতিবেদন এসেছে। এখন স্কেচ করে ঘটনার আগে কার সাথে নিহতের কথা হয়েছে বা পরে কি হতে পারে। সম্ভাব্য কারা কলাবাগানের বাসায় আসতে পারে তার ছবি একে খুনিদের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। স্কেচ করতে ইতোমধ্যে বিশেষজ্ঞদের সাথে কথাও বলা হয়েছে। সেক্ষেত্রে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে।
প্রসঙ্গত, ঘটনার পর নিহতের স্বজনেরা সন্দেহ করেছিলেন সাবিরার সাবলেটে থাকা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও মডেল কানিজ সুবর্ণা এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকতে পারে। তার ফ্ল্যাটে অনেকেই যাতায়াত করতেন। তিনি মডেলিংয়ের পাশাপাশি বেসরকারি কোম্পানি দারাজের অনলাইনের ব্যবসাও করতেন। ঘটনার আগে ওই বাসা থেকে হাঁটতে সুবর্ণা বেরিয়ে যান। পাশাপাশি বাসায় ফিরে এসে ডা: সাবিরার কক্ষ থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখে স্বজনদের খবর দেন সুবর্ণাই। তবে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদে সুবর্ণার কোনো সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়নি বলে জানায় তদন্তকারী পুলিশ। ওই বাড়ির সিকিউরিটি গার্ডসহ অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদেও হত্যাকাণ্ডের বিষয় কোনো তথ্য পায়নি পুলিশ।
ডিএমপির রমনা বিভাগের কলাবাগান জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার শরীফ মোহাম্মদ ফারুকুজ্জামান বলেন, ডা: সাবিরা হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ক্লু উদঘাটন করা সম্ভব হয়নি। তিনি বলেন, কে হত্যা করল, কেন হত্যা করল, কারা ওই বাসায় যাতায়াত করত, পরিবারের সাথে নিহতের দূরত্ব ছিল কি না সেটা জানার চেষ্টা করছি। তিনি বলেন, আমরা নিহতের ভবন ও আশপাশে সিসিটিভি ফুটেজ পাইনি। একটু দূরের যে ফুটেজ পুলিশ উদ্ধার করেছে তাতে আমলযোগ্য কিছু মেলেনি। তবে থানা পুলিশের পাশাপাশি সব সংস্থাই কাজ করছে। আশা করছি দ্রুতই হত্যার মোটিভ উদঘাটন ও খুনি গ্রেফতার হবে।
গত ৩১ মে রাজধানীর কলাবাগানে ফার্স্ট লেনের ৫০/১ ভাড়া বাসা থেকে গ্রিন লাইফ হাসপাতালের কনসালট্যান্ট (সনোলজিস্ট) ডা: কাজী সাবিরা রহমান লিপির রক্তাক্ত ও দগ্ধ লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। প্রথমে ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে সন্দেহ করা হয়। তবে নিহতের শরীরের একাধিক ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন মেলায় পুলিশ এটিকে পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে জানায় পুলিশ। পোস্টমর্টেমেও হত্যাকাণ্ডের আলামত মেলে। খুনিরা পরিকল্পিতভাবে ডা: সাবিরাকে ঘাড়ে ও পিঠে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তিনি মারা যান। একই সাথে খুনিরা হত্যাকাণ্ডের আলামত নষ্ট করতে এবং ঘটনা ভিন্নখাতে নেয়ার জন্য বিছানায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এতে ডা: সাবিরার পেটসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে যায়।
ডা: সাবিরা রহমান লিপি ওই ফ্ল্যাটে একাই থাকতেন। স্বামী শামসুর আজাদ একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করেন। থাকেন শান্তিনগরে। সাবিরার দুই ছেলেমেয়ে রয়েছে। তার মায়ের বাসা পাশেই। ছেলেমেয়ে দু’টি ওই বাসাতেই থাকত। ছেলের বয়স ২১। সে কানাডা যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আর মেয়ের বয়স ১০ বছর। সে কলাবাগানের একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে পড়ে। সাবিরা রহমান লিপির দুই ভাই রয়েছেন অস্ট্রেলিয়াতে। চট্টগ্রাম থেকে এমবিবিএস পাস করার পর ঢাকার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছেন লিপি। সবশেষ গ্রিন লাইফ হাসপাতালে কর্মরত ছিলেন।
এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ডা: সাবিরার পরিবারের কেউ প্রথমে মামলার বাদি হতে ইচ্ছুক ছিলেন না। পরে ১ জুন রাত ১২টার দিকে নিহতের মামাতো ভাই রেজাউল হাসান মজুমদার জুয়েল কলাবাগান থানায় হত্যা ও হত্যার আলামত নষ্টের চেষ্টার অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলায় সুনির্দিষ্ট কাউকে আসামি করা হয়নি।
মামলার এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, আমার বোনের লাশ দেখে ঘটনার বিষয় খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, গত ৩০ মে রাত আনুমানিক ১০টা থেকে পরদিন ৩১ মে সকাল ১০টার মধ্যে অজ্ঞাত আসামিরা আমার বোন ডাক্তার সাবিরা রহমান লিপিকে কলাবাগান থানার ফার্স্ট লেনের ৫০/১ নম্বর বাসার তৃতীয়তলার ফ্ল্যাটে শয়ন কক্ষে প্রবেশ করে ছুরিকাঘাত ও গলাকেটে হত্যা করে। হত্যার ঘটনা ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য এবং হত্যার আলামত নষ্ট করতে শরীরে ও বিছানায় আগুন ধরিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয় হত্যাকারীরা।
-জেডসি